শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

রজব ১৪৩০ হিঃ (১২) | কচি ও কাঁচা

কে সে জন?

কে সে জন যার গড়া নিখিল ভুবন?
কে রচিল রবি-শশী তারা অগণন?
গাছপালা, ফুল-ফল
মেঘ-বায়ু, মাঠ, জল
ঝরণা, পাহাড়, নদী-সাগর গহন
এই আলো, এই আঁধার, জীবন-মরণ
কে সে জন দয়াময়, কে দেয় ভালোবাসা?
বিপদে বন্ধু সে যে নিরাশার আশা!
দিয়েছে আপনজন
পিত-মাতা, ভাই-বোন
বুকে দিছে স্নেহ-প্রেম, মুখে দিছে ভাষা
অসীম দয়ায় যার ধরণীতে আসা
না চাহিতে দয়াময় দিয়েছে সকল
ক্ষুধায় আহার, আর পিপাসায় জল।
সবি দেয় চাহে না সে
সে যে শুধু ভালোবাসে।
এসো ভাই-বোন, এসো সাথীদল
তাঁরই গান গেয়ে করি জনম সফল।

আলোচনা:

আমি যখন খুব ছোট, ঠিক তোমাদের মত, তখন এই কবিতাটি আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ছিলো। কবিতাটি আমরা মুখস্থ করেছিলাম। কবিকে আমি চিনতাম না, তিনি কেমন তাও জানতাম না। কিন্তু কবিতাটি আমার খুব ভালো লাগতো। শৈশবে সেই যে কবিতাটি মনে গেঁথে গিয়েছিলো আজ এত বছর পরও কবিতাটি মনে আছে। এখনো নিজের অজান্তে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি- এসো ভাই-বোন, এসো সাথীদল/ তাঁরই গান গেয়ে করি জনম সফল। কবি এখানে খুব সুন্দর করে আমাদের সামনে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছেন। আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা, আমরা আল্লাহর সৃষ্টি; বিশ্বজগতের সবকিছু আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ নিরাকার। তাঁর কোন আকার আকৃতি নেই। তাঁর মত কোন কিছু নেই। আমরা আল্লাহকে দেখতে পাই না। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, চক্ষুসমূহ আল্লাহকে দেখতে পায় না, কিন্তু তিনি চক্ষুসমূহকে দেখতে পান।

তাহলে কীভাবে আমরা আল্লাহর পরিচয় পাবো? কীভাবে আমরা আমাদের স্রষ্টা আল্লাহকে চিনতে পাবো? কোরআন শরীফে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমার সৃষ্টির দিকে তাকাও এবং সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করো তাহলেই আমার পরিচয় পাবে এবং আমাকে চিনতে পারবে। আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছ শরীফে যা বলেছেন তার খোলাছা এই-

দুনিয়ার জীবনে তোমরা আল্লাহকে দেখতে পাবে না। কারণ মানুষের চক্ষু হলো খুব দুর্বল। যখন তোমরা জান্নাতে যাবে তখন তোমরা আল্লাহকে দেখতে পাবে এবং তোমাদের কোন সন্দেহ থাকবে না, যেমন তোমরা পূর্ণিমার রাতে পূর্ণ চাঁদটাকে দেখতে পাও, আর তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে না। দুনিয়াতে আল্লাহকে চেনার, জানার এবং আল্লাহর পরিচয় লাভের উপায় হলো আল্লাহর সৃষ্টির দিকে তাকানো এবং আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা।

কবি তালিম হোসেন তার এই আশ্চর্য সুন্দর কবিতাটিতে সে কাজটাই করেছেন। তিনি অবাক বিস্ময়ে এই বিশাল বিশ্বজগতের দিকে তাকিয়ে আছেন আর ভাবছেন, কোন কিছু নিজে নিজে তো সৃষ্টি হতে পারে না। স্রষ্টা ছাড়া তো সৃষ্টি হতে পারে না। তাহলে এই বিশ্বজাহান কে সৃষ্টি করেছেন? সকালে থেকে সন্ধ্যা সূর্য কত সুন্দর আলো দেয়। পূর্ণিমার রাতে চাঁদের জোসনায় পৃথিবী হেসে ওঠে। রাতের অন্ধকারে আকাশের গায়ে অসংখ্য তারা কি সুন্দর ঝলমল করে। এসব দেখে কবি অবাক হন মুগ্ধ হন, আর তার মনে প্রশ্ন জাগে, এই বিশ্বজাহান, এই চাঁদ-সূর্য এবং আকাশের গায়ে ঝলমল করা অসংখ্য তারা কে সৃষ্টি কেরেছেন?

সবুজ গাছে ডালে ডালে কত রকম ফল, কত রকম ফুল! আকাশে মেঘেরা ভেসে বেড়ায়। মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় মাঠ-ঘাট জলে থৈ থৈ করে। পানির অপর নাম জীবন। বাতাস ছাড়াও তো বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বাতাসের সাহায্যেই তো আমরা শ্বাস গ্রহণ করি। গাছে ফুল-ফল থেকে আকাশে ভাসমান মেঘ এবং মেঘ থেকে বর্ষিত বৃষ্টি দেখে কবি অবাক হন আর ভাবেন, কে এগুলো সৃষ্টি করেছেন? এই যে দিনের বেলা আলো এবং রাতের বেলা অন্ধকার! কে এই আলো আঁধারের স্রষ্টা? কার আদেশে আমাদের জন্ম হয়, মৃত্যু হয়?

মা-বাবা আমাদের কত ভালোবাসেন! ভাই-বোন, তারাও আমাদের কত স্নেহ করে! কে আমাদেরকে মা-বাবা, ভাই-বোন এবং অন্যান্য আপনজন দান করেছেন, আবার তাদের অন্তরে আমাদের প্রতি এত স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসা দান করেছেন? নিশ্চয় তিনি তো অনেক দয়াময়! তিনি তো আমাদের বিপদের বন্ধু! যখন কোথাও কোন আশা ভরসা থাকে না তখন তিনিই আমাদের একমাত্র আশা ও ভরসা! তাঁর কত দয়া যে, তিনি আমাদের মুখে ভাষা দান করেছেন। ভাষার সাহায্যে আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। পৃথিবীতে কত অসংখ্য ভাষা! মানুষ তো তারই অসীম দয়ায় এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছে। তিনি তো এত দয়াময় যে, না চাইতেই মানুষকে পৃথিবীর সব নিয়ামত দান করেছেন। ক্ষুধার জন্য খাদ্য দিয়েছেন; পিপাসা দূর করার জন্য পানি দিয়েছেন। যদি বৃষ্টি না হতো, যদি মাটি থেকে ফসল না হতো তাহলে কীভাবে আমাদের ক্ষুধা ও পিপাসা দূর হতো। তিনি এত দয়াময় যে, প্রতি মুহূর্ত তিনি আমাদেরকে শুধু দিয়েই চলেছেন, কখনো তিনি আমাদের কাছে কোন কিছু চান না। তিনি শুধু আমাদের দান করেন আর আমাদের ভালোবাসেন। তিনি আল্লাহ। অসীম তার দয়া ও করুণা।

কবিতার শেষ দিকে এসে কবি আমাদের আহ্বান জানিয়ে বলছেন, তিনি যখন এত বড় দাতা ও দয়াবান, সুতরাং এসো আমরা সবাই তার প্রশংসা করি, তার ইবাদত করি। তার আদেশ নিষেধ মেনে চলি। তাহলে আমাদের জীবন সার্থক হবে। আমাদের জন্ম-মৃত্যু সফল হবে। অর্থাৎ জন্মের পর পৃথিবীতেও আমরা সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারবো, আবার মৃত্যুর পর অনন্ত জীবনে জান্নাত লাভ করবো। কবি আমাদের এত সুন্দর একটি কবিতা উপহার দিয়েছেন তাই এসো, আমার কবির জন্য দু‘আ করি, আল্লাহ যেন তাকে উত্তম বিনিময় দান করেন, আমীন।