শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জুমাদাল উলা ১৪৩২ হিঃ (২০) | তোমাদের জন্য

কোথায় তুমি, আমার ছোট্ট মণি!

লিখেছেনঃ জাদ্দে যামেনাহ

 

বাগানে লাল গোলাবের ঐ ছোট্ট কলিটি, দেখে মনটা কেন এমন করে? কেন এত মায়া লাগে?

গোলাবের ঐ কলিটি, সে কি তুমি?! কোথায় তুমি?!

সবুজ পাতার ফাঁকে ঐ ছোট্ট পাখীটি; দেখে মনটা কেন এমন করে? কেন এত মায়া লাগে!

বিষণ্ণ ঐ ছোট্ট পাখীটি, সেকি তুমি?! কোথায় তুমি?!

ভোরের রাঙা সূর্যটি আমাকে দেখে একটু যেন হাসে! মনটা যেন কেমন করে ওঠে!

রাঙা সূর্যের রাঙা আলো, সে কি তুমি? কোথায় তুমি?!

সন্ধ্যার আঁধারে কত জোনাকি জ্বলে!

হাজার জোনাকির মেলায় ঐ ছোট্ট জোনাকিটি, সেকি তুমি? কোথায় তুমি?

রাতের আকাশে কত তারা জ্বলজ্বল করে!

দূর আকাশের মিটিমিটি ঐ ছোট্ট তারাটি, সেকি তুমি? কোথায় তুমি?

হে ছোট্ট কলি! ছোট্ট পাখী! কে তুমি? আমার ছোট্ট মণি?!

হে ছোট্ট তারা! ছোট্ট জোনাকি! কে তুমি? আমার ছোট্ট মণি?!

***

কেন তোমার এ অস্থিরতা মা?! আমি তো তোমারই আছি মা! আমাকে পাবে তুমি জান্নাতের দুয়ারে! তোমাকে নিয়ে তবেই আমি জান্নাতে যাবো মা!

আর কেঁদো না মা! চোখের পানি মুছে ফেলো মা!

গোলাবের কলিতে, ভোরের রাঙা সূর্যের হাসিতে, সন্ধ্যা-জোনাকির আলোতে, দূর আকাশে তারার ঝিলিমিলিতে আমাকে তুমি পাবে না মা!

আমি কোথায় আছি জানো মা!

বহু দূরে এক পাহাড়ের কোল- ঘেঁসে হযরত ইবরাহীমের কাছে। মিথ্যে কেন চিন্তে করো মা! এখানে আমার কোন কষ্ট নেই মা! কত ছেলে, কত মেয়ে এখানে মা! সবাই মিলে মিশে হেসে খেলে আমরা অনেক আনন্দে আছি মা! হযরত ইবরাহীম আমাদের অনেক আদর করেন মা!

জানো মা! আমাদের এখানে আজ একটি মেয়ে এসেছে। মাত্র দু’দিন ছিলো দুনিয়াতে। ছোট্ট মেয়েটিকে কোলে পেয়ে মায়ের কী যে আনন্দ! কিন্তু মাত্র দু’দিন! তারপর আল্লাহর হুকুম হলো, আর ফেরেশতারা মায়ের কোল খালি করে মেয়েটিকে নিয়ে এলো। মায়ের তাতে সে কী বুকফাটা কান্না! কাঁদতে কাঁদতে মাটা না মরেই গেলো! মায়ের রূহটা দুনিয়া থেকে চলে এলো! ছোট্ট মেয়েটিকে খুঁজতে খুঁজতে আমাদের এখানে চলে এলো। জানো মা! ঐ রূহটাকে দেখে না, তোমাকে আমার অনেক মনে পড়েছে। আল্লাহকে বলেছি, হে আল্লাহ, আমার মাকে তুমি ছবর দাও, সান্তবনা দাও। কেঁদে কেঁদে আমার মা যেন মরে না যায়! তাহলে যে ভাইয়ার কষ্ট হবে! ভাইয়াকে তখন কে আদর করবে? আমার ভাইয়া তখন কাকে মা বলবে?

জানো মা! ঐ যে মা’টা মরে গেলো! সেই মায়ের রূহটা মেয়ের রূহকে দেখে কত খুশী হলো! মায়ের রূহটা মেয়ের রূহকে কোলে নিতে চাইলো। কিন্ত পারলো না। ফিরেশতারা দিলো না। বললো কী! এখন না। এখন একটু ছবর করো। জান্নাতে গিয়ে তুমি পাবে তোমার মেয়েকে।

কেঁদে কেঁদে মরে গিয়ে বলো তো মা, তাহলে কী লাভ হলো! তুমি কেঁদো না মা! আমি তো তোমারই আছি মা! জান্নাতের দুয়ারে আমাদের দেখা হবে মা! 

(মায়ের আকুতি, মেয়ের মিনতি যেভাবে অনুভব করেছি সেভাবে লিখেছি।)  -   জাদ্দে যামেনাহ