শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩) | পুষ্পকলি

আমার রোযনামচা

 

২৫/১/৩৯ হি.

আজ ফজরের পর অনেক কুয়াসা ছিলো। কিছুই দেখা যায় না। ফজরের পর আমি বাইরে হাঁটলাম। (দেখি তো, চন্দ্রবিন্দুটা আছে নাকি!)

হঠাৎ দেখি, অনেকগুলো পাখী উড়ে যাচ্ছে! অনেক সুন্দর দেখা গিয়েছে। কে পাখীকে উড়তে শিখিয়েছেন? আল্লাহ শিখিয়েছেন।

১১/২/৩৯ হি.

আজ দস্তরখানের পর আমরা সবাই মজলিসে বসেছি। আদীব হুযূর আমাদের উপর শিউলীফুল ছিটিয়ে দিয়েছেন, আর বলেছেন, যার কাছে বেশী পড়বে সে আরেকজনকে খুশী মনে দেবে। তাহলে আল্লাহ খুশী হবেন।

আমি পাঁচটি ফুল পেয়েছি। তিনটি তিনজনকে দিয়েছি, তারা ফুল পায়নি। এখন আমার কাছে দু’টি ফুল আছে। আমি খাতার ভিতরে রেখে দিয়েছি।

১২/২/৩৯ হি.

গতকাল আমাদের নতুন কিতাব ‘বাংলায় বিসমিল্লাহ দেয়া হয়েছে। যিম্মাদার হুযূর আমাদের প্রথম সবক পড়িয়েছেন। আজ হুযূর আমার হাতের লেখা দেখে খুশী হয়েছেন এবং ‘মাশাআল্লাহ’ বলে অনেক আদর করেছেন।

আজ আদীব হুযূরের পক্ষ হতে যিম্মাদার হুযূর আমাদের শিউলীফুলের সুবাস শুঁকিয়েছেন। (আবার একটা চন্দ্রবিন্দু এসেছে!)

ইনশাআল্লাহ বড় হয়ে আমি ফুলের মত সুবাস ছড়াবো; ইলমের সুবাস, আমলের সুবাস, আখালাকের সুবাস এবং চিন্তার সুবাস।

৯/৫/৩৯ হি.

আমাদের মাদরাসা একটি গ্রামের ভিতরে। গ্রামটার নাম হলো বৌনাকান্দি। মাদরাসা থেকে আমার নানাবাড়ী খুব কাছে। আমি পনের দিন পর পর নানা বাড়ীতে যাই, আর একমাস পর আমাদের বাড়ীতে যাই। আমাদের বাড়ী হলো ঢাকা আমীন বাজার।

আমার একটি ছোট্ট ভাই আছে।  সে খুব ভালো। আমি তাকে অনেক আদর করি। মাদরাসায় হুযূর আমাকে যত চকলেট দেন, একটাও খাই না। আমার ছোট্ট ভাইটির জন্য নিয়ে যাই। সে চকলেট পেয়ে খুব খুশী হয়।

রিফআত, মাদানী মাক্তাব

৮/৫/৩৯ হি.

আমি আর আব্দুল্লাহ মাদরাসার বাগানে গিয়ে দেখি, অনেক ফুল ফুটেছে। অনেক রঙের ফুল। আমি বললাম, আব্দুল্লাহ, তোমার কোন রঙ পছন্দ? সে বললো, লাল রঙ। আমি বললাম, আমার পছন্দ হলো সাদা রঙ। কারণ আমাদের নবীজী সাদা রঙ পছন্দ করতেন।

সম্পাদক  সব রঙ তো আল্লাহর সৃষ্টি, তাই যে কোন রঙ পছন্দ করা যায়। আমাদের নবীজী সব রঙের জিনিস ব্যবহার করেছেন। হাঁ, সাদা পোশাক তাঁর পছন্দ ছিলো।

১১/৫/৩৯ হি.

আজ সকালে ঘুমের সময় আমার ঘুম আসছিলো না। হুযূর বললেন, আল্লাহ্ আল্লাহ যিকির করো। দিলে শান্তি আসবে এবং চোখে ঘুম আসবে।

হুযূরের কথা সত্যি হলো। আমি আল্লাহ আল্লাহ যিকির করলাম, আর  চোখে ঘুম নেমে এলো।

আব্দুল আহাদ

২১/২/৩৯ হি.

আজ হুযূর আমাদের মোজা পরা শিখিয়েছেন এবং মোজা খোলাও শিখিয়েছেন। হুযূর বলেছেন, সব কাজ ডান দিক থেকে করা সুন্নত। মোজার ভিতরটা ভালো করে ঝেড়ে তার পর বিসমিল্লাহ বলে পরতে হয়। মোজা খুলে সুন্দর করে ভাজ করে রাখতে হয়।

আজ দুপুরের দস্তরখানে মাদরাসার জমিনের শাক রান্না হয়েছে। সঙ্গে ডিম ছিলো। খুব স্বাদ হয়েছে, আলহামদু লিল্লাহ।

২২/৪/৩৯ হি.

আজ রাতে আমাদের আকীদা সিরিজের দশম কিতাব ‘জান্নাত’ সমাপ্ত হয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ। আজ আমাদের অনেক আনন্দ। কিতাবটি আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি আকীদা সিরিজ পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। জাহান্নাম বইটি পড়ে আমার অনেক ভয় লেগেছে। তারপর জান্নাত বইটি পড়ে সব ভয় চলে গেছে। মনে অনেক শান্তি এসেছে।

১১/১/৩৯ হি.

আজ আমি চাঁদ দেখেছি। আজকের চাঁদটি অনেক সুন্দর, আর অনেক উজ্জ্বল দেখা গিয়েছে। আজ আকাশে মেঘ ছিলো না। তাই চাঁদ মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েনি। চাঁদ কত সুন্দর! চাঁদের আলোতে সবকিছু কত সুন্দর!! চাঁদ আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।

আজকের চাঁদটা দেখে আমার অনেক মায়া লেগেছে। এত বড় আকাশে চাঁদটা কত একা। চাঁদের তো খেলার সাথী নেই। আমি যদি চাঁদে যেতে পারি, চাঁদের সঙ্গে খেলা করবো। চাঁদটা তখন অনেক খুশী হবে।

আমি চাঁদের মত হবো। আমি চাঁদের মত আলো ছড়াবো।

আব্দুল্লাহ বিন ইমদাদুল্লাহ

বাবা জানতে চেয়েছিলেন

২৭/৪/৩৯ হি.

আমি যখন খুব ছোট, মাত্র লিখতে শিখেছি তখনকার ঘটনা। এক সন্ধ্যায় আব্বু আমার সামনে কলম-খাতা দিয়ে বললেন, বাবা, খাতার পাতায় লেখো, তোমার জীবনের সবচে বড় ইচ্ছা কী?

এত ছোট্ট বয়সে এত সুন্দর করে লেখার কথা নয়, তবে আল্লাহ তাওফীক দিলেন, তাই কোন চিন্তা ছাড়াই লিখলাম, ‘আব্বু, আমার জীবনের সবচে’ বড় ইচ্ছা, তোমরা দু’জন ¯েœহ মমতার ছায়া হয়ে আমার জন্য বেঁচে থাকো। আর দু‘আ করো, আল্লাহ যেন তাওফীক দান করেন, আমি যেন হতে পারি দ্বীনের বড় দা‘ঈ।

লেখাটি পড়ে আব্বু খুব খুশী হলেন। আম্মুকে দেখালেন। আম্মুও খুব খুশী হলেন। সেদিন তারা আমাকে অনেক দু‘আ দিয়েছিলেন। সেই দু‘আরই বরকতে আজ আমি ইলমে দ্বীন হাছিলের পথে অবিচল রয়েছি। এখন আমি আল্লাহকে বলি, তখন যা লিখেছিলাম বাবার আদেশে, না বুঝেই লিখেছিলাম। আমি জানতাম না কাকে বলে ‘দাঈ’!

ভেবেছিলাম, দা‘ঈ হয়ত  কোন ভালো মানুষের নাম।

এখন হে আল্লাহ কিছুটা হলেও তুমি বুঝ দিয়েছো, কাকে বলে দাঈ ও দাওয়াত!

হে আল্লাহ, তুমি অবুঝ মনের সেদিনের ইচ্ছেটিকে কবুল করে নাও, আমীন।

-মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মাদরাসাতুল মাদীনাহ

০০ প্রিয় আব্দুল্লাহ! তোমার রোযনামচা পড়ে আমিও খুব খুশী হয়েছি। আমিও অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে দু‘আ করি, আল্লাহ যেন তোমার শৈশবের সুন্দর ইচ্ছেটি পূর্ণ করেন, আমীন। তবে তোমাকেও  চেষ্টা করতে হবে সেই ইচ্ছেটি যেন...