শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬) | বিজ্ঞান বিচিত্রা

إن في خلق السموت والأرض واختلاف الليل والنهار لآيت لأولي الألباب

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আকাশম-লী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের পরিবর্তনে অবশ্যই রয়েছে বহু নিদর্শন চিন্তাশীলদের জন্য।সুতরাং আল্লাহর কুদরত অনুধাবনের জন্য এবং বিশ্বজগতের পরতে পরতে গচ্ছিত শক্তিসমূহ দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্য চিন্তা-গবেষণা করা অবশ্যই একটি উত্তম ইবাদত এবং উম্মাহর অনেক বড় খিদমত। চিন্তাশীল তথা, জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ-এর কাছে এটাই শরী‘আতের দাবী ও নির্দেশ এবং একই সঙ্গে পথনির্দেশ।সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবী, মঙ্গল, বুধ ও শুক্র-এ চারটি গ্রহ হচ্ছে পাথুরে। তবে পৃথিবীর গঠন ও জন্মপ্রক্রিয়ার সঙ্গে মঙ্গলের সাদৃশ্য যেমন বেশী তেমনি মঙ্গলের আবহাওয়াই হচ্ছে পৃথিবীর আবহওয়ার সবচে’ কাছাকাছি। তাই মঙ্গলেই প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা বেশী। তাছাড়া বসতি গড়ে তোলার সুবিধাও হতে পারে বেশী। এসব কারণে মঙ্গলকে কেন্দ্র করেই চলছে মহাশূন্য অভিযানের প্রায় সমস্ত কার্যক্রম।অতীতে ফিরে যাওয়া কি সম্ভব?মহাবিশ্বে যতগুলো গতির সঙ্গে আমরা পরিচিত তার মধ্যে সবচে’ ধীর হতে পারে পিঁপড়ের বা কচ্ছপের গতি। এর চেয়ে কম গতিও হতে পারে। সে আলোচনা থাক। কারণ এর দরকার নেই। আমাদের এখন জানতে হবে, মহা -বিশ্বে সবচে’ বেশী গতি কোনটি?তো আমাদের জানামতে মহাবিশ্বে সবচে’ বেশী গতি হলো আলোর গতি, সেকেন্ডে ১৮৬০০০ (এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার) মাইল।এই যে আলোর গতি, যদি এর কাছাকাছি গতি অর্জন করা যায় তাহলেই মানুষ চলে যেতে পারে ভবিষ্যতে। একই সঙ্গে বিপরীত গতি যদি অর্জন করা যায় তাহলে ফিরে যাবে অতীতে।উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বোঝা যেতে পারে। আমরা কল্পনা করতে পারি, পৃথিবীকে বেষ্টন করে একটি বৃত্তাকার রেলপথ তৈরী করা হয়েছে এবং এর উপর দিয়ে একটি রেলগাড়ী চলতে শুরু করেছে আলোর কাছাকাছি গতিতে। গাড়ীটি তখন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় সাতবার। গাড়ীর ভিতরে কিন্তু সময়ের গতি হবে বাইরের তুলনায় অনেক ধীর। গাড়ীটি যদি ঐ গতিতে একশ বছর চলতে থাকে, তাহলে ভিতরের যাত্রীদের সময় হবে মাত্র একসপ্তাহ। অর্থাৎ একসপ্তাহ সময়ের মধ্যে বাইরের জগতে একশ বছর হয়ে গেছে। তার মানে বাইরের হিসাবে ভিতরের যাত্রীরা চলে এসেছে ভবিষ্যতে। পক্ষান্তরে ভিতরের হিসাবে তারা রয়ে গেছে দূর অতীতে।বিজ্ঞানীরা কিন্তু ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের মাটির গভীরে। সেখানে তৈরী করা হয়েছে ১৬ মাইল দীর্ঘ বৃত্তাকার একটা সুড়ঙ্গ। ঐ বৃত্তাকার সুড়ঙ্গ পথে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বহু কণিকা (যার সংখ্যা হবে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন) ছুটে চলে। সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে কণিকাগুলোর গতি শূন্য থেকে ষাট হাজার মাইলে উঠে যায়। এই কণিকাগুলো সেকেন্ডে ১১ হাজার বার পর্যন্ত সুড়ঙ্গপথটি প্রদক্ষিণ করতে পারে, যা আলোর গতির কাছাকাছি। এভাবে এরা আলোর ৯৯.৯৯ ভাগ পর্যন্ত গতি অর্জন করতে পারে।এটা তো হলো কণিকার গতি। প্রশ্ন হলো মানুষ কীভাবে এ গতি অর্জন করতে পারে? মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান অ্যাপেলো-১০ এর গতি ছিলো ঘণ্টায় ২৫ হাজার মাইল। সময়ভ্রমণের জন্য এর গতি হতে হবে আলোর কাছাকাছি, যা অর্জন করতে লাগবে ছয় বছর। তখন যানটির একদিনে পৃথিবীতে হয়ে যাবে একবছর। আর তখন শুরু হয়ে যাবে সময়ভ্রমণ! অর্থাৎ সত্যি সত্যি যানের ভেতরের মানুষটি চলে গেলো ভবিষ্যতে! পক্ষান্তরে যদি একই সঙ্গে ভিতরে বিপরীত গতি অর্জন করা সম্ভব হয় তাহলে ফিরে যাবে অতীতে।ভবিষ্যতে আসলে কী ঘটবে তা বিজ্ঞানীরা বলতে পারে না; বলতে পারেন একমাত্র মহাজ্ঞানী আল্লাহ, যিনি সময় সৃষ্টি করেছেন এবং আলোকে ঐ গতি দান করেছেন। আলো ছাড়া আর কোন বস্তু ঐ গতি অর্জন করতে পারবে না তা বলার কিন্তু কোন সুযোগ নেই। আল্লাহই ভালো জানেন। ০০ একজন বিজ্ঞানী যখন ধর্ম সম্পর্কে লেখেন তখন যে অবস্থা হয়, আমার মত ‘মাওলানা’ বিজ্ঞান সম্পর্কে লিখলে অবস্থা তার কাছাকাছি হতেই পারে! তবু আমার মহলে আমি শুরু করলাম। তোমরা জ্ঞান সাধনা করো এবং বিষয়ের বিষয়ীদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো। আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করুন, আমীন।


রকেট কী ও কেন?মানব সভ্যতা নয়, বরং বস্তুসভ্যতার চরমোৎকর্ষ মনে করা হয় মানুষের মহাশূন্য অভিযানকে।মহাশূন্য অভিযানের প্রথম প্রকাশ ঘটে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নকর্তৃক লাইকা নামের কুকুরকে মহাশূন্যে পেরণের মাধ্যমে। সময়টি ৩/১১/১৯৫৭এর দ্বিতীয় অভিপ্রকাশ ঘটে যখন সোভিয়েত নভোচারী ইউরি মহাশূন্য- যানে আরোহণ করে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আবার ফিরে আসেন পৃথিবীতে।মহাশূন্য অভিযানের সর্বোচ্চ সফলতা হচ্ছে চাঁদের বুকে মানুষের অবতরণ। সময়টি হলো ১২/৪/১৯৬১।  পরে এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ছাড়িয়ে যায়।মহাশূন্য অভিযানের অগ্রযাত্রা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং আমেরিকা-রাশিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী মহাশূন্য অভিযানের দৌড়ে শামিল হয়ে চলেছে। বলাবাহুল্য, আরো বহু ক্ষেত্রের মত এ ক্ষেত্রেও মুসলিম বিশ্ব বহু-দূর পিছিয়ে রয়েছে।মহাশূন্য অভিযানের বিষয়টি বুঝতে হলে জানতে হবে পৃথিবীর ‘মুক্তিবেগ’ সম্পর্কে।আমরা জানি, প্রতিটি বস্তুকে পৃথিবী নিজের দিকে টেনে রাখে। এজন্যই আপেল নীচে পড়ে, উপরের দিকে উড়ে যায় না। একই ভাবে কোন বস্তুকে যত জোরেই উপরের দিকে নিক্ষেপ করা হোক, একসময় তা নীচের দিকে ফিরে আসবেই। অর্থাৎ পৃথিবীর নিজস্ব আকর্ষণ শক্তি তাকে নীচের দিকে ফিরিয়ে আনবেই। পৃথিবীর মহাকর্ষক্ষেত্র অতিক্রম করে মহাশূন্যে যেতে হলে মুক্তিবেগ অর্জন করতে হবে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ অবশ্য খুব বেশী নয়। সেকেন্ডে মাত্র সাত মাইল।কোন বস্তুকে সাতমাইল গতিতে মহাশূন্যের দিকে যদি নিক্ষেপ করা যায়, আর ঐ বস্তুটি ঐ গতি ধরে রাখতে পারে তাহলে বস্তুটি পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে মুক্তি পেয়ে মহাশূন্যে পৌঁছে যাবে; পৃথিবীতে আর ফিরে আসবে না। হাঁ, যদি ঐ বস্তুটির মধ্যে পৃথিবীর অভিমুখী নতুন গতি সৃষ্টি করা যায় তাহলে ফিরে আসা সম্ভব।তো মহাকাশযানকে যদি পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করতে চাই তাহলে অবশই এমন রকেটের সাহায্য নিতে হবে যার গতি হবে সেকেন্ডে অন্তত সাত মাইল।এখন আমরা রকেট সম্পর্কে আলোচনা করবো। কীভাবে রকেটের উদ্ভাবন হলো। কীভাবে রকেট কাজ করে এবং কীভাবে মহাকাশযানকে মহাশূন্যে নিয়ে যায়।রকেটের প্রাথমিক উদ্ভাবন ঘটেছে অবশ্য বিজ্ঞানের যুগ শুরু হওয়ার বেশ আগে, সেই প্রাচীন যুগে। আতশবাজিও আসলে একপ্রকার রকেট। তবে গতি এত অল্প যে, মুক্তিবেগের ধারে কাছেও নয়। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, হাজার বছর আগেও চীনারা কঠিন জ্বালানী দ্বারা চালিত রকেট উদ্ভাবন করেছিলো। কিন্তু প্রয়োজন ছিলো তরল জ্বালানী ব্যবহারের।বিজ্ঞানের যুগ শুরু হওয়ার পর বিজ্ঞানীগণ কাক্সিক্ষত গতির রকেট উদ্ভাবনের সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন।তরল জ্বালানীর প্রথম রকেটটি উদ্ভাবন করেন মার্কিন বিজ্ঞানী রবার্ট গর্ডাড। ১৯২৬ সালের ১৬ই মার্চ সেটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। সেটি ১২.৫ মিটার উচ্চতায় উঠতে সক্ষম হয়েছিলো। তারপর বিধ্বস্ত হয়ে একটি বাঁধাকপির ক্ষেতে গিয়ে পড়ে। তবে গর্ডাড তখনই ঘোষণা করেছিলেন, রকেটের সাহায্যে মহাশূন্যযান চাঁদে পাঠানো সম্ভব হবে। এজন্য অবশ্য তাকে বহু উপহাস সহ্য করতে হয়েছিলো।রকেটের মধ্যে সাধারণত দুই বা তিন স্তর ব্যবহার করে মুক্তিবেগ অর্জন করা হয়। অর্থাৎ একটি স্তরের জ্বালানী ব্যবহার করে নির্দিষ্ট গতিতে নির্দিষ্ট উচ্চতা অতিক্রম করার পর ঐ স্তরটিকে রকেটের মূল কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। ফলে রকেটের ওজন অনেক কমে যায়। এরপর পরবর্তী স্তরের জ্বালানী ব্যবহার করে আরো বেশী গতি অর্জন করে নির্দিষ্ট উচ্চতায় উপনীত হয়। এরপর মহাকাশযানটিকে রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। রকেটটির তখন আর কোন ভূমিকা থাকে না। হয় তা সাগরে পতিত হয়, না হয় আবর্জনারূপে পৃথিবীর কক্ষপথে ছুটতে থাকে। পক্ষান্তরে মহাকাশযানটি তখন নিজস্ব গতিতে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে ছুটতে থাকে।রকেট প্রযুক্তিতে এখনো পর্যন্ত রাশিয়াকে শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। পৃথিবীর মত মহাশূন্যেও চলছে লাগাতার দূষণ। আর এর জন্য দায়ী মানুষের মহাশূন্য অভিযান। নভোচারীরা মহাশূন্য অভিযানে গিয়ে ফেলে আসে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ও আবর্জনা। মূলত এগুলো হচ্ছে ব্যবহৃত রকেট এবং নিষ্ক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহের লাখ লাখ ভগ্নখ- যা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর কক্ষপথে, যা যে কোন মহাকাশ-দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলে জোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।মানব মস্তিষ্ক হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার অপার কুদরতের অতি বিস্ময়কর সৃষ্টি। বিজ্ঞান এত অগ্রগতি লাভ করার পরো মানব মস্তিষ্কের অপার রহস্যের ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি।মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো পরিচালিত হয় মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত সঙ্কেত বা নির্দেশের মাধ্যমে। মস্তিষ্কের পুরোটা জুড়ে রয়েছে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অসংখ্য শিরার জাল, যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক রক্তের সরবরাহ লাভ করে। এর ফলেই মস্তিষ্ক সচল ও সক্রিয় থাকে। মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্তচলাচলে বিঘœ ঘটলে, বা রক্তক্ষরণ ঘটলে ঐ অংশটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, আংশিক বা পুরোপুরি। এটাকেই বলা হয় ব্রেনস্ট্রোক। মস্তিষ্কের রয়েছে বিভিন্ন অংশ এবং প্রতিটি অংশের রয়েছে আলাদা ভূমিকা। সবচে’ নীচের অংশটি শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দনসহ দেহের মৌলিককার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।মানুষ মস্তিষ্কের সাহায্যেই চিন্তা-ভাবনা করে, আবিষ্কার উদ্ভাবন করে, কিন্তু কখনো ভাবে না, এই মস্তিষ্ক যিনি দান করেছেন তাঁর কথা। মানুষ আসলেই বড় অকৃতজ্ঞ!
লোহা সম্পর্কে আলকোরআনে আল্লাহ তা‘আলা যে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন তা হলো তার মধ্যে নিহিত বিপুল শক্তি। তারপর বলেছেন একটি অনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কথা, যার ব্যাখ্যা হতে পারে বহুমুখী, যার কোন শেষ নেই। আর সেটা হলো, ‘তাতে রয়েছে মানুষের বিভিন্ন উপকার’।পাঁচ হাজার বছর আগেও লোহার ব্যবহার ছিলো বলে জানা যায়। যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমণ ও আত্মরক্ষা উভয় কাজেই বিরাট শক্তিরূপে লোহার ব্যবহার চলে আসছে বহু যুগ থেকে। এমনকি আধুনিক যুগের যুদ্ধেও।পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্রই ক্ষতিকর মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে প্রাণী-জগতকে রক্ষা করে। এর পিছনে লোহার ভূমিকাই প্রধান।লোহা ছাড়া বর্তমান সভ্যতার কথা কল্পনা করাও কঠিন। এমনকি মানুষের রক্তের প্রোটিন তথা হিমোগ্লোবিনে থাকে আয়রন বা লোহার পরমাণু, যা দেহকোষে অক্সিজেন বহন করে। রক্তে বিদ্যমান প্রোটিনের কারণেই রক্ত লাল দেখায়।