শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬) | বিজ্ঞান বিচিত্রা

চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য

চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যوإذا مرضت فهو يشفينআর যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই (আমাকে) আরোগ্য ও শিফা দান করেন।কিডনি, আমাদের দেহের ছাঁকনি!মানবদেহে আল্লাহ্র কোন্ কোন্ কুদরতের এবং কোন্ কোন্ নেয়ামতের কথা আলোচনা করবো! প্রতিটি অঙ্গই একটি আলাদা কুদরত! একটি আলাদা নেয়ামত! প্রতিটি অঙ্গই দেহের ভিতরে থেকে আমাদের অগোচরে সুস্থতা নিশ্চিতকারী, এমনকি জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা পালন করে চলেছে। কোন অঙ্গ যতক্ষণ কার্যকরতা না হারায় আমরা বুঝতেই পারি না, সারা জীবন কত বড় নেয়ামত কত বড় অকৃতজ্ঞতার সঙ্গে ভোগ করেছি।আমাদের দেহের ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গের মধ্যে একটি হলো, কিডনি (বা বৃক্ব)। আমার ইচ্ছে করে, কিডনির সঙ্গে মিলিয়ে এর নাম রাখি ‘ছাঁকনি’। কারণ দেহের ভিতরে রক্তের পরিশোধনের জন্য তা হুবহু ছাঁকনির মতই কাজ করে।কিডনির অবস্থানপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কিডনির ওজন ১৫০ থেকে ১৭০ গ্রামের মধ্যে হয়। এটি সাধারণত ১০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৫ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ৪ সেন্টিমিটার মোটা হয়। দেহে পেটের ভিতরে পিঠের দিকে কোমরের বরাবর  মেরুদ-ের দু’পাশে দেখতে দু’টি কানের মত কিডনির অবস্থান। (সম্ভবত) কিডনির এ অবস্থানের রহস্য এই যে, কিডনির কার্যক্রমের সঙ্গে মূত্রাশয় ও মূত্রনালীর প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। তাই মূত্রাশয় ও মূত্রনালীর নিকটবর্তী অবস্থানই ছিলো সঙ্গত। উল্লেখ্য, মূত্রাশয়ের অবস্থান হলো তলপেটে সামনের দিকে।কিডনি কী কাজ করে?আগেই বলা হয়েছে, আমাদের দেহের ভিতরে কিডনির ভূমিকা হলো ছাঁকনির মত। আমরা যে খাদ্য, ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্য অহরহ গ্রহণ করি, তার কারণে রক্তের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ তরল ও অতরল আবর্জনা তৈরী হয়, যা রক্তের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এগুলো হচ্ছে ‘টক্সিন’। তো কিডনি রক্তের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত টক্সিন বা বর্জ্য ছেঁকে বের করে আনে, আর তা মূত্র-নালীর সাহায্যে মূত্রাশয়ে নীত হয়। পরে তা মূত্র আকারে মূত্রনালিকা দিয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। সুতরাং বোঝাই যায়, কিডনির একটি অন্যতম কাজ হলো মূত্র তৈরী করা। সেই মূত্র মূত্রবাহী নালী দ্বারা মূত্রাশয় পর্যন্ত নীত হয়।ঐ নালীটি সাধারণত ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। মূত্রাশয়ে ৩০০/৪০০ মিলিলিটার মূত্র জমা হলে মূত্রত্যাগের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুভূত হয়। মূত্রাশয়ের নীচেযুক্ত মূত্রনালিকা দ্বারা মূত্র বের হয়ে যায়, যেটাকে আমরা বলি পেশাব করা। কিডনির আরেকটি কাজ হলো শরীরে ক্ষার ও অম্ল-এর ভারসাম্য বজায় রাখা এবং রক্তচাপকে সঠিক মাত্রায় রাখা। (বিভিন্ন হরমোন তৈরী ও নিঃসরণের মাধ্যমে কিডনি এই কাজটি করে থাকে।)আল্লাহর হুকুমে কিডনি আমাদের অগোচরে সারা জীবন কী পরিমাণ জীবনরক্ষাকারী সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা নীচের বিবরণ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে কিডনি প্রতি ত্রিশ মিনিটে দেহের সমস্ত রক্ত একবার পরিশোধন করে।কিডনির সেবাগুরুত্বের দিক বিচার করে আল্লাহ তা‘আলা মানবদেহে একটির স্থলে দু’টি কিডনি স্থাপন করেছেন, যাতে কোন কারণে একটির কার্যকরতা নষ্ট বা বিঘিœত হলে অন্যটি প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে যেতে পারে।আল্লাহ না করুন, যদি দু’টো কিডনিই নষ্ট হয়ে যায় - আর তা ঘটে সাধারণত নিজের শরীরের উপর অবিচার করার কারণে- তখন আর কষ্ট ও দুর্ভোগের সীমা থাকে না।ডায়ালিসিস কী ও কেন?শরীরের ভিতরে কিডনি যে কাজটি করে, সেটাই শরীরের বাইরে কৃত্রিমভাবে সম্পাদন করার যে মানবীয় প্রচেষ্টা সেটাকেই বলা হয় ডায়ালিসিস। প্রতিবারের ডায়ালিসিসে সময় লাগে কমপক্ষে চারঘণ্টা। ডায়ালিসিসের কারণে শরীরের উপর দিয়ে এত বড় ধকল যায় যে, শাব্দিক অর্থেই মানুষটা বিধ্বস্ত হয়ে যায়। সেদিন তো বটেই এমনকি পরের দিনও ঘুমের প্রচ- চাপ থাকে। সপ্তাহে তিনদিন যদি ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাহলে একবারের ধকল কাটিয়ে না উঠতেই পরবর্তী-বারের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হয়। চিন্তা করা যায়, কী ভয়াবহ পরিস্থিতি! তদুপরি প্রতিটি ডায়ালিসিসের জন্য খরচ হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা।চিন্তা করে দেখুন; বিনা কষ্টে, বিনা খরচে কীভাবে বছরের পর বছর, এবং জীবনভর কিডনি নামের ছাঁকনিটি অনুগত সেবকের মত আমাদের সেবা করে যাচ্ছে, আর আমরা!!কত নির্দ্বিধায়, কত নির্লজ্জতার সঙ্গে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করেই যাচ্ছি!!নিষ্কাশন ও পুনঃশোষণ!কিডনির মধ্যে বিদ্যমান আল্লাহ তা‘আলার কুদরতি নেযামের আরেকটি নিদর্শন এই যে, কিডনির মধ্যে রক্তপরিশোধিত করার যে ছাঁকনি অংশটি তা দু’ভাগে বিভক্ত। দু’টিভাগের যে দু’টি নাম তার উচ্চারণ বেশ কঠিন। গ্লোমেরুলাস এবং টিউবিউলাস (কাজ ও ভূমিকা হিসাবে আমরা সহজ বাংলা নাম রাখতে পারি, যথা প্রাথমিক ছাঁকনি ও চূড়ান্ত ছাঁকনি, আরো সহজ হতে পারে যদি বলি ছাঁকনা ও ছাঁকনি)প্রাথমিক ছাঁকনিটি প্রতি মিনিটে রক্ত থেকে ১২৫ মিলিলিটার হারে চব্বিশ ঘণ্টায় ১৮০ লিটার তরল পদার্থ আহরণ করে। এতে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ যেমন থাকে, তেমনি থাকে প্রয়োজনীয় পদার্থ। কারণ আগেই বলা হয়েছে, এটা প্রাথমিক ছাঁকন। তো এই ১৮০ লিটার তরল পদার্থ চূড়ান্ত ছাঁকনিতে এসে জমা হয়। সেখানে প্রায় ৯৯ ভাগ তরল পদর্থ পুনঃশোষিত হয়, যা আসলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ছিলো। তাই চূড়ান্ত ছাঁকনির মাধ্যমে সেগুলোকে আবার শরীরে ফিরিয়ে নেয়া হয়। মাত্র এক থেকে দুই লিটার অপ্রয়োজনীয় অংশ মূত্র আকারে নিষ্কাশিত হয়।
কিডনি ও লিভার সম্পর্কে আরো কিছু জরুরি আলোচনা, আল্লাহ চাহে তো আগামী সংখ্যায়। *