শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬) | প্রথম পাতা

অনুবাদে সম্প্রসারণ ও সঙ্কোচন

এ সংখ্যার ‘ডাক দিয়ে যায় মুসাফির’-এর শুরুটা দেখুন; মূল আরবী-أمثلة من الشباب المجاهدينثم ذكرت لهم بعض حكايات الشبان الذين ضحوا بحياتهم وإمكانياتهم ومستقبلهم الاقتصادي؛ ونعيمهم وترفهم في سبيل الدعوة إلى الشيوعية ونشر مبادئها؛ و ...! وذكرت لهم أمثلة جميلة للتضحية والبطولة لبعض الشبان الذين صحبوا السيد الإمام أحمد بن عرفان الشهيد من الهند إلى أفغانستان، إلى حدود الهند الشماليةএর তথাকথিত বিশ্বস্ত বাংলা তরজমা হবে-‘মুজাহিদীনের বীরত্বের কিছু উদাহরণআমি তাদের সামনে ঐ সব নওজোয়ান মুজাহিদের আলোচনা করলাম, যারা নিজেদের পুরো জীবন ও যোগ্যতাকে ব্যয় করেছে কমিউনিজমের প্রচার ও প্রসারের কাজে ....।তারপর তাদের সামনে ঐ সকল যুবকের কোরবানি ও আত্মত্যাগের কাহিনী তুলে ধরলাম, যারা সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর আন্দোলনে শরীক হয়েছেন। ...’্এটি উর্দূ থেকে অনুবাদ। তার মানে উর্দূ ও বাংলা অনুবাদ হুবহু এক। মূল আরবীর বলা যায় কার্বনকপি।এ অংশটি তরজমা করার সময় আমি সত্যি হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলাম যে, কীভাবে এর গ্রহণযোগ্য তরজমা হতে পারে! অসঙ্গতিটা দেখুন-শিরোনাম হচ্ছে মুজাহিদীনের বীরত্ব সম্পর্কে, আর নীচে আলোচনা হচ্ছে কমিউজমের পথে নিবেদিত যুবকদের সম্পর্কে! কী ব্যাখ্য হতে পারে এর! উর্দূ বা বাংলা তরজমা পড়ে কী ধারণা বা অনুভূতি হবে একজন ‘দূরের’ পাঠকের? এমনকি মূল আরবী যারা পড়বে তারাও এ অসঙ্গতি অনুভব করে হয়রান হবেন বলেই আমার মনে হয়।তো এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, উর্দূ অনুবাদক (যদিও মূল লেখকের তত্ত্বাবধানেই অনুবাদ করেছেন) এবং বাংলা অনুবাদক পাঠকের সামনে লেখকের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে কি সুবিবেচনা ও সুবিচারের পরিচয় দিয়েছেন?আল্লাহর শোকর অনেক চিন্তা-ভাবনার পর আমি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম তা এই যে, আমাকে প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে যে, লেখকের মূল বক্তব্যটি কী? তিনি আসলে কী বলতে চেয়েছেন? তো আমার মনে হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তিনি একথাটা তুলে ধরতে চান যে, হক ও বাতিল যে কোন আন্দোলনের পিছনে যুবশক্তিই মূল ভূমিকা পালন করে এবং তাদের ত্যাগ ও অবদানের মাধ্যমেই আন্দোলন সফলতার পথে এগিয়ে যায়। এজন্য প্রথমে তিনি বাতিল আন্দোলনের পিছনে যুবশক্তির ভূমিকা ও অবদান-এর উদাহরণ তুলে ধরেছেন, তারপর সত্যপথের যে আন্দোলন তাতেও যুবশক্তির ভূমিকা ও অবদানের উদাহরণ তুলে ধরেছেন। উদ্দেশ্য হলো মৌলিক-ভাবে যুবশক্তির মূল্যায়ন, তারপর দ্বীনের পথে যুবকদের এভাবে উদ্বুদ্ধ করা যে, বাতিলের জন্য যদি যুবকরা এরূপ ত্যাগ ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিতে পারে তাহলে দ্বীনের পথে যুবকদের কী পরিমাণ কোরবানি পেশ করা উচিত, যার বিনিময়ে রয়েছে আখেরাতে চিরস্থায়ী জান্নাত!তো এই হলো এখানকার পুরো বক্তব্যের সামগ্রিক চিত্র। সুতরাং শুরুতেই লেখকের জন্য সঙ্গত হবে যুবশক্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে একটা মূল্যায়ন তুলে ধরা তারপর উভয় ধারার উদাহরণ পেশ করা।এবার আপনি তিনটি অনুবাদ পাঠ করুন এবং তুলনামূলক পর্যালোচনা করুন, আশা করি তাতে অনুবাদের নাযুকতা এবং অনুবাদকের দায় ও দায়িত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে সক্ষম হবেন; অবশ্য যদি আপনি অনুবাদের জগতে আসলেই সৃজনশীল কিছু কাজ করতে চান।এ সংখ্যায় ‘আমার স্মৃতি, কিছু সুখের, কিছু দুঃখের’ সম্পর্কে দু’টি কথা। ‘আমার জন্ম ও নামকরণ’ এই শিরোনামের পুরো বক্তব্যটি পড়ুন। একদিকে বঞ্চনার জন্য অনুতাপ, যার জন্য শেষ বাক্যটি হলো, ‘আমি এ উভয় সৌভাগ্য থেকে মাহরূম।’অন্যদিকে আত্মসান্ত¡না লাভের চেষ্টা যে, পরোক্ষভাবে হলেও তাঁর নাম রাখার ক্ষেত্রে হযরত থানবী রহ-এর কিছু না কিছু ভূমিকা রয়েছে। তো অনুতাপ ও আত্মসান্ত¡না-এটাই হলো পুরো বক্তব্যের মূল চেতনা।অনুতাপের অংশটি তো বেশ স্পষ্ট-ভাবেই উঠে এসেছে। কিন্তু আত্ম-সান্ত¡নার দিকটি!? তা কিন্তু তেমন স্পষ্ট ও আবেদনপূর্ণভাবে উঠে আসেনি। অথচ অনুতাপ ও আত্মসান্ত¡না, দু’টোর মধ্যে দ্বিতীয়টির প্রতিই লেখকের ‘ফিতরী মায়লান’ থাকার কথা!এ আলোচনা সমানে রেখে অনুবাদটি পড়ুন ‘তবে বলতে ইচ্ছে হয়, ‘মায়খানেকা মাহরূম ভী মাহরূম নেহী’। কারণ একথা বলার সুযোগ আছে যে, আমার জন্মের আগে আমার নাম রেখে তবেই তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন।’ এ অংশটি সম্পর্কে চিন্তা করুন। এই যে, উর্দূ কবিতা-পঙ্ক্তিটি, এটি বড় বড় আলিমের লেখায় আসে। এখানেও এর উপযোগিতা ছিলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের। তো এই সংযোজন সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়? সম্প্রসারিত তরজমা কি অধিক গ্রহণযোগ্য নয়?হযরত থানবী রহ.-এর ইনতিকাল সম্পর্কে তিনি সাদামাটা খবর দিয়েছেন যে, তাঁর জন্মের তিন মাস পূর্বেই তার ইনতিকাল হয়ে গিয়েছিলো। এখানে যদি একটি শব্দ বর্ধিত করে তরজমা করা হয়, ‘তাঁর বেদনাদায়ক মৃত্যু আমার জন্মের তিনমাস পূর্বেই হয়ে গিয়েছিলো’, তাহলে সেটা অধিক উপযোগী হয় না?!‘সম্প্রসারণ ও সঙ্কোচন’, এ শিরোনামে আলোচনা এ পর্যন্তই। আগামী সংখ্যায় নতুন কিছু আলোচনা ইনশাআল্লাহ।