শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭) | কাশগর ও কায়রো

আজকের তুরস্ক ও পাকিস্তান ভাবতে হবে, কেন এ পার্থক্য?

একথা আজ দিবালোকের মত সত্য যে, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বা আন্তর্জাতিক মুদ্রাতহবিল, এগুলো হচ্ছে তথাকথিত ঋণ ও অর্থসহায়তার নামে ‘নিংড়ানো শোষণের’ হাতিয়ার। এ ঋণের অক্টোপাস একবার যদি কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারে তাহলে তার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় থাকে না। বাংলাদেশ হলো এর জ্বলন্ত উদাহরণ। বিশ্বব্যাংক-এর সঙ্গে আমাদের কত কিছু হলো! কত বড় বড় কথা বলা হলো এবং বাগাড়ম্বর করা হলো! অথচ দেখা গেলো, ঋণের জন্য এখনো বিশ্ব-ব্যাংকের কাছেই ধর্ণা দিতে হচ্ছে।

আমাদের আলোচনার ক্ষেত্র অবশ্য দু’টি মুসলিম দেশ- তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।

দুর্নীতির মহাব্যাধিতে বির্পযস্ত পাকিস্তানের নবনির্বাচিত সরকারপ্রধান ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তানের হাতে এখন রাষ্ট্রপরিচালনার মত পর্যাপ্ত অর্থ নেই। সম্প্রতি পাকিস্তান আই এম এফ-এর নিকট বিপুল পরিমাণ ঋণের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন পেশ করেছে। ঋণের আবেদনে সাড়া দেয়ার আগে আই এম এফ পাকিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কঠোর তদন্ত ও পর্যালোচনা শুরু করেছে দেশটির ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে কি না তা জানার জন্য। বলুন, একটি সম্ভাবনাময় মুসলিম দেশের জন্য- যে কিনা পারমাণবিক শক্তির অধিকারী- এটা কত বড় লজ্জা ও কলঙ্কের বিষয়!

পক্ষান্তরে তুরস্কের অবস্থা দেখুন কত ভিন্ন। সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান বলেছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় তুরস্কের অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো। তুরস্ক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আই, এম, এফ)-এর ঋণগ্রহণ বা এসম্পর্কিত প্রযুক্তিগত সাহায্য গ্রহণ থেকে সরে এসেছে। এটাকে বলা যায় পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক দাসত্ব থেকে মুক্তি।

তিনি বলেন, যখন আমরা দায়িত্ব নিয়েছি তখন আমাদের মাথায় ছিলো ২৩ হাজার পাঁচশ কোটি ডলার ঋণের বিশাল বোঝা। ২০১৩ সাল পর্যন্ত আমরা তা পরিশোধ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, ‘যত দিন আমি বেঁচে আছি, তুরস্ককে আর আইএমএফের দাসত্বে ফিরতে দেবো না।’

তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পাটি (সিএইচপি) যারা একসময় ক্ষমতায় ছিলো, সম্প্রতি এরদোগানের সমালোচনা করে বলেছিলো, তুরস্কের বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা ম্যাককিনসের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। এর জবাবে এরদোগান উপরের কথাগুলো বলেছেন আঙ্কারায় তার দলের আয়োজিত সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে।

তিনি বলেন, সিএইচপির সাবেক নেতৃবৃন্দই আইএমএফ-কে তুরস্কে নিয়ে আসার জন্য দায়ী। তারাই প্রথমে এ অর্থনৈতিক দৈত্যকে দেশের ঘাড়ে চাপিয়েছিলো।

তিনি বলেন, আমরা পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে নিয়োজিত। তাই আমেরিকার নেতৃত্বে শুরু হয়েছে তুরস্কের সুস্থ সবল অর্থনীতির উপর আগ্রাসী হামলা। আমরা আমাদের নিজস্ব কৌশল প্রয়োগ করেই এ হামলা থেকে বেরিয়ে আসবো। ওদের ডলার আছে তো আমাদের আছেন আল্লাহ!