শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭) | রোযনামচার পাতা

উম্মে হাবীবা তামান্না’র রোযনামচা

১-১১-৩৯ হি. রোববার

্আজ বিকেলের আকাশটা এত সুন্দর, এত মনোহর ছিলো! সারাটা বিকেল শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অবাক মুগ্ধ দৃষ্টিতে! এক আকাশের এত রূপ! আল্লাহর সৃষ্টি সবই সুন্দর, তার মধ্যে আকাশ যেন একটু বেশীই সুন্দর!!

২-১১-৩৯ হি. সোমবার

ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। পথে এমন যানজট! যত যান তত কালো ধোঁয়া এবং তত বিকট আওয়ায! বাইরে গেলেই আমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ি। সারাক্ষণ ঘরের নিরিবিলি পরিবেশে থাকি তো!

৩-১১-৩৯ হি. মঙ্গলবার

গত রাত থেকে আজ সারা দিন সারা রাত না পড়তে পেরেছি, না লিখতে পেরেছি। অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলাম। কিন্তু মানুষ কি অসুস্থতার মধ্যে লেখা-পড়া করে না! সময়ের এরূপ অপচয় আসলেই অমার্জনীয়। বিকেলে নানাকে দেখতে গেলাম মামার বাসায়। নানাকে দেখে নিজের কষ্টের কথা, অসুস্থতার কথা ভুলে গেলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে নানা যেন ¯েœহের শিশির বর্ষণ করলেন! ...

৪-১১-৩৯ হি. বুধবার

আল্লাহর শোকর! লেখার গতি এবং লেখার প্রীতি দু’টোই আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যেন গতি ও প্রীতির জোয়ার! এ জোয়ারে কখনো যেন ভাটার টান না লাগে। আল্লাহ যেন আরো দান করেন, আমীন।

৬-১১-৩৯ হি. শুক্রবার

আজ আব্বু এসেছেন ভোলা থেকে। আমার জীবনজুড়ে ছিলেন আব্বু। সেই আলোতেই এতদিন ছিলাম আলোকিত! এখন নতুন আলো নিয়ে উদিত হয়েছেন ‘আব্বা’!

জীবন কত জটিল! বাবা তার কলিজার টুকরোকে কত কষ্ট করে লালন পালন করেন, তবু তিনি তাকে রাখতে পারেন না চিরজীবন নিজের করে! নিজের ঘরের আনন্দ, নিজের ঘরের প্রাণ তুলে দিতে হয় একজন বাবার হাতে, যেন এখন থেকে হয় তার ঘরের আনন্দ এবং তার ঘরের প্রাণ! একজন বাবাকে একজন বাবার জন্য এটা করতে হয় মুখে হাসি আর বুকে ব্যথা নিয়ে। ....

আমার নতুন বাবাও তো আমারই মত একটি মেয়ের বাবা! তাই তিনি  বোঝেন বাবার জন্য মেয়ের, আর মেয়ের জন্য বাবার হৃদয়ের ব্যাকুলতা। তাই তিনি আমাকে গ্রহণ করেছেন বুড়োর বাবার জীবনে নতুন মেয়ের আগমনরূপে। এখানে আমি পেয়েছি মেয়ের আদর এবং মেয়ের মর্যাদা! ...

০০ কামনা করি, ঘরে ঘরে প্রতিটি নতুন মেয়ের হৃদয়ে যেন এমনই সুখের অনুভূতি অঙ্কুরিত হয়; কিন্তু হায়! ...

৭-১১-৩৯ হি. শনিবার

মাওলানা আব্দুল মালেক ছাহেব হুযূর অনুগ্রহ করে আমাদের দু’বোনের নামে চিঠি লিখেছেন। কিন্তু ভালো মানুষটি এমনই ভালো যে, সেই লেখা চিঠি সঙ্গে করে আনতেই ...!!

আজ তিনি ফোন করে বললেন, চিঠিটা পাঠাতে তো দেরী হয়ে যাবে। মামার ই-মেইলে না হয় পাঠিয়ে দিই! সম্ভবত আমার মনের দিকে তাকিয়ে বলেছেন। আল্লাহ আমাকে বলার তাওফীক দিলেন, আমি বরং অপেক্ষা করবো। এমন বরকতের চিঠি যান্ত্রিক উপায়ে পড়বো না। অপেক্ষার কষ্ট ... তিনি শুনে খুশী হলেন এবং দু‘আ করলেন।

৮-১১-৩৯ হি. রোববার

নূরের উপর নূর! হুযূরের চিঠির সুসংবাদ তো পেয়েছিই, আজ হুযূরের আম্মার সঙ্গেও কথা বলার সৌভাগ্য হলো, আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহর কোন্ কোন্ নেয়ামতের শোকর আদায় করবো!

৯-১১-৩৯ হি. সোমবার

আজ সারা দিন বৃষ্টি! কখনো মুষলধারে, কখনো গুঁড়িগুঁড়ি ঝিরঝির; কখনো রিমঝিম। টিনের চাল তো নেই, তাই বলতে পারবো না, ঠিক রিমঝিম কিনা। বহু দিন পর আজ সেই শৈশবের মত বৃষ্টিতে ভিজেছি। বৃষ্টির পরশ, হৃদয়কে এমনই ¯িœগ্ধ করে যে, ইচ্ছে হয়, চিরকাল ভালো হয়ে থাকি। ...

১০-১১-৩৯ হি. মঙ্গলবার

একটি ছোট্ট শিশু; তিনদিন হলো পৃথিবীর আলোতে চোখ মেলেছে! এত ভালো লাগলো! এত মায়া হলো! যে কোন ছোট শিশুকেই আমার ভালো লাগে, এমন ছোট্ট শিশুকে আরো বেশী ভালো লাগে। আল্লাহ যেন ...!

১১-১১-৩৯ হি. বুধবার

কী যে হলো আজ আমার! সারটা দিন সারাটা হৃদয়জুড়ে শুধু বিষণœতা, আর বিষণœতা। জানালার পাশে বসে শুধু বৃষ্টি দেখছি। আজকের বৃষ্টিটাও যেন অন্যরকম। ভেজা ভেজা বিষণœতার মেঘ ছড়িয়ে দিয়েছে হৃদয়ের প্রান্তরে। তাই তো ভেতরের মেঘগুলোও যেন গলে গলে বৃষ্টি হয়ে ঝরছে দু’চোখ বেয়ে। মন বিষণœ হলে মানুষগুলোকেও তখন মনে হয় অন্যরকম। কাউকে আর কাছের মনে হয় না। কাছে থেকেও যেন কত দূরে!

মনের সঙ্গে শরীরটাও যেন বিষণœ ও অবসন্ন। শরীর ও মনের এই বিষণœতা ও অবসন্নতার কোন সংজ্ঞাই খুঁজে পাচ্ছি না।

১২-১১-৩৯ হি. বৃহস্পতিবার

আজ যদি লিখতে পারতাম মন যেমন করে লিখতে চায়! যদি পারতাম শব্দের ফুল দিয়ে মালা গাঁথতে! বর্ণের বীণায় সুরের ছন্দ তুলতে ... তাহলে সেই মালা, আর সেই সুরের নাম হতো ‘ব্যথার দান’!

ব্যথার মধ্যেও এত সুখ থাকে! আগে জানতাম না, আগে বুঝতাম না! প্রতিটি সুখ দেখি ব্যথার সিঁড়ি বেয়েই নেমে আসে! আল্লাহর শোকর!

২১-১১-হি. শনিবার

পুষ্প এসেছে গতকাল; আজ দুপুরে পড়ার সুযোগ হলো। হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘ্রাণ নিলাম! আমার এ সময়ের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজন হবে এমন কলমের, এমন ভাষা ও শব্দের ...! এবারও প্রথমে প্রবেশ করলাম ‘কচি ও কাঁচা’র আসরে। আমি কাঁচা হলেও কচি তো নই, তবু এই পাতাগুলো যখন চোখের সামনে মেলে ধরি, ইচ্ছে করে, আবার ফিরে যাই বহু দূরের সেই শৈশবে! কিন্তু ...!

০০ তামান্না, আমার একটি তামান্নার কথা বলি! ‘কিচেন পেয়ে চিকেন হয়ে যেয়ো না। কলমের সঙ্গ কখনো ত্যাগ করো না। তুমি যে ‘মেয়েমানুষ’ এটা অস্বীকার করা তো যাবে না, তবে তুমি যে মানুষও, তা অন্যরা ভুলে গেলেও তুমি ভুলে যেয়ো না।

কথাগুলো বলতে হলো কেন? তোমার কলম আলোকিত সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে! এবং এ জন্য যে, বহু মেয়ের হাত থেকে কলমটা পড়ে যেতে দেখেছি! বহু মেয়েসম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে দেখেছি!