শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | তোমাদের পাতা

কলম যেন তাঁকে নিয়ে যায় আলোর জগতে সত্যের সান্নিধ্যে!

কলম যেন তাঁকে নিয়ে যায়  আলোর জগতে সত্যের সান্নিধ্যে!

 

নাম তাঁর অলোকা ভৌমিক, হিন্দুধর্মের প্রান্তিক পরিবারের দরিদ্র নারী। জন্ম ১৯৪৭ সাল ১০ই জানুয়ারী। যে বয়সে স্কুলে পড়ার কথা সে বয়সে হয়েছে বিয়ে। বাবার বাড়ী ও স্বামীর বাড়ীতে কঠিন দারিদ্র্যের মধ্যেই কেটেছে তাঁর সময়। একমুঠ ভাতের জন্য তাঁকে কষ্ট করতে হয়েছে দিনের পর দিন। অনাহারে কেটেছে রাতের পর রাত। স্বামী ও তার পরিবার ছিলো চরম বৈরী। স্বামী একদিকে ছিলো ‘কঠিন’, অন্যদিকে বেকার। এর মধ্যে অভাবের তাড়নায় স্বামী বিশ^নাথ ভৌমিক ভিটেবাড়িটুকুও বিক্রি করে দিয়ে ‘যমের হাত ধরে’ উঠলো চিতায়। ফলে সদ্য বৈধব্য বরণকারিণী নিঃসন্তান অলোকা ভৌমিকের পথে নামার উপক্রম হলো। যে মুসলিম পরিবার ভিটেবাড়ী খরিদ করেছে তারা খুব সচ্ছল না হলেও মানবিকতার পরিচয় দিলো। ঐ ভিটেরই একটি অংশে তারা তাকে থাকতে দিলো।

অলোকা ভৌমিক এরপর পাড়ি দিয়েছেন জীবনের দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীরও বেশী সময়। ...

এ পর্যন্ত যা বলা হলো গ্রামবাংলার চিরায়ত জীবনে তাতে নতুনত্বের কিছু নেই। তারপরো কেন আমরা বার্ধক্য পীড়িত এই হিন্দু বিধবার কথা আলোচনা করছি! কারণ কলমের প্রতি তাঁর তুলনাহীন ভালোবাসা ও অনুরাগ। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া বা শিক্ষা অর্জন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কারণ স্কুল থেকেই লেখাপড়া ত্যাগ করে স্বামীর সংসারে প্রবেশ করে তাঁকে বসতে হয়েছে চুলার আগুনের সামনে, যদিও রান্না করার জন্য চালডালের কোন সংস্থান ছিলো না ‘মুখ হা করা’ ঐ অভাবের সংসারে।

বই এবং কলম হাতে দেখলে স্বামীর রাগ চড়ে যেতো। তারপর অনেক কিছুই হতো, যা বিধবা অলোকা ‘স্বামীনিন্দা’ হয় বলে মুখে উচ্চারণ করা পছন্দ করেন না। 

তারপরো অলোকা বিদ্যাচর্চা ও জ্ঞান সাধনা ত্যাগ করেননি এবং ত্যাগ করেননি কলমের সঙ্গ। দীর্ঘ জীবনে বহু ঝড়ঝাপটা এসেছে। কিন্তু লেখার প্রতি মমতা এবং কলমের প্রতি ভালোবাসায় কখনো ছেদ পড়েনি। কিশোর বয়সে কবিতা ভালোবেসেছেন

এবং কবিতা লিখেছেন। ক্ষুধার জ¦ালায় যখন ঘুম হতো না, স্বামীকে লুকিয়ে কবিতা লিখতেন এবং কবিতার ছন্দের মধ্যে দুঃখের জীবনে সান্ত¡না খুঁজে পেতেন। এখনো তিনি কবিতা ভালোবাসেন এবং কাঁপা কাঁপা হাতে কবিতা লিখেই চলেছেন। এখন তিনি বার্ধক্যের ভারে এবং দারিদ্র্যের কষাঘাতে বিপর্যস্ত। কিন্তু শত অভাব অনটন ও ক্ষুধা অনাহারের মুখেও তাঁর কাব্যচর্চা ও সাহিত্যসাধনা বন্ধ হয়নি।  যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য শৈশব থেকে তার সঙ্গী, এখনো তা তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেনি। এখনো গভীর রাতে একা ঘরে ক্ষুধার যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করেন, আর তখন সেই দূর কৈশোরের মত কুপির আলোতে কবিতা লেখেন। সেই কবিতায় অভাব ও দারিদ্র্যের কোন ছাপ নেই, বরং চিন্তার গভীরতা, ভাবের উচ্ছ্বাস, কল্পনার বৈচিত্র্য এবং ছন্দের জাদুময়তা সবকিছুরই প্রকাশ ঘটেছে এই নিভৃত-চারিনী সাধক কবির রচনায়। তাঁর ক্ষুধাক্লিষ্ট জীবনে রচিত কবিতার একটি নমুনা এখানেদেখুন-

হারিয়েছে

এই শিরোনামে একটি কবিতা (পুত্রের মৃত্যুশোকে)

জানি না কোথায় কোন ঠিকানায়/কতদিন হয় গত

হারিয়েছে হায় কোন অজানায়/ খুঁজেছি অবিরত।

বলিছে আকাশ বলিছে বাতাস/নাই সে তো নাই

সারা বিশ^ ধরে খুঁজেছি যে তারে/ যদি বা দেখা পাই।

এসেছিলো ঘরে একদিনের তরে/ধরা নাহি দিল

ধরি ধরি করি ধরিতে না পারি/ হারিয়ে সে গেলো।

প্রাণটি আমার কাঁদে বার বারা/বুকে যে কত ব্যথা

কে বুঝিবে হায় কত বেদনায়/না বলা কত কথা।

যদি আসে ফিরে কে বলিবে তারে/আমিও হারিয়েছি

কোন ঠিকানায় কোন অজানায়/বিলীন হয়ে গেছি।

(একমুঠো রোদ্দুর)

***

কবিতা ও সাহিত্যের অঙ্গনে এই বিপর্যস্ত নারী বিপুল এক সম্ভাবনা এবং অফুরন্ত উদ্যম উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু দুঃখজনক সত্য এই যে, তাঁর পরিবার, সমাজ এবং দূরের ও কাছের কেউ তাঁর দিকে এগিয়ে আসেনি একটু সাহায্য নিয়ে, একটু সহানুভূতি ও সহমর্মিতা নিয়ে; কেউ না। যারা তাঁর কথা জেনেছে, তাঁর দারিদ্র্য ও ক্ষুধা-অনাহার দেখেছে; যারা তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভা ও সম্ভাবনার স্ফুরণ প্রত্যক্ষ করেছে, তাদের কেউ একটু পাশে এসে দাঁড়ায়নি তাঁর অভাব-দারিদ্র্য ও ক্ষুধা-অনাহার দূর করার জন্য এবং তাঁর কাব্যচর্চা ও সাহিত্য-সাধনার পক্ষে একটু অনুকূল পরিবেশ তৈরী করে দেয়ার জন্য।

তারপরো এ মহিয়সী নারী কোন প্রতিকূলতার কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করেননি। সবার অগোচরে, পরিবার, সমাজ ও মানুষের সব অবজ্ঞা অবহেলা হাসিমুখে উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন কলম-কালি ও হৃদয়ের আকুতি অবলম্বন করে; তিনি এগিয়েছেন তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পথে।

দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের নীরব সাধনার জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘খুব অল্প বয়সে বিশ^নাথের ঘরে বউ হয়ে এলাম। ক্ষুধা, অনাহার ও দারিদ্র্যের সঙ্গে তো আগে থেকেই পরিচয় ছিলো, এখানে এসে নতুন করে যেটা পেলাম সেটা হলো স্বামীর কঠিন শাসন ও শশুর বাড়ীর বৈরী আচরণ। তখন মেয়েদের লেখাপড়ার খুব একটা সুযোগ ছিলো না, বিশেষত আমাদের মত পরিবার-গুলোর ক্ষেত্রে। তাই আমার বিদ্যালয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তবে বর্ণশিক্ষা লাভ করার পর কৈশোরেই আমি অনুভব করেছি, কবিতা ও ছন্দের প্রতি প্রবল অনুরাগ। যখন কবিতা পড়তাম, চারপাশের সবকিছু, সবদুঃখকষ্ট, এমনকি নিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত ভুলে যেতাম। তখন মনে হতো, আমারও ভিতরে কথামালা তৈরী হচ্ছে, আমি পারবো কবিতা লিখতে এবং আমাকে পারতে হবে।

কলম-কাগজ নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। প্রথম সৃষ্টির আনন্দে একেবারে যেন আত্মহারা হয়ে গেলাম। মনে হলো, অভাব-দারিদ্র্য আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, ক্ষুধা-অনাহার আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে,  আপনজন আমাকে ব্যথা দিচ্ছে, তবে কলম আমাকে শান্তি দিতে পারে; কবিতা আমাকে সান্ত¡না দিতে পারে। সেই যে শুরু করেছি, এখনো, এই জরাবার্ধক্যের মধ্যে পড়েও কলমের সাধনায়, কবিতা ও ছন্দের মায়ায় ডুবে আছি।’

তাঁকে আশ্রয়দানকারী মুসলিম পরিবারটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অলোকা ভৌমিক বলেন, ‘যিনি আমার স্বামীর কাছ থেকে বাড়িটি ক্রয় করেছেন, তার আর্থিক অবস্থা যদিও ভালো নয়, তবু তিনি ও তার স্ত্রী হামীদা স্বামীর বিক্রি করা বাড়ীতে আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, তাতে বিধবা জীবনে আমার মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই অন্তত হয়েছে। এছাড়াও হামীদা সাধ্যমত আমাকে সাহায্য করেন, এমনকি আমার লেখার খাতা কলমও এনে দেন। আমি এই পরিবারটির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞ।

কৃতজ্ঞতার আন্তরিক প্রকাশ স্বরূপ তিনি তাঁর রচিত ‘জ্ঞানের আলো’ বইটি এভাবে উৎসর্গ করেছেন, ‘যাদের আন্তরিক সেবাযতেœ কাটছে আমার অসহায় জীবনের বৃদ্ধকাল, মোহম্মাদ ইয়াদ আলী ও হালিমা বেগমকে’

আমরা মনে করি, এখানে কবি অলোকার চরিত্রের অত্যন্ত মনোরম দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর কৃতজ্ঞতাবোধ অনুভব করে আমরাও অভিভূত।

তাছাড়া একটি কবিতার বই তিনি তার ‘প্রয়াত স্বামীকে উৎসর্গ করেছেন এভাবে- ‘জীবনের প্রতিটি ছন্দে সর্বদা যার ছবি নিরন্তর ভাসে- আমার সুখ-দুঃখের সাথী স্বামী বিশ^নাথ ভৌমিক-এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে।’

এখানেও তাঁর চরিত্রের অত্যন্ত অনুপম একটি দিক সমুজ্জ্বল হয়েছে। কারণ আমরা জানি তাঁর স্বামী ...

‘লেখকদের ইতিকথা’ বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন, ভাবতেও অবাক লাগে, অবহেলিত ঐ সকল কবি সাহিত্যিকদের স্মৃতি স্মরণে যারা আজীবন সাহিত্য সাধনা করেও দেশ ও সমাজের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাননি।

আমাদের দেশের নামী দামী লেখক বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ক’জন এরূপ ঔদার্য ও সহমর্মিতার পরিচয় দিতে পারেন, যেখানে প্রত্যেকে শুধু আত্মপ্রতিষ্ঠার ইয়া নফসি, ইয়া নফসিতেই ব্যস্ত। অলোকা ভৌমিককে তাঁর এ সমস্ত অনুপম উৎসর্গগুলোর জন্য দূর থেকে আমার শ্রদ্ধা ও ‘কল্যাণ কামনা’।

কলম ও কালির সাহায্যে মনের কথাগুলো কাগজের বুকে তুলে ধরেন যে লেখক, কবি ও সাহিত্যিক, তার অন্তরে এ ইচ্ছা সুপ্ত থাকে যে, তার কথাগুলো মানুষের কাছে যেন পৌঁছে। দেশ-কাল-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন লেখক ও কবি-সাহিত্যিকের অন্তরেই এ আকুতি থাকে, থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু নয় এবং নয় আত্মপ্রচারের অন্তর্ভুক্ত। মৃত্যুর প্রায় দ্বার প্রান্তে উপনীত সাধক কবি অলোকা ভৌমিকও এর ব্যতিক্রম নন। তারও কোমল হৃদয়ে এ আকুতি ছিলো যে, তাঁর কবিতা যেন মানুষের কাছে পৌঁছে! তাঁর কবিতার ছন্দ যেন মানুষের হৃদয়জগতে তরঙ্গ সৃষ্টি করে! তাঁর কবিহৃদয়ের বার্তা যেন মানুষ জানতে পারে!

কিন্তু  দুঃখের বিষয়, লজ্জার বিষয়,  কোন প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান বা কোন বিত্তবান তার রচিত বই প্রকাশে এগিয়ে আসেনি।

একমুঠ ভাতের অভাবে দিনের পর দিন যাকে ভোগ করতে হয় ক্ষুধার যন্ত্রণা তাঁর নিজের পক্ষে এক্ষেত্রে কিই বা করা সম্ভব! কিন্তু এখানেও নিঃস্ব দরিদ্র অলোকা ভৌমিক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী। খেয়ে না খেয়ে খরচের টাকা বাঁচিয়ে তিনি তাঁর লেখা ছাপার অক্ষরে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। বলতে গর্ব হয় এই দুর্বল নারী তাতে সফলও হয়েছেন। পাবনার একটি ক্ষুদ্র পুস্তকালয় ‘রূপম প্রকাশনী’ প্রতি বছর অলোকা ভৌমিকের বই প্রকাশ করে আসছে, কবির নিজস্ব অর্থে। তবু শুধু এইটুকু বদান্যতার জন্যও আমরা মনে করি রূপম প্রকাশনী সাধুবাদ লাভের যোগ্য।

এ সম্পর্কে অলোকা ভৌমিক বলেন, ‘মনের মধ্যে একটা  আশা ছিলো, আমার সারা জীবনের সাহিত্যসাধনার ফসল এ কবিতা-গুলো একসময় গ্রন্থ আকারে সমাজের মানুষের হাতে পৌঁছবে। কিন্তু কোন সুযোগই দেখতে পাচ্ছিলাম না। দু’একজনের হাতে কিছু কবিতা তুলে দিয়ে মর্মান্তিক --ভাবে প্রতারিতও হয়েছি। শেষে আমার অসচ্ছল অসহায় জীবনে তিল তিল করে কিছু অর্থ জমিয়ে  সেই অর্থ নিয়ে রূপম প্রকাশনীর দ্বারস্থ হয়েছি। ....

অলোকা ভৌমিক নিজের অতিকষ্টের জমানো অর্থ ব্যয় করে বই প্রকাশ করলেও মানুষকে তিনি বিনা মূল্যেই তা বিতরণ করেন। মানুষও অম্লানবদনে বিনামূল্যেই তা গ্রহণ করে আশি ছুঁই ছুঁই দারিদ্র্য-পীড়িত এ অসহায় বিধবা নারিকবিকে ‘কৃতার্থ’ করে। হায় বাংলাদেশ, লজ্জিত হও।

***

এমন নয় যে, অলোকা ভৌমিকের কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ- পাঠযোগ্য নয়। তার কবিতার নমুনা তো এর মধ্যেই প্রিয় পাঠক আপনি দেখেছেন। তাতে অলোকার কাব্যপ্রতিভা সম্পর্কে নিশ্চয় কিছুটা ধারণা আপনার হয়েছে।

এছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন সাহিত্য সংস্থা ও সাহিত্যব্যক্তিত্ব তাঁর কবিতার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশ কবিতা সংসদের পক্ষ হতে বলা হয়েছে, অলোকা ভৌমিক এ পর্যন্ত অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। যদিও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদ নেই, তবে তাঁর লেখা ও কবিতা তাঁর গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচায়ক। তাঁর ভাষা ও রচনাশৈলী হৃদয়গ্রাহী।’

বিখ্যাত প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ-এর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য সুব্রত ব্যানার্জী বলেন, ‘জীবনে উত্থান-পতন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও হতাশার দুর্বিপাকে দুলেছেন তবু খেই হারিয়ে ফেলেননি অলোকা ভৌমিক জীবন ও কবিতার পাঠ থেকে। অভিজ্ঞতা ও আশ্চর্যজনক সূক্ষ্ম অনুভূতির মিশ্রণে তাঁর কবিতা শুধু যে আমাদের মুগ্ধ করেছে, আপ্লুত করেছে, তা নয়, বরং আমাদের চেতনাজগতকেও আলোড়িত করেছে। তাতে তাঁর সঙ্গে যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়েছি আমরা। মায়াময় ভাষায় তিনি বুনেছেন তাঁর কবিতার শরীর।’

দুই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দুই বার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত জাতীয় শিক্ষক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী বলেন, ‘অলোকা ভৌমিক তাঁর কবিতায় তুলে আনেন সাগরের ঝিনুক থেকে মুক্তার মত শব্দমালা। ভাষার বুনন বিস্ময়কর। তাঁর হৃদয়নিঃসৃত কবিতায় পাওয়া যায় অরণ্যদ্যুতির আলোকচ্ছটা।

জীবনভর নানা দুঃখকষ্ট, অবহেলা নির্যাতন সহ্য করে আজ জীবন সায়াহ্নে ....

তবে, আমরা যতদূর বুঝেছি, যারা কবির জন্য কিছু করতে পারতেন তারাও ‘ঠোঁটসেবা’ পর্যন্তই নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। আসলে ...।

***

এ পর্যন্ত অলোকা ভৌমিকের যে ক’টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তা হলো- একগুচ্ছ কবিতা, সেতুবন্ধন, একমুঠো রোদ্দুর, ছোট বড় কবিতা ও সম্মিলিত কবিতা।

কাব্যসাধনার পাশাপাশি অলোকা ভৌমিক গদ্যরচনায়ও আত্মনিয়োগ করেছেন। বেশ কিছু প্রবন্ধ, জীবনী ও ধর্মবিষয়ক গ্রন্থ এ পর্যন্ত তিনি রচনা করেছেন এবং যথারীতি নিজের উদ্যোগে তা প্রকাশের ব্যবস্থাও করেছেন। সনাতন ধর্মবিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হচ্ছে অমৃত, অমিয় বাণী ও অমিয় সুধা। তার সুন্দর একটি প্রবন্ধসঙ্কলন হচ্ছে উদয়ের পথে। আরেকটি সম্প্রতি প্রকাশতি হয়েছে নারীর আত্মকথা নামে। এতে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ব্যতিক্রমী চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে। ভাবতে অবাক লাগে, এমন প্রতিকূল পরিবেশে, দূর গ্রামে এত অভাব, এত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেও এরূপ সমৃদ্ধ জ্ঞান তিনি অর্জন করেছেন কীভাবে?

সুখের বিষয়, অলোকা ভৌমিক হিন্দুধর্মের উপর লেখালেখি করলেও তাঁর মধ্যে ধর্মীয় গোড়ামির কোন ছাপ নেই। বরং বলা যায় তাঁর লেখার মাধ্যমে তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রচার করে থাকেন। নিজের মতাদর্শ তিনি এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের পরিচয়, আমরা মানুষ।’

ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও রয়েছে তাঁর অপরিসীম শ্রদ্ধা। নবীচরিত সম্পর্কে তিনি একটি বইও রচনা করেছেন। দুঃখের বিষয়, কবির বেশ কিছু গ্রন্থ আমরা সংগ্রহ করতে পারলেও এটি এখনো সংগ্রহ করা যায়নি।

***

অলোকা ভৌমিককে জিজ্ঞাসা করা হলো, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাঁর অন্তরে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভের ইচ্ছা জাগে কি না।

তিনি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলেন, কাজের স্বীকৃতি তো যে কোন লেখক সাহিত্যিকের অন্তরে থাকতেই পারে। পুরস্কার ও স্বীকৃতি, বিশেষত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সাহিত্যসাধনায়কিছুটা প্রেরণা সৃষ্টি করে, এটা ঠিক। তবে সেই দূর কৈশোরে আমি তো কলম ধরেছিলাম এবং কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম আমার ভিতরের প্রেরণায়। এখনো আমার হৃদয়ের প্রেরণাই হলো আমার শক্তি। তবে অস্বীকার করবো না, সরকারের পক্ষ হতে পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেলে ভালোই লাগবে।

***

আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, অলোকা ভৌমিকের কোন জিনিসটি আমার ভালো লেগেছে, আমাকে মুগ্ধ করেছে তাহলে বলবো, তাঁর তিনটি জিনিস আমার ভালো লেগেছে। প্রথমত শৈশব থেকে কলমের প্রতি তাঁর মমতা, যে জিনিসটা আমি সবসময় চেয়েছি আমার আপনজনদের মধ্যে, বিশেষ করে আমার প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে যেন হয়। মানুষ যদি কলমের কাছে সান্ত¡না চায় (এবং কলমের মাধ্যমে রাব্বুল কলমের কাছে) তাহলে আমার বিশ^াস ঐ মানুষটির জীবনে আর কোন কষ্ট থাকে না।

তাঁর দ্বিতীয় যে জিনিসটি আমার ভালো লেগেছে তা হলো তাঁর স্বভাব সংযম, কৃতজ্ঞতাবোধ ও চিন্তার সরলতা। আমার মনে হয়, এ তিনটি জিনিসেরই তিনি পুরস্কার পেয়েছেন আল্লাহ্র কাছ থেকে। তাই এত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনের সংগ্রামে তিনি আজ ‘অপরাজিতা’! তাঁর তৃতীয় যে জিনিসটি আমার ভালো লেগেছে তা হলো, মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর চিন্তা ও দর্শন। আমার মনে হয়েছে মৃত্যু সম্পর্কে তিনি ইসলামী চিন্তা ও বিশ^াসের যথেষ্ট নিকটবর্তিনী। তাতে আমার মনে বড় আশা জাগ্রত হয় যে, আল্লাহ্র ইচ্ছায় হয়ত এ মহিয়সী নারী মৃত্যুর আগে...।

যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তাঁর কোন্ জিনিসটি আমার ভালো লাগেনি, তাহলে আমি কিছুক্ষণ নীরব থাকবো, তারপর অলোকা ভৌমিকের কবিসত্তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলবো, সস্তা কিছু বিষয়কে তিনি কবিতায় তুলে এনে নিজের কবিব্যক্তিত্বকে অসম্মান করেছেন। কিছু বিষয়ে তিনি লিখেছেন তথ্যসম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন না করেই। এমন জাগ্রত বিবেকের কবির কাছে এটা আশা করা যায় না। যে সকল বিষয়ের অনুকূলে তথ্য ও সত্যের সমর্থন নেই সেগুলো কোন কারণে ‘দুর্বলতা’ সৃষ্টি করলেও এড়িয়ে যাওয়াই সঙ্গত ছিলো। এ শক্তি তাঁর চরিত্রে ছিলো। তবে মানুষ তো মানুষই। সীমাবদ্ধতা নিয়েই তো জীবন।

***

আমাদের শরীআতের বাণী হলো, হিকমত ও প্রজ্ঞার বচন হচ্ছে মুমিনের হারানো সম্পদ, যেখানে সে তা পাবে, সে-ই সেটার বেশী হকদার। তাছাড়া আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলিয়াতের কোন কোন কবির প্রশংসা করেছেন এবং প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তির বিশেষ বিশেষ গুণের।

এ দৃষ্টিকোণ থেকেই যখন যুগান্তর পত্রিকার ৮ই জুলাই সংখ্যায় অলোকা ভৌমিকের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো এবং আমার নযরে এলো তখন আমার অন্তর্জগতে এত বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি হলো যে, পুষ্পের পাতায় এই নিভৃতচারিণী নারীর জীবন সংগ্রাম ও সাহিত্যসাধনা সম্পর্কে কিছু লেখার বড় একটা দায় যেন বোধ করলাম।

যারা আমার ছাত্র, মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ বা মাদানী নেছাবের ছাত্র, যারা পুষ্পের পাঠক এবং পাঠিকা, যারা ইলমের জন্য, দ্বীনের জন্য বাংলাভাষা ও সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত বলে মনে করে তাদের সামনে আমি আজ এ প্রশ্নটি রাখতে চাই। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা অনাহারের মধ্যে জীবন যাপন করেও সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর যে দুর্বল নারী এভাবে কলম হাতে সাহ্যিত্যের সাধনা করে যাচ্ছেন তাঁর কাছ থেকে আমাদের কিছু কি শেখার আছে? বিশেষ করে সামান্য একটা রোযনামচা লেখার ক্ষেত্রেও যারা বিভিন্ন অজুহাতের কথা বলে এবং অলসতা, অবহেলার চূড়ান্ত...। আল্লাহ্র পক্ষ হতে এই বিপুল সুযোগ সুবিধা ও নেয়ামত ভোগ করেও নির্দয়ভাবে জীবনের এবং সময়ের  যে অপচয় আমরা করছি, এর জবার কি একদিন দিতে হবে না আমাদের। তাছাড়া জীবনও কি নির্মম হাতে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে না এর? অন্তত এই দুর্বল নারীর সবল উদ্দীপনার কথা জানার পরো কি আমরা জেগে উঠবো না! আমাদের ভেতরের অলস চেতনা জাগ্রত হবে না!

***

পুষ্পের প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের অবগতির জন্য বলছি, কলমের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, ‘নিভৃচারিণী এই মহিয়সী নারীকে পুষ্পের পক্ষ হতে (যদিও আমরা তার বহু লেখা ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত নই, বরং প্রবলভাবে ভিন্নমত পোষণ করি।) তাঁকে অভিনন্দন জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে মাদরাসাতুল মাদীনাহ্র পঞ্চমবর্ষের ‘স্থানীয়’ এক তালিবে ইলমকে পাঠানো হয়েছিলো। আলহামদু লিল্লাহ্ আমাদের তালিবে ইলম তাঁর কুশল সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে ফিরে এসেছেন। অলোকা ভৌমিক তাঁর প্রতি মাদরাসা ও পুষ্প পরিবারের সহানুভূতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

আমাদের তালিবে ইলম যে ‘কারগুযারি’ পেশ করেছেন, এক কথায় তা ‘শ্রদ্ধা উদ্রেককারী।  যেমন ধারণা করেছিলাম তেমনই হয়েছে। তাঁর আচরণের সরলতা ও ব্যক্তিত্বের ঋজুতা আমাদের তালিবে ইলমকে মুগ্ধ করেছে। তার মতে, ‘কল্পনাই করা যায় না, এমন দূর নিভৃত পল্লীতে এরূপ চিন্তা চেতনার একজন নারী অর্ধশতাব্দীরও বেশী সময় ধরে লোকচক্ষুর অগোচরে এরূপ সজীব জীবন যাপন করছেন।’

এখন আমরা পুষ্পের সকল পাঠক-পাঠিকা ও শুভাকাক্সক্ষীর নিকট এ মর্মে আবেদন পেশ করছি, ‘দুনিয়ার কষ্টের জীবন তো শেষ হয়েই যাবে। আখেরাতের জীবন হলো অনন্ত। সেখানে শান্তি যেমন চিরকালের জন্য, তেমনি অশান্তিও চিরকালের জন্য।

তো এই মহিয়সী নারীর প্রতি সর্বোচ্চ কল্যাণকামিতা আমাদের পক্ষ হতে এটাই হবে যে, আমরা আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে একান্ত বিনয়কাতরতার সঙ্গে দু‘আ করি যে, আল্লাহ্ যেন তাঁকে ঈমানের দাওলাত নছীব করেন। মৃত্যুর আগে তাঁর যেন কালিমা নছীব হয়। তাওহীদের প্রতি ঈমান ও বিশ^াস নিয়ে যেন আল্লাহ্র সামনে তিনি হাযির হতে পারেন। আসলে হিদায়াত তো আল্লাহ্রই হাতে। তবে আমরা তো আমাদের আকুতি আল্লাহ্র কাছে নিবেদন করতে পারি।

এই হিন্দু নারী তাঁর কবিতায় যে নবীপ্রশস্তি গেয়েছেন, প্রার্থনা করি, আল্লাহ্ যেন সেটার লাজ রক্ষা করেন এবং এ উছিলায় তাঁকে উম্মাতে মুহাম্মাদিয়্যার মধ্যে শামিল করে দেন, আমীন।

এখানে তাঁর রচিত দু’টি নবী প্রশস্তি তুলে দেয়া হলো-

নবীজী

আরবভূমিতে এলেন আচম্বিত

মহানবী হযরত

পাপ মহাতাপ করিতে নিস্তার

কোরান-হাদীছ যত

গগনের রবি প্রকাশিতে ছবি

আরবে দিলেন দেখা

মদীনার লোক পায় বড় শোক

নানা কালিমায় ঢাকা

করিতে স্থাপন ধর্মের রক্ষণ

উদয় পূর্ণ শশি

মদীনার ঘরে আঁধার যায় দূরে

ছড়ালো আলোর রশ্মি

অহিংসা ও দয়া সরলতা মায়া

সবার প্রতি প্রেম

করিলে যত পাপ কর্ম যত

নবীজীই প্রথম

দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন

ধরায় অবতার

নবীরূপ ধরে মহত্ত্ব প্রচারে

খোদার আগুসার

যে চিনে তাহারে সেই দেখা করে

মহৎ লোক যত

এই বিশ^বাসী একত্রে আসি

হলেন সকলে জড়ো

দূরে গেলো পাপ মনের সন্তাপ

না রহিল আর

কত ইতিহাস সুখের বাতাস

বহিছে বারে বার

নবীর দয়া ও দানে গল্প কবিতা গানে

লিখেছেন কত কবি-

আরব ও মদীনা অচেনা অজানা নবীজীর কথাই ভাবি

 ***

মুসলিমের মহানবী

মুসলিমের মহানবী এলেন আরবে

পূণিত হইল আরব পূর্ণ সৌরভে।

জাগরে আরবের মুসলিম সন্তান

এলেন মোদের নবী নিয়ে প্রাণ।

অধর্ম দূরে যারে ধর্মের গৌরবে

মুসলিমের মহানবী এলেন আরবে

হবে পাপীর ক্ষয়, হবে ধর্মের জয়

নাইরে কোন ভয় সবাই সুখে রবে

মুসলিমের মহানবী এলেন আরবে

মরুভূমির আরব বোঝাই পাপের ভরে

আল্লাহ্র নবী এসেছেন তাদেরই তরে

আসমানের চন্দ্র আজ উদয় আকাশে

মুসলিমের মহানবী এলেন আরবে।

 

 

 

 

 

 

গরীব বধু

তোমরা দেখেছো কি তারে?

 সে যে কাঁদতো বারে বারে।

মদ খেয়ে স্বামীটি তার ফিরতো কত রাতে

মার খেয়ে থাকতো সে স্বামীর বিছানাতে।

অনাহারে অনিদ্রায় কাটে সারাক্ষণ

সবার সঙ্গে কইতো কথা সরল তার মন।

 তোমরা কেউ দেখেছো তারে?

 সে যে কাঁদতো বারে বারে।

বুকের মাঝে আছে যে তার কত দুঃখ জ¦ালা

 চোখের জলে গাঁথিত সে যে মনের কথামালা।

 ছোট্ট একটি ঘর ছিলো তার চালা বেড়া নাই

চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা দেখিত সদাই।

 তোমরা দেখোনি কি তারে?

 সে যে কাঁদতো গুমরে গুমরে।

বর্ষা এলে মেঘের জলে মেঝে ভিজে যায়

প্রতিবেশীরা দেখে সবে করতো হায় হায়।

শত ছিন্ন মলিন বস্ত্র অঙ্গে আভরণ

চুপটি করে মুখটি বুজে থাকতো সারাক্ষণ।

 তোমরা চিনেছো কি তারে?

 সে যে কাঁদেই বারে বারে। (অলোকা ভৌমিক)

 

 

ছোট্ট শিশুরা

আজকে তোরা ছোট্ট শিশু

কালকে তোরা বড়

মায়ের কোল আঁকড়ে আছিস

 হয়ে জড়োসড়ো

ক্ষুধার জ¦ালায় কাঁদিস তোরা

চলিস হেলে দুলে

মনটি সবার করিস জয়

আধো আধো বোলে

 তোদের মাঝে ঘুমিয়ে আছে

কত শিশুর পিতা

ভবিষ্যতে হয়ত হবি

 তোরাই দেশের নেতা

আমরা তখন বুড়ি হয়ে

কাঁপব থর থর

পাকা চুলে হাঁটবো সবে

লাঠি দিয়ে ভরো।

 সোনার চাঁদ শিশুরে তোরা

 সোনার মতই হবি

 দেশের শিশু মোদের শিশু

       তোরাই দেশের রবি। (অলোকা)

 

মাহে রমযান

এসেছো তুমি মাহে রমযান

এই পৃথিবীতে।

 তোমার আগমনে কত খুশী

সকল মুসলিম চিতে।।

পরম পবিত্র মনে এসেছো

তুমি রমযান মাস।

চিরদিনের জন্য রয়েছে

 তোমার ইতিহাস।।

সংযম আর অনসন

 খোদারে ডাকা।

এক নিষ্ঠাতে ও ভক্তিতে ফেরে

 সৌভাগ্যের চাকা।।

নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ- খোঁড়া

আর বালক বালিকা

একমাস রাখেন রোযা

মহানন্দে পুলক।।

কঠোর কঠিন সাধনার ধন

তুমি রমযান মাস।

রমযানের শেষে উদিত

       ঈদের প্রকাশ।।

ঈদ মোবারক ঈদুল ফিতর

বড়ই আনন্দের ধ্বনি।

মাহে রমযান সকল

      মুসলিমের নয়ন মণি।। (অলোকা)

 

  ভাবি শুধু তাই কেন লিখে যাই

কী হবে আমার লেখা?

শুধুই লিখে যাই লেখার শেষ নাই

লিখি যে বসিয়া একা ....

কতই ছলে বলে দোয়াত ডেকে বলে/ পেট পুরা তার কালি

 কলম বলে, হায় না ছাড়ো আমায়

 যে যত দেয় গালি ...

নাই ধন দৌলত অর্থ ও সম্পদ

দীনহীনা অতি

অলক্ষে থাকিয়া কে দেয় বলিয়া

লেখো তুমি দিবারাতি

ভাবি শুধু তাই কেন লিখে যাই

কী হইবে আমার লেখা

শুধুই লিখে যাই লেখার শেষ নাই

লিখি যে বসিয়া একা।

(অলোকা, সংক্ষেপিত)

  আযান

রাত্রির শেষেতে   ভোর বেলাতে

ঐ আযান শুনি

দিগন্ত ছাইয়া     মুখরিত হইয়া

ঐ কার কণ্ঠ শুনি

মসজিদ ঘরে       মধুর সুরে

হতেছে ঝঙ্কার

 ভোরের আযানে  পাখীদের গানে

খুলে মনের দ্বার

মসজিদ পবিত্র   মুসলিম পবিত্র

পবিত্র আযান

আযান শুনিয়া    পবিত্র হইল

আকুল করে প্রাণ

আযানের শব্দ    হয়ে স্তব্ধ

পাপী তাপী যারা

 কেতাব ও কোরান   খোদাই মহান

জানিতে চায় না তারা

আসুন মুমিনগণ    আসুন ভাই বোন

শুনি আযানের সুর

মসজিদে গিয়ে   আযান দিয়ে

জীবন হোক মধুর

(অলোকা ভোমিক)