শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | কিশোর পাতা

তোমাদের জন্য লেখা

 

এক মায়ের কথা, যিনি আমার বোন!

এক মা, আমাকে বলেন ভাই; আমি তাকে গ্রহণ করেছি বোনের মর্যাদায়। রক্তের সম্পর্ক নেই তার ও আমার মধ্যে, কিন্তু ঈমান ও আদর্শের সম্পর্ক এবং চিন্তা ও বিশসের বন্ধন যে হতে পারে রক্ত-সম্পর্কের চেয়ে বহুগুণ গভীর ও নিবিড় তার জীবন্ত উদাহরণ তিনি। সবকিছুতেই তিনি যথেষ্ট দূরত্বে এগিয়ে রয়েছেন রক্তসম্পর্কের... চেয়ে। তিনি আমার চিন্তার সঙ্গে এমনই একাত্ম যে, সন্তানদেরও গড়ে তুলেছেন সেভাবে। আমার প্রতি তাদেরও ভালোবাসা রক্তের ঘ্রাণকে অতিক্রম করেছে শুধু পুষ্পের সৌরভকে অবলম্বন করে।

হাঁ, সম্পর্কের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং বন্ধনের প্রতিটি অভিপ্রকাশে তিনি যথেষ্ট দূরত্বে এগিয়ে রয়েছেন রক্তসম্পর্কের চেয়ে। একটি ক্ষেত্রে শুধু পিছিয়ে, শরীয়তের হুকুমে তাকে আমার সঙ্গে এবং আমাকে তার সঙ্গে পর্দা করতে হয়!

মনে পড়ে দাদীর কথা। তাঁর ছিলো দু’টি পুত্র; আমার বাবা এবং আমার জ্যাঠা। জীবনের স্রােত একটি ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে এসেছিলো আমার দাদীর কাছে। তিনি তাকে গ্রহণ করেছিলেন পুত্ররূপে। আর দু’টি পুত্রের সঙ্গে এই পুত্রটির তিনি কোন পার্থক্য করেননি, না আচরণে, না উচ্চারণে।

একদিন দাদা বললেন, তার সঙ্গে ‘আপনার’ পর্দা শুরু করতে হবে! দাদীকে দাদা ‘আপনি’ বলতেন।

গ্রামের সহজ সরল মেয়ে আমার দাদী, অবাক! কেন ‘মেছু-মাজু’র সঙ্গে পর্দা নাই, তাজুর সঙ্গে পর্দা হবে কেন?

মায়ের কাছে শুনেছি, শরীয়তের আদেশ শিরোধার্য করে তিনি তার সঙ্গে পর্দা করেছেন, কিন্তু মাতৃ-ৃমমতার আঁচল কখনো তার মাথার উপর থেকে সরিয়ে নেননি। ...

আমার দাদীর সেই তৃতীয় পুত্রকে আমি দেখেছি, এমনকি পরিণত বয়সেও। আমার বাবা ও জ্যাঠার মত তিনিও এখন কবরে, মাটির ঘরে। আমি বিশ^াস করি, এই ‘মাতৃত্ব’ আমার দাদীকে সংসারের ঘোর আঁধারের মধ্যেও যেমন আলোকিত করে রেখেছিলো, তেমনি অনন্ত জীবনেও এই মাতৃত্ব আল্লাহ্র ইচ্ছায় তাঁকে আলো দান করবে।

আমি তো মনে করি, এটি হুব্বু ফিল্লাহর- অতি উচ্চস্তরের স্বর্গীয় একটিরূপ। এটি মানুষকে আরসের ছায়া দান করতে পারে, যদি আল্লাহ্ দয়া করেন।

ফিরে আসি সেই বোনের প্রসঙ্গে যিনি চিরকাল রয়ে যাবেন চোখের আড়ালে, তবে হৃদয়ের আড়ালে নয়। এমন বোন আমার আরো আছে পর্দার আড়ালে এবং তারাই আমার ঊসর জীবনের সান্ত¡না। তাদের কাছেই আমি রেখে যাচ্ছি, যেখানেই তারা আছে, আমার চিন্তা, আমার আদর্শ, আমার...!

***

কোন সন্দেহ নেই, আমার ভাই-বোন সবাই আমাকে ভালোবাসে, মুহব্বত করে, আমার বহুরকম সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও। এজন্য তাদের প্রতি আমি অত্যন্ত শোকরগুজার। তবে সত্যকে যদি শ্রদ্ধা করি তাহলে বলতে হবে, শিক্ষা সম্পর্কে আমার যে চিন্তাদৃষ্টি, তার প্রতি ওদের আস্থা আমি অর্জন করতে পারিনি। তাই সন্তানদের তা‘লীম-তারবিয়াত ওরা করেছে নিজেদের মত করে। প্রয়োজনে আমার সাহায্য নিয়েছে। আমিও অম্লানচিত্তে এগিয়ে এসেছি, এ আশায় যে, তাতেও যদি কিছু হয়! কিন্তু আমার এ ‘পর্দানশীন’ বোন তার সন্তানকে আল্লাহ্র উপর ভরসা করে আমাকে উৎসর্গ করেছেন। তখন মাদানী মাক্তাব ছিলো না, কিন্তু সন্তানকে তিনি গড়ে তুলেছেন মাদানী মাক্তাবের আদর্শ নমুনারূপেই। এবার রামাযানে তিনি এসেছিলেন সন্তানকে মাদরাসাতুল মাদীনায় ‘ওয়াক্ফ’ করার উদ্দেশ্যে।

এ উপলক্ষে যে পত্রটি তিনি লিখেছেন (যদিও পত্রযুগ এখন বিদায় নিয়েছে) তা থেকে কিছু উদ্ধৃতি এখানে তুলে ধরছি-

‘আমার শ্রদ্ধেয় ভাইজান! সালাম গ্রহণ করুন এবং গ্রহণ করুন আমার হৃদয়ের সমস্ত ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। ....

দীর্ঘ অসুস্থতা থেকে দু’দিন হলো একটু সুস্থতা লাভ করেছি। অর্থাৎ এখন মাথা তুলে বসতে পারছি। এদিকে রামাযান বিদায়ের দ্বার প্রান্তে। তাই ছেলেকে নিয়ে আমি এবং ওর বাবা ছুটে এসেছি হযরতপুরে, যদিও জেনেছি, আপনি এখন হযরতপুরে নন। ...

আমার ভাইজান! দীর্ঘ অসুস্থতার কঠিন মুহূর্তগুলোও আমার জন্য ছিলো একরকম তৃপ্তি ও প্রশান্তির। যখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতাম, তারপর শুনতে পেতাম, ভাইজান আমার খোঁজ নিয়েছেন, হালপুরসি করেছেন এই অধম বোনের, তখন মনে হতো, রোগের সব কষ্ট, যন্ত্রণা দূর হয়ে গেছে। এত কষ্ট যন্ত্রণার মধ্যেও আশ্চর্য এক আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করতাম...

ভাইজান, তাকদীর কখন যে কার জন্য কী ফায়ছালা করে কে বলতে পারে! শৈশব থেকে হৃদয়ের আকুতি ছিলো, মনের যে কথাগুলো একান্ত আমার, সেগুলো কলমের কালিতে আপনার কাছে তুলে ধরবো, কিন্তু কোন সুযোগ ছিলো না এবং উপায় ছিলো না। আজ বোন হয়ে ভাইরূপে এবং আল্লাহ্র দানরূপে আপনাকে পেলাম। আপনি আমাকে গ্রহণ করলেন বোনের মর্যাদায়। হৃদয়ের সমস্ত কৃতজ্ঞতা তাই আপনাকে ভাইজান, জাযাকাল্লাহু খায়রান। ...

অসুস্থতার যখনই একটু উপশম হতো, ইচ্ছে হতো, আমার এবং ছেলেমেয়েদের হালপুরসির জন্য ফোন করে আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু সত্যি বলছি ভাইজান, ভয়! কেমন যেন একটা ভয় আচ্ছন্ন করে রাখতো, এখন ফোন করাটা আপনার জন্য কষ্টের কারণ হবে না তো! ...

একটা শান্তির কথা বলি ভাইজান! নিজের এবং ছেলেমেয়ে সবার অসুস্থতার মধ্যে যখন গাজীপুর ছেড়ে ঢাকা আসতে হলো, মনটা অস্থির হয়ে শুধু কামনা করছিলো, যদি হযরতপুর চলে যেতে পারতাম! ঠিক তখনই আমার ছোট্ট ছেলেটি বলে উঠলো অবাক করা কথা, ‘আম্মু, চলো না, আমরা হযরতপুর যাই!’

সারাটা পথ খুব ইচ্ছে করেছে, একবার, অন্তত একবার আপনার সঙ্গে একটু কথা বলি, কিন্তু সাহস হয়নি। তবে অন্তরের জগতে পুরোটা সময়ই ছিলাম আপনার মমতাপূর্ণ সান্নিধ্যে। ...

খুব ইচ্ছে ছিলো গাজীপুরে আমার মাক্তাব-বাগানের ফুলকলিগুলো আপনাকে দেখাবো, যেমন ইচ্ছে ছিলো বালিপাড়ার...। কিন্তু... তাকদীরে ছিলো না, তাই আপনার যাওয়া হলো না, না গাজীপুরে, না পিরোযপুরে। তাকদীর বরং আমাকেই এখান থেকে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে। ...

ভাইজান এত কথা বলেও, মনে হচ্ছে মনের কথাগুলো কিছুই যেন বলা হলো না। ...

ভাইজান! এতদিন যেখানেই ছিলাম, সবুজের সান্নিধ্যে ছিলাম। আর সবুজ, হৃদয়কে কত সজীবতা দান করে তা আপনার চেয়ে ভালো কে উপলব্ধি করবে ভাইজান! এখন পড়ে আছি ইটপাথরের এই শহরে সবুজের সমস্ত ¯িœগ্ধতা হারিয়ে। তবু এই প্রাণহীন পরিবেশে বেঁচে আছি শুধু আপনার ¯েœহের পরশ অনুভব করে। একটাই শুধু শান্তি ও সান্ত¡না যে, আমার ভাইজান দু‘্আ করে দিয়েছেন এবং আশ^াসবাণী শুনিয়েছেন। তাই আমিও বিশ^াস করি, ইনশাআল্লাহ্ এতেই আমার কল্যাণ হবে। ...

ভাইজান, আমার কলিজার সবচে’ প্রিয় খ-টা আপনার কাছে রেখে গেলাম। আল্লাহ্র হাওয়ালা করে ওকে আপনার হাতে তুলে দিলাম। ইচ্ছে তো ছিলো ওকে এমনভাবে গড়ে তোলবো যাতে আপনার জন্য প্রশান্তির কারণ হয়। কিন্তু আমারই সীমাবদ্ধতার কারণে পারিনি। ওর মাক্তাবী তা‘লীম ও তারবিয়াত যেমন হওয়ার দরকার ছিলো, আমার দ্বারা তা হয়নি। স্বীকার করছি ভাইজান, এটা আমারই সীমাবদ্ধতা, আমারই ত্রুটি ও দুর্বলতা। তবে ভাইজান, আল্লাহ্র রহমতের উপর ভরসা করে বলতে পারি, ওর কোমল কচি হৃদয়ে আপনার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বীজটা অন্তত বপন করতে পেরেছি, আলহামদু লিল্লাহ্! আপনার ¯েœহমমতার একটু জলসিঞ্চনে ইনশাআল্লাহ্ সবুজ বৃক্ষরূপে ছায়া বিস্তার করতে পারে। আমার শুধু একটাই প্রার্থনা আল্লাহ্র কাছে, সত্যি সত্যি ও যেন হতে পারে আপনার বুকের স্বপ্নের ময়ূরপেখম! কখনো ও যেন আপনার কষ্টের কারণ না হয়। আমীন। ...’

***

আমার শিক্ষকতার সুদীর্ঘ জীবনে সবাই, আপন-পর সবাই আমাকে শুধু ব্যবহার করেছে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার কাজে যখন যেটুকু প্রয়োজন মনে করেছে। কেউ তার সন্তানকে আল্লাহ্র রহমতের উপর ভরসা করে আমার কাছে অর্পণ করেনি। ... আজ প্রথম আমার একটি বোন, একটি মাত্র বোন ...! তাই যথেষ্ট স্পর্শকাতর বিষয় হওয়া সত্ত্বেও আগামী সময়ের জন্য কাগজের পাতায় তা আমানত রেখে দিলাম। হে আল্লহ্ তুমি কবুল করো। তুমি ‘লাজ’ রক্ষা করো। আমীন... (আ, তা মেছবাহ)

 

 

 

ত্যাগ ও আত্মত্যাগ এবং ....

পরিবারটি ধার্মিক ছিলো না, তবে সুখী ছিলো এবং সচ্ছল ছিলো। বাবা, তিনি ঈদ-জুমার মুছল্লী ছিলেন, ব্যবসায়ের প্রয়োজনে সুদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো। ছেলে-মেয়রা গড়ে উঠেছে বাবার মতই। বড় ছেলে রিয়ায শুধু মায়ের মত। ধর্মীয় পরিবার থেকে আসা ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবতী মেয়ে।

হঠাৎ করেই পরিবারটির উপর নেমে এলো আর্থিক বিপর্যয়। অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, বড় ছেলে রিয়াযকে পরিবারের হাল ধরার জন্য শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে হলো।

কিছুদিনের চেষ্টায় প্রথম যে সুযোগটা এলো দুবাই যাওয়ার সেটাই সে গ্রহণ করলো।

পরিবারের অবস্থা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে এলো এবং এক সময় আগের অবস্থাকেও অতিক্রম করলো। আগে ছিলো ‘বিভিন্ন ঝামেলার’ ভাড়া বাড়ি, এখন হলো, আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সুন্দর ভবন। রিয়াযের জোর আব্দারে মা-বাবার নামেই হলো সবকিছু।

ভাইবোনদের থেমে যাওয়া লেখা -পড়া আবার শুরু হলো এবং সবচে’ ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বাবা খুব খুশী বড় ছেলের প্রতি। ভাইবোনেরা তো বড় ভাইয়া বলতে উচ্ছ্বসিত। মা, শুধু মায়ের মত। সারাদিন কী যেন ভাবেন, আর ‘সংসার’ থেকে ছাড়া পেলেই জায়নামায বিছিয়ে কোরআন নিয়ে বসেন। চোখের পানিতে ¯œাত হয়ে মুনাজাতে আল্লাহকে তিনি কী বলেন, তা শুধু তিনিই জানতেন, আর কেউ জানতো না; জানার কারো আগ্রহও ছিলো না। কারণ জীবন আবার ফিরে পেয়েছিলো আগের তরঙ্গজোয়ার। সেই তরঙ্গ.. ভেসে চলার আনন্দে সবাই ছিলো..

বাবা জানেন, ছেলে তার বড় কোম্পানিতে বড় চাকরী করে। যেমন উচ্চ বেতন তেমনি আরাম। এসির নীচে বসে শুধু ফাইল দেখা। অর্থাৎ রিয়ায যা বলেছে, বর্ণে বর্ণে বাবা তা বিশস করেছেন। ভাই দু’টিও। বিশ^াস না করার কী আছে। এমন চাকরী না হলে এত অর্থ পাঠাতে পারে! মা শুধু ভাবেন, এত আরামের চাকরী হলে আমার মানিকের মুখটা এত কেন শুকনো! সেই ভাবনার ছায়া পড়ে বোনদেরও ...!

আধুনিক প্রযুক্তি দূরত্বকে এত দূরে নির্বাসন দিয়েছে যে, অবাক হতেই হয়! যেন শুধু চোখের দেখাই নয়, হাত বাড়ালেই সবকিছু ছোঁয়া যায়।

মাঝেমধ্যেই রিয়ায কথা বলে স্কাইপিতে। মা-বাবা, ভাইবোন যেমন তাকে দেখতে পায় এবং খুশী হয়, সেও সবার ‘দেখা’ পেয়ে প্রবাসজীবনের কষ্ট কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে যায়। বাড়ীর সবাইকেও আনন্দে মাতিয়ে রাখে। ছেলেকে নিয়ে বাবার অনেক গর্ব! বলেন, আমার বড় ছেলে আমার মতই হয়েছে!

মা শুধু বলতেন, আচ্ছা তোমারই ছেলে। এখন ওকে একটু বুঝিয়ে বলো না, কষ্ট কম করুক, এত টাকা পাঠানোর কী দরকার! বাবা শুধু রাগত দৃষ্টিতে... একেই বলে মেয়ে বুদ্ধি! টাকা ছাড়া...

 

একদিন রাতে কথা হলো বাবার সঙ্গে রিয়াযের। বাবা বললেন, তোমার বোন দু’টির বিয়ের চিন্তা করতে হচ্ছে বাবা! ভালো দু’টি প্রস্তাবও এসেছে। অবশ্য যৌতুকের ‘ডিমান্ড’ অনেক। বিশ লাখ!

রিয়ায মনে মনে ঘাবড়ে গেলেও বাবাকে আশ^স্ত করে বললো, পছন্দ হলে আগে বাড়–ন বাবা। টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!

ছোট ভাই একটা হোন্ডার আব্দার করলো। ভার্সিটিতে যাতায়াতের সুবিধার কথা বলে। রিয়ায হাসিমুখে বললো, আচ্ছা, ঠিক আছে! রিয়ায মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলো। মা বললেন, থাক। তিনি শুধু বেদনাক্লিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন ছোট ছেলের মুখের দিকে।

সর্বশেষ কথা হলো যে রাতে...!

রিয়ায বাবাকে বললো, চিন্তার কিছু নেই বাবা! টাকার ব্যবস্থা হচ্ছে।

বাবা বললেন, একটু তাড়াতাড়ি চেষ্টা কর বাবা! ওরা বড্ড তাড়া দিচ্ছে।...

ছোট ভাই বললো, ধন্যবান ভাইয়া, হোন্ডা পেয়ে খুশী হয়েছি।

আদরের ছোট বোন ফারহানার সঙ্গেও কথা হলো। রিয়ায একটু দুষ্টুমি করলো, কিরে আমার টিয়ের নাকি বিয়ে! অন্যসময়ের মত ফারহানা হালকা কোন জবাব দিতে পারলো না। বিষণœ কণ্ঠে বললো, ভাইয়া আমি তো আসলে তোমাদের বোঝা। হয় বাবার, না হয় তোমার। এমন বোঝা যে, মাথা থেকে ফেলতেও মাথায় নিতে হয় আরো বড় বোঝা।’ বলেই নিষ্পাপ শান্ত মেয়েটি কেঁদে ফেললো।

তুই আবার এত কথা বলতে শিখলি কবে রে! ...

ভাইয়া, একটা গরীব ঘর দেখে আমাকে বিদায় করো না! তাইতেই আমি খুশী....।

পরদিন সকালে... দুবাই থেকে একটি ফোন। রিয়াযের বন্ধুর... ‘রাতের শিফটে কাজ করার সময় রিয়ায দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে! আমি লাশ এবং ক্ষতিপুরণের টাকা নিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত আসার চেষ্টা করছি।’

রিয়াযের বন্ধুটি বুদ্ধিমান ছিলো। তারই চেষ্টায় চল্লিশ লাখটাকা ক্ষতিপূরণ সহজেই পাওয়ার গিয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে লাশ আনার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু একটা কাজ করলো বড় নির্বুদ্ধিতার। দুর্ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সঙ্গে আনলো। মা-বাবা ও পরিবারের সবাইকে দেখানোর জন্য। বাবা দেখলেন এবং নির্বাক হলেন। মা দেখলেন, আর ছোট্ট একটা চিৎকার করে...!

বোন দু’টি দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিলো, ‘আমার ভাইয়ের রক্তমাখা টাকার প্রতি যাদের লোভ, তাদের হাতে নিজেদের আমরা সঁপে দিতে পারবো না। ভাইহারা দু’টি বোনকে কেউ যদি শুধু ‘মেহদিরাঙ্গা হাতে’ গ্রহণ করতে চায়...।

এ যুগেও ছিলো এমন আদর্শ যুবক। তারা এগিয়ে এলো এবং দু’টি বোনের হাত ধরলো; শুধু মেহদিরাঙ্গা হাত!

বোন দু’টি তাদের সেই প্রিয় ভাইটিকে আজো ভুলেনি, যে ভাই শুধু তাদের ঘর আবাদ করার জন্য ...!

যে বাবা শুধু ঈদ-জুমার মুছল্লী ছিলেন তার দিনরাত এখন কাটে মসজিদে!

গ্রামের বাড়ীতে রিয়ায ও তার মায়ের কবরদু’টি পাশাপাশি, বেশ ছায়াঘেরা! ...

 

হায় জীবন! হায় ব্যর্থতা!

সুলতানা পারভিন, রাজশাহী

জীবনের দীর্ঘ পথ তো পাড়ি দেয়া হয়ে গেলো, কিন্তু জীবনের গন্তব্যে পৌঁছার আয়োজন করা কি সম্ভব হলো?

মাঝে মধ্যে এ প্রশ্নটি আমার সামনে জ¦লন্ত হরফে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। আমি কোন উত্তর খুঁজে পাই না। যে উত্তর চিন্তায় আসে তাতে আমি নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারি না। আমার ভিতরের সত্তাই যেন আমাকে তিরস্কার করে বলে, তুমি নিজেই নিজেকে প্রতারণা করতে চাও? এভাবে কেন নিজের কাছে নিজে ছোট হও?

তখন লজ্জায় মাথা নীচু করে থাকি! হতাশা তখন আমাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলে যে তা থেকে মুক্ত হওয়ার কোন উপায় আর খুঁজে পাই না।

শৈশব থেকে শুনে আসছি, মানুষ অভ্যাসের দাস। কিন্তু এটা যে এত বড় সত্য হয়ে আমার জীবনে প্রকাশ পাবে, কখনো কল্পনা করিনি।

পরিষ্কার বুঝতে পারি, আমার কিছু কিছু অভ্যাস আমার জীবনে বড় বড় ক্ষতি ও ব্যর্থতা ডেকে আনছে। অভ্যাসগুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করি; অভ্যাসের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু...!

রাতে যত তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়ি, ভোরে দেরীতে ঘুম থেকে জাগা হলো আমার অভ্যাস। নিজে তো জাগতে পারিই না, এলার্মের কড়া আওয়াযও আমাকে জাগাতে পারে না। এমনো হয় মাঝে মধ্যে যে, নামাযের ওয়াক্ত যায় যায়! আমার জীবন তাহলে সুন্দর হবে কীভাবে? আমার জীবন তাহলে উন্নত হবে কীভাবে? জীবনের চলার পথে ব্যর্থতার কাঁটাবন অতিক্রম করে সফলতার সবুজ উদ্যানে যদি প্রবেশ করতে চাই তাহলে নিদ্রাকাতরতার এই যে অভ্যাস, এর দাসত্ব থেকে মুক্ত তো আমাকে হতেই হবে! জীবনের প্রচ- হতাশার মধ্যেও আল্লাহ্র রহমত হচ্ছে আশার আলো। সেই আশার আলো অবলম্বন করেই জীবনের বাকি পথটুকু পাড়ি দিতে চাই। *

কোরআনিক বোটানিকাল গার্ডেন

কাতারের রাজধানী দোহায় ফাতেমা বিনতে ছালেহ নামের এক ভদ্র মহিলা একটি উদ্ভিদ-বিষয়ক উদ্যান গড়ে তুলেছেন, যার বৈশিষ্ট্য হলো, তাতে কোরআন ও হাদীছে বর্ণিত সকল প্রকার বৃক্ষ ও উদ্ভিদের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে।

ফাতেম বিনতে ছালেহ বলেন, আমার এ উদ্যান গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হলো কোরআন ও হাদীছে বর্ণিত যাবতীয় উদ্ভিদের পরিচয়, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও যত্ন-পরিচর্যার প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করা।

তিনি আরো বলেন, ‘কোরআনে বিশ প্রকার বৃক্ষ বা উদ্ভিদের কথা এসেছে, তার মধ্যে কাঁটাযুক্ত ও তিক্ত যাক্কুম ও দারী’ বৃক্ষদু’টার হাকীকত তো আল্লাহই ভালো জানেন। বাকি আঠারোটি বৃক্ষ বা উদ্ভিদ আমার উদ্যানে রয়েছে। যে কেউ এখানে এসে এগুলো সম্পর্কে বিশদ বৃত্তান্ত জানতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাদীছে ৫২ প্রকার উদ্ভিদ ও বৃক্ষের কথা এসেছে, যার মধ্যে ৩৯ প্রকারের উল্লেখ শুধু হাদীছে আছে, কোরআনে সেগুলোর উল্লেখ নেই। এগুলোও আমার বাগানে এসে দেখা যেতে পারে।’

পরিশেষে ফাতেমা বিনতে ছালেহ বলেন, ‘আমি চাই, এ উদ্যানটি যেন কোরআন ও হাদীছের একটি নতুন দিক নিয়ে চিন্তাগবেষণার কেন্দ্ররূপে গড়ে ওঠে, যা মানুষকে আল্লাহ্র পরিচয় ও মারেফাত অর্জনে সাহায্য করবে।’...

আমার মনে হয়, এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ। ভদ্রমহিলাকে আল্লাহ্ উত্তম বিনিময় দান করুন, আমীন।- মাশকূর

০০ তুমি যদি খবরের সূত্র উল্লেখ করতে, ভালো হতো। তুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছো। আসতে পারো।

 

দ্বন্দ্বসঙ্ঘাতের এই সংসারে

দ্বন্দ্বসঙ্ঘাতের এই সংসারে, হানাহানি ও রক্তপাতের এই পৃথিবীতে জীবনের বড় সত্য এই যে, যে মরতে জানে না সে লড়তে পারে না, আর যে লড়তে পারে না তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই। বেঁচে থাকতে হলে তোমাকে লড়াই করতে হবে, আর লড়াই করতে হলে মৃত্যুভয় তোমাকে জয় করতেই হবে।

মানবজাতির পুরো ইতিহাস এবং সভ্যতার এত শত উত্থান-পতন এ সত্যেরই প্রমাণ।

মুসলিম উম্মাহ্র হাজার বছরের ইতিহাসে এ সত্য যেন আরো বড় সত্য হয়ে সমুদ্ভাসিত। আমরা যখন মৃত্যু ভয় জয় করেছিলাম, বরং মৃত্যুকে জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবেসেছিলাম, আমাদের তলোয়ারে তখন ধার ছিলো, আর দুশমনের গর্দান ছিলো নরম। আমরা তখন বীরের মত লড়াই করেছি এবং ইজ্জতের যিন্দেগি ও মর্যাদার জীবন অর্জন করেছি।

আমাদের হযরত খালেদ ইবনুল ওয়ালীদ বলতে পেরেছেন, ‘শরাবের পেয়ালা তোমাদের কাছে যত প্রিয়, জামে শাহাদাত আমাদের কাছে তার চেয়ে প্রিয়।’

যখন আমাদের মধ্যে মৃত্যুভয় বাসা বেঁধেছে তখন থেকে আমরা লড়াই ভুলে গিয়েছি। এখন কেউ আমাদের ভয় করে না, আমরা সবাইকে ভয় করি।

হযরত ছিদ্দীকে আকবার রা. সত্যই বলেছেন-

‘তুমি মৃত্যুর প্রতি আসক্ত হও, তোমাকে জীবন দান করা হবে।

এসো আবার আমরা লড়তে শিখি এবং মৃত্যুকে জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাসতে শিখি।

(আকরাম হোসাইনের লেখা অবলম্বনে)

পুষ্পের কথা এবং আমার ব্যথা!

আমাতুল্লাহ্ তাসনীম আবিদা/ কাপাসিয়া, গাজিপুর, ঢাকা

জীবনের স্বপ্ন এবং স্বপ্নের জীবন এক তো নয়। জীবনের স্বপ্ন মানুষকে সামনের দিকে পথ চলার সাহস ও প্রেরণা দান করে; জীবনের স্বপ্ন মানুষকে ত্যাগ ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে; জীবনের স্বপ্ন মানুষকে নিরন্তর সাধনার মাধ্যমে কিছু অর্জনের আকুতি দান করে!

স্বপ্নের জীবন! স্বপ্নের জীবন মানুষকে জীবনের স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত করে। স্বপ্নের জীবন মানুষকে ভোগের মায়াজালে আবদ্ধ করে এবং কল্পনার জগতে বন্দী করে রাখে। স্বপ্নের জীবন মানুষকে জীবনের সাধনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

যারা স্বপ্নের জীবন ভালোবাসে, জীবনের চলার পথে একসময় তারা পথ হারিয়ে ফেলে। অদৃশ্য থেকে কেউ যখন জানতে চায়, ‘পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ?’ তখন তারা কোন উত্তর খুঁজে পায় না। স্বপ্নের ঘোরে শুধু প্রলাপ বকে।

জীবনের স্বপ্ন যারা ভালোবাসে, গন্তব্যে পৌঁছার আকুতি নিয়ে তারা পথের দাবী রক্ষা করে। পথের দাবী আর কিছু না, পথ চলতে থাকা এবং চলার ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে না পড়া। পথের দাবী আর কিছু না, পথের চড়াই উতরাই দেখে ভয় না পাওয়া, হোঁচট খেয়ে পড়ে না থাকা, বরং নতুন উদ্যমে উঠে দাঁড়ানো। পথের দাবী আর কিছু

না, কিছু পাথেয় সংগ্রহ করা এবং পথের চিহ্ন দেখা যায়, এমন আলোর সান্নিধ্য গ্রহণ করা।

জীবনের স্বপ্ন বুকে নিয়ে যারা পথ চলা শুরু করেছে, পুষ্প হলো তাদের চলার পথের পাথেয়! পুষ্প হলো, পথের চিহ্নগুলো তাদের সামনে তুলে ধরার ¯িœগ্ধ আলো।

তাদের জন্য পুষ্প হলো আকাশের দান, আকাশের করুণা, আকাশ থেকে ঝরা ঝিরঝির শিশির।

চিন্তায় চেতনায়, ভাবে অনুভবে এবং নীতি ও নৈতিকতায় সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য পুষ্প হলো তাদের জন্য এক আদর্শ বন্ধু!

জীবনের স্বপ্নগুলো প্রতিকূল পরিবেশে যখন হতাশার আঁধারে আক্রান্ত হয়, পুষ্প তখন সেই হতাশ হৃদয়ে আশার প্রদীপ জে¦লে প্রতিটি স্বপ্নকে আবার আলো দান করে। পুষ্পের সান্নিধ্যপরশে বুকের স্বপ্নগুলো আবার যেন আলোকিত হয়।

জীবনের স্বপ্নকে যারা জীবন উৎসর্গ করে হলেও বাঁচিয়ে রাখতে চায়, পুষ্পের প্রতিটি পাপড়ি তাদের প্রেরণা দান করে এবং হৃদয়ের উদ্যানে স্বর্গীয় সুবাসের প্রবাহ সৃষ্টি করে।

জীবনের স্বপ্নকে যারা জীবনের বিনিময়ে হলেও সজীব রাখতে চায়, পুষ্প তাদের নববসন্তের বার্তা দান করে এবং ফুলে ফুলে তাদের জীবনকে পুষ্পিত করে তোলে... জীবনের স্বপ্নকে যারা কলি থেকে ফুলে রূপান্তরের সাধনা করে, পুষ্প তাদের হৃদয়কে রঙধনুর সাজে সাজিয়ে তোলে; পুষ্প তাদের...!

আমার সৌভাগ্য; যখন আমি আমার এই ছোট্ট বুকে জীবনের কিছু স্বপ্ন লালন করতে শুরু করেছি তখনই আমার জীবনে ঘটেছে পুষ্পের শুভাগমন। পুষ্প যেন তার পাপড়িতে পাপড়িতে আমার হৃদয়ের না বলা কথাগুলো এবং আমারই হৃদয়ের সুপ্ত ব্যথাগুলো তুলে ধরে। পুষ্প আমাকে কলমের সান্নিধ্য দান করে এবং কলবের সঙ্গে কলমের ঐশী বন্ধন গড়ে তোলে।

পুষ্প আমাকে এ উপলব্ধি দান করেছে যে, জীবন খুবই অল্প সময়ের। এ জীবনকে গড়ে তুলতে হবে অনন্ত জীবনের সোপানরূপে। এ জীবনকে উৎসর্গ করতে হবে অসংখ্য জীবনে আলোর প্রদীপ প্রজ¦লিত করার সাধনায়।

পুষ্পের প্রতি এজন্য আমার হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা, সবটুকু শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতা।

পুষ্পের সুবাস যারা পূর্ণরূপে গ্রহণ করে জীবন তাদের ধন্য! নিজের জন্য, নিজের পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য তারা কল্যাণের উৎস। আমারও বিগলিত হৃদয়ের কামনা, পুষ্পের সুবাসে আমার জীবন যেন হয় পূর্ণ সুবাসিত।

আরো কিছু কথা ছিলো বলার জন্য। নাহ, সেগুলো না হয় থাক আমার হৃদয়ের গভীর আমার নিসঙ্গতার সঙ্গী হয়ে! *

 

লিখতে চাই সাদা গোলাবের কথা!

জিহাদুল ইসলাম দেওভোগ মাদরাসা

ফুল ও সৌন্দর্য যেন সমার্থক। ফুলের সৌন্দর্যের আসলেই কোন তুলনা নেই। কত কিছুর প্রতি কত কারণে মানুষের মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়! তবে সে ভালোবাসা চোখের দৃষ্টিপথে, কিংবা অন্যকোন ইন্দ্রিয়যোগে মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে, কিন্তু ফুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা! এ ভালোবাসা হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত হয় এবং হৃদয়ের গভীরে স্থিত হয়। ফুলকে মানুষ ভালোবাসে কৃতজ্ঞ হয়ে এবং কৃতার্থ হয়ে।

***

পৃথিবীর বাগানে কত অসংখ্য ফুল! কত আকারের, কত বর্ণের এবং কত ঘ্রাণের। ফুলের বিপুল বৈচিত্র্যের মধে গোলাব আমার প্রথম পছন্দ। তার মধ্যে  আবার সাদা গোলাব হলো সবচে’ প্রিয়। কোন বাগানেইগোলাব বিরল নয়, তবে সাদা গোলাব বিরল ও দুর্লভ।

সাদা গোলাব আমি দেখেছি দিনের আলোতে, চাঁদের জোসনায়। দেখেছি মেঘলা দিনে, রিমঝিম বৃষ্টিতে। দেখেছি ভোরের মিষ্টি রোদে এবং সন্ধ্যার বিষণœ লালিমায়। সব পরিবেশেই সাদা গোলাব, আমার মনে হয়েছে অনন্য। রোদে বলো, বৃষ্টিতে বলো, সাদা গোলাব তোমাকে ¯িœগ্ধ হাসি উপহার দেয়। সাদা গোলাব ছাড়া বাগানের যেন পূর্ণতাই আসে না। এমনকি জীবনের পূর্ণতায়ও যেন কিসের একটা অতৃপ্তি থেকে যায়।

***

আমার একটি বাগান আছে। যেমন ক্ষুদ্র আমি তেমনই ক্ষুদ্র আমার বাগান। ছোট্ট প্রিয় ঐ বাগানটিতে সামান্য কিছু ফুল ছিলো, তবে সাদা গোলাব ছিলো। ফুলের প্রতিটি গাছের প্রতি আমার যত্ন ছিলো, তবে সাদা গোলাবের যে গাছটি, তার প্রতি ছিলো আমার আলাদা যত্ন ও পরিচর্যা। যখন গাছটির গোড়ায় পানি দিতাম, মনে হতো, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত দিয়ে যেন ভিজিয়ে রাখছি গোড়ার মাটি!

***

আমার বাগানে প্রতিটি ফুল ফোঁটে এবং ঝরে, কিন্তু সাদা গোলাবটি যেন চির সজীব! হে নীল আকাশ, সাদা গোলাবের পাপড়িতে তুমি কি বর্ষণ করো জান্নাতের শবনম! তাই কি সে লাভ করেছে এমন অনির্বাণ প্রাণ! জীবনে আমি কি হতে পারবো সাদা গোলাবের মত!

***

আজ আমি যে সাদা গোলাবের কথা বলতে চাই, তিনি আমার জীবনের উদ্যানে প্রস্ফুটিত হয়েছিলেন অনন্ত সুবাস নিয়ে। কিন্তু একদিন তিনি ...!

আমার দাদার কথা

আফ্ফান, মাদানী মাক্তাব, চূড়ান্ত স্তর

আকাশ আমার ভালো লাগে, আর ভালো লাগে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে। আকাশের দিকে যখন তাকাই, দাদাকে আমার মনে পড়ে। আমার দাদা ছিলেন আকাশের মত উদার, তাঁর দিলটা ছিলো আকাশের মত বড়। গরীবের দুঃখ দেখে তিনি খুব কষ্ট  পেতেন, আর গরীবকে সাহায্য করতেন। দাদা আমাদের বলতেন, গরীবকে যদি সাহায্য করো, দুঃখী মানুষের কষ্ট যদি দূর করো, আল্লাহ্ তোমার প্রতি খুশী হবেন।

আমি তখন ছোট ছিলাম। দাদা আমাকে অনেক আদর করতেন, একেবারে মায়ের মত আদর। কাঁদলে আমাকে বুকে তুলে নিতেন। একথা সেকথা বলে আমার কান্না ভুলিয়ে দিতেন। যখন আমি হাসতাম, সেই হাসি যেন দাদার মুখম-লে ছড়িয়ে পড়তো!

সেই দাদাটি এখন আমার পাশে নেই! আল্লাহ্র ডাকে তিনি আল্লাহ্র কাছে চলে গিয়েছেন। দাদাকে যখন মনে পড়ে, মনটা বড় অশান্ত হয়ে কেঁদে ওঠে। তখন আমি আকাশের দিকে তাকাই, আর তখন আকাশের বুকে আমার দাদার নূরানী চেহারাটা যেন ভেসে ওঠে। মনে হয়, ঐ যে দাদা আমার দিকে তাকিয়ে কী সুন্দর হাসছেন!

আমার চোখে তখন পানি আসে। চোখের দৃষ্টিটা ঝাপসা হয়ে যায়, আর দাদার মুখের ছবিটা আকাশের বুক থেকে মুছে যায়। দাদার জন্য আমি সবসময় দু‘আ করি, আল্লাহ্ যেন দাদাকে জান্নাতে শান্তিতে রাখেন, আমীন।

মাটি, বৃক্ষ ও মানুষ/সাইফুদ্দীন রেযা

একটি বৃক্ষশিশু। দু’টি কোমল পাতা নিয়ে মাটির বুক ভেদ করে অঙ্কুরিত হয়। ধীরে ধীরে বড় হয়। সবুজ বৃক্ষের রূপ ধারণ করে এবং সবুজের শামিয়ানা দিয়ে ছায়া বিস্তার করে।

একটি মানবশিশু। মাটির উপাদানেই জন্মগ্রহণ করে। মাটি থেকে মাটি হয়েই উঠে আসে। সময়ের ব্যবধানে সে এক সবল সক্ষম মানুষে রূপান্তরিত হয়।

বৃক্ষ ও মানব; দু’য়ের মধ্যে রয়েছে একটি চিরায়ত সম্পর্ক। উভয়েরই শেকড় মাটিতে; মাটির গভীরে। মাটির সঙ্গে উভয়েরই রয়েছে শেকড়ের টান।

বৃক্ষকে যদি মাটি থেকে উপড়ে ফেলো, তার বেড়ে ওঠার, এমনকি তার প্রাণপ্রবাহের সেখানেই শেষ। একটি বৃক্ষের জীবনে তাই মাটির প্রয়োজন, হোক পরিমাণে তা খুব সামান্য।

বিস্তৃত ভূমিতে ঐ যে বৃক্ষটি, যত বড় হোক, পত্রপল্লবিত হোক, যতই ছায়াবিস্তার করুক, তার বেঁচে থাকা যেমন শেকড় দিয়ে মাটিকে আঁকড়ে ধরে, ঠিক তেমনি উঁচু ভবনের ছাদে, ব্যালকনিতে ছোট্ট কোন টবে বেড়ে ওঠা ঐ যে বৃক্ষচারা, তারও বেঁচে থাকা এবং প্রাণ ধারণ করা একটুকরো মাটিকে অবলম্বন করেই। শেকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকেই তাকে আহরণ করতে হয় খাদ্য ও রস।

একটি মানবশিশু, আমি-তুমি-আমরা, মাটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বৃক্ষশিশুর মতই, ছোট বড় গাছগুলোর মতই। মাটির উপাদানে তৈরী হয়ে মাটি থেকেই আমরা উঠে এসেছি। মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করেইবেঁচে আছি। একদিন এই মাটির বুকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। শিঙ্গার বাঁশির সুরে আবার একদিন এই মাটি থেকে আমরা উঠে আসবো দলে দলে; ঠিক যেমন বৃষ্টির পানি পেয়ে মাটি থেকে উঠে আসে উদ্ভিদ।

মাটির সঙ্গে মানবের সম্পর্ক, তাই বলা যায়, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং মৃত্যুপরবর্তী অনন্ত জীবন পর্যন্ত বিস্তৃত। মাটির সঙ্গে মানবের সম্পর্ক শেকড়ের, প্রাণের এবং অস্তিত্বের সম্পর্ক। মাটি ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব নেই; মাটি ছাড়া মানুষের প্রাণসজীবতা নেই।

প্রকৃতির বুকে মাটির সঙ্গে মাখামাখি হয়ে জন্মলাভ করে যে শিশুটি; মাটিতেই হামাগুড়ি দিয়ে সামনের দিকে যায়। কাদামাটিতে একাকার হয়। তাতেই খিলখিল করে হেসে ওঠে প্রাণের উচ্ছলতায়। খালি পায়ে সবুজ ঘাসের উপর এবং মাটির উপর হেঁটে বেড়ায়। তাতে তার সমগ্র অস্তিত্বে মাটির ঘ্রাণ, মাটির শীতলতা যেন ছড়িয়ে পড়ে। মাটির সঙ্গে মাটিমাখা এই শিশুটির যেমন সম্পর্ক. ইটপাথরের নগরে উঁচু ভবনের কোন ছোট্ট খোপের মধ্যে চোখ মেলেছে যে শিশুটি, অনেক দিন যার সঙ্গে মাটির দেখা নেই, মাটির সঙ্গে যার কোন পরিচয় নেই তারো শেকড়ের সম্পর্ক, প্রাণের সম্পর্ক ঐ মাটিরই সঙ্গে। তারো হৃদয়ের গভীরে কোথায় যেন মাটির জন্য রয়েছে হাহাকার। জাহাযে সাগরের জীবনে যারা অভ্যস্ত, এজন্যই হয়ত দূর থেকে মাটির আভাস পেয়ে উল্লাসে তারা চিৎকার করে ওঠে, ‘ঐ যে মাটি! ঐ যে বন্দর!’

এজন্যই হয়ত মানুষ বাড়ীর ছাদে, ব্যালকনিতে টবের মধ্যে মটি ভরে গাছ লাগায়। একটু হলেও যেন মাটির সঙ্গে...।

মাটির মানুষ যেখানেই থাক, মাটি থেকেই তার সূচনা, মাটিতেই তার পরিণতি। মাটিই তার শুরু ও শেষ। আমার মহান ¯্রষ্টা তাই তো বলেছেন, মিনহা খালাকনাকুম, ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা।

স্বভাবে আচরণে মাটির সঙ্গে যারা সম্পর্ক অটুট রেখে জীবন যাপন করতে পারে তারা ভাগ্যবান। মাটিতে তাদের প্রত্যাবর্তন এবং মাটি থেকে তাদের পুনরুত্থান হবে সহজ সুন্দর ও আনন্দময়। একটুকরো মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের যে বিধান সেখানেও কি রয়েছে এই একই রহস্য? পবিত্রতা অর্জনের জন্য মাটিকে হতে হবে পবিত্র। তাহলে মাটিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য আমাকেও কি হতে হবে না পবিত্র জীবনের অধিকারী! মৃত্যুর পর মানুষের সঙ্গে মাটির কোমল বা কঠিন আলিঙ্গনের রহস্যও কি এখানেই নিহিত?! *

 

আলো ও অন্ধকারের রহস্য

  আলো কী এবং অন্ধকার কী? এ প্রশ্ন আজকের নয়, সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই, যখন মানুষ আলো ও অন্ধকারের সঙ্গে মাত্রই পরিচিত হয়েছে তখন থেকে এ প্রশ্ন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রকৃতির যখন যে রূপ মানুষের সামনে এসেছে, তা থেকে মানুষ এ প্রশ্নের সমাধান অর্জনের চেষ্টা করেছে।

মানুষ কি খুঁজে পেয়েছে তার প্রশ্নের সামাধান? বোধ হয় না। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের কাছে যেমন এ প্রশ্ন রহস্যের মধ্যেই ঢাকা ছিলো, আজকে আধুনিক যুগের মানুষের কাছেও তা একই রকম রহস্যাবৃত।

তখনো মানুষ দিনের আলোতে প্রশ্ন করেছে। আলো কী? কোন উৎস থেকে আসে আলো? মানুষের জীবনে আলোর কী প্রয়োজন? মানুষ কাছে আলো বেশী প্রিয় না অন্ধকার? মানুষের জীবনে আলোর বেশী প্রয়োজন না অন্ধকারের। অনেক সময় আলোর ধাঁধায় মানুষের দৃষ্টি

এমন ধাঁধিয়ে যায় যে, কিছুই দেখতে পায় না, বা ঠিকভাবে দেখতে পায় না, অথবা যা দেখতে পায় তা...

আবার অনেক সময় অন্ধকারে মানুষের দৃষ্টি কেমন যেন স্থিরতা লাভ করে। তখন অনেক কিছু সে স্পষ্ট দেখতে পায়, স্পষ্ট অনুভব করে এবং সে অন্তত সত্যের খুব কাছে পৌছে যায়। তাহলে কি বলতে পারি, আলোর মধ্যের রয়েছে অন্ধকারের অস্পষ্টতা, আবার অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে আলোর উজ্জ্বলতা! আলো এবং অন্ধকার দু’টোরই প্রয়োজন যদি না থাকবে মানুষের জীবনে তাহলে দিনের আলোর পাশাপাশি কেন রাতের অন্ধকার? কেন তাহলে ভোরে পূর্বদিগন্তে রাঙা সূর্যের উদয়, আবার কেন পশ্চিম দিগন্তে বিষণœ সূর্যের অস্ত! আরেকটা কথা, দিনের আলো এবং রাতের অন্ধকার, আর হৃদয়ের আলো এবং হৃদয়ের আঁধার, এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য কী? আমরা ইচ্ছে করলে এবং চেষ্টা করলে রাতের অন্ধকার দূর করতে পারি, শুধু একটা বাতি জ¦ালতে যা দেরী, কিংবা শুধু একটা সুইচ টিপতে... হৃদয়ের আঁধার দূর করার উপায় কী? খুব সহজে কি সম্ভব হয় হৃদয়ের অন্ধকার দূর করা?

যখন পৃথিবীতে বিদ্যুৎ ছিলো না তখন কি জীবন খুব অন্ধকার ছিলো! আজকের পৃথিবীতে এই যে বিদ্যুতের আলোর এত প্রাচুর্য, এত ঝলকানি, এখন কি জীবন খুব আলোকিত!

তিক্ত হলেও সত্য এই যে, আধুনিক সভ্যতা যা জীবনকে অনেক গতি দান করেছে এবং দান করেছে অনেক শক্তি, যা জীবনকে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করেছে এবং করেছে অনেক আয়েসী ও বিলাসী, তিক্ত সত্য এই যে, এত কিছুর পরো আধুনিক সভ্যতা আলো-আঁধারের রহস্যকে আরো যেন ঘনীভূত করে তুলেছে। এ প্রশ্নকে এখন যেন নতুন মাত্রা দান করেছে। এখন মানুষ জানতে চায় বাইরের আলো এবং ভিতরের অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য কী এবং মানুষের জীবনের কোন্টির পরিণতি কী?

মানুষ এখন জানতে চায়, বাইরের অন্ধকার ও ভিতরের অন্ধকারের পার্থক্য কী?

আল্লাহ্ যে বলেছেন, মানুষকে তিনি সমূহ অন্ধকার থেকে এক আলোর দিকে বের করে আনতে চান, আলোর এককতা আসলে কী এবং অন্ধকারের বহুত্ব-এর তাৎপর্য কী?

বহু অন্ধকার থেকে এক আলোর অঙ্গনে প্রবেশের উপায় কী? কোন দিকে তার পথ? ¯্রষ্টা ছাড়া আর কেউ কি পারে পথ দেখাতে?!

 

‘আপনি আমার

‘আপনি আমার পিতার মত, মায়ের মত, ভাই ও বড় ভাইয়ের মত; তুমি আমার সন্তানের মত, মেয়ের মত, বোনের মত।’ বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষ মানুষকে এমন কথা বলে। শুনতে ভালো লাগে, অন্তরে কোমলতার অনুভূতি জাগে এবং ...

তবে তিক্ত হলেও সত্য এই যে, এগুলো খুব কমই হয় মানুষের মনের কথা, বরং নিছক কথার কথা, শুধু সৌজন্যের প্রাণহীন প্রদর্শন। এভাবে জীবনকে স্পর্শ না করেই মানুষ জীবনের কাছ থেকে কিছু পেতে চায়।

আমরা কি বুঝতে পারি, এ শব্দগুলোর ধার ও ভার কত? প্রতিটি শব্দের দায় কী? দায়িত্ব কী? প্রতিটি শব্দ কিছু সুবিধা যেমন দেয় তেমনি আরোপ করে কিছু দায় ও দায়িত্ব। আমরা শব্দের দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে শুধু সুবিধাটুকুই পেতে চাই। যদি আমরা শব্দের দায় অনুধাবন করতাম এবং দায় গ্রহণ করতাম তাহলে আমাদের সম্পর্কগুলো হতো অনেক সজীব ও প্রাণবন্ত।

জীবনের সান্ত¡না এই যে, সম্পর্কে যত শব্দ আমার সামনে এসেছে, আমি সেগুলোর দায়গ্রহণ করেছি এবং মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করেছি, যদিও সামনের মানুষটির কাছ থেকে ...!

 

স্বপ্ন দেখতে হয় এভাবে!

একটি চিঠির উত্তর!

প্রিয়...

হৃদয়ের ক্ষতে পট্টি লাগানো হয় না। পট্টির প্রয়োজন দেখা দেয় শরীরের বাইরের যখমে।

তো সবার আগে ভাষার এসব কারুকাজ তোমাকে শিখতে হবে। ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম স্তরটা তো আগে অতিক্রম করো! চিন্তার প্রথম বুনিয়াদটা তো আগে মযবূত করো! শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপ তো সুন্দরভাবে অতিক্রম করো! তারপর একটি সুন্দর কর্মজীবন তো গ্রহণ করো। তখন তুমি স্বপ্ন দেখা শুরু করতে পারো, জীবনের বিস্তৃত পরিধির উপযোগী যে কোন স্বপ্ন!

০ আমি ইসরাইল, আমেরিকা ও ইউরোপের সকল দম্ভ ধূলিসাৎ করে দিতে চাই।

০০ ভালো! কিন্তু কথা হলো, তুমি চাইবে, আর হয়ে যাবে! জীবন এত সহজ, এত সস্তা!

যে কোন বিষয়ে সবার আগে যা জরুরি তা হলো প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা। আর যোগ্যতা হলো একটি ভবন, যার জন্য প্রথমে প্রয়োজন মযবূত বুনিয়াদ, যা গড়ে ওঠে মাটির নীচে, যা কেউ কোন দিন দেখতে পায় না। জীবনের এই বুনিয়াদি অংশটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তোমার জীবনেও যে কোন বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে মযবূত বুনিয়াদের। আমার মাদরসায় আছে একজন ‘ক্ষুদে ছালাহুদ্দীন’, তাও আবার ‘গাজী’। বেচারাকে ফজরের সময় বহুবার ডেকে তবে তুলতে হয়।

০ মুসলিম উম্মাহর দুর্দশার এ সময়ে  আমিই তাদের উদ্ধারের মহৎ কাজ কাধে তুলে নিতে চাই।

০০ চন্দ্রবিন্দুহীন দুর্বল কাঁধ এত বিপুল ভার বহন করতে পারবে তো!!

০ এখনই আমি সর্ববিষয়ে পারদর্শি হতে চাই।

০০ আমিও তো চাই, সর্ববিষয়ে তুমি দীর্ঘ ঈকারের পারদর্শী হও।

আমাকে তুমি পথ দেখাতে বলেছো, কোন পথে গাজী ছালাহুদ্দীন হওয়া যায়!

তোমার কী খেয়াল। ঐ পথটি জানা থাকলে, সবার আগে আমিই সেদিকে ছুটে যেতাম না!

জীবনের পথে চলার যতটুকু পন্থা ও পদ্ধতি আমার জানা, তা তো তোমাকে বললাম। এখন পরবর্তী কাজ তোমার!

০ আপনার ঠিকানা জানা ছিলো না। এখন ঠিকানা পেয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনা ও ইচ্ছা-আকাঙ্খা নিয়ে...

০০ দেখো তো ‘গাজী সাহেব’, তোমার বানানের কী করুণদশা!

০ ইতি লিখেছো এভাবে-

মুসলিম উম্মাহর কা-ারী ইচ্ছুক মুহম্মাদ হাসিবুল ইসলাম।

০০ তুমি বোধহয় লিখতে চেয়েছিলে, ‘কা-ারী হতে ইচ্ছুক’। তো আমি সেটা সংশোধন করে দিলাম। হয়ত তুমি যখন উম্মাহর কা-ারী হবে, এই গরীবের কথা একটু হলেও তোমার মনে পড়বে!

কামনা করি, জীবনের পথে তোমার পদক্ষেপগুলো সঠিক ও সরল যেন হয়। কঠিন বাস্তবতার পথে চলার যোগ্যতা...