শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | হযরত আলী নাদাবীর পাতা

আমাদের জন্য অনুকরণীয় -১-২-৩

আমাদের জন্য অনুকরণীয়

হযরত আলী মিয়াঁ রহ.কে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এবং বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা দ্বারা ভূষিত করেছে। কিন্তু তিনি ছিলেন এমনই বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী মহামানব যে, কোন পুরস্কার ও সম্মাননাই তাঁকে মহিমান্বিত করতে পারেনি, বরং পুরস্কার ও সম্মাননাই তাঁর দ্বারা গৌরবান্বিত হয়েছে। 

 তিনি   জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন ইলমের সাধনায়, ইলমের প্রচার-প্রসারের মেহনতে। তারপর দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে লাগাতার ছুটে বেড়িয়েছেন দেশ থেকে দেশে এবং মহাদেশ থেকে মহাদেশে। মুসলিম বিশে^র বড় বড় আলিম ও বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেমন মিলিত হয়েছেন তেমনি অমুসলিম বিশে^র বড় বড় জ্ঞানী ও স্কলারের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, আবার সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কথাবার্তা বলেছেন। যেখানেই তিনি গিয়েছেন, মানুষ তাঁর জ্ঞানের আগে গুণ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। পাশ্চাত্যের জনৈক বিদগ্ধ প-িৎ ইসলাম গ্রহণ করার পর হযরত আলী মিয়াঁ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ইসলাম সম্পর্কে আমি যথেষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিক অধ্যয়ন করেছি। তাতে আমার বুদ্ধি ও চিন্তা প্রভাবিত হয়েছে, কিন্তু হৃদয় বিগলিত হয়নি। তারপর আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনী অধ্যয়ন করেছি, যার আবেদন ছিলো বুদ্ধির পরিবর্তে আমার হৃদয়ের প্রতি। তবে আমি তালাশ করলাম যে, এমন পুতপবিত্র চরিত্রের কোন মানুষ কি বর্তমানে দুনিয়াতে আছে? থাকতে পারে? হযরত আলী নাদাবীকে দেখার পর আমার বিশ^াস হলো যে, ইনিই হলেন আমাদের যুগে নবীজীবনের বাস্তব নমুনা। তখন আমার সমস্ত দ্বিধা দূর হলো এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম।

আমরাও তো পারি চেষ্টা করতে নবীজীবনের কিছু ছায়া গ্রহণ করার! আমাদের দেখে মানুষ যেন অন্তত বলে ...! (আবু তাহের মিছবাহ)

মুসলিম উম্মাহর আজকের করণীয়

হায়, আমাদের প্রিয় আবুল হাসান আলী নাদাবী রাহ. আজ যদি বেঁচে থাকতেন! আরবদের তিনি কত ভালোবেসেছেন, কতভাবে আরব জাতিকে খাবে গাফলত থেকে জাগাতে চেয়েছেন! আরব শাসকদের কখনো কোমল ভাষায়, কখনো কঠিন শব্দে সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে সউদী রাজপুরুষদের বারবার উদ্বুদ্ধ করেছেন, সামনের কাতারে এসে মুসলিম উম্মাহ্কে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। তিনি কি কল্পনাও করতে পেরেছিলেন, আরবের শাসকেরা সব রাখঢাক ছেড়ে ছুঁড়ে এমন খোল্লামখোল্লা ইসরাইল ও তার ইহুদীবাদের লেজুড়বৃত্তিতে লিপ্ত হবে! আজ তিনি কী বলতেন, যদি শুনতে পেতেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছে, ‘আমাদের সমর্থন ছাড়া তোমরা দু’সপ্তাহ টিকতে পারবে না ...! আর বিন সালমান বলছে, ‘আমি কিছু মনে করিনি, আপন ভাই বলতেই পারে।’ তিনি যদি জানতেন, ‘ইহুদী জামাই’ কুশনার হলো সউদি রাজপুরুষের ‘বন্ধু’!

আবার সময় এসেছে আমাদের জেগে ওঠার এবং আসমানের ঐ সতর্কবাণী স্মরণ করার, ‘হে মুমিনগণ, ইহুদি ও নাছারাদের তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, ওরা একে অপরের বন্ধু।

-আবুতাহের মিছবাহ

উম্মাতে মোহাম্মাদিয়্যার সঠিক অবস্থান

আফসোস, মুহাম্মাদ নাম ধারণ করে আজ কেউ কেউ উম্মতে মুহাম্মাদিয়্যার ‘সঠিক’ অবস্থান কোথায় সেই সবক নতুন করে শেখাতে চাচ্ছে। তারা বলতে চায়, গাযওয়া নয়, গাযী নয়, শাহাদাত নয়, শহীদ নয় এবং জিহাদ ও মুজাহিদ নয় তোমাদের সঠিক অবস্থান। একুশ শতকের বাস্তবতায় এগুলো তোমাদের আজ ভুলে যেতে হবে, তাতেই কল্যাণ! তোমাদের সঠিক অবস্থান হলো ইহুদি-মার্কিন তাবেদারি! তোমাদের সঠিক অবস্থান আলকুদস থেকে সরে আসা! তোমাদের সঠিক অবস্থান ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ মেনে নিয়ে নেকড়ের সামনে শান্তশিষ্ট মেষশাবকের আচরণ করা।

এই যদি হয় উম্মতে মুহাম্মাদিয়্যার সঠিক অবস্থান তাহলে অতীতে নূরদ্দীন যাঙ্গী যা করেছিলেন তা ভুল ছিলো! ছালাহুদ্দীনের গাযী লকব ভুল ছিলো! নব্বই বছরের বিচ্ছেদযন্ত্রণার পর বাইতুল মাকদিস পুনরুদ্ধার করা ভুল ছিলো!

এটাই যদি হয় উম্মাতে মুহাম্মাদিয়্যার সঠিক অবস্থান তাহলে ঐ যে শামের দুয়ারে ইহুদিদের সঙ্গে লড়াই হবে, আর শাজার-হাজার বলবে, ‘আমার পিছনে এক ইহুদি লুকিয়ে আছে, ওকে ধরো, আর কতল করো, এটা কি তাহলে ভুল!

আসলে উম্মতে মুহাম্মাদিয়্যার আজকের সঠিক করণীয় কি তা জানতে হলে, বুঝতে হলে আমাদের ভালোভাবে পড়তে হবে হযরত আলী নাদাবী রাহ.-এর মাযা খাসিরাল আলাম। সেখানে তিনি নির্ভীক ভাষায় তুলে ধরেছেন, কোনটি উম্মতে মুহাম্মাদিয়্যার সঠিক অবস্থান!

  (ইবনে মিছবাহ)