শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | হযরত আলী নাদাবীর পাতা

পাকিস্তানে আলী মিয়াঁর বয়ান কোন স্বাধীন ভূখণ্ডে আলিম সমাজের দায়িত্ব ও যোগ্যতা

(এই ভাষণ জামেয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া ‘বিন্নোরী’ টাউন-এর সুপরিসর মসজিদে ছাত্র-শিক্ষক এবং শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে করা হয়েছে।)

খোতবায়ে মাসনূনের পর; আম্মা বাদ!

আমার শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় সুধীবৃন্দ এবং আমার ভালোবাসা ও মুহব্বতের ভাই ও বন্ধুগণ! এখন আমি যা অনুভব করছি তা এই যে, আমি যেন আমার নিজের ঘরেই আছি। বিশেষ করে মাওলানা মুফতী ওয়ালী হাসান ছাহেব টোঙ্কী আমার খান্দানের যে পরিচয় পেশ করেছেন তার পরে আমার ভিতরে আরো নৈকট্য ও অন্তরঙ্গতা অনুভূত হচ্ছে। কম সে কম এতটুকু তো অবশ্যই যে, আমি অনুভব করছি, এখন আমি দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামার প্রিয় তালিবানে ইলম এবং সঙ্গী-সহকর্মী শিক্ষকম-লীর সামনে বসে আছি এবং তাদেরই সঙ্গে দিলের কথা দিল দিয়ে বলছি। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে, আপনারা আমাকে আমার এই প্রিয় ভাই ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দান করেছেন। এমন হতে পারতো যে, আমার স্বাস্থ্য বা ব্যস্ততার কথা চিন্তা করে আপনারা আমাকে দাওয়াত দেয়া মুনাসিব মনে না করতেন। কিন্তু অনেক ভালো হয়েছে যে, ঐ দিক চিন্তা না করে আমার জন্য আপনারা এই সুবর্ণ সুযোগের ব্যবস্থা করেছেন।

এখন আমি কোন রকম বিনয় ও সঙ্কোচ ছাড়াই কিছু হাকীকত ও জ্বলন্ত সত্য এবং সময়ের কিছু তাকাযা ও জীবন্ত চাহিদা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, যা আমি করাচির চারদিনের অবস্থানকালে অবলোকন ও পর্যবেক্ষণ দ্বারা অনুধাবন করতে পেরেছি। রাজনৈতিক ভাষা ও পরিভাষা এবং রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা যাই হোক, বাস্তবতা এই যে, হিন্দুস্তানের মিল্লাতে ইসলামিয়ার আলিম-সমাজের দু’টি শাখা রয়েছে। একটি শাখার জন্য তাকদীরে ইলাহীর ফায়ছালা এই যে, তারা হিন্দুস্তানে থাকবে, যেন সেখানে দাওয়াতে ইসলামীর দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পারে এবং মুসলমানদের জাতীয় স্বাতন্ত্র্য, বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা বহাল রাখার মেহনত মুজাহাদায় মশগুল হতে পারে। দ্বিতীয় অংশটির জন্য তাকদীরে ইলাহীর ফায়ছালা এই যে, এই দেশে, এই ভূখ-ে (যেখানে আগেও মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো, বরং এ পথেই তারা উপমহাদেশে আগমন করেছিলো) এই ভূমিতে অবস্থান করেই তারা জাতি ও মিল্লাতের তা‘লীম-তারবিয়াত ও শিক্ষা-দীক্ষার দায়িত্ব পালন করবে এবং মুসলিম জাহানের জন্য একটি স্বাধীন ও আদর্শ ইসলামী ভূখ-ের নমুনা গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দান করবে।

প্রিয় বন্ধুগণ! পৃথিবীতে সুস্থ-সুন্দর যত বিপ্লব ও পরিবর্তন এসেছে এবং মানবজাতির প্রতিজ্ঞা ও প্রত্যয়ের যত বড় বড় বিজয় অর্জিত হয়েছে তার ইতিহাস সম্পর্কে কখনো যদি স্বতন্ত্র কোন  গ্রন্থ রচিত হয় তাহলে নায়েবীনে নবী ও রাহবারানে উম্মতের যবান থেকে এ পর্যন্ত যত বাণী ও বক্তব্য উচ্চারিত হয়েছে তার মধ্যে একটি বাক্য ও বক্তব্যকে সবচে’ শীর্ষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবস্থানে আসীন করা হবে এবং তাকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে। কারণ তা সময় ও পরিস্থিতির গতিধারায় এমন আমূল পরিবর্তন এনেছিলো যার উদাহরণ জাতি ও ধর্ম এবং  সম্প্রদায় ও সভ্যতার ইতিহাসে পাওয়া মুশকিল।

জাযীরাতুল আরবের একটি অংশে এবং কিছু গোত্রে ইরতিদাদ ও ধর্মত্যাগের ফিতনা ভয়ঙ্করভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো। ঐ সময়পর্বটা ছিলো এমনই নাযুক ও সংবেদনশীল যে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, আর তখনই ইসলামের ঠিক যেন হৃদপি-ে একটা ফাটল সৃষ্টি হতে শুরু করেছিলো। সত্যি বড় নাযুক ছুরতে হাল ও কঠিন পরিস্থিতি ছিলো। আল্লাহ্র পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র দুনিয়া থেকে ‘পর্দা’ করেছেন। এর পর কয়েকটা মাস যেতে না যেতেই আরবসম্প্রদায় -যাদেরকে সারা দুনিয়ায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের দায়িত্ব পালন করতে হবে; যাদেরকে ‘প্রেরিত উম্মতের’ অবস্থান থেকে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে- তারা নিজেরাই ইরতিদাদের ফিতনায় বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলো। ওয়াফাতুন্নবীর পর থেকে আজ পর্যন্ত ইসলামের সমগ্র ইতিহাসে এমন নাযুক ও সঙ্কটপূর্ণ সময় আর কখনো আসেনি। ঐ সময়সন্ধিক্ষণে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রা. ফিতনায়ে ইরতিদাদের মুকাবেলায় পাহাড়ের দৃঢ়তা ও অবিচলতা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, আর তাঁর পাক যবান থেকে এমন একটি বাক্য আল্লাহ্ তা‘আলা উচ্চারণ করিয়েছিলেন যা ঘটনার ধারাপ্রবাহ এবং ইতিহাসের গতিমুখ পরিবর্তন করে দিয়েছিলো। তাতে বিপদের ঘনঘোর এমনভাবে দূর হয়েছিলো যেমন আঁধার দূর হয়ে যায় সূর্যের উদয়ে। তিনি বলেছিলেন (এবং ইতিহাস বরকত ও আমানত মনে করে শব্দে শব্দে তা সংরক্ষণ করে নিয়েছে)-

أَيَـنْـقُـصُ الدِّيـنُ وَأَنـا حَـيٌّ!

দ্বীনের ক্ষতি হবে, অথচ আমি বেঁচে আছি!!

আবু বকর বেঁচে থাকবে, আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দ্বীনের অঙ্গচ্ছেদ হবে; কাটাছেঁড়া হবে; এক রোকন মানবো তো এক রোকন মানবো না, আর আবু বকর যিন্দা থেকে তা শোনবে!!

আপনাদের নিশ্চয় জানা আছে যে, ঐ সময়ই যাকাত অস্বীকারেরও ফেতনা দেখা দিয়েছিলো। আরেক দিকে মুসায়লামা কায্যাব নবুয়তের দাবী তুলেছিলো। তার উপর ব্যাপক আকারে শুরু হয়ে গিয়েছিলো ইরতিদাদের ফিতনা। মদীনা তাইয়েবা এবং আরো কিছু অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায় কিতাবে যে, সেখানে ইরতিদাদের কোন প্রভাব দেখা যায়নি, এছাড়া সমগ্র জাযীরাতুল আরব ইরতিদাদের ঘেরাওয়ে এসে যাচ্ছিলো। তখন আল্লাহর বান্দা আবু বকর ঈমানের গায়রতে গর্জন করে উঠেছিলেন, ‘দ্বীন নিয়ে ছিনিমিনি হবে, অথচ আমি বেঁচে আছি!’

এটা তো ছিলো মুখের উচ্চারিত শব্দগুচ্ছ, কিন্তু এর পরতে পরতে দিলের যে দরদ-ব্যথা এবং যে জোশ ও জাযবা সুপ্ত ছিলো তা তো আর শব্দের আবরণে তুলে আনা সম্ভব নয়! এটা ছিলো তাঁর দিলের আওয়ায এবং তাঁর জোশ-জাযবার সর্বোচ্চ প্রকাশ। ধরুন, পানপাত্র পূর্ণ হয়ে কয়েক ফোঁটা উপচে পড়লো। তো উপচে পড়া ফোঁটা-গুলোই হচ্ছে উচ্চারিত শব্দ, আর পাত্রের ভিতরে যা আছে তা হলো জোশ ও জাযবা এবং আবেগ ও উদ্দীপনা।

তো এই যে দরদ-ব্যথা এবং দ্বীনী গায়রাত ও জোশ-জাযবা, এটা হচ্ছে সেই মহান উত্তরাধিকার যা সাধারণভাবে উম্মতের মধ্যে এবং বিশেষভাবে নায়েবীনে রাসূল ও ওলামায়ে হকের মধ্যে যুগ যুগে ‘পরিবাহিত’ হয়ে এসেছে। সুতরাং প্রত্যেক যুগের এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ওলামায়ে হক ও নাবেয়ীনে নবী যারা, এ চেতনা তাদের গ্রহণ করতে হবে যে, আমাদের বিদ্যমান থাকা অবস্থায় এ জনপদে ইসলামের কোন প্রকার অবক্ষয় বরদাশত করা তো দূরের কথা কল্পনা করাও সম্ভব নয়। আমরা কোন জনপদে বহাল তবিয়তে থাকবো, আর ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্র কোন স্বার্থ ক্ষুণœ হবে, এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। বস্তুত এই দ্বীনী গায়রাত ও জাযবা এবং এ অনুভূতি ও চেতনাই হচ্ছে সমস্ত আন্দোলন, সংস্কার এবং দ্বীনী মেহনত-মোজাহাদার ভিত্তি ও বুনিয়াদ। দাওয়াতের প্রত্যয়দৃপ্ত সুদীর্ঘ ইতিহাস পড়–ন; ‘খালকে কোরআন’ ফেতনার মুকাবেলায় ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.-এর যে পর্বত-অবিচল ভূমিকা; মোতাজিলাবাদের বিরুদ্ধে ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী রহ.-এর যে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ; বাতেনি ফেতনা, দর্শন ও বস্তুবাদের আগ্রাসন এবং মুসলিম সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর দ্বীনী ইহতিসাব ও অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে ইমাম গাজ্জালী রহ.-এর যে অমর কীর্তি; শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়ার যে মহান অবদান রাফেযীবাদের প্রতিরোধে এবং বিভিন্ন কালামী মাসাইল-এর ব্যখ্যা-বিশ্লেষণে; তারপর আসুন হিন্দুস্তানে, এখানে সুদীর্ঘ চারশ বছরের সময়-আয়তনে বিস্তৃত যে তাজদীদী মেহনত-মুজাহাদা, যে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন, যার ছাপ ও প্রভাব এখনো ভারতবর্ষের মুসলিম

 

সমাজে রয়েছে জীবন্ত; শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ দেহলবী রহ.-এর ইছলাহী ও সংস্কারপ্রচেষ্টা এবং তাজদীদী দাওয়াত ও কর্মকীর্তি, হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ রহ.-এর ইসলামী খেলাফত কায়েমের যে অমর জিহাদ, যার চূড়ান্ত পর্যায় ছিলো বালাকোটের ময়দানে শাহাদাত; নিজ নিজ সময়ে নিজ নিজ আন্দাযে আকাবিরে ওলামায়ে  দেওবন্দের যে সকল ইছলাহী ও তারবিয়াতি প্রয়াস-প্রচেষ্টা, কিতাব ও সুন্নাহর প্রচার-প্রসারে এবং ঈমান-আকীদার হিফাযত ও বিদ‘আত প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তাঁদের যে লাগাতার মেহনত মুজাহাদা, এসবের পিছনে সেই একই অনুভব-অনুভূতি, একই উদ্যম-উদ্দীপনা এবং একই ঈমানী জোশ-জাযবা ও গায়রত কাজ করেছে যার ‘তরজুমানি’ করেছেন হযরত ছিদ্দীকে আকবার রা. ফিতনায়ে ইরতিদাদের মহাদুর্যোগের সময়-

أَيَــنْــقُـصُ الدِّيـنُ وَأَنَـا حَـيٌّ

মুসলিম উম্মাহার ইতিহাসের এই যে সুদীর্ঘ গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, এটা আসলে সেই আলোকিত পথেরই ধারাবাহিকতা যা হযরত ছিদ্দীকে আকবার উম্মতকে এবং প্রত্যেক যুগের নায়েবীনে রাসূলকে দেখিয়েছিলেন।

وَجَـعَـلَـهـا كَلِـمَـةً بَـاقِــيَـةً فِـي عَـِقـبِـه لَـعَـلَّـهُـمْ يـَــرْجِـعُـونَ

‘তিনি সেটিকে তার পরে স্থায়ী বাণীরূপে রেখে দিয়েছেন, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করতে পারে।’

তো এই আলোতে এবং এই মাপকাঠিতেই ওলামায়ে উম্মত নিজেদের হিসাব গ্রহণ করুন, বিচার-পর্যালোচনা করুন যে, এই ছিদ্দীকী জাযবা ও গায়রাতকে তারা নীতি ও কর্মনীতিরূপে কতটা গ্রহণ করেছেন, করতে পেরেছেন? নিজেদের তারা এই জ্বলন্ত জিজ্ঞাসার সম্মুখীন করুন, সত্যি যদি তারা নায়েবীনে নবী হয়ে থাকেন তাহলে তাদের বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কোন অঞ্চল, সমাজ ও জনপদ থেকে ইসলাম বা ইসলামের কোন বিধানের উপর কি আঘাত আসতে পারে? আঘাত বড় কথা, সামান্য আঁচড়ও কি আসতে পারে? এর কি কোন বৈধতা রয়েছে যে, আলিম পরিচয়ে আমরা বেঁচে থাকবো, আর ইসলামের আখলাক, আচার-সংস্কার, নীতি ও নৈতিকতা এবং মুসলিম উম্মাহ্র বৈশিষ্ট্য, স্বকীয়তা ও পরিচয়সত্তা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে?

আমাদের সামনে মুসলিম জাতির অতীত ইতিহাসে বড় শিক্ষণীয় ও যোগাযোগ ছিলো না। তাদের ব্যক্তিত্বের তখন আর এতটা সুপ্রভাব ছিলো না, যার কারণে আওয়াম ও জনসাধারণের অন্তরে দীনের প্রতি সম্মান-মর্যাদা এবং ওলামায়ে উম্মতের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বহাল থাকবে। যে ভূখ- একসময় খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দী, খাজা ওবায়দুল্লাহ আহরারের মত মহান ব্যক্তি ও নূরানী ব্যক্তিত্ব জন্মদান করেছে সে ভূখ- ও জনপদের পরবর্তী প্রজন্ম এরূপ মহান ব্যক্তি ও বক্তিত্ব  থেকে শূন্য হয়ে পড়েছিলো। জীবনের চাহিদা ও জীবনযাত্রার মান অনেক উপরে উঠে গিয়েছিলো। বস্তুবাদ ও ভোগবাদের প্রতি ঝোঁক-প্রবণতা চরমে পৌঁছে গিয়েছিলো। বুখারার আমীর ও শাসকের বালাখানা এখনো রয়েছে। সেখানকার কমিউনিস্ট সরকার বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে ‘রাজমহল’ ঘুরিয়ে দেখায় যে, দেখো, বিত্তবৈভবের কী বিপুল সম্ভার একত্র করা হয়েছিলো; ভোগ-বিলাসের কী লজ্জাকর আয়োজন করা হয়েছিলো! স্বর্ণপাত্র, স্বর্ণালঙ্কার ও হিরাজহরতের কী বিস্ময়কর সংগ্রহ গড়ে তোলা হয়েছিলো, অথচ (তাদের কথা মতে) সাধারণ মানুষ তখন ক্ষুধায় মরছিলো। এই একটা উদাহরণ থেকে আপনি বুখারার পুরো সমাজচিত্র সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।

তদ্রƒপ উন্দুলুস (স্পেন)-এর ইতিহাসে আল-যাহরা ও আল-হামরার কাহিনী পড়–ন, মনে হবে, বাস্তব জগতের বিষয় না, কল্পনার রাজ্যের বিষয়; যেন পরী ও পরীস্তানের আফসানা।

উন্দুলুসেও দু’টা বড় বড় বিষয় ছিলো মুসলিম উম্মাহ্র বিপর্যয় এবং ইসলামের ‘বিলুপ্তির’ পিছনে কারণরূপে। একটা হলো জীবনের চাহিদা ও জীবনযাত্রার মানের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি এবং আল্লাহ্র দেয়া বিত্ত-সম্পদের অপব্যবহার ও অপচয়। দ্বিতীয়টা এই যে, ইসলামের প্রচার প্রসার ও সমাজের ইসলামায়নের পরিবর্তে তাদের সমস্ত প্রয়াস মনোযোগ নিবদ্ধ হয়ে পড়েছিলো কাব্য ও সাহিত্যচর্চা এবং ললিত শিল্পের পরিচর্যায়। এক্ষেত্রে তারা যতই ঈর্ষণীয় উৎকর্ষ অর্জনকরছিলো, পুরো সমাজ ও জনপদ ইসলামের প্রভাব থেকে ততই দূরে সরে পড়ছিলো, কিন্তু কারোই তা নিয়ে কোন চিন্তা পেরেশানি ছিলো না।

তৃতীয় একটা বিষয় ছিলো এই যে, শাসকপরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব  ও প্রাসাদ -যড়যন্ত্র শুরু হয়ে গিয়েছিলো চরমভাবে; সেই সঙ্গে ছিলো গোত্রে গোত্রে লড়াই। তখন রাজনীতির দলাদলির যুগ ছিলো না; এখন রাজনৈতিক দলগুলো সে স্থান দখল করে নিয়েছে। এই তিনটা বড় বড় উপাদান ছিলো উন্দুলুসের মুসলিম বিপর্যয়ের পিছনে। (এর সঙ্গে ইচ্ছে করলে যুক্ত করতে পারেন নৈতিক ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের কথা।)

সমরকন্দেও একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ‘ছুবহে সমরকন্দ’ কিতাবটি পড়লেই বুঝতে পারবেন, পতনের আগে সমরকন্দের নৈতিক অধঃপতন ও চারিত্রিক অবক্ষয় কোন স্তরে পৌঁছে গিয়েছিলো।

আমি আপনাদের সামনে কয়েকটা বিপদ ও খাতরা চিহ্নিত করছি। অনেক সময় বাইরে থেকে আসা মানুষ যা দেখে, অনুভব করে, ঘরের মানুষ তা পারে না। আপনি আলো-আঁধারির মধ্যে আছেন, এখন কেউ যদি বাইরের অন্ধকার থেকে ভিতরে আসে, স্বাভাবিক কারণেই তার অবস্থা অন্য রকম হবে। আবার অনেক সময় এমন হয় যে, কোন কিছু সবসময় দেখতে শুনতে থাকার কারণে তা এমন স্বাভাবিক হয়ে যায় যে, তাতে নতুনত্বের কিছু থাকে না, তার প্রতি তেমন আকর্ষণ বা মনোযোগও থাকে না। মনেও হয় না যে, এটা চিন্তার বা উৎকণ্ঠার কোন কারণ হতে পারে। কিন্তু বাইরে থেকে আসা মানুষ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি অনুভব করবে এবং সেদিকে তার মনোযোগ আকৃষ্ট হবে।

উদাহরণস্বরূপ, উর্দূ সাইনবোড

এখানে সাধারণ বিষয়, কিন্তু ইংরেজী ও হিন্দি সাইনবোর্ড দেখে অভ্যস্ত আমরা হিন্দুস্তানীরা যখন এখানে আসি, বিষয়টি আলাদা-ভাবে অনুভব করি এবং উৎফুল্ল বোধ করি যে, মাশাআল্লাহ্ এখানে তো চারদিকে উর্দূ আর উর্দূই দেখা যায়!

আমার না দূরদৃষ্টির দাবী আছে, না অন্তর্দৃষ্টির; আমার না আছে বাছীরাত, না আছে ফিরাসাত। আমি আপনাদেরই মত সাধারণ একজন মানুষ। হাঁ, এতটুকু বলতে পারি যে, আমি বাইরে থেকে এসেছি। তাই আমার দৃষ্টিতে এমন কিছু ধরা পড়ছে যা আপনাদের অভ্যস্ত দৃষ্টি হয়ত এড়িয়ে যায়। সুতরাং আমার কথা মনোযোগের সঙ্গে শোনা দরকার। আমি ইতিহাসের ছাত্র, ইতিহাসের উপর আমার ব্যাপক অধ্যয়ন রয়েছে এবং রয়েছে মুসলিমজাহানের সঙ্গে নিকট সম্পর্ক। সেই ইতিহাস-অধ্যয়ন ও সমকালীন মুসলিমবিশ্ব সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের ভিত্তিতে আমি বলছি, মাযহাবী ঝগড়া-ফাসাদ ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এ দেশের

জন্য ভয়াবহ বিপদের বিষয়। ধর্মীয় দল-উপদলগুলো এখানে পরস্পর, যাকে বলে ‘হাতাপায়িতে’ লিপ্ত। একদল

আরেক দলকে নির্মূল না করে যেন দম নেবে না। যে সমস্ত বিষয় ইলমি পর্যায়ে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক পরিম-লে সীমাবদ্ধ হতে পারতো সেগুলোকে আওয়াম ও জনসাধারণের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এমনকি এগুলোকে কেন্দ্র করে মানুষ প্রতিদ্বন্দ্বী ও মুখোমুখি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এটা কিন্তু বড় বিপদের কথা। আমার সম্পর্ক আগাগোড়া ঐ চিন্তাশিবিরের সঙ্গে, যার সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক। আমার চিন্তা চেতনা ও অনুভব অনুভূতি সম্পূর্ণ ঐ রকম যেমন আপনাদের। শুধু কি অনুভব-অনুভূতি! আমার পূর্বপুরুষ তো (হিন্দুস্তানের বিশাল জনপদে) ঐ ঝা-া উঁচু করেছেন যার কারণে আমরা নতুন নতুন লকব-খেতাবের শিকার হয়েছি এবং রকম রকমের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছি। আকীদা ও মাযহাবের হিফাযত ও সুরক্ষার গুরুত্ব-গুরুতরতা আমি ভালো করেই বুঝি, কিন্তু কথা হলো, পায়ের নীচ থেকে মাটিই যদি সরে যায় তাহলে মাযহাব ও আকীদার এই ইমারত কিসের উপর খাড়া হবে?

কারো দাবী, পাকিস্তান আমরা বানিয়েছি; এখানে আমাদের কথা ও ক্ষমতা চলবে, অন্য কারো নয়। কারো দাবী, আমরা হকের উপর আছি; এখানে সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। দেশ ও সমাজ আমাদের নীতি ও আদর্শের উপর চলবে। কিন্তু ভিতরে যদি খোঁজ নেয়া যায় (মাফ করুন; আমি কারো প্রতি কিছু আরোপ করছি না), তালাশ করলে দেখা যাবে, এর পিছনে আসল ক্রিয়াশীল বিষয় হচ্ছে যশলিপ্সা ও প্রতিপত্তির স্পৃহা।

আমাদের বুযুর্গান এ (অবিভক্ত) ভূখ-ে দ্বীনকে রক্ষা করার জন্য বড়  থেকে বড় কোরবানি পেশ করেছেন। প্রয়োজন হলে প্রতিপক্ষের সামনে নিজের গলতি  মেনে নিয়েছেন; নত হয়েছেন; নতি স্বীকার করেছেন। প্রাপ্য অধিকার ও আসন ছেড়ে নীচে নেমে এসেছেন; তবু চেয়েছেন, দ্বীন যেন যিন্দা থাকে।

আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন, যারা হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ রহ.-এর মাকতাবে ফিকির ও চিন্তাশিবিরের অনুসারী, হিন্দুস্তানে এটাই ছিলো তাঁদের অনুসৃত নীতি ও কর্মপন্থা। এটাই ছিলো তাঁদের জীবনদর্শন ও চিন্তাধারা।

আপনারা দরসের হালকায় এবং ইলমী মজলিসে এসব ইখতিলাফী মাসায়েলের উপর খোলা মনে পূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করুন, দলীল-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত করুন এবং খ-ন করুন। প্রয়োজনে বড় বড় গবেষণা- গ্রন্থ রচনা করুন, কিন্তু আল্লাহ্র ওয়াস্তে দেশ ও জাতিকে অস্তিত্বের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবেন না।

যখন এরূপ কোন ‘দ্বন্দ্বশিবির’ খোলা হয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এরূপ ‘লালকার’ দেয়া হয়; আত্মপক্ষের বড়ত্ব ও বড়াই প্রকাশ করা হয় তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিপরীত শিবির তৈরী হয়ে যায় এবং সেখান থেকেও লালকার আসে যে, আমাদের মত কে আছে?!

আমাদের বুযুর্গানে দ্বীনের সমস্ত কাজ বিনয় ও দীনতার সঙ্গে ছিলো, আত্মসমালোচনা ও আত্মতদারকির সঙ্গে ছিলো। সবার আগে তাঁরা নিজেদের ঈমান ও ইহতিসাবের ফিকির করতেন, তারপর বিনয়ের সঙ্গে, হামদর্দির সঙ্গে এবং হিকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে অন্যের সংশোধনের চিন্তা করতেন। শাসনক্ষমতা ও নেতৃত্বের ঝোঁক-প্রবণতা তাঁদের মধ্যে ছিলোই না। এমন দাবীও ছিলো না যে, আমরাই সর্বেসর্বা, আমাদের জামাতেরই সমস্ত দান- অবদান, কীর্তি ও কৃতিত্ব।

হযরত মুজাদ্দিদে আলফেছানী রহ.-এর পত্রাবলী পড়–ন; হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ রহ.-এর পত্রাবলী পড়–ন; হিন্দুস্তানের ঐ দুর্যোগপূর্ণ সময়কালে যখন মোঘল সালতানাতের দম যায় যায় তখন তিনি আহমদ শাহ আবদালী, নাজীবুদ্দৌলা ও অন্যান্যকে যে সকল পত্র লিখেছেন সেগুলো পড়ে দেখুন, তাতে উম্মতের প্রতি, দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি কী অপরিসীম দরদ-ব্যথা ছিলো! আহমদ শাহ আবদালীকে শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ রহ. তখনকার মুসলিমানে হিন্দের অবস্থা সম্পর্কে লিখেছিলেন যে, তারা কী দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তাতে তিনি এমন কিছু কথা লিখেছিলেন যাতে তাঁর ইখলাছ ও দরদ-ব্যথা ঝরে ঝরে পড়ে। দেখুন-

‘আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুফারিশকারী বানিয়ে দরখাস্ত করছি, আল্লাহ্র ওয়াস্তে মুসলিমানে হিন্দের প্রতি দয়া করুন। একবার সাহায্য নিয়ে এসেই  পড় ুন। ...’

শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ রহ.-এর এরূপ দরদপূর্ণ ডাকে সাড়া দিয়েই আহমদ শাহ আবদালী হিন্দুস্তান এসেছিলেন। পানিপথে মারাঠা শক্তির কোমর তিনি এমনভাবে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন যে, আজ পর্যন্ত তারা পূর্ণভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

এটা হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ রহ-ই ছিলেন এবং ছিলো উম্মতের প্রতি তাঁর দরদ-ব্যথা এবং ছিলো তাঁর অন্তর্দৃষ্টি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, যা হিন্দুস্তানের নকশাই বদলে দিয়েছিলো। কিন্তু কখনোই তিনি এর কীর্তি ও কৃতিত্ব নিজের ভাগে আনার চিন্তাই করেননি। আপনারা তো তাঁরই পরিচয়গর্বে গৌরব বোধ করেন। আপনারা তো তাঁরই দিকে সম্পৃক্তি ও নিসবত করে থাকেন। এই নিসবত ও সম্পৃক্তি এবং পরিচয়-গৌরবের দাবী তো এই যে, দ্বীন ও মিল্লাতের জন্য যখন যে ত্যাগ ও আত্মত্যাগের প্রয়োজন তা শর্তহীন-ভাবে পেশ করুন। পরিষ্কার ভাষায় বলুন, ‘আচ্ছা ভাই, তোমাদের কথাই ঠিক, তোমাদের কর্ম ও কীর্তিই সবচে’ বড়। এখন এসো সবাই মিলে আগে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করি; কাউম ও মিল্লাতকে আগে উদ্ধার করি।’

বর্তমান শঙ্কা ও আশঙ্কা এবং বিপদ-দুর্যোগের পরিস্থিতিতে এর অবকাশ কোথায় যে, উম্মতের আলিমসমাজ ও নায়েবীনে রাসূল নিজেদের মধ্যে এভাবে ‘হাতাপায়ি’তে লিপ্ত হবে?! দেখুন, একথা আমি বলছি নিজের আকীদা ও বিশ্বাসের প্রতি পূর্ণ অবিচল থেকে এবং নিজের নীতি ও পন্থার প্রতি পূর্ণ বিশ্বস্ত থেকে। আলহামদু লিল্লাহ্ এ বিষয়ে আমি বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার জন্য প্রস্তুত নই; না ইবাদতের মাসাইলে, না আকায়েদের উছূলে। কোন বিষয়ে কোন রকম সমঝোতার জন্য আমি প্রস্তুত নই। তো একটা হচ্ছে নিজের ঈমান ও আমল-আকীদা, আরেকটা হচ্ছে এই আখাড়াবাজি ও দ্বন্দ্বসঙ্ঘাতের প্রবণতা। এখন তো সাধারণ মানুষকে দ্বীন ও মাযহাবের নামে ক্রীড়নক বানানো হচ্ছে; পুরো দেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা হচ্ছে। একদিকে হচ্ছে ‘জশনে জুলুসে ইয়া রাসূলাল্লাহ’, অন্যদিকে হচ্ছে ‘হিফাযতে নামূসে রাসূল’! এটা কিন্তু নিরাপদে বেঁচে থাকার পথ নয়। ‘কারো খবর নেই কিশতি ডুবলো কত, সূফী-মোল্লা সবাই খোশ নিজ নিজ বৃত্তে!!’

দ্বিতীয় বিষয় এই যে, জনসাধারণের সঙ্গে, সমাজের সকল শ্রেণী ও স্তরের সঙ্গে আপনাদের ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকা উচিত। আমি অনুভব করেছি, আওয়ামের সঙ্গে ওলামায়ে কেরামের যে যোগ ও যোগাযোগ থাকা সঙ্গত তাতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আমি তো বলতে চাই, হিন্দুস্তানে আওয়ামের সঙ্গে ওলামায়ে কেরামের সম্পর্ক এখানকার চেয়ে বেশী। ওখানে রাজনীতির ময়দানে যেমন তেমনি শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে, তেমনি জ্ঞান-গবেষণা ও ইলমী তাহকীকের ক্ষেত্রেও

আলিমগণ অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছেন এবং তাদের স্থান ও অবস্থান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করা হয়। ওখানকার  উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণী ও সুশীল সমাজ আলিমদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও বিতৃষ্ণ নয়। আমরা বিভিন্ন সাহিত্যসভা, ইলমী মজলিস ও গবেষণাসম্মেলনে যাই, সেখানে সম্মানের সঙ্গে আমাদের গ্রহণ করা হয়। আওয়ামের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক বাড়ানো উচিত। এমন যেন না হয় যে, ধীরে ধীরে দূরত্ব অনেক বেড়ে গেলো, আর সাধারণ মানুষ আপনাদের হাত থেকে বের হয়ে গেলো। তখন কিছুই করার থাকবে না।

তৃতীয় যে কথাটি আমি নিবেদন করতে চাই তা এই যে, (দ্বীনী দিক থেকে) আমাদের জীবন যেন সাধারণ মানুষের জীবন থেকে অত্যন্ত বৈশিষ্ট্য -পূর্ণ হয়। সবাই যেন খোলা চোখেই দেখতে পায় যে, আর যাই হোক এঁরা দুনিয়ামুখী নন। ধনসম্পদ তাদের কাছে ইয্যত ও মর্যাদার মাপকাঠি নয়। আমাদের সব কাজ সাধারণভাবে যেন আল্লাহ্র ওয়াস্তে হয়, যেমন ছিলো আমাদের আসলাফ-আকাবিরের শান। যতক্ষণ  ওলামা কেরামের তবকায় এই আখলাকি ইমতিয়ায ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া না যাবে, তাকওয়া ও ঈছার এবং ত্যাগ ও আত্মত্যাগের জাযবা ক্রিয়াশীল না হবে ততক্ষণ আমাদের ব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধার যোগ্য বলে মনে করা হবে না এবং সমাজ ও জীবনের ধারায় কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে না। মানুষের দিল-দেমাগ ও চিন্তা-চেতনায় দ্বীন ও দ্বীনদারির কোন ভাবমর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হবে না। আলিমদের ওয়াকার ও ভাবমর্যাদা এভাবে বৃদ্ধি পায় না যে, মাদরাসা কত বড়, ইমারাত কত আলিশান, তালিবানের সংখ্য কত বেশী, কোনখানের জলসা-মাহফিল কত শানদার ও কামিয়াব। এসবের মাধ্যমে ইয্যত মর্যাদা কিছুই তৈরী হবে না। আলিমের ওয়াকার ও মর্যাদা তৈরী হয় শুধু ব্যক্তি-জীবনের আদর্শ ও নমুনা দ্বারা। আওয়াম যখন দেখতে পায় যে, ধনসম্পদ তাদের নযরে এমন যে, পায়ের সামনে ঢের করে রাখলেও তারা ফিরে পর্যন্ত তাকায় না। হাতে ছুঁয়ে দেখাকেও গোনাহ মনে করে। আওয়াম তখন ভাবে যে, আমরা তো মনে করেছিলাম, ধনসম্পদই সবচে’ বড় জিনিস, অথচ এঁদের জীবনে তো এসবের কোন হাকীকত ও মূল্যই নেই!

হযরত থানবী রহ যেমন ঢাকার নবাবকে জবাব দিয়েছিলেন, যখন তিনি হযরতের খিদমতে দরখাস্ত পাঠিয়েছিলেন যে, আমার সঙ্গে দেখা করুন। এ ‘নওয়াবী আন্দায’ হযরত হাকীমুল উম্মতের পছন্দ হয়নি। তাই তিনি বলে পাঠালেন, ‘আপনার কাছে যা কিছু আছে, আমার কাছে তা প্রয়োজন পরিমাণ রয়েছে; অথচ আমার কাছে যা আছে, আপনার কাছে তা প্রয়োজন পরিমাণও নেই। সুতরাং আপনারই আসা উচিত আমার কাছে, আমার আসার প্রয়োজন নেই।’

আরেকটি ঘটনা আপনাকে শোনাই; বড়ই ‘পুরআছর’ ও হৃদয়স্পর্শী। খুব বেশী দিন আগের কথা নয়। শায়খ সাঈদ হালাবী রহ. ছিলেন একজন উচ্চ স্তরের আলিম ও বুযুর্গ। একদিন তিনি দামেস্কের কোন মসজিদে দরস দিচ্ছেন। তাঁর পায়ে সেদিন কিছু ‘কষ্ট’ ছিলো, তাই পা ছড়িয়ে বসেছিলেন।

যদিও আমার পাপী মুখ এ উপযুক্ত নয় যে, আপনাদের সামনে তা বয়ান করতে পারে। কিন্তু কী করি, ঘটনার বয়ান ছাড়া কাজও হয় না। অর্থাৎ দিলের মধ্যে যে হালাত হওয়া দরকার, বড়দের ঘটনা বয়ান করা ছাড়া তা হাছিলও হয় না। ছোট মানুষের ছোট মুখও যদি এরূপ ঘটনা বয়ান করে, মানুষের দিলে তাতে কিছু না কিছু আছর হয়।

যাই হোক, বলছিলাম, শায়খ সাঈদ দরস দিচ্ছেন। আপনারা

জানেন, আগে বড় ভালো রেওয়াজ ও প্রচলন ছিলো যে, মসজিদে দরসের হালকা হতো।

তো মসজিদে যখন দরস হতো সাধারণত শায়খ কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে বসতেন। তালিবানে ইলম হতো তাঁর সামনে। তো মসজিদে যারা প্রবেশ করতো, শায়খ তাদের দেখতে পেতেন, কিন্তু হালকার তালিবানে ইলম দেখতে পেতো না। মিশর ও শামে খিদভী হুকুমাতের প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আলী পাশা ছিলেন ইবরাহীম পাশার পুত্র। তিনি ছিলেন পিতার চেয়েও বড় তাপ ও প্রতাপের অধিকারী, ‘প্রজাত্রাস’ শাসক ও সেনাপতি। যার নামে দূর ও নিকটের সবাই ভয়ে কম্পমানথাকতো।

শায়খের দরসদানের সময় ইবরাহীম পাশা মসজিদে দাখেল

হলেন। শায়খের পায়ে কষ্ট ছিলো, তাই তিনি দরজার দিকে পা ছড়িয়ে রেখেছিলেন। পাশা যখন নিকটে এলেন, তালেবানে ইলম তখন দেখতে পেলো যে, স্বয়ং পাশা আসছেন! সঙ্গে রয়েছে রক্ষীদল, জল্লাদ ও পাহারাদার। তালিবানে ইলম ভাবলো, হযরতের পায়ে যত কষ্টই হোক, এখন তিনি পা গুটিয়ে নেবেন। শাসকের প্রতিও তো আদব করার কিছু বিষয় থাকে। কিন্তু সবাই অবাক বিস্ময়ে দেখতে পেলো, শায়খ বিলকুল নড়াচড়া করলেন না, পা যেমন ছড়ানো ছিলো তেমনি ছড়ানো অবস্থায় দরস জারি রাখলেন।

পাশা একেবারে দরসের কাছে এসে দাঁড়ালেন। ঐতিহাসিক নিজের দেখা ঘটনা লিখেছেন, তালিবানে ইলম তখন জড়োসড়ো হয়ে গেলো যে, এখনই হয়ত জল্লাদের উপর হুকুম হবে, ‘কল্লা উড়িয়ে দাও’।

কিন্তু কিছুই হলো না, পাশা বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ানো অবস্থায় দরস শুনলেন, তারপর যেমন এলেন তেমনি ফিরে গেলেন।

ফিরে গিয়েই তিনি শায়খের জন্য ‘সালামসহ’ একতোড়া আশরাফী হাদিয়া পাঠালেন।

এমনই হয়, আহলুল্লাহ্ যারা, আল্লাহ্র খাছ বান্দা যারা, ত্রাসসৃষ্টি -কারী শাসকেরও দিলে এমনই হয় তাঁদের প্রতি ভয়-সমীহ।

শায়খের উদ্দেশ্যে ইবরাহীম পাশার পায়গাম ছিলো, ‘কবুল করলে খুশী হবো।’

এর জবাবে শায়খ যে বাক্যটি বললেন সেটা হলো শোনবার মত বাক্য। ঐতিহাসিক নিজের কলমে শব্দে শব্দে তাঁর বাক্যটি সংরক্ষণ করেছেন। আমি তো বলি, এমন একটি বাক্যের প্রতি শত গজল ও কবিতা উৎসর্গ করা যেতে পারে। তিনি বললেন, ‘শাসককে আমার সালাম বলো, আর বলো, যে পা ছড়ায় সে হাত ছড়ায় না।’

اَلَّذِي يَـمُـدُّ رِجْـلَـه لا يَـمُدُّ يَـدَه

আমার যদি হাত বাড়িয়ে আশরাফীর তোড়া কবুল করার চিন্তা থাকতো তাহলে তখন পা ছড়িয়ে বসে থাকতাম না। যত কষ্টই হোক পা গুটিয়ে নিতাম।

এই গুণ ও গরিমা, এই নির্মোহতা ও নির্ভীকতা ওলামায়ে উম্মতের মধ্যে, নায়েবীনে রাসূলের মধ্যে, দ্বীন ও ইলমে দ্বীনের যারা খাদেম তাদের মধ্যে কিছু না কিছু পরিমাণে, ভগ্নাংশ পরিমাণে হলেও থাকা উচিত। যদি এ গুণ-গরিমা না থাকে তাহলে আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আপনাদের সমস্ত ইলমী কাবেলিয়াত ও বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা, আপনাদের মুখের ও কলমের সমস্ত ‘জাদুবয়ান’ অর্থহীন হবে, সম্পূর্ণ বে-আছর ও অকার্যকর হবে, যতক্ষণ না আমলের নমুনা আপনাদের মধ্যে পয়দা হবে; যতক্ষণ না ক্ষমতাসীন, প্রতাপশালী ও বিত্তবান লোকেরা বিশ্বাস করবে যে, কোন আলিমকে খরিদ করা যায় না; ভীতি ও প্রলোভনের ফাঁদে আটকানো যায় না; আমাদের সমাজের অংশ হলেও এঁরা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রজাতি; বিবেকের বিরুদ্ধে এঁরা কোন কাজ করতে পারেন না।

উম্মতের সমস্ত তবকার মানুষ যেন দেখতে পায় যে, আলেমদের জীবন যাপন তাদের চেয়ে সাধারণ; এঁদের থাকা-খাওয়া ও লেবাস সাধারণ, কিন্তু বিবেকের প্রতি বিশ্বস্ততায়, ঈমানের প্রতি দৃঢ়তায় এবং নীতি ও নৈতিকতার প্রতি অবিচলতায় এঁরা অসাধারণ!

আমাদের জীবনের আচরণে উচ্চারণে এর প্রকাশ ঘটা কর্তব্য, যেমন আমাদের আসলাফ ও আকাবিরীনের জীবনে ঘটেছে।

যাদের আমি শিক্ষকরূপে পেয়েছি তাঁদের (একজনের একটামাত্র) ঘটনা বলি। আমি কাসেমুল উলূম মাদরাসায় পড়তাম। সেখানে মাঝে মধ্যে আমাদের জন্য ‘পুরতাকাল্লুফ’ ও উপাদেয় খাবার তৈরী হতো। মাদরাসার পিছনেই ছিলো হযরত মাওলানা আহমদ আলী ছাহেব রহ.-এর বাসস্থান। নিকটসম্পর্কের কারণে আমি জানতাম, এখানে পোলাও রান্না হচ্ছে, আর ওখানে অনাহার চলছে। কিন্তু এমন সাহস কার হবে যে, অন্তত একথালা খাবার পৌঁছে দেয়া হোক।

আজ পর্যন্ত আমাদের এই নূরানী জামাত দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীনের যত খেদমত নিয়েছেন তা এই সমস্ত আসমানী ছিফাত ও ফিরেশতাগুণেরই ফল ও ফসল ছিলো। যুহদ ও নির্মোহতা ছিলো; বিনয় ও সংযম ছিলো; দৃঢ়তা ও অবিচলতা ছিলো; নিজের ইচ্ছা ও মর্যাদার বিপরীত কথা শুনেও শান্ত-সংযত থাকার যোগ্যতা ছিলো।

আমাদের বড়রা সবসময় অন্যকে এবং অন্যদেরকে নিজেদের চেয়ে উত্তম মনে করেছেন; এটাই ছিলো আমাদের পরিচয়বৈশিষ্ট্য, বড়াই ও বড়ত্ব এবং ‘হামচুঁ মান দীগারে নিস্ত’, কখনোই এটা আমাদের বড়দের পরিচয়বৈশিষ্ট্য ছিলো না। এমনকি কেউ তাঁদের হাতে বাই‘আত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাঁদের মুখে বহুবার শুনেছি এ কবিতার উচ্চারণ-

আমি না ফুল, না ফল, না ছায়াদার গাছ/ অবাক হয়ে ভাবি, কৃষক কী ভেবে রোপণ করেছিলো আমাকে!!

প্রাদেশিকতা, ভাষা ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, এগুলোও এ দেশের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ। এটাই মূলত পাকিস্তানকে দু’টুকরা করেছে। কী কারণে এগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে; আলিম-সমাজের অবশ্যই চিন্তা করে

এগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং দূর করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যেতে হবে। সবার আগে এটা আপনাদেরই দায়িত্ব। আমি বলতে চাই, দ্বীনের কাছেই এ বিষয়ে আপনারা দায়বদ্ধ। সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঈমানী চেতনা ও গণজাগরণ সৃষ্টি করুন। হাদীছের বাণী সবার সামনে আনুন-

‘তোমাদের মধ্যে যে জাহেলিয়াতের শ্লোগান তোলে, তাকে তার বাবার বংশ তুলে গালি দাও, স্পষ্টভাষায়, আকারে ইঙ্গিতে নয়।’

আল্লাহু আকবার! আল্লাহ্র রাসূল, যাঁর যবান থেকে শুধু ফুল ঝরতো, মধু ঝরতো! যাঁর পাক যবান থেকে শুধু অহী উচ্চারতি হতো, যাঁর সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সাক্ষ্য হলো-

‘তিনি নিজের ইচ্ছা থেকে কিছু বলেন না, তা তো অবতারিত অহী ছাড়া আর কিছু নয়।’

যাঁর মুখ থেকে কখনো সামান্য অসঙ্গত কথা বের হতো না, তিনি সম্ভবত প্রথমবার এবং শেষবার এত কঠিন শব্দ উচ্চারণ করেছেন।

আপনারা প্রদশে প্রদেশে যান, দ্বীনের প্রকৃত শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করুন। সমস্ত প্রদেশ থেকে বাচ্চাদের এখানে আনুন। এমন আলিমরূপে তাদের তৈয়ার করুন, যাতে তাদের অন্তরে জাহেলিয়াতের দুর্গন্ধপূর্ণ সাম্প্রদায়িকতার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়, যাতে তাদের অন্তরে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয়। তারপর এই মহান বার্তা ও পায়গাম দিয়ে নিজ নিজ প্রদেশে তাদের প্রেরণ করুন। সাম্প্রদায়িকতা ভৌগোলিক হোক, ভাষা ও বর্ণভিত্তিক হোক, কিংবা হোক অন্য কোন প্রকার, এর বিরুদ্ধে মযবূত দ্বীনী প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এটাই এ পর্যন্ত বহু দেশ ও জনপদকে টুকরো টুকরো করেছে। মুসলিমের হাতে মুসলিমের রক্ত ঝরিয়েছে। দুশমন শুধু দূর থেকে তামাশা দেখেছে।

পরিশেষে আবারো বলছি, এটা হতে পারে যে, মানুষের অন্তরে আপনারা কথার জাদু বিস্তার করবেন। জ্ঞান-গবেষণার জৌলুস এবং ইলমী যোগ্যতার প্রভাব বিস্তার করবেন; এটা হতে পারে, তবে সত্যিকারের মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ইহতিরাম ও আযমত এর মাধ্যমে অর্জিত হয় না, কখনোই না। এটা হবে, যখন আমলের বাস্তব নমুনা মানুষের সামনে আসবে; যখন উন্নত চরিত্র ও নৈতিকতার জীবন্ত উদাহরণ সামনে আসবে; যখন যুহদ ও ইসতিগনা এবং রূহানিয়াত ও কালবানিয়াতের যিন্দা মিছাল সামনে আসবে।

চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞান-গবেষণার দিক থেকে যেমন তেমনি আখলাক ও রূহানিয়াত এবং নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রেও মহান ব্যক্তিত্বের জন্ম হওয়া উচিত, যাদের দেখে মানুষ নিজে থেকেই শ্রদ্ধায় মাথা নত করে নেবে।

‘এমন ছিলেন আমাদের আসলাফ-আকাবির’ এই তসবী জপে বিশেষ কোন কাজ হবে না। আগের সফরে এখানে যে বয়ান করেছিলাম তাতে একথাই বলেছিলাম যে, কোন জাতি ও সম্প্রদায় এবং দাওয়াত ও আন্দোলন শুধু ইতিহাসের গৌরবগাঁথা দিয়ে, অতীতের র্কীতি ও গর্বের বিবরণ দিয়ে চলে না, চলতে পারে না। এককথায়, এজন্য প্রয়োজন আত্মকর্ম ও আত্মকীর্তির। নিজস্ব রূহানিয়াত ও আধ্যাত্মিক শক্তির এবং নিজস্ব মেহনত, সাধনা, ত্যাগ ও কোরবানির।

পকিস্তানে আমরা কথা দিয়ে, অতীতের গর্ব ও গৌরব দিয়ে কাজ চালাতে চাচ্ছি। একসময় কিন্তু মানুষ মুখের উপর বলতে শুরু করবে- ‘সাহেব, অনেক শুনেছি, শুনতে শুনতে বিরক্তি ধরে গেছে, আপনাদের আকাবির এমন ছিলেন, তেমন ছিলেন। ‘পেদারে মান সুলতান বূদ’-এর বয়ান তো বহুত হলো, এবার দয়া করে বলুন, আপনি কী? আপনার ব্যক্তিত্ব কী? আপনার আমল-আখলাক কী? আপনার ঈমান ও রূহানিয়াত কী? কাউম ও মিল্লাতের প্রতি আপনার দান ও অবদান কী?

অতীতের গৌরবগাঁথা অনেক শোনানো হয়েছে, ইতিহাস ঐতিহ্যের উপর অনেক কিছু লেখা হয়েছে, পুরো কুতুবখানা তৈয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন প্রয়োজন শুধু আমল ও মেহনতের! ত্যাগ-আত্মত্যাগ ও কোরবানির! এখন প্রয়োজন শুধু জীবনের সর্ব-অঙ্গনে জীবন্ত আর্দশের! যিন্দা নমুনার! ব্যস, আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন, আমীন। ওয়া আখিরু দাওয়ানা....