শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | টেকনাফ/তেতুলিয়া

নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহতা, আমরা কি শেষ হয়ে যাচ্ছি?

বিবেক-এখনো যাদের বিবেক ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে- সমাজের কাছে বিবেকের আজ বড় একটা জ¦লন্ত প্রশ্ন, আইয়ামে জাহিলিয়াত থেকে আমরা আর কতটা দূরে আছি, কিংবা সত্য কি এই যে, অনেক আগেই জাহিলিয়াতের সীমানা আমরা ছাড়িয়ে গিয়েছি?

আবার একটি মেয়েশিক্ষার্থী যৌননিপীড়ন ও অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়েছে এবং শেষপর্যন্ত অত্যন্ত করুণভাবে মৃত্যুর শিকার হয়েছে? এ মৃত্যু সমাজের ‘রুগ্ন’ বিবেককে কিছু সময়ের জন্য হলেও নাড়া দিয়েছে। একটি দৈনিকের শিরোনাম থেকে অন্তত তাই ধারণা করা যায়।

বস্তুত যৌননির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা এখন সারা বিশ্বে এবং প্রতিটি ‘সভ্যসমাজে’ আশঙ্কাজনকরূপে বেড়ে গিয়েছে। নারী ও শিশু এখন পৃথিবীর কোন দেশে, কোন সমাজে, কোন প্রতিষ্ঠানে, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিরাপদ নয়। সভ্যতাদর্পী পাশ্চাত্যের সমাজেও ‘শিক্ষা ও স্বাধীনতার’ আবরণে নারী আজ বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা, যৌননিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার। অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজবিশ^বিদ্যলায়ের মত বিশ^বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যন্ত ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে বিভিন্ন জরিপে। যুক্তরাষ্ট্রসহ, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর চিত্রও যথেষ্ট ভয়াবহ। জাতিসঙ্ঘের মত বিশ^সংস্থা ‘যাদের রয়েছে নারী-উন্নয়নের বিষয়ে আলাদা উৎসাহ, সেখান থেকেও আসছে চাঞ্চল্যকর জরিপ-তথ্য। সেখানেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লালসার শিকার হচ্ছে নারী কর্মী ও কর্মকর্তা। পাশ্চাত্যজুড়ে গীর্যা ও যাজক-শ্রেণীর যে বীভৎস রূপ প্রকাশ পেয়ে চলেছে তা সত্যি বড়...! হলিউড-বলিউড তো বিনোদনের জগত, সব হারাম যেখানে হালাল। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হলে সেখানেও এখন শুরু হয়েছে প্রতিবাদের বিস্ফোরণ।

তৃতীয় বিশ্বে বিশেষত বাংলাদেশে ব্যাপক যৌননিপীড়নের সঙ্গে যে উপসর্গটা ভয়াবহ আকারে যুক্ত হয়েছে সেটা হলো সহিংসতা।

আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-গুলোর ভিতরে তো ‘যৌনতার পচন’ ধরেছে অনেক আগেই, এখন আলিয়া নামের ‘ধর্মীয়’ প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দুঃখজনকভাবে পচনের সংক্রমণ ঘটেছে। অবশ্য আলিয়ায় শিক্ষার আধুনিকায়নের নামে যেভাবে ‘পর্দার শিথিলতা’ ঘটানো হয়েছে, সেই সঙ্গে নোংরা রাজনীতির প্রাদুর্ভাব, তাতে এ ধরনের  পচন ছিলো অবধারিত। প্রতিবাদ ও সহিংসতা, সামান্য একটু মুখোশ উন্মোচন করেছে মাত্র। ভিতরের প্রকৃত চিত্র কী, তা বোঝার জন্য খুব বেশী বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার করে না।

প্রশ্ন হলো, এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে সমাজের বাঁচার উপায় কী? জাতির চিন্তাশীল অংশ এবং আলেম -সমাজ সবসময় বলে আসছেন, কোন সমস্যা ও অবক্ষয়কে বিচ্ছিন্ন -ভাবে চিন্তা করে সমাধান বের করা সম্ভব নয়, তাতে বরং নতুন নতুন সমস্যা ও উপসর্গ দেখা দেবে শুধু। সামগ্রিক অবক্ষয় রোধ  করার জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করার কোন বিকল্প নেই। পর্দা ও সামাজিক শালীনতা এবং পারিবারিক অনুশাসন নতুন করে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে। মানুষের মধ্যে বিবেক ও মনুষ্যত্ব জাগ্রত করার একমাত্র উপায় হলো, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, যাকে বলা হয় তালিম ও তারবিয়াত, উভয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।

পরিশেষে আমরা বলতে চাই, প্রতিটা সহিংসতার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতেই হবে। বিচারহীনতা আসলে অপরাধের প্রতি প্রশ্রয়েরই নামান্তর। কোন অপরাধী কোন পরিচয়েই যেন আইনের আওতা থেকে বের হতে না পারে সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সাগর-রুনীর ঘটনার ছায়া পড়েনি। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, ‘অপরাধী কিছুতেই ছাড়া পাবে না।’

অবশ্য আমরা বুঝে উঠতে পারি না, প্রধানমন্ত্রীর এরূপ দৃঢ় বক্তব্যের পরো আদালতকে কেন বলতে হচ্ছে, ‘তদন্তে শিথিলতা হলে আদালতে হস্তক্ষেপ করবে। এটা কি দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি...!