শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | কিশোর পাতা

আ মা কে

আ   মা   কে 

যদি বলি, আমার কোন ভয় নেই, মিথ্যা হবে। সারা বুকজুড়েই তো আমার শুধু ভয় আর ভয়। এই ভয়, সেই ভয় এবং ...

এখানে শুধু লোকলজ্জার ভয় সম্পর্কেই বলি। সেই যে কবি বলেছেন, ‘পাছে লোকে কিছু বলে!’ মানুষ আমাকে লজ্জা দেবে, শুধু এটা ভেবে জীবনের কত সৌন্দর্য আমি বিসর্জন দেই অবলীলায়! আবার কত অসৌন্দর্যের সামনে আত্মসমর্পণ করি। তাতে শেষ পর্যন্ত কী হয়? জীবনের সকল সৌন্দর্য থেকে যখন বঞ্চিত হই; অসৌন্দর্যের কালো ও কালি যখন জীবনকে অন্ধকার করে ফেলে, কেউ কি তখন আমার পাশে দাঁড়ায়, কেউ কি তখন আমাকে সাহায্য করে? মৃত্যুর সময়? কবরে, হাশরে? কেউ কি তখন সাহায্য করবে আমাকে?

কেন তাহলে লোকলজ্জার ভয়! আমার জীবন ও তার দায় তো আমাকেই বহন করতে হবে! প্রতিটি কর্মের, প্রতিটি আচরণের হিসাব তো আমাকেই দিতে হবে!

***

মানুষের ভয়, সমাজের ভয়, এমনকি আপজনের অসন্তুষ্টির ভয় আমাকে যখন সত্য থেকে বিচ্যুত করে তখন ভিতর থেকে কেউ তো আমাকে সতর্ক করে, কেউ তো আমাকে তিরস্কার করে, কখনো কোমল ভাষায়, কখনো কঠিন শব্দে, কেউ তো আমাকে সাবধান করে, ‘মানুষকে লজ্জা করো, অথচ আল্লাহকে লজ্জা করো না! সমাজকে ভয় করো, অথচ আল্লাহকে ভয় করো না! স্ত্রী-পুত্রের, বন্ধুজনের সন্তুষ্টির চিন্তা করো, অথচ আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির পরোয়া করো না!

মানুষ তো তোমার কাছে শুধু দাবী করে, কিছু দান করে না; সমাজ তো তোমাকে শুধু দায়বদ্ধ করে, দায়মুক্ত করে না! পরিবার-পরিজন ও বন্ধুস্বজন, এরা তো শুধু আশা করে, আশা পূর্ণ করে না!

অথচ আল্লাহ্! মায়ের বুকের ফোঁটা ফোঁটা দুধ থেকে শুরু করে মৃত্যুর সময় কাতরা কাতরা পানি, সবই তো তাঁর দান! লোকলজ্জার ভয়ে তাঁকেই ভুলে যাও, কতটা নির্লজ্জ তুমি!

ভিতর থেকে কে যেন আমাকে এভাবে সাবধান করে! তারপর আমাকে এভাবে উদ্বুদ্ধ করে, ‘এখনো সময় আছে হে মূর্খ! ফিরে এসো তোমার রবের পথে, তোমার প্রতিপালকের আশ্রয়ে।’

***

দিনের মুখরতায়, রাতের নির্জনতায় এভাবে কে ডাকে আমাকে? সময়ের বাঁকে বাঁকে এভাবে কে সাবধান করে আমাকে? প্রতিটি খলনে স্খলনে এভাবে কে তিরস্কার করে আমাকে, কখনো কোমল ভাষায়, কখনো কঠিন শব্দে?

আমাকে নিয়ে তার কিসের উৎকণ্ঠা? কেন তার এত ব্যাকুলতা, অস্থিরতা? আমার সঙ্গে তার কী সম্পর্ক? কিসের বন্ধন?

আমি কি বিশ^াস করি, সে আমার কল্যাণকামী? সবাই আমার পর, সে-ই শুধু আমার আপন? আমি কি বুঝতে পারি, যারা বলে, আমরা তোমার আপন, তারা শুধু মায়ার নামে আমার চারপাশে মায়াজাল বিস্তার করে! আমি কি বুঝতে পারি, আমার ভিতরে যে বাস করে, সে-ই শুধু আমাকে মায়া করে এবং জীবনের মায়াজাল থেকে আমাকে উদ্ধারের আকুতি পোষণ করে!!

যদি বিশ^াস করি, কেন তার ডাকে সাড়া দেই না? যদি বুঝতে পারি, কেন জীবনের মায়াজাল ছিন্ন করে তার মায়ার বন্ধন গ্রহণ করি না?

***

এই যে আবার কানে বাজে তার ডাক! এই যে আবার শুনি তার সতর্কবাণী! কে তুমি হে কল্যাণকামী! আমার সঙ্গে তোমার যদি আছে কোন বন্ধন, দয়া করো, সেই বন্ধনের দাবী রক্ষা করো; অপরিচয়ের বাধা দূর করো। পর্দার আড়াল ত্যাগ করে আমার দৃষ্টির পথে উদ্ভাসিত হও। আমি তোমাকে দেখতে চাই, বুঝতে চাই। আমি তোমার কথা শুনতে চাই, তোমাকে ভালোবাসতে চাই।

***

সত্যি কি আমাকে তুমি চিনতে চাও? সত্যি কি আমার পরিচয় তুমি পেতে চাও? সত্যি কি আমাকে তুমি ভালোবসতে চাও?

তোমার প্রতি আমি তাহলে কৃতজ্ঞ হবো। তোমাকে নিয়ে তাহলে আমি জান্নাতের দুয়ারে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো! সেখানেই তো আমি ছিলাম! তুমি ছিলে!! সেখানেই তো আমি-তুমি এক হলাম!! ঐ যে নূরের ¯িœগ্ধতায় সবকিছু সিক্ত ছিলো! ঐ যে আলোর ঝলমলতায় সবকিছু কেমন শুভ্র সমুজ্জ্বল ছিলো!!

তখনই তো আমি আর তুমি তাঁর আদেশে নূরের বন্ধনে আবদ্ধ হলাম! আমি আর তুমি অভিন্ন হলাম!!

এখানে এসে তুমি ভুলে গিয়েছো আমাকে; আমি ভুলিনি তোমাকে! কারণ আমি তো আর কেউ নই, আমি তো ‘তুমি’!

আমাকে যদি চিন্তে চাও, আমাকে যদি পেতে চাও তাহলে আমার মিনতি রক্ষা করো; অন্তত কিছু সময়ের জন্য জীবনের কোলাহল বর্জন করো। অন্তত কিছু সময়ের জন্য জীবনকে নির্জনতা দান করো। পর্দার আড়ালে থেকেও আমি উদ্ভাসিত হবো তোমার অন্তর্দৃষ্টির সামনে। আমার শেষ কথাটি শোনো, মানুষকে, মানুষের সমাজকে, তোমার পরিবার-পরিজন ও বন্ধুস্বজন, কাউকে লজ্জা করো না, কাউকে ভয় করো না, শুধু আল্লাহ্কে লজ্জা করো, শুধু আল্লাহ্কে ভয় করো। তাহলেই আমি এবং তুমি ....