শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

কাশ্মীরসংখ্যা | তোমাদের পাতা

মা, এটা তোমার জন্য!

মা, এটা তোমার জন্য!

১- কাশ্মীরের এতীম ছেলে, সাঈদ! ও জানে না, কীভাবে এতীম হয়েছে! কীভাবে ওর বাবা ওর জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে! শুধু জানে, ওরা বাবা বড় ভালো মানুষ ছিলেন।

মাকে যখনই জিজ্ঞাসা করে, মা আমার বাবা কোথায়? অনেকের বাবা আছে, অনেকের বাবা নেই। যাদের বাবা নেই, কেন নেই মা?

মা আঁচলে চোখ মুছে বলেন, আগে বড় হও, মানুষ হও; তারপর জানতে পারবে! সাঈদ আর কিছু বলে না, চুপ করে সরে যায় মায়ের সামনে থেকে।

২- সাঈদের বিধবা মা, কী কষ্ট করে সাঈদকে লালন পালন করছেন, তা জানেন শুধু আল্লাহ্। তার জীবনের তখন একটাই শুধু লক্ষ্য। যত কষ্টই হোক, সাঈদকে তিনি লেখাপড়া শেখাবেন! মানুষের মত মানুষ করবেন।

স্বামী কত বড় মুজাহিদ ছিলেন! বুকে গুলি খেয়ে যেদিন ঘরে এলেন, তখন স্বামী বললেন, হয়ত আমার সময় আর বেশী নেই। তুমি ওয়াদা করো শহীদা, সাঈদকে লেখাপড়া শেখাবে, মানুষের মত মানুষ করবে!

পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেলো আহত স্বামীকে!

শাহীদা শুধু মনে মনে বললেন, আপনার আদেশ আমি ...!

৩- বিধবা মা কিছুটা দূরের এক মাদরাসায় দাখেল করে দিলেন এতীম পুত্র সাঈদকে। সাঈদ লেখা-পড়ায় বেশ মনোযোগী ছিলো। তারো প্রতিজ্ঞা ছিলো, লেখাপড়া শিখে বড় আলিম হয়ে মায়ের মুখ সে উজ্জ্বল করবে। সে জানতো, মা কত কষ্ট করে মানুষের বাড়ীতে ...!

৪- একবছর হলো, দু’বছর হলো। সাঈদ এখন আগের চেয়ে বড় হয়েছে, বয়সে যেমন তেমনি জ্ঞানে গুণে। এখন সে জীবন সম্পর্কে অনেক বেশী বোঝে! এখন সে জানে, তার দেশ কাশ্মীর পরাধীন! কাশ্মীরের আযাদির জন্যই তার বাবা জান দিয়েছেন, শহীদ হয়েছে। মনে মনে সে প্রতিজ্ঞা করে, শহীদ বাবার পথেই তাকে চলতে হবে। তবে তার আগে মায়ের সব কষ্ট দূর করতে হবে।

একদিন সে দেখে, তার মায়ের কাপড় ছেঁড়া। তার চোখে পানি এসে গেলো!

 ৫- বিধবা মায়ের মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। মাদরাসা থেকে অভিযোগ এলো, সাঈদ বিলম্বে মাদরাসায় যায়। যতই শাসন করা হয়, পরের দিন একই ভাবে বিলম্ব!

মা ছেলেকে ডেকে খুব তিরস্কার করলেন, তুমি নাকি পথে খেলাধূলা করো, আর দেরীতে মাদরাসায় যাও! বাবা, তুমি ছাড়া আমার কে আছে বলো! তুমি যদি এমন করো...!

৬- কিন্তু কোন পরিবর্তন হলো না। শেষে এমন হলো যে, মায়ের হাতেও মার খায়, আবার মাদরাসায় গিয়েও উস্তাদের হাতে মার খায়!

মা তখন বলতে গেলে হতাশায় ভেঙ্গেই পড়লেন, অন্ধ মানুষের লাঠি ভেঙ্গে গেলে যেমন হয়। তার শুধু কষ্ট, স্বামীর  শেষ আদেশ হয়ত আর পালন করা হলো না! হায়...!

৭- একদিন মা ভাবলেন, দেখতে হবে, ছেলে তার কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে?

ছেলে বই কিতাব নিয়ে বের হলো। মাও তার পিছনে পিছনে বের হলেন! ছেলে কিন্তু জানতে পারলো না, আজ মায়ের কাছে সব ঘটনা প্রকাশ পেয়ে যাবে।

মা যা দেখলেন, তাতে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলেন না! তিনি তো কল্পনাও করতে পারেননি যে, তার ছেলে....!

৮-  মা যেমন নীরবে গিয়েছিলেন তেমনি নীরবে ফিরে এলেন। তবে পরের দিন ছেলেকে কিছুই বললেন না। না তিরস্কার করলেন, না শাসন করলেন।

মায়ের এ পরিবর্তনে সাঈদ কিছুটা অবাক হলো!

দু’টুকরো রুটি মুখে দিয়ে সাঈদ বের হয়ে গেলো, আর মা জায়নামাযে দাঁড়িয়ে শুধু চোখের পানি ফেললেন, আর বললেন, আমার ছেলের প্রতি আমি খুশী আছি হে আল্লাহ্! তাকে তুমি সাহায্য করো হে আল্লাহ্!

৯- সাঈদ মাদরাসায় গিয়ে তো আরো অবাক। উস্তাদের সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়েছে, রোযকার মত শাসন গ্রহণ করবে বলে, কিন্তু উস্তাদ খুব নরম করে শুধু বললেন, যাও পড়তে বসো।

ঘটনা তাহলে কী ছিলো?

সাঈদ প্রতিদিন বাজারে গিয়ে কিছু সময় সবজি বিক্রি করতো। তাতে সামান্য যা পয়সা হতো তা একটি কাপড়ের দোকানে জমা রেখে মাদরাসায় রওয়ানা হতো।

এটাই ছিলো তার মাদরাসায় যেতে বিলম্বের কারণ। কিন্তু মায়ের কাছে, উস্তাদের কাছে সে তা প্রকাশ করেনি, যদি তারা নিষেধ করে দেন তাহলে তো তার স্বপ্নটা পূর্ণ হবে না!

 ১০- সেদিন সাঈদ ফিরে এলো। তার হাতে একটা প্যাকেট। সেটা মায়ের হাতে দিয়ে সে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকলো। মা জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী বাবা! সাঈদ কুণ্ঠিত স্বরে বললো, খুলে দেখো না মা! মা খুলে দেখেন, নতুন সেলোয়ার কামিছ ও দোপাট্টা! মায়ের চোখ থেকে তখন ঝরঝর করে পানি ঝরতে লাগলো। সাঈদ শুধু বললো, মা এটা তোমার জন্য!