শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

কাশ্মীরসংখ্যা | প্রথম পাতা

সম্পাদকীয়

অনেক রক্ত ঝরেছে আমাদের এবার ... ... ....!

 

অনেক রক্ত ঝরেছে আমাদের

এবার ...   ...   ....!

আগ্নেয়গিরির লাভা নিয়ে আবার জ্বলে উঠেছে কাশ্মীর!

বারুদের আগুন, জিঘাংসার আগুন এবং প্রতিরোধের আগুন নিয়ে আবার জ¦লে উঠেছে কাশ্মীর!

নেকড়ের থাবায়, হায়েনার নখরে এবং নাগ-নাগিনীর বিষছোবলে ক্ষতবিক্ষত কাশ্মীর এবার জেগে উঠেছে। এখন থেকে জ¦লবে কাশ্মীর, শুধু তোমাদের বারুদে নয়, আমাদেরও অগ্নিফুলকি থেকে!

পশুদের উন্মত্ত উল্লাস, জালিমের অট্টহাসি, কামানের লাগাতার গর্জন এবং চোখের পানি ও বুকের খুনের মাঝে কাশ্মীর এবার জেগে উঠেছে। এখন থেকে শোনবে পৃথিবী, শুধু জালিমের অট্টহাসি নয়, আহত সিংহেরও হুঙ্কার!

ডাকাত রাহযানের শোরগোল, হিন্দুত্ববাদের উলুধ্বনি-শঙ্খধ্বনি; মযলুমানের অসহায় আর্তনাদ, লাঞ্ছিত বিধ্বস্ত মুসলিমানের আহাযারি, লুণ্ঠিত আবরুর বুকফাটা ফরিয়াদ, সবকিছুর মাঝে, সবকিছু ছাপিয়ে কাশ্মীর এবার জেগে উঠেছে। এখন থেকে আর নয় শুধু আহাযারি, আর্তনাদ, নয় শুধু বুকফাটা ফরিয়াদ! নির্লিপ্ত বিশ্ব এখন থেকে শোনবে প্রতিবাদের গর্জন, প্রতিরোধের হুঙ্কার এবং পলায়নপর হায়েনার পায়ের আওয়ায!

কাশ্মীরে এখন পড়ে পড়ে মার খাওয়ার, ছররা গুলির আঘাতে অন্ধ হওয়ার, চোখের পানি চোখেই মুছে ফেলার, বুকের আগুন বুকেই চেপে রাখার দিন শেষ। কাশ্মীরের মুসলিম জনতা এখন প্রতিবাদে, প্রতিরোধে ফুঁসে উঠেছে।

‘ধর্ষিত মানচিত্রের’ জন্য বিলাপ করার যিল্লতি ভুলে কাশ্মীর এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বন্দুকের নলের মুখে কাশ্মীর এখন নির্ভয়! শুধু টেঙ্ক-কামানের গর্জন নয়, কাশ্মীরে পৃথিবী এখন শোনবে আযান ও জিহাদের তাকবীর আল্লাহু আকবার!

ঝিলাম নদীর শান্ত জলে এবার ঢেউ উঠেছে! পাহাড়চূড়ার শুভ্র তুষারের গায়ে এবার রোদ লেগেছে। উপত্যকার সবুজ গালিচায় এবার রক্তের রঙ ধরেছে। নতুন তেজে, নতুন বলে, নতুন শক্তিতে, নতুন বিশ্বসের, প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞায়, নতুন প্রেরণায়, নতুন উদ্যমে উদ্দীপনায় কাশ্মীর এবার নতুন রূপে, নতুন অবয়বে আত্মপ্রকাশ করেছে। কাশ্মীরের আকাশে বাতাসে এখন শুধু আগুন, বারুদ ও ধোঁয়ার গন্ধ নয়; কাশ্মীরে এখন বাগানে বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে, নতুন নতুন কলি আসতে শুরু করেছে। কাশ্মীরে এখন স্বাধীনতার সুবাস বইতে শুরু করেছে। কাশ্মীরের ঘরে ঘরে জন্মলাভ করা প্রতিটি শিশু এখন স্বাধীনতার বহ্নিশিখা এবং আযাদির চিঙ্গারি।

***

আল্লাহ্র ইচ্ছায়, আল্লাহ্র সাহায্যে, কাশ্মীর এখন লড়াই করবে, প্রতিবাদ করবে, প্রতিরোধ করবে এবং ...। কাশ্মীর এখন বাতিলের বুতখানায় আযান দেবে! কাশ্মীর এখন যালিমের বালাখানায় কাঁপন ধরিয়ে দেবে! কাশ্মীর এখন ইবলীসের মযবূত দুর্গ গুঁড়িয়ে দেবে। কাশ্মীর এখন আযাদীর মশাল প্রজ¦লিত করবে এবং প্রজ¦লিত রাখবে বুকের রক্ত দিয়ে। কাশ্মীরে অনেক কিছুর অভাব আছে, কাশ্মীরী তরুণের বুকে রক্তের অভাব নেই। প্রতিটি বুক থেকে এত রক্ত ঝরে যে, বন্দুকহাতে হায়েনার দল পর্যন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে!

জাতির যুবকদের বুকে যখন রক্তের বান ডাকে, একটি বুকের রক্তে যখন তৈরী হয় একটি সাগর, তখন বুঝতে হবে, এ জাতির স্বাধীনতার শুভক্ষণ এবং আযাদীর ‘হাসীন লামহা’ ঘনিয়ে এসেছে! পূর্বদিগন্তে রাঙা সূর্যের উদয়ে আর দেরী নেই!

***

যালিমের বুকে এখনই কাঁপন ধরেছে। পরিষ্কার দেখা যায়, বন্দুক হাতে ওরা গুলি ছোঁড়ে, কিন্তু নিরস্ত্র জনতার ‘মৃত্যু-উন্মুখ’ এগিয়ে আসা দেখে ওদের হাত কাঁপে, বুক কাঁপে। আসন্ন পরিণতির বীভৎস দৃশ্য যেন ওদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

কিন্তু এখানেও কাশ্মীরী মুসলিমের চরিত্র ও প্রকৃতি বুঝতে ওরা ভুল করে। নরকের কীটগুলো যেন ভূস্বর্গের মাটি ও মানুষকে নিজেদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে।  অথচ...

আমি নির্দ্বিধ কণ্ঠে বলতে চাই, নিশ্চিন্ত থাকো হে যালিম! কাশ্মীর প্রতিশোধ নেবে না, কাশ্মীর হিংস্রতার পথে যাবে না, তবে রক্তের মূল্য পরিশোধ করে লুণ্ঠিত অধিকার ছিনিয়ে আনবে।

নির্ভয় হও হে যালিম! কাশ্মীর যুলুমের জবাব যুলুম দ্বারা দেবে না, ন্যায় ও ইনছাফ দ্বারা দেবে।

কাশ্মীর হিংসা ও প্রতিহিংসার জবাব হিংসা ও প্রতিহিংসা দ্বারা দেবে না, ক্ষমা ও সহনশীলতা দ্বারা দেবে।

কাশ্মীর ঘৃণা ও বিদ্বেষের জবাব ঘৃণা ও বিদ্বেষ দ্বারা দেবে না, দেবে প্রেম ও ভালোবাসা দ্বারা;  তবে কাশ্মীর তার ভূমি ও সম্পদ এবং সবুজ মানচিত্র রক্ষা করবে রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে। কাশ্মীর তার মাটি ও মানুষকে বাঁচাবে বন্দুকের শেষ গুলিটি খরচ করে।

মুসলিম কাশ্মীর যুদ্ধের অঙ্গনে ইস্পাত-কঠিন, জীবনের অঙ্গনে ফুলের মত স্নিগ্ধ-কোমল। প্রতিরোধে কাশ্মীর দাউ দাউ দাবানল, শান্তিতে  মোমের স্নিগ্ধ আলো।’

প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করো হে যালিম! কাশ্মীরের বিজয় সবার জন্যই বয়ে আনবে শান্তি ও নিরাপত্তা। কাশ্মীরে তোমাদের মন্দির নিরাপদ! তোমাদের শিশু ও নারী নিরাপদ! তোমাদের ইজ্জত-আবরু এবং জীবন ও সম্পদ নিরাপদ!

***

আমরা হিসাব চাইবো না, কত মসজিদ বিরান হলো; কত মায়ের বুক খালি হলো; কত শিশু এতীম হলো এবং কত নারীর আবরু...! আমরা শুধু আহত মানচিত্রের নিরাপত্তা চাইবো!

আগুনের উপত্যকা পার হয়ে, রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে আমরা শুধু স্বাধীনতার লাল সূর্যটা রাহুমুক্ত দেখতে চাইবো।

আমরা শুধু বলবো, ত্যাগ করো আমাদের পাক যমীন! আমাদের পবিত্র ভূমি! আমাদের সবুজ উপত্যকা! শান্তিতে থাকো নিজেদের সীমান্তের ভিতরে; আমাদের শান্তিতে থাকতে দাও এখানে আমাদের সীমান্তের ভিতরে, ফুলে ফলে সুশোভিত আমাদের সবুজ মাটিতে।

***

সাবধান যালিম, সাবধান! প্রাণের জোয়ারে জেগে ওঠা কাশ্মীরকে দমন করা,  প্রতিবাদে প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ানো কাশ্মীরকে মুছে ফেলা, তারুণ্যের শক্তিতে জ্লে ওঠা কাশ্মীরকে ছুঁড়ে ফেলা আর সম্ভব না! কাশ্মীরী মায়ের বুকে দুধের উষ্ণতা আবার ফিরে এসেছে! কাশ্মীরী তরুণের রক্তে আবার উত্তাপ ফিরে এসেছে! কাশ্মীরী শিশুদের মুখে ভয়হীন হাসি আবার ফিরে এসেছে! কাশ্মীর এখন মৃত্যুকে ভালোবাসতে শিখেছে। কাশ্মীর এখন জীবনকে লাল বর্ণে রাঙাতে শিখেছে। কাশ্মীর এখন মৃত্যুর গান গেয়ে জীবনের পথে চলতে শিখেছে। পৃথিবী এখন দেখবে, কাশ্মীর কীভাবে লড়াই করে খালি হাতে, কামানগোলার বিরুদ্ধে! পৃথিবী এখন দেখবে, অস্ত্রসজ্জিত দশলাখ সৈন্যের বিরুদ্ধে আশিলাখ নিরস্ত্র জনতা কীভাবে বিজয় ছিনিয়ে আনে! নাছরুম-মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব।

***

এটা সত্য যে, এখন আমাদের জীবনে শুধু আর্তনাদ, আর আর্তনাদ, এখানে ওখানে সবখানে, কালিমার উচ্চারণ ও বিশ্বাস আছে যেখানে যেখানে! এখন আমাদের জীবনে ফরিয়াদ, আর ফরিয়াদ, এখানে ওখানে সবখানে, যেখানে মিনার আছে এবং আছে আযানের ধ্বনি ও প্রতিধ্বনি।

নিপীড়িত মানুষের আর্তনাদ এবং মযলুমানের ফরিয়াদ এখন প্রতিটি মুসলিম জনপদে; ফিলিস্তীনে, বলকানে, আরাকানে, আসামে, কাশ্মীরে! এমনকি ঐ সব জনপদে যা বহু শতাব্দী ধরে পরিচিত মুসলিম উম্মাহর নিজস্ব ভূখ-রূপে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়ামেন, কোথায় জ¦লছে না আগুন! কোথায় নেই ঝড়ের তা-ব, রক্তের স্রোত! কোথায় নেই লাশের মিছিল, ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ! কোথায় নেই এতীমের জীর্ণ নগ্ন দেহ! ক্ষুধার্ত মুখ ও ভয়ার্ত দৃষ্টি! কোথায় নেই ক্ষতবিক্ষত মুসলিম নারীর, আমার মা-বোনের ...!

প্রতিটি মুসলিম জনপদে আজ শোনা যায় অসহায় মানুষের আর্তনাদ এবং মযলুমানের ফরিয়াদ, কিন্তু শোনার বোধহয় কেউ নেই! কারণ আমরা মুসলিম; আমরা এক আল্লাহ্তে বিশসী, তাওহীদের অনুসারী। কারণ ভিতরে ঈমান দুর্বল হলেও, আমাদের মুখে এখনো উচ্চারিত কালিমার শাহাদাত। কারণ...!

আল্লাহ্র কাছেই আজ আমাদের সমস্ত শাকওয়া ও ফরিয়াদ। কেউ আজ আমাদের পাশে নেই। যারা অমুসলিম তাদের না থাকাই স্বাভাকিক; কিন্তু মুসলিম

বিশ্বের নেতা ও শাসক তারা কেন নেই, এর কোন ব্যাখ্যা নেই।

তবে যে বিশাসের শক্তিতে এখনো বেঁচে আছি এবং নতুন সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছি তা এই যে, আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে আছেন! মুসলিম উম্মাহ্কে আল্লাহ্ অবশ্যই সাহায্য করবেন! প্রতিটি মুসলিম জনপদ, ফিলিস্তীন, আরাকান, বলকান, কাশগর, ইনশাআল্লাহ্ অচিরেই জুলুমাত থেকে মুক্ত হবে!

কাশ্মীরের উপত্যকা আবার আমাদের হবে। ঝিলামনদীর পানি আবার স্বচ্ছ ধারায় প্রবাহিত হবে। কাশ্মীরের মযলূম মুসলিমান আবার মুক্ত আকাশে, মুক্ত বাতাসে আযাদীর শাস গ্রহণ করবে। আমাদের শুধু একবার প্রতিজ্ঞা করতে হবে, যে প্রতিজ্ঞায় থাকবে ইস্পাত ও ফাওলাদের দৃঢ়তা, আমরা আল্লাহ্র পথে, কোরআনের পথে, সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবো!