শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ | পা ঠ কে র আ দা ল ত

সম্পাদকের কলম : আমার দৃষ্টিতে

পুষ্পের সম্পাদক আসলে কী চান! কতভাবে কত কৌশলে তিনি আমাদের হাতে কলম তুলে দিতে চান, আর চান এই কলম যেন আমাদের হাত থেকে কখনো না নামে। আমাদের কলম যেন চলতেই থাকে কল্যাণের পথে উন্নতির পথে। আল্লাহর ইচ্ছায় একসময় আমরা যেন হতে পারি কলমের মুজাহিদ। এ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তিনি রোযনামচা বিভাগ রেখেছেন, যা আমার জানা মতে পত্রিকার জগতে প্রথম।

এখন হয়ত কিছু অনুসরণ হচ্ছে, তবে কোথায় সেই সজীবতা, সেই উচ্ছলতা! তারপরো একটা বিষয় আমাকে বেদনা দেয়। যারা অনুসরণ করেন তারা পুষ্পের নামে কৃতজ্ঞতার দু’টো শব্দ উচ্চারণ করেন না। যদিও তাতে পুষ্প ও তার সম্পাদকের কিছু যায় আসে না। তারপর রেখেছেন কিশোরদের এবং শিশুদের লেখা প্রকাশের বিভাগ। আরো আকর্ষণীয় বিষয় হলো ‘তোমাদের লেখা আমাদের দেখা, দুইয়ে মিলে হোক ভবিষ্যতের স্বপ্নরেখা’। কী অতুলনীয় শিরোনাম! শুধু কি তাই, সান্ত্বনামূলক, উৎসাহমূলক ও দিকনির্দেশনামূলক মন্তব্যগুলো তো আমাদের জন্য রীতিমত মূল্যবান সম্পদ! 

এখানেই তিনি থেমে নেই! রেখেছেন পরম আনন্দের চিঠিপত্র বিভাগ, যার আরেক নাম হলো ‘রসগোল্লা ও চমচম’ বিভাগ। সত্যি, সম্পদাকের রুচি ও মেধা তুলনাহীন! তবু যেন অলস থেকে অলসও চিঠি লেখার এবং মজাদার কোন উত্তর পাওয়ার লোভে হলেও কলম ধরে। বুড়ো প্রজন্মের কারো হৃদয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য এমন দরদ, ব্যথা এবং এমন আকুতি থাকতে পারে, কল্পনাও তো করতে পারি না! প্রসঙ্গত, চমচম নামের উত্তরগুলো সত্যি চমচম, যেমন স্বাদে তেমন...! কোন কোন উত্তর এমন বুদ্ধিদীপ্ত ও  জ্ঞানদীপ্ত হয় যে, রীতিমত গর্ব হয়! জাগতিক শিক্ষার জগতের সামনে তিনি তো আলিম সমাজের...!

সবশেষে তিনি খুলেছেন পাঠকের আদালত! এটা যে কত উচ্চস্তরের চিন্তা তা হয়ত অনেকের বোধগম্য নয়। আসলে যারা সময় থেকে এগিয়ে থাকেন তারা সমকালের চিন্তা তাদের নাগাল পায় না।

***

আমার মনে হয় যথেষ্ট প্রশংসা করা হয়েছে। এবার বোধহয় সম্পাদক সাহেব কিছু সমালোচনা হযম করতে পারবেন। তবু ভয়ে ভয়ে নিবেদন করি, অষ্টম সংখ্যায় দশম পাতায় গোলান মালভূমির আয়তন উল্লেখ করতে সম্পাদক সাহেব ভুলে গিয়েছেন। এটা ইচ্ছাকৃত হলে তো ফৌজদারী অপরাধ, আর যদি অনিচ্ছাকৃত হয় তাহলে... অবস্থা দ্বারা অবশ্যই দ্বিতীয়টাই মনে হয়। কারণ তিনি লালদাগের নিশান লাগিয়ে রেখেছিলেন যে, ‘বিপজ্জনক’। কিন্তু যেভাবেই হোক গর্তে পড়ে গিয়েছেন। সুতরাং...!

 

০০ আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি। ঠিকই ভুল হয়ে গিয়েছে। তবে সামনে তুমি যা লিখেছো, তা যদি প্রকাশ করি, তোমার বড় নিন্দা হবে। আর আমি কি তোমার নিন্দা চাইতে পারি। ভুল ধরেছো, ভালো, কিন্তু আয়তনটা তো নিজের থেকে বলে দিলে না! গোলান মাল-ভূমির আয়তন হলো: ১১৫০কিলোমিটার। 

***

পুষ্পের সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ সম্প্রতি পাঠকের আদালতে পেশ করা হয়েছে। আজকের আদালতে প্রথমে এ অভিযোগ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা-পর্যালোচনা করা হবে। তার পর আদলতের পক্ষ হতে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে। আদালত আশা করে, আদালতের বিচারকার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য আদালতকক্ষে যারা উপস্থিত হয়েছেন, মোকাদ্দামা চলাকালীন পুরো সময় তারা পূর্ণ শান্তি ও নীরবতা রক্ষা করে বিচারকার্যে আদালতকে সাহায্য করবেন। এবার অভিযোগ পড়ে শোনানো হোক।

পাঠক নযরুল ইসলাম ঝালকাঠির বক্তব্য : ‘পুষ্পের সম্পাদকের প্রতি আমার সবচে বড় অভিযোগ হলো। এখানে সব লেখাই সম্পাদকের নিজের লেখা! দেশে এত বড় বড় লেখক আছেন, তাদের কাছ থেকেও তো সংগ্রহ করা যেতে পারে কিছু লেখা। তিনি কি চান, আমরা শুধু তারই লেখা পড়ি! আর তারই গুণগান গাই!...

আদালতের বক্তব্য : অভিযোগ খুবই গুরুতর। মহামান্য আদালত সম্পাদকের বরাবরে আদেশ জারি করছে। তিনি যেন স্বশরীরে কাঠগড়ায় উপস্থিত হয়ে কৈফিয়ত পেশ করেন।

সম্পাদকের বক্তব্য: মহামান্য আদালত, আমার একটা আর্যি রক্ষা করা হোক। আমি বুড়ো মানুষ, মাযূর মানুষ, তার উপর বিভিন্ন রোগে শোকে বড়ই বিপর্যস্ত। দাঁড়িয়ে কথা বলতে বড়ই কষ্ট। মহামান্য আদালত যদি দয়া করে অধমকে একটু বসার অনুমতি দান করেন, আর বসার জন্য যেমনই হোক একটা চেয়ারের যদি ব্যবস্থা করেন, তাহলে অধম বড়ই কৃতজ্ঞ হয়। শুধু দেখতে হবে, চেয়ারের পায়াগুলো যেন আমার দাঁতের মত নড়বড়ে না হয়। কারণ ‘পড়িয়া গেলে আর উঠিতে পারিব কি না, সন্দেহ!’

আদালতঃ সবদিক বিবেচনা করে আদালত সম্পাদকের বসার জন্য উপযুক্ত একটি চেয়ারের ব্যবস্থা করার আদেশ দিলো।

সম্পাদকঃ ধন্যবান মাননীয় আদালত! আমার প্রথম জানবার বিষয় হলো, পাঠক মহোদয় যে কলমের সাহায্যে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখেছেন, যা একটু আগে পড়ে শোনানো হলো, সেই কলম, সেই লেখা কি আমার না তার নিজের! মাননীয় আদালত! আসলে আমার অপরাধ হলো, পুষ্পের মাধ্যমে আমি পাঠকের হাতে কলম তুলে দিতে চাই। পাঠক মহোদয়ের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আমি বলছি, পুষ্পের পাতায় শুধু সম্পাদকের লেখা ছাপা হয়, এটা মিথ্যা অভিযোগ! ঠিক আছে, আমি আরো কোমল শব্দ ব্যবহার করছি, এটা অসত্য অভিযোগ। পুষ্পের পাতায় যত লেখা ছাপা হয়, তার সামান্য কিছু সম্পাদকের নিজের কলমে, বাকি অধিকাংশ লেখাই হলো পাঠকের, যারা কেউ শিশু, কেউ কিশোর, কেউ বা নবীন। আমার বক্তব্যের স্বপক্ষে আলাদা কোন সাক্ষি-সাবুদের প্রয়োজন নেই। পুষ্পের পাপড়িগুলোই আমার সাক্ষি, আমার সাবুদ। মাননীয় আদালত আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছে, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, বুড়ো মানুষ তো! একটু... আমার অবশ্য পানিতেও আপত্তি নেউ, জলেও অসম্মতি নেই, পিপাসা দূর হলেই হলো।

আদালতঃ  সম্পাদকের বার্ধক্যের প্রতি সদয় হয়ে একগ্লাস পানি সরবরাহ করার আদেশ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে সম্পাদকের সাহিত্যজ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে একগ্লাস জলেরও বব্যস্থা করার আদেশ দিচ্ছে,  যাতে তিনি ইচ্ছা করলে পানি পান করতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে জল! সম্পাদক (ঢক ঢক করে দেড় ঢোক পানি এবং দেড় ঢোক জল পান করে): ধন্যবাদ মাননীয় আদালত!

আদালত: আপনার ধন্যবাদ সাদরে গ্রহণ করা হলো, যদিও আপনার এবং আমার প্রিয় বাক্য হলো জাযাকাল্লাহু খায়রান!

সম্পাদক : (মৃদু হেসে) তা ঠিক, তা ঠিক, তবে কিনা, মাননীয় আদালত! পানির সঙ্গে অর্ধেকটা জলও পান করেছি তো, জলের সঙ্গে ঐটার চেয়ে ধন্যবাদটাই বোধহয় বেশী মানায়। যাক, তারপরো আপনাকে জাযাকাল্লাহু খায়রান।

আদালতঃ কলম ও লেখা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য বিবেচনাযোগ্য। আদালত গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, প্রচুর পাঠকের লেখা এবং লেখার সঙ্গে তাদের নামঠিকানাও পুষ্পের অসংখ্য পাপড়িতে বিদ্যমান রয়েছে। এসম্পর্কে পাঠকের বক্তব্য পরে শোনা হবে। তবে অভিযোগের আরেকটি অংশ সম্পর্কে আপনার কী বক্তব্য! এই যে দেশে এত বড় বড় মানুষ আছেন, তাদের এত বড় বড় কলম আছে; তো বড় মানুষের বড় কলমের লেখা কেন সংগ্রহ করে পুষ্পের পাতায় প্রকাশ করা হয় না!

সম্পাদকঃ মাননীয় আদালত! বাংলায় বড় শিক্ষণীয় একটি প্রবাদ আছে, কিঞ্চিৎ সম্পাদনা করে প্রবাদবাক্যটি আমি আদালতের কর্ণগোচর করতে চাই- ‘যার জন্য করি অপরাধ সেই বলে, আপরাধী!

আদালতঃ আপনার শব্দসম্পাদনা আমাদের বোধগম্য হয়েছে, তবে আপনার উদ্দেশ্য বোধাগম্য হয়নি!

সম্পাদকঃ ঘটনা হলো কী! দেশের বড় কলমের বড় লেখকদের প্রতি দূর থেকে...একমিনিট সময় প্রার্থনা করছি মাহামান্য আদালাত, একটু সম্পাদন করে নিই! প্রণাম শব্দটি ব্যবহার করবো, নাকি সালাম...তো মাননীয় আদালত, বড় লেখকের মধ্যে যারা হিন্দু তাদেরকে দূর থেকে প্রণাম, আর যারা মুসলিম তাদেরকে সালাম। তাদের জন্য দেশে এবং বিদেশে রয়েছে বড় বড় পত্রিকা! সেখানে তারা মনের সুখে লিখুন, লিখতে থাকুন। সেখানে তো আমার এবং আমার পাঠকদের প্রবেশাধিকারই নেই।তো আমি গরীব সম্পাদক, পুষ্পের জগতে আমার পাঠকদের নিয়েই নিমগ্ন থাকতে চাই।আমার স্বপ্ন হলো, মাননীয় আদালত, আজকের ছোট ছোট পাঠকই যেন পুষ্পের কল্যাণে একদিন দেশের বড় বড় লেখক হতে পারে।

আদালতঃ অভিযোগকারীর কি কিছু বলার আছে!

অভিযোগকারী পাঠকঃ জি¦, আর প্রশ্ন হলো, বিভিন্ন পাঠকের নামে বেশ কিছু লেখা ছাপা হয় বটে, কিন্তু সম্পাদক তাতে এমন কাঁচি চালান...

সম্পাদকঃ আমার আপত্তি মাননীয় আদালত! আমি কখনো কাঁচি চালাই না,  শুধু কলম চালাই!

আদালাতঃ আপত্তি গ্রহণযোগ্য। অভিযোগকারী সামনে বলুন।

অভিযোগকারীঃ সম্পাদক কাঁচি বা কলম, যাই হোক সেটা না চালিয়ে পাঠকের লেখা পাঠকের মত করে প্রকাশ করেন না কেন?

সম্পাদকঃ আমার কথা হলো, তিনটি পক্ষ মিলে আমরা পুষ্পের একটি পরিবার। সম্পাদক, লেখক ও পাঠক। পুষ্পের বড় বৈশিষ্ট্য হলো তিনপক্ষেরই স্বার্থ রক্ষা করা। সম্পাদককে পূর্ণ সুযোগ দিতে হব, যাতে পাঠকের লেখার উপর কলম চালনা করে তিনি সম্পাদনা শিখতে পারেন। তারপর লেখক ও পাঠকের স্বার্থ রক্ষা করাও সম্পাদকের কর্তব্য। তো সম্পাদক মনে করেন। পাঠক যখন লেখেন তখন তিনি শুধু পাঠক থাকেন না, লেখকও হয়ে যানা। লেখার মাধ্যমে তো তার কলমচর্চা হয়ে গেলো। এখন পুষ্পের পাতায় সেটা ছাপা হলো, কি না তা তো চিন্তার বিষয় না! এখন চিন্তার বিষয় হলো, যারা পাঠক, যারা ঐ লেখাটা পড়বে এবং পড়ে সুন্দর কিছু শিখবে, সম্পাদকের কতর্ব্য হলো পাঠকের স্বার্থ রক্ষা করে লেখাটা এমনভাবে সম্পাদনা করে প্রকাশ করা যাতে পাঠকের সামনে একটি সুন্দর...

আদালতঃ  উভয় পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করে আদালত সম্পাদককে সসম্মানে দায়মুক্ত বলে ঘোষণা করছে।

সম্পাদকঃ মাননীয় আদালত আপনাকে যাকাল্লাহু খায়রান।(মানহানির মামলা দায়েরের কথা আমি চিন্তা করছি না, কারণ পুষ্পের পাঠক তো আমার সন্তানতুল্য! তবে একটু শিষ্টাচার..)