রমযান ১৪৩০ হিঃ (১৩)

তোমাদের জন্য

প্রধান ধর্মসমূহে স্রষ্টার ধারণা

লিখেছেনঃ ডঃ যাকির নায়েক অনুবাদঃ শাহ জালাল

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট
(ধারাবাহিক) ঈশ্বর ঈশ্বরের মত কাজ করেন ঈশ্বরের ইসলামি ধারণা এই যে, সমস্ত কিছুর উপর ঈশ্বরের ক্ষমতা রয়েছে। বহু স্থানে কোরআন বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। (২ ঃ ১০৬, ১০৯, ২৮৪, ৩ ঃ ২৯, ১৬ ঃ ৭৭, ৩৫ ঃ ১) পবিত্র কোরআন আরো বলে, ‘তিনি (আল্লাহ) যা চান তাই করেন।’ (৮৫ ঃ ১৬) আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ঈশ্বর শুধু তাঁর উপযুক্ত কাজের ইচ্ছা করেন, তাঁর অনুপযুক্ত কোন কাজের ইচ্ছা করেন না। অনেক ধর্মই কোন এক পর্যায়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঈশ্বরের উপর মানবব্যক্তিত্ব আরোপের তত্ত্বে বিশ্বাস করে। ঈশ্বর মানবরূপ ধারণ করেন বলে তারা মনে করে। এর পক্ষে তাদের যুক্তি হচ্ছে, ঈশ্বর এতই নির্মল ও পবিত্র যে, তিনি মানুষের কষ্ট, সীমাবদ্ধতা ও অনুভব-অনুভূতির বিষয়ে অজ্ঞ। তাই মানুষের জন্য বিধান তৈরীর উদ্দেশ্যে তিনি মানুষ- রূপে পৃথিবীতে নেমে আসেন। এই প্রতারণাপূর্ণ যুক্তি যুগে যুগে বহুশত মিলিয়ন মানুষকে বোকা বানিয়েছে। এখন এই যুক্তিকে বিশ্লেষণ করে দেখা যাক, এটা কতটা গ্রহণযোগ্য। স্রষ্টা আদেশ-নিষেধসম্বলিত গ্রন্থ প্রেরণ করেন আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) আমাদের মানবজাতিকে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি দান করেছেন। আমরা নির্দিষ্ট কাজের জন্য যন্ত্র উদ্ভাবন ও উৎপাদন করি। যেমন টেপরেকর্ডার বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হয়। এটা কখনো বলা হয় না যে, টেপরেকর্ডার-এর জন্য কী উত্তম তা বুঝতে হলে উৎপাদককে নিজেই টেপরেকর্ডারের রূপ ধারণ করতে হবে। সবাই মেনে নেয় যে, উৎপাদকের যেহেতু তার পণ্য সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে সুতরাং তিনি একটি ব্যবহার- বিধিসম্বলিত গ্রন্থ প্রকাশ করবেন। তাতে যন্ত্রটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমূহ সংক্ষিপ্তভাবে বলা থাকবে। আপনি যদি মানুষকে একটি যন্ত্র হিসাবে চিন্তা করেন, আর প্রকৃতপক্ষেও মানুষ আল্লাহ তা‘আলার একটি জটিল সৃষ্টি। আমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার, মানুষের ভালো-মন্দ ও প্রয়োজন-অপ্রয়োজন বোঝার জন্য মানুষরূপে আসার প্রয়োজন নেই। তাঁকে শুধু মানবজাতির জন্য নির্দেশনামা প্রেরণ করতে হয়। পবিত্র কোরআন হচ্ছে মানবজাতির জন্য প্রেরিত সর্বশেষ ব্যবহারবিধি ও নির্দেশনামা। (আর নবী ও রাসূল হচ্ছেন সেই ব্যবহার-বিধির বাহক ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাদাতা) তদুপরি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টিকে (মানুষকে) বিচারদিবসে জবাবদিহির জন্য ডাকবেন। তাই এটাই যুক্তিযুক্ত যে, স্রষ্টা নিজের অবস্থান থেকেই আমাদেরকে আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে অবহিত করবেন। আল্লাহ দূত মনোনীত করেন বিধিমালাসম্বলিত গ্রন্থ ‘লিখতে’ বা প্রস্তুত করতে আল্লাহ তা‘আলার নিজে পৃথিবীতে আবির্ভূত হওয়ার প্রয়োজন নেই। যুগে যুগে প্রতিটি জাতির মধ্য হতে তিনি উপযুক্ত মানুষ নির্বাচন করেছেন স্বর্গীয় বার্তা প্রদান করার জন্য। এসকল মনোনীত মানুষকে ঈশ্বরের দূত বা নবী-রাসূল বলা হয়। কিছু লোক অন্ধ ও বধির ঈশ্বর-এর উপর মানবদেহ বা ব্যক্তিত্ব আরোপের তত্ত্ব ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও অনেক ধর্মের অনুসারীরা এটা বিশ্বাস করে এবং অন্যদের শিক্ষা দেয়। বস্তুত এটা কি মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার অপমান নয় এবং সেই স্রষ্টার অপমান নয়, যিনি আমাদের তা দান করেছেন? ঐসব লোকই সত্যিকার অন্ধ ও বধির যাদের আল্লাহ দেখার ও শোনার ইন্দ্রিয় দান করেছেন, কিন্তু তারা দেখে না ও শোনে না। পবিত্র কোরআন বলে, (তারা) বধির, বোবা, অন্ধ, তাই তারা ফিরে আসবে না। (২ ঃ ১৮) বাইবেল, সুসমাচার মথিও একই রকম সংবাদ দেয়- ‘দেখেও তারা দেখে না, শোনেও তারা শোনে না, এমনকি তারা বোঝেও না (১৩ ঃ ১৩) হিন্দুধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থ ঋগবেদেও একই বার্তা রয়েছে- ‘হয়ত কেউ আছে যে, একথাগুলো দেখে, তবু প্রকৃতপক্ষে সেগুলো সে দেখে না। হয়ত অন্য কেউ আছে যে, একথাগুলো শোনে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে শোনে না। (১০ ঃ ৭১ ঃ ৪) এসকল ধর্মগ্রন্থ স্ব স্ব পাঠককে সতর্ক করে দিচ্ছে যে, যদিও বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে তবু তারা সত্য থেকে দূরে সরে যায়। (চলবে, ইনশাআল্লাহ)
শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা