আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ
পবিত্র কোরআন বলে,‘বলুন, ডাকো তোমরা আল্লাহ বলে, কিংবা ডাকো রাহমান বলে। যে নামেই ডাকবে তোমরা (সেটাই উত্তম, কেননা) তার তো রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ।
(১৭ : ১১০)
আল্লাহর (ঈশ্বরের) বৈশিষ্ট্য- গত স্বাতন্ত্র্য
আল্লাহর প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই তাঁর জন্য স্বতন্ত্র এবং একমাত্র তিনিই তা ধারণ করেন। প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই সর্বশক্তিমান আল্লাহকে চি?হ্িনত করার জন্য যথেষ্ট। আমি এ বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো। আমরা একজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে উদাহরণস্বরূপ ধরে নেই। ধরা যাক মহাকাশযাত্রী নেইল আর্মস্ট্রং।
যদি কেউ বলে নেইল আর্মস্ট্রং। তো এটা ঠিক, কিন্তু তাকে চি?হ্িনত করার জন্য এ বৈশিষ্ট্য যথেষ্ট নয়। তদ্রূপ তিনি মহাকাশযাত্রী, কিন্তু এ বৈশিষ্ট্যও তার জন্য স্বতন্ত্র নয়। ব্যক্তিটিকে স্বতন্ত্রভাবে চি?হ্িনত করার জন্য আমাদের অবশ্যই তাঁর একটি একক ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করতে হবে। উদাহরণ- স্বরূপ, নেইল আর্মস্ট্রং ছিলেন চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানব। কাজেই যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে, চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানব কে? উত্তর একটিই, অর্থাৎ নেইল আর্মস্ট্রং। তো সর্বশক্তিমান আল্লাহর বৈশিষ্ট্য একক ও স্বতন্ত্র হতে হবে। যেমন, বিশ্বজগতের স্রষ্টা। আমি যদি বলি, দালানটির স্রষ্টা, এটা বাস্তব এবং সত্য হতে পারে, কিন্তু স্বতন্ত্র নয়, কারণ হাজারো লোক দালান-কোঠা বানাতে পারে। তাহলে মানুষ ও আল্লাহর মাঝে কোন পার্থক্য থাকে না (উপমাটি সঠিক নয়, কারণ নির্মাণ ও সৃষ্টি এক নয়- সম্পাদক) পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রতিটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য আর কাউকেই নির্দেশ করে না। যেমন, আর-রাহমান (পরম করুণাময়), আর-রাহীম (অসীম দয়ালু), আল-হাকীম (মহাপ্রজ্ঞাবান)। কাজেই যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে, কে আর-রাহীম বা অসীম দয়ালু? এর একটি মাত্র উত্তর হতে পারে, অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহ।
আল্লাহর বৈশিষ্ট্যসমূহ বিরোধপূর্ণ নয়
পূর্ববর্তী উদাহরণ টেনে কেউ যদি বলে, নেইল আর্মস্ট্রং চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানব, যে মাত্র চারফুট লম্বা, তাহলে চাঁদে অবতরণকারী একমাত্র মানব হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি যদিও সঠিক, কিন্তু আনুষঙ্গিক গুণটি (মাত্র চারফুট লম্বা) মিথ্যা। তদ্রূপ কেউ যদি বলে, আল্লাহ (ঈশ্বর) হচ্ছেন বিশ্বজগতের স্রষ্টা, যার একটি মাথা, দু’টি হাত, দু’টি পা ইত্যাদি আছে, তাহলে বলবো, বিশ্বজগতের স্রষ্টা হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি সঠিক, কিন্তু আনুষঙ্গিক গুণ (মানবরূপ) ভুল ও মিথ্যা।
আল্লাহর একত্ব
কিছু লোক বহু দেবতায় বিশ্বাসী। তারা এই বলে বিতর্ক করে থাকে যে, একাধিক ঈশ্বরের অস্তিত্ব অযৌক্তিক নয়। আসুন, তাদেরকে এ বিষয়টি অবহিত করি যে, যদি ঈশ্বর একজনের বেশী হতেন তাহলে তারা একে অপরের সঙ্গে বিবাদ করতেন। প্রত্যেক ঈশ্বর অন্য ঈশ্বরের ইচ্ছার উপর নিজের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন। বহু ঈশ্বরবাদী এবং সর্ব-ঈশ্বরবাদী ধর্মসমূহের পুরাণে এটা দেখা যায়। যদি একজন ঈশ্বর পরাজিত হয় বা অন্যদের পরাজিত করতে অক্ষম হয় সে নিশ্চিতভাবে এক সত্য ঈশ্বর নয়। এছাড়াও বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মসমূহে ‘অনেক দেবতা’র ধারণা প্রচলিত, যাদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেক মানুষের অস্তিত্বের একটি অংশের জন্য একজন দেবতা দায়িত্বশীল। যেমন বৃষ্টির দেবতা, জ্ঞানের দেবতা, যুদ্ধের দেবতা, ইত্যাদি। এটা নির্দেশ করে যে, একজন ঈশ্বর কিছু কাজে অক্ষম এবং উপরন্তু সে অন্য দেবতাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অজ্ঞ।
(চলবে, ইনশাআল্লাহ)