সফর ১৪৩১ হি:(১৫)

তোমাদের জন্য

কাকে বলে ইসলাম

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

(ধারাবাহিক)

 

সৃষ্টির শোভা ও সৌন্দর্য  

এই পৃথিবীতে মানুষ তার চর্মচক্ষের সীমাবদ্ধ দৃষ্টি দ্বারা আল্লাহর সৌন্দর্য অবলোকন করতে কিছুতেই সক্ষম নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলার সৌন্দর্য অসীম, আর মানুষের দৃষ্টি সসীম। আখেরাতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অন্তর্চক্ষু উন্মুক্ত করে দেবেন। তখন মানুষ আল্লাহ তা‘আলার অপার সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবে এবং সে সৌন্দর্যের স্বাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। দুনিয়াতে মানুষ যদি আল্লাহ তা‘আলার সৌন্দর্য কিছুমাত্র উপলদ্ধি করতে চায় তাহলে তার উপায় হলো সৃষ্টিজগতের সৌন্দর্য অবলোকন করা। কারণ সৃষ্টিজগতের সকল সৌন্দর্য প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার সৌন্দর্যেরই ছায়া। কত সুন্দর এ সৃষ্টিজগত, এই বিশ্বসংসার! আকাশে, পৃথিবীতে, স্থলে সমুদ্রে যেদিকে তাকান শুধু সৌন্দর্য আর সৌন্দর্য! সবকিছু অপরূপ শোভামন্ডিত! সবকিছু রঙ্গীন ও বর্ণীল, সবকিছুতে রঙ্গের বাহার ও বর্ণচ্ছটা! আকাশে শুধু আলোর মেলা এবং আলোর খেলা। প্রথমে বাঁকা চাঁদের চিকন হাসি, তারপর চাঁদের ভরা যৌবন এবং দুধে ধোয়া জোসনার প্লাবন। চাঁদের যৌবনে যখন থেকে শুরু হয় ভাটার টান তখন থেকে শুরু হয় তারার মিটি মিটি হাসি।

আকাশে মেঘমালার ভেসে বেড়ানো দেখে কে না মুগ্ধ হবে! কোন নিপুণ শিল্পী যেন সবার অগোচরে নিরন্তর আল্পনা অাঁকে, আবার মুছে ফেলে! মেঘের উপর যখন সূর্যের আলো পড়ে! আকাশপথে আল্লাহর ঘরে যাওয়ার পথে জীবনে একবার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো মেঘের উপর সূর্যের আলো পড়ার দুর্লভ সৌন্দর্য, কোনদিন তা ভোলার মত নয়। মেঘ থেকে যখন বৃষ্টি ঝরে, রিমঝিম বৃষ্টির সুর কত না মধুর! এসকল সৌন্দর্য দেখে আমরা শুধু মুগ্ধ হতে পারি, আর বলতে পারি, তোমার সৃষ্টি যদি এত সুন্দর, তাহলে হে আল্লাহ, তুমি কত সুন্দর! একদিন যেন দেখতে পাই তোমার অসীম সৌন্দর্য!

এবার আকাশ থেকে নেমে আসুন মর্তে। চারদিকে সৌন্দর্যের কী সুবিপুল সমাহার! সমগ্র পৃথিবী যেন সৌন্দর্যের বিশাল এক ‘গুলদাস্তা’! কত অসংখ্য পাহাড় ও পর্বত এবং তা থেকে নেমে আসা ঝর্ণা, নদী ও জলপ্রপাত, আর পর্বতচূড়ায় জমে থাকা শুভ্র তুষার; সমতল ভূমিতে সবুজ অরণ্য এবং তার জীববৈচিত্র; বলুন না এসব সৌন্দর্যের কোন তুলনা আছে!

পৃথিবীর চারভাগের একভাগ মাত্র স্থল, তিনভাগ জল। সাগর-মহাসাগরের তলদেশের সৌন্দর্য এতদিন মানুষের অজানা ছিলো। মানুষ শুধু সাগর-মহাসাগরের উপরিভাগ দেখেই মুগ্ধ হতো। এখন নাকি তৈরী হচ্ছে তলদেশের অজানা জগতের বিস্ময়কর সব প্রামাণ্য চিত্র, যা দেখে আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে না তারা বলে উঠে, ‘ওয়ান্ডার ফুল, অপূর্ব!’ আর যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে তারা বলে উঠে, ‘সুবহান্ল্লাহ!’

এককথায় বিশ্বজগতের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে হলে আপনাকে লিখতে হবে বিশাল বিশাল গ্রন্থ, তারপরো শেষ হবে না সে সৌন্দর্যের বর্ণনা। সৃষ্টির সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে মানুষ শুধু বলতে পারে, জগজ্জোড়া এ বিপুল সৌন্দর্য কি নিজে নিজে সৃষ্টি হতে পারে?! কিছুতেই না। এসব সৌন্দর্যের পিছনে নিশ্চয় রয়েছে পরম সুন্দর এক মহান সত্তার অদৃশ্য উপস্থিতি। সেই চিরসুন্দর মহান সত্তার সামনে অবনত হয়ে মানুষ শুধু বলতে পারে, তোমার সৃষ্টি এত সুন্দর, হে মহান, তুমি তাহলে কত সুন্দর! সৃষ্টির সৌন্দর্যের আড়ালে তোমার সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকবে আর কত দিন! কবে, কবে হে চিরসুন্দর আমরা ধন্য হবো তোমার অসীম সৌন্দর্য অবলোকন করে!

আল্লাহর দয়া-মায়া ও ভালোবাসা

সৃষ্টিজগতের যে দিকেই তাকাবেন অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে, এই মহাআয়োজন শুধু মানুষের জন্য। সবকিছুতে রয়েছে মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার দয়া-মায়া, করুণা ও ভালোবাসার প্রমাণ। বিচিত্র বর্ণের, কত সুবাসের ফুল শুধু আপনাকে আনন্দদানের জন্য! গাছে গাছে এত স্বাদের এত আকার ও প্রকারের ফল শুধু আপনার রসনাকে তৃপ্ত করার জন্য! মাঠের ফসল, নদীর মাছ গাভী ও তার দুধ শুধু আপনার ক্ষুধা নিবারণের জন্য! আকাশের সূর্য ও চাঁদ-তারা, ভাসমান মেঘমালা সবই মানুষের সেবায় নিয়োজিত। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সেকথাই আল্লাহ বলেছেন মানুষকে। ইরশাদ হয়েছে-

তোমরা কি দেখো না যে, আল্লাহ তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন (এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন) যা কিছু রয়েছে আকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে এবং প্রাচুর্যের সাথে দান করেছেন তোমাদেরকে তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ!   (সূরা লোকমান)

আরো ইরশাদ হয়েছে-

তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং বর্ষণ করেছেন আকাশ থেকে বৃষ্টি, অনন্ত-র বের করেছেন তা দ্বারা বিভিন্ন ফল তোমাদের রিযিকরূপে। আর তিনি তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন জলযানকে, যাতে তা ভেসে চলে সাগরে তাঁর আদেশে, আর তিনি তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন নদ-নদী। আর তিনি তোমাদের দান করেছেন, তোমরা তাঁর কাছে যা কিছু চেয়েছো তা থেকে। আর যদি তোমরা তাঁর নেয়ামতসমূহ গণনা করতে চাও, তা শুমার করতে পারবে না। আসলেই মানুষ অতি যালিম, খুব অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইবরাহীম)

আরো ইরশাদ হয়েছে-

আর তিনি সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদজন্তু, তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে উষ্ণতা এবং বিভিন্ন উপকার, আর তা থেকে তোমরা আহার করো। আর তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে সৌন্দর্য যখন তোমরা সেগুলো চারণভূমিতে আনা-নেয়া করো। আর সেগুলো বহন করে তোমাদের বোঝা দূর দেশে, যেখানে তোমরা প্রাণান্ত ক্লেশ ছাড়া পৌঁছতে পারো না। অবশ্যই তোমাদের প্রতিপালক দয়ালু, পরম করুণাময়। (সূরা নাহল)

আরো ইরশাদ হয়েছে-

আর অতিঅবশ্যই সম্মানিত করেছি আমি বনী আদমকে এবং বাহন দান করেছি তাদেরকে স্থলে ও জলে এবং তাদেরকে রিযিক দান করেছি উত্তম উত্তম জিনিস থেকে, আর বিরাট শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি তাদেরকে আমার বহু সৃষ্টির উপর। (বনী ইসরাঈল)

এধরনের অসংখ্য আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বজগতের সবকিছু দয়াময় আল্লাহ মানব- জাতির জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলোকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য নিয়োজিত করেছেন। মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলূকাত এবং সবকিছু মানুষের সেবায় নিয়োজিত। মানুষকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং মানুষের প্রতি তার দয়া ও দান অপরিসীম।

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা গেলো যে, বিশ্বজগতের যা কিছু আমরা দেখি এবং যা কিছু আমরা দেখি না, সবকিছু আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন; এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে মানবজাতিকে আল্লাহ কী জন্য সৃষ্টি করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তর কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-

জিন ও ইনসানকে আমি সৃষ্টি করিনি, তবে শুধু আমার ইবাদত করার জন্য।

আরো ইরশাদ হয়েছে-

আর তুমি ইবাদত করো তোমার প্রতিপালকের, তোমার নিকট মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত, যার আগমন সুনিশ্চিত।

উপরোক্ত আয়াত দু’টি থেকে বোঝা গেলো যে, মানবসৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা এবং এই ইবাদত অব্যাহত থাকবে মৃত্যু পর্যন্ত। সুতরাং প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে যে, ইবাদত কাকে বলে? ইবাদতের হাকীকত কী?

এককথায় ইবাদত মানে হলো আল্লাহর যাত ও ছিফাতের উপর ইমান ও বিশ্বাস স্থাপন করা, তারপর আল্লাহর যাবতীয় আদেশ ও নিষেধের উপর আমল করা। এটাই হলো ইসলাম। যেহেতু ইবাদতের বুনিয়াদ ও ভিত্তিই হলো আকীদা ও বিশ্বাসের উপর সেহেতু প্রথমেই আমাদের জানতে হবে, কী কী বিষয়ের উপর আমাদেরকে ঈমান ও বিশ্বাস আনতে হবে। মূলত এপর্যন্ত আমরা সে বিষয়- গুলোই আলোচনা করে এসেছি। এখানে সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরছি-

তাওহীদ

তাওহীদ অর্থ আল্লাহ তা‘আলার যাত ও ছিফাতের একত্বের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অর্থাৎ তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই, না সত্তার ক্ষেত্রে, না গুণের ক্ষেত্রে। তিনি সৃষ্টিজগতের কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন, কিন্তু সৃষ্টিজগতের সবকিছু তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁর কোন পিতা নেই এবং কোন সন্তান নেই। অর্থাৎ কেউ তাঁকে জন্মদান করেনি এবং তিনি কাউকে জন্মদান করেননি। সকল গুণ,  পূর্ণতা ও পবিত্রতা তাঁর সত্তায় বিদ্যমান এবং যাবতীয় দোষ, দুর্বলতা ও অপবিত্রতা হতে তিনি চিরপবিত্র। তিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক, তিনি সর্বশক্তিমান এবং সকল কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান; কোন কিছু তাঁর শক্তি ও নিয়ন্ত্রণ অতিক্রম করে যেতে পারে না। আকার ও আকৃতি এবং স্থান-কাল ও সময়ের সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে তিনি। তাঁর মত কোন কিছু নেই। কোন ক্ষেত্রেই তাঁর কোন সমকক্ষ নেই। তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। সৃষ্টি- জগতের সবকিছু তিনি জানেন, শোনেন এবং দেখেন। সৃষ্টিজগতের সবকিছুর উপর তাঁর হুকুম চলে, তাঁর উপর কারো হুকুম চলে না। তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন বলেন ‘হও’, আর তা হয়ে যায়। তাঁর ইচ্ছাকে কেউ বাধা দিতে পারে না। তিনি সকল দয়াময়ের বড় দয়াময়। অসীম তাঁর দয়া ও করুণা। তিনি সবার প্রার্থনা ও মিনতি গ্রহণ করেন এবং সবার সব প্রয়োজন পূর্ণ করেন। তিনি মহাপ্রজ্ঞার অধীকারী ও হাকীম। তাঁর কোন কাজ হিকমত ও প্রজ্ঞা এবং কল্যাণ ও নিগূঢ় রহস্য থেকে খালি নয়।

তাকদীর-

তাকদীর মানে এই বিশ্বাস যে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে যা কিছু ঘটবে তার পূর্ববিবরণ, যা আল্লাহ মানব সৃষ্টির বহু পূর্বে লিখেছেন। কলম শুকিয়ে গেছে। সুতরাং তাকদীরে ভালো ও মন্দ যা কিছু লেখা হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। তাকদীরকে খন্ডন করার শক্তি কারো নেই। তাকদীরের ইলম একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তাকদীরের কথা, গায়ব ও অদৃশ্যের কথা বলতে পারে না।

আসমানী কিতাব

মানুষের হিদায়াতের জন্য, যাতে মানুষ আল্লাহকে জানতে পারে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে এবং আখেরাতের অনন্ত জীবনে সফলতা লাভ করতে পারে, সেজন্য যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী ও রাসূলগণ আল্লাহর পক্ষ হতে রিসালাত ও বার্তা বহনকারী। তাঁরা সত্য ও নিষ্পাপ। পূর্ববর্তী নবী ও রাসূল বিশেষ কোন জাতি ও জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে প্রেরিত হতেন এবং তাঁরা ঐ বিশেষ জাতি ও জনগোষ্ঠীর মাঝে আল্লাহর বাণী প্রচার করতেন। সর্বশেষে আখেরী নবী ও শেষ রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছেন হযরত মুহম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি শুধু আরবজাতির, বা বিশেষ কোন জনগোষ্ঠীর নবী নন এবং বিশেষ কোন সময়েরও নবী নন। তিনি

কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত নবী ও রাসূল। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর পরে কোন নবী বা রাসূল নেই। তাঁর পরে যে কেউ কোন না কোনভাবে নবুয়তের দাবী করবে সে মিথ্যাবাদী ও ভন্ড। যে ব্যক্তি হযরত মুহম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী বলে স্বীকার করবে না সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে; সে মুসলিম নয়, স্পষ্ট কাফির।

আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন নবী ও রাসূলের উপর ফিরেশতা হযরত জিবরীল (আ)-এর মাধ্যমে কিতাব নাযিল করেছেন। সেগুলোকে আল্লাহর কালাম এবং আসমানি কিতাব বলে। প্রসিদ্ধ চারটি আসমানি কিতাব হলো তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জীল ও কোরআন। কোরআন হলো হযরত মুহম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ সর্বশেষ আসমানি কিতাব। পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলো ছিলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এবং নির্দিষ্ট জাতি ও জনগোষ্টীর জন্য। পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলো এখন সংরক্ষিত ও অবিকৃত অবস্থায় নেই। ভ্রষ্টলোকেরা নিজেদের হীন স্বার্থ হাছিল করার জন্য তা বিকৃত করেছে।

আখেরি কিতাব কোরআনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাব মানসূখ ও রহিত করা হয়েছে। এখন কিয়ামত পর্যন্ত শুধু হযরত মুহম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত ও রিসালাত এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ কোরআনের শরী‘আত চলবে। কোরআন কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর কালামরূপে অবিকৃত ও সুসংরক্ষিত থাকবে। কেউ তাতে একটি হরফও পরিবর্তন করতে পারবে না। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা কোরআনের হিফাযাতের যিম্মা গ্রহণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

আমিই কোরআন নাযিল করেছি এবং আমিই তা হিফাযাত করবো।

কেউ যদি কোরআনে কোন রকম পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করে বা কোরআনকে মানুষের কালাম বলে দাবী করে এবং দাবী করে যে, কোরআনের নমুনা পেশ করা সম্ভব তাহলে সে কাফির। আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন-

আপনি বলুন, যদি সন্দেহে পতিত হও ঐ কিতাব সম্পর্কে যা আমি নাযিল করেছি আমার বান্দার উপর, তাহলে কোরআনের মত একটি সূরা তৈরী করে দেখাও, আর তোমরা ডেকে নাও আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাহায্যকারীদের, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। অনন্তর যদি তোমরা না পারো, আর কিছুতেই পারবে না, তাহলে ভয় করো জাহান্নামের আগুনকে, যার ইন্ধন হলো মানুষ ও পাথর, যা তৈরী করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।

কোরআন হলো দ্বীন ও শারী‘আতের প্রথম উৎস। দ্বিতীয় উৎস হলো হযরত মুহম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছ বা সুন্নাহ। সুতরাং যদি কেউ কোরআনের পর সুন্নাহর গ্রহণযোগ্যতা ও প্রামাণ্যতা অস্বীকার করে তাহলে নিঃসন্দেহে সে ইসলামের গন্ডি হতে বহির্ভূত, কাফির।

মাআদ-

মা‘আদ অর্থ একথা বিশ্বাস করা যে, কিয়ামত সত্য। কিয়ামত অবশ্যই আসবে, তবে কেয়ামতের নির্ধারিত সময় আল্লাহ ছাড়া কারো জানা নেই। যখন কেয়ামত হবে তখন আল্লাহর হুকুমে সমস্ত কবরবাসী তাদের জড়দেহে জীবিত অবস্থায় কবর থেকে উত্থিত হবে এবং তাদেরকে হাশরের ময়দানে একত্র করা হবে। সেখানে মীযান বা আমল ওযন করার পাল্লা কায়েম করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তখন বান্দার বিচার করবেন। মীযানের মাধ্যমে বান্দার নেক আমল ও বদ আমল ওযন করা হবে। যার আমলনামা ডান হাতে আসবে তাকে জান্নাত দান করা হবে। জান্নাত হলো অফুরন্ত নেয়ামত এবং অনন্ত সুখশান্তির ঠিকানা। যার আমলনামা বাম হাতে আসবে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। জাহান্নাম হলো কঠিন আযাবের ঠিকানা। যারা কাফির মুশরিক তারা অনন্তকাল জাহান্নামের ভয়ংঙ্কর আযাব ভোগ করবে, করতেই থাকবে। জাহান্নামের আযাব কখনো শেষ হবে না। যারা বদকার মুমিন, অর্থাৎ যাদের অন্তরে সামান্য পরিমাণও ঈমান আছে, কিন্তু গোনাহ ও বদআমলের কারণে জাহান্নামে পতিত হয়েছে তারা আযাব ভোগ করার পর আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে জান্নাতে দাখেল হবে। আল্লাহ তা‘আলা যেন আপন অনুগ্রহে আমাদের বেলাহিসাব জান্নাত দান করেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে, এমনকি জাহান্নামের ধোঁয়া থেকেও হিফাযত করেন, আমীন।

মোটামুটি এটাই হলো মা‘আদের বয়ান। যে ব্যক্তি এই সমগ্রবিষয় বা তার কোন একটি অংশ অস্বীকার করবে বা তাতে সন্দেহ পোষণ করবে, সে তৎক্ষণাৎ ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে, নিঃসন্দেহে সে হলো কাফির।

ইসলামের আকীদা ও বিশ্বাসের মূল বুনিয়াদ হলো নীচের এই কালিমাগুলো-

(ক) কালিমায়ে তাইয়েবা

(খ) কালিমায়ে শাহাদাত

(গ) ঈমানে মুজমাল

(ঘ) ঈমানে মুফাচ্ছাল

(ঙ) কালিমায়ে তামজীদ

(চলবে ইনশাআল্লাহ)    

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা