শাবান ১৪৩১হিঃ (১৭)

তোমাদের জন্য

বাতাসের তালব্য শ !

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

বানানজলসার সভাপতি সাহেব কোন জলসায় ঠিক সময়ে আসেন না, আজও এলেন না; তবে সামান্য একটু পার্থক্য আছে। এত দিন তিনি এসেছেন ঠিক সময়ের অনেক পরে, আজ এসেছেন ঠিক সময়ের বেশ আগে। মাথা কামিয়েছেন কী কারণে বোঝা গেলো না, তবে দেখতে বেশ হয়েছে! মেজাজটাও দেখা যাচ্ছে বহুত খোশ! ছেলেরা-মেয়েরা একে একে সবাই হাযির হলো। এখানেও দেখি অন্যরকম! সবসময় যারা আগে আসতো, আজ এলো পরে, আর যারা আসতো পরে তারা এলো আগে। ছেলেরা-মেয়েরা সবাই খুব ভয়ে ভয়ে ছিলো। গত জলসায় কী একটা কাণ্ড হয়েছিলো যে! কিন' সভাপতি সাহেব সবাইকে অভয় দিয়ে বললেন, ভয় কিসের! গত জলসার কথা আমি কবেই ভুলে গেছি এবং মাফ করে দিয়েছি। শামীমটা বড় ঠোঁটকাটা। বলে বসলো, ভুলেই যদি গিয়েছেন তাহলে বলছেন কীভাবে! দেখো তো কেমন বেয়াড়া প্রশ্ন! কিন' তার চেয়ে আশ্চর্য, সভাপতি সাহেবের মুখে সেই সুন্দর হাসিটি তখনো ঝুলে আছে। বললেন কী, যখন তোমরা আমার মত কামেল হবে তখন বুঝতে পারবে, কোন ঘটনা ভুলে গিয়েও মানুষ কীভাবে তা বলতে পারে! সুমাইয়াঃ আচ্ছা কামেল হযরত! আজ আমাদের আলোচনার বিষয়টা কী? সভাপতি সাহেব হাসতে হাসতে পকেট থেকে একটি লেখা বের করে বললেন, শরীয়তপুর থেকে এ লেখাটি পাঠিয়েছে আমাদের এক ভাই মিযান বিন আবুল হাসান। কিন' এমন অদ্ভুত সব বানান লিখেছে যে, বাংলাভাষার শরীয়তে কোথাও তা লেখা নেই। আয়েশাঃ তো হুযূর, আমাদের এখন কী করতে হবে! সভাপতিঃ আমাদের এখন বাংলাভাষার শরীয়ত মতে লেখাটির বানানগুলো ঠিক করতে হবে! আচ্ছা, তার আগে বলো দেখি অদ্ভুত শব্দটির বানান কী? শামীমঃ হুযূর, ছেলেরা বলবে না মেয়েরা? সভাপতিঃ আচ্ছা, আগে ছেলেরা বলো। তা তুমিই না হয় বলো ছেলেদের পক্ষ হতে? শামীম (কিছুক্ষণ মাথা চুলকিয়ে)ঃ আমার মনে হয়, হ্রস্বউকার, কিংবা দীর্ঘঊকার! তবে দ ও ভ একসঙ্গে লিখতে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। মেয়েরা (একসঙ্গে) ঃ দেখুন না হুযূর, না পেরে ছেলেরা কেমন চালাকি করছে! সভাপতিঃ আচ্ছা তোমরা মেয়েরা বলো। সুমাইয়াঃ আমরা মেয়েরা কখনো দীর্ঘ ঊকার দিয়ে অদ্ভুত লিখি না। অমন অদ্ভুত কাণ্ড ছেলেরাই করতে পারে। সভাপতিঃ তুমি ঠিক বলেছো। না, মানে ‘অদ্ভুত’ বানানটা ঠিক বলেছো, কিন' ছেলেদের সম্পর্কে কথাটা ঠিক বলো নি। যাক, এবার এসো লেখা প্রসঙ্গে। মিযান নাকি পদ্মানদী পাড়ি দিতে গিয়ে ঝড়ের মুখে পড়েছিলো এবং ভীষণ বিপদ হয়েছিলো। কিন' ছেলেটা দেখো না, পদ্মানদীর ঝড়ের বিপদের কথা বলতে গিয়ে বানানের কতগুলো আপদ ডেকে এনেছে! লেখাটার নাম দিয়েছে ‘পদ্মানদীর জ্বলে’ অর্থাৎ জল মানে পানি লিখেছে জ-ব সংযুক্ত! বলো তো এমন বানান দেখে কার না পিত্তি ‘জ্বলে’! সুমাইয়াঃ আমরা মেয়েরা কখনো এমন পিত্তিজ্বলা বানান লিখি না। শামীমঃ লেখো না বুঝি! সেদিন যে তোমার ছোট বোন বললো, পদ্মা বানান হলো দ-দ সংযুক্ত! সুমাইয়াঃ ও তো এখনো অনেক ছোট! সভাপতিঃ থামো, থামো, ছেলেতে মেয়েতে ঝগড়া বাঁধিয়ে কাজ নেই। আসলে ছেলে বলো, মেয়ে বলো সবাইকেই শুদ্ধ বানান শিখতে হবে। শামীমঃ তোমরা মেয়েরা আবার চন্দ্রবিন্দু ছেড়ে দিয়ে ঝগড়া ‘বাধিয়ে’ বসো না! সভাপতি সাহেব মৃদু হেসে বললেন, মেয়েরা অবশ্য চন্দ্রবিন্দু তেমন একটা বাদ দেয় না। ওদেরকে রোয রোয চুল বাঁধতে হয় তো! যাক এবার সামনে শোনো। ছেলেটি লিখেছে, নদী পাড়ি দেয়া এবং নদী পাড় হওয়া, অর্থাৎ ডশূন্য ড়। তুমি বলো তো শফীক সঠিক বানান কী? শফীক, পাড়ি দিতে হবে ডশূন্য ড় দিয়ে, আর পার হতে হবে বশূন্য র দিয়ে। নইলে নৌকা উলটে গিয়ে বিপদ হতে পারে। সভাপতিঃ বাহ, তুমি তো বেশ মজা করে বলতে পারো! আচ্ছা বলো তো, নদীর পাড়, না নদীর পার? শফীকঃ নদীর কূলে যখন নৌকা ভেড়ে তখন সেটা হলো নদীর পার; আমরা নৌকায় করে নদীর এপার থেকে ওপারে যাই। আর বর্ষায় প্রবল স্রোতে যখন নদীর কূল ভাঙ্গে তখন সেটা হলো নদীর পাড়। এই মেয়েরা, পারবে তোমরা এমন সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে! সুফিয়াঃ ইস্‌! একটা বানান বলে কত গর্ব! আমি আরো সুন্দর করে বলতে পারি, শোনবে? সভাপতি (উভয়কে ধমক দিয়ে)ঃ আহ, থামো তো! শুরু করলে কী তোমরা! কত করে বলছি, সবাই মিলে মিশে শিখতে চেষ্টা করো। তা না, শুধু ঝগড়া! সুফিয়া (মুখভার করে)ঃ ওই তো আগে শুরু করলো! ও যে সেদিন ‘ঝগরা’ বললো, আমি তো কত সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলাম, ডশূন্য ড় দিয়ে ‘ঝগড়া’ বলো, নইলে কিন' বশূন্য র দিয়ে একটা ‘চর’ খাবে। সভাপতি (হাসি চেপে রেখে)ঃ তা তোমার চড়টা বশূন্য র দিয়ে হবে কেন? সুফিয়াঃ বারে, ভুল ঝগড়া হলে ভুল চড় খেতে হবে না! সভাপতিঃ ছেলেটি লিখেছে. ‘পদ্মানদীর সেদিনের সেই ভয়ানক সৃতি কোন দিন ভোলা যাবে না।’ বলো তো সুফিয়া, এখানে বানান ভুলটা কোথায়? সুফিয়াঃ হুযূর, আসলে ছেলেটি শুনতে যেমন শোনা যায় তেমন করেই লিখেছে। আসলে হবে স্মৃতি, মানে স ও ম সংযুক্ত এবং ঋকার। কিন' ‘ম’ বর্ণটি উচ্চারণে আসবে না। ছেলেটার বুদ্ধি এত কম কেন হুযূর! সভাপতিঃ আচ্ছা বুদ্ধির ঢেঁকি, বলো তো, ঢেকিতে কোন ঈকার, আর চন্দ্রবিন্দু! সুফিয়া (যা, জানি না তো!)ঃ হুযূর এটা ছেলেদের জিজ্ঞাসা করতে হবে। সভাপতিঃ বারে! ঢেঁকিতে ধান ভানে কারা ছেলেরা, না মেয়েরা! সুফিয়াঃ ছেলেরা অন-ত বানানটা ঠিক করে বলুক না! সভাপতি (হাসতে হাসতে) আসলেই তো তুমি বুদ্ধির ঢেঁকি! যাও, নিজে ঢেঁকিতে ধান ভেনে আগামী জলসায় আমার জন্য পিঠা বানিয়ে আনবে।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা