মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬)

প্রথম পাতা

কোরানের আলো/হাদিসের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

কোরানের আলো

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- হে রাসূল, পৌঁছে দিন আপনি, যা কিছু আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আপনার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। যদি (এরূপ) না করেন তাহলে আপনি তাঁর বার্তা পৌঁছালেন না (বলে গণ্য হবে)। আর আল্লাহ রক্ষা করবেন আপনাকে লোকদের (অনিষ্ট) হতে। আর আল্লাহ তো কাফির সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না।(আল-মায়েদাহ ঃ ৫ - ৬৭)
ফায়দা

আলোচ্য আয়াতের মূল বার্তাটি হলো, আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছু অবর্তীণ হয়েছে, অর্থাৎ সমগ্র দ্বীন ও শরী‘আত, তা নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। ভয় বা প্রলোভন, কোন কারণেই শরী‘আতের কোন বিধান গোপন করা যাবে না। এরূপ করলে ধরে নেয়া হবে, সে শরী‘আতের কোন বার্তাই যেন মানুষের কাছে পৌঁছালো না। কারণ খ-িত শরী‘আত শরী‘আতই নয়। পূর্ববর্তীদের মধ্যে এ ঘৃণ্য স্বভাব ছিলো। তারা শরী‘আতের কিছু বিধান গ্রহণ করতো, কিছু গ্রহণ করতো না। এ জন্যই বলা হয়েছে, ‘হে লোকসকল, তোমরা শান্তির (ধর্মের) মধ্যে পরিপূর্ণরূপে দাখেল হও।’এখানে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি রয়েছে যে, শরী‘আতের বার্তা পৌঁছানোর বিষয়ে কোন প্রকার শিথিলতার অর্থ হবে চিরস্থায়ী বরবাদি।যেহেতু শরী‘আতের বিধান ও বার্তা না পৌঁছানোর মূল কারণ হলো ক্ষমতা-শালী ও প্রতাপশালী মানুষের পক্ষ হতে অনিষ্টের ভয় সেহেতু আল্লাহ তা‘আলা পূর্ণ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দান করেছেন যে, মানুষের কোন ক্ষমতাই নেই আল্লাহর বাণী ও বার্তা প্রচারকারীর কোন ক্ষতি করার। কারণ আল্লাহ সরাসরি আপন কুদরত দ্বারা মানুষের অনিষ্ট হতে তাঁকে হিফাযত করবেন।এখানে সম্বোধন তো হলো আল্লাহর রাসূলকে, তবে উদ্দেশ্য হলো উম্মত। সুতরাং তাবলীগের আদেশ এবং সুরক্ষার আশ্বাস দু’টোই কেয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা উম্মতের জন্যও।অনুকূল-প্রতিকূল সর্বাবস্থায় যারা দ্বীনের তাবলীগ করেছে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যামানার সকল তাগুতি শক্তির অনিষ্ট হতে হিফাযত করেছেন। বাহ্যত যেটাকে ‘নিপীড়ন’ মনে করা হয় সেখানেও গায়ব থেকে বান্দার উপর এমন ‘শীতলতা’ বর্ষিত হয় যে, আগুনও হাকীকতে হয়ে যায় গুলবাগিচা!আজ আমাদের সকল দুর্গতির মূল কারণ হলো শরী‘আত ও রিসালাতের তাবলীগ ছেড়ে দেয়া। আর তাবলীগ ছেড়ে দেয়া দু’রকমে হয়; প্রচার না করা এবং আমল না করা। তো বর্তমানে দু’ভাবেই মুসলিমসমাজ তাবলীগের মহান দায়িত্ব থেকে সরে এসেছে। আজ আমাদের নাজাত ও মুক্তির একমাত্র উপায় হলো আমল ও তাবলীগের মাধ্যমে সমগ্র শরী‘আতের উপর...!!
মুফাসরিরীনে কেরাম বলেন, ماঅব্যয়টি ব্যাপকায়নের অর্থ ধারণ করে। সুতরাং সমগ্র শরী‘আত ও সমগ্র অহী এই আয়াতের ব্যাপকতায় অন্তর্ভুক্তহবে।وإن لم تفعلবলা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে বলার কথা ছিলো وَإنْ لَـمْ تُبَلِّغْকিন্তু তাকরার ও পুনরুক্তির যে শ্রুতিকটুতা, সম্ভবত তা পরিহার করার জন্য এভাবে বলা হয়েছে।يا أيها الرسولসম্ভবত দু’বার এসেছে কোরআনে। সূরাতুল মাইদাহ’র আয়াত ৪১ এবং আয়াত ৪৭। পক্ষান্তরে يا أيها النبـيএসেছে সম্ভবত ১৩ স্থানে। প্রথম হলো আল-আনফাল, আয়াত, ৬৪; সর্বশেষ হলো তাহরীম, আয়াত, ৯رسالةশব্দটি এসেছে তিনবার, সূরাতুল আ‘রাফ, আয়াত৭৯; আলমাইদাহ, আয়াত, ৬৭; সূরাতুল আন‘আম, আয়াত, ১২৪পক্ষান্তরে এর বহুবচন رسالاتএসেছে ৭ বার। সূরাতুল আ‘রাফ, আয়াত,৬২; আয়াত, ৬৮; আয়াত, ৯৩; আয়াত, ১৪৪ সূরাতুল আহযাব, আয়াত, ৩৯; সূরাতুল জিন্, আয়াত, ২৮; আয়াত, ২৩;
হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রথমে পাহারা দেয়া হতো (বিশেষত রাতের বেলা)। যখন والله يعصمك من الناسনাযিল হলো তখন তিনি হুজরা থেকে মাথা বের করে বলে দিলেন, লোকসকল, তোমরা ফিরে যাও, কারণ আল্লাহ আমাকে রক্ষা করার আশ্বাস প্রদান করেছেন (তিরমিযি)মুফাসসিরীনে কেরাম এ আয়াত থেকে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন যে, আল্লাহর নবী শরী‘আতের কোন বাণী, বিধান বা বার্তা কারো কাছে গোপনে গচ্ছিত রেখে যাননি। প্রতিটি বিষয় প্রকাশ্যে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত যে,  হযরত আয়েশা রা. বলেন, যে ধারণা করে যে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কিছু গোপন করেছেন সে মিথ্যা বলে। (বুখারী ৮/৬০৬; মুসলিম ১৭৭; তিরমিযি ৩০৭০)হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রথমে পাহারা দেয়া হতো (বিশেষত রাতের বেলা)। যখন والله يعصمك من الناسনাযিল হলো তখন তিনি হুজরা থেকে মাথা বের করে বলে দিলেন, লোকসকল, তোমরা ফিরে যাও, কারণ আল্লাহ আমাকে রক্ষা করার আশ্বাস প্রদান করেছেন (তিরমিযি)মুফাসসিরীনে কেরাম এ আয়াত থেকে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন যে, আল্লাহর নবী শরী‘আতের কোন বাণী, বিধান বা বার্তা কারো কাছে গোপনে গচ্ছিত রেখে যাননি। প্রতিটি বিষয় প্রকাশ্যে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত যে,  হযরত আয়েশা রা. বলেন, যে ধারণা করে যে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কিছু গোপন করেছেন সে মিথ্যা বলে। (বুখারী ৮/৬০৬; মুসলিম ১৭৭; তিরমিযি ৩০৭০)

কোরআন সম্পর্কে
কোরআন সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ইরশাদ করেছেন, তো তারা কি কোরআন সম্পর্কে তাদাব্বুর ও চিন্তা-গবেষণা করে না? যদি তা আল্লাহর গায়র কারো থেকে (নাযিল) হতো, অবশ্যই তাতে তারা প্রচুর ইখতিলাফ ও ভিন্নতা দেখতে পেতো।¯্রষ্টার কালামে কোন ভিন্নতা থাকতে পারে না। কারণ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত, তাঁর কাছে সবই সমান। গায়রুল্লাহর কালামে থাকে অসংখ্য স্ববিরোধিতা। কারণ সে অতীত ভুলে যায়, আর ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছুই জানে না। আর বর্তমানের উপর তার  কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

 

হাদিসের আলো

بسم الله الرحمن الرحيم
হযরত উরস ইবনে ‘আমীরাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-‘যখন কোন ভূখ-ে পাপ ঘটে, তখন যে তাতে উপস্থিত থাকে, কিন্তু তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করে সে ঐ ব্যক্তির মত গণ্য হবে যে তাতে অনুপস্থিত ছিলো। পক্ষান্তরে যে তাতে অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু তার প্রতি খুশী থাকে সে ঐ ব্যক্তির মত গণ্য হবে যে তাতে ‘উপস্থিত’ ছিলো।(আবু দাউদ)

ফায়দা

মানুষের সমাজে পাপ ও পুণ্য সবসময় পাশাপাশি চলে এসেছে। যদিও মাত্রায় অবশ্যই তারতম্য রয়েছে। ছাহাবা কেরামের সমাজ ছিলো পুণ্য ও পবিত্রতার সমাজ। পাপের অস্তিত্ব সেখানে বলতে গেলে ছিলোই না। এটা ছিলো নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাকীযা ছোহবত ও তারবিয়াত এবং পবিত্র সান্নিধ্য ও সংস্পর্শের প্রত্যক্ষ কল্যাণ ও বরকত। এরপর নবুয়তের নূরানী যামানা যত দূরবর্তী হয়েছে পাপের অনুপাত ততই বেড়েছে এবং পুণ্যের অনুপাত ততই কমেছে। সময় ও সমাজের এটাই বাস্তবতা যে, একজন মুসলিমকে পাপ ও পুণ্যের মিশ্রসমাজেই জীবন যাপন করতে হবে। কিন্তু মুসলিম হিসাবে তার কর্তব্য হলো পাপের পথ এড়িয়ে পুণ্যের পথে চলা। আরো কর্তব্য হলো পুণের পথে চলার এবং পাপাচার থেকে দূরে থাকার আহব্বান জানানো, সর্বোপরি সর্বশক্তি দিয়ে সর্বপ্রকার পাপের প্রতিরোধ করা এবং পুণ্যকে সমর্থন করা।সমাজে যখন পুণ্য ও পুণ্যবান মানুষের প্রাধান্য থাকে এবং পাপ ও পাপাচারীরা দুর্বল থাকে তখন পাপ পরিহার করে পুণ্যের উপর চলা সহজ হয়। কিন্তু যখন বিপরীত অবস্থা হয় তখন পুণ্যের পথে চলা এবং পাপের পথ থেকে দূরে থাকা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের বর্তমান সমাজ, বলাবাহুল্য সেই কঠিন সময়ই অতিক্রম করছে। সময়ের সাথে তা বাড়তে থাকাই স্বাভাবিক। তো এরূপ কঠিন সময়ে একজন পুণ্যমুখী ও পাপবিমুখ মুসলিমের কী করণীয় সেটারই মূল্যবান দিকনির্দেশনা রয়েছে উপরোক্ত হাদীছে। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় পুণ্যের প্রতি যেন অন্তরের অনুরাগ থাকে এবং পাপের প্রতি যেন ঘৃণা থাকে। এমনকি সে ঘৃণা ও অনুরাগ যদি প্রকাশ করা সম্ভব নাও হয় তবু সে পুণ্যবানদের কাতারে শামিল হবে এবং পাপাচারের কাতারে শামিল হওয়া থেকে উদ্ধার পাবে। আমাদের বর্তমান সমাজে এর বহু মিছাল পাওয়া যায়। অনেকের অন্তরে পাপের অনুষ্ঠানে উপস্থিতির কষ্ট থাকে, আবার অনেকের অন্তরে পাপের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতির আফসোস থাকে। তো নিয়তের ভিত্তিতেই হবে শ্রেণীবিন্যাস। 

ছিহা সিত্তার চতুর্থ কিতাব ‘সুনান’ -এর সঙ্কলক ইমাম আবু দাউদ তাঁর যুগের বিখ্যাত হাফিযে হাদীছ ছিলেন। আবু দাউদ হলো তাঁর কুনিয়াত। পূর্ণ নাম সোলায়মান ইবনুল আশ‘আছ ইবনে ইসহাক। তিনি ছিলেন আযদ গোত্রের। তিনি সিজিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছেন ২০২ হিজরীতে। শৈশব থেকেই হাদীছের প্রতি তাঁর প্রবল আকর্ষণ ছিলো। তখন থেকেই তাঁর মধ্যে আভিজাত্য ও পুণ্যময়তার প্রকাশ ঘটেছিলো। তিনি ছিলেন ইমাম বুখারী রহ.-এর ছাত্র। তাঁর হাদীছী জীবনে ইমাম বুখারী রহ.-এর বিপুল প্রভাব ছিলো।তাঁর যুগের অন্য সবার মত তিনিও হাদীছের তলবে মুসলিম জাহানের বহু শহর সফর করেছেন এবং বহু বিখ্যাত হোফ্ফাযে হাদীছ থেকে হাদীছ লিখেছেন। তার বহু ছাত্রের মধ্যে তাঁর পুত্র আবু বকর বিন আবু দাউদ হলেন সর্বশীর্ষে। এছাড়া ইমাম তিরমিযী ও নাসাঈ .... ২৭৫ হিজরী, ১৬ই শাওয়াল, রোয শুক্রবার তিনি ইনতিকাল করেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন।উপরোক্ত হাদীছের বর্ণনাকারী ছাহাবী অল্প আলোচিত ছাহাবাদের একজন। তাঁর সূত্রে বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা খুবই সামান্য। তিনি কিন্দাহ গোত্রের। তার বংশপরিচয়, উরস্ বিন ‘আমীরাহ বিন ফিরওয়াহ, বিন যুরারাহ, বিন আরকাম, বিন নু‘মান বিন আমর বিন ওয়াহব বিন রাবী‘আহ, বিন মু‘আবিয়াহ; আবু ফিরওয়াহ এই কুনিয়াতে তিনি পরিচিত।তাঁর ভাই হলেন আদী বিন আমীরাহ, তার ভাতিজা হলেন আদী বিন আদী বিন আমীরাহ। হাদীছ বর্ণনায় এ তিনজনের নামই এসেছে। আদী ও উরস উভয়ে সর্বসম্মতভাবেই ছাহাবী। পক্ষান্তরে আদী বিন আদী ছাহাবী কি না তাতে বিতর্ক রয়েছে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলসহ অনেকেই তাঁকে ছাহাবী বলেছেন, তবে বিশুদ্ধ মতে তিনি ছাহাবী নন। উরস হতে বুখারী ও মুসলিমও বর্ণনা করেছেন। 

বিশ্বনবী সম্পর্কে
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দান ও বদান্যতা কেমন ছিলো তা প্রকাশ করতে গিয়ে হাদীছের বর্ণনায় যে শব্দটি এসেছে তা হলো, ‘তিনি ছিলেন প্রেরিত বৃষ্টিবাহী বায়ুর চেয়ে বদান্য। তিনি কখনো কাউকে ‘না ’ বলেননি এবং বিমুখ করে ফিরিয়ে দেননি। দেয়ার মত কিছু না থাকলে প্রতিশ্রুতি দিতেন যে, অপেক্ষা করো; যখন আমার কাছে কিছু আসবে তখন দেয়া হবে। যখন কিছু আসতো তখন তাড়াতাড়ি ঐ ব্যক্তিকে ডেকে তিনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতেন। নবীর বিরাছাতের যারা দাবীদার তাদের কর্তব্য হলো এ নববী গুণটিরও বিরাছাত...


শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা