কাশ্মীরসংখ্যা

শেষের পাতা

প রি শি ষ্ ট

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

প রি শি ষ্ ট

কয়লার আগুন জ্বলে জ্বলে একসময় নিভে যায় এবং ছাই হয়ে যায়। কিন্তু বুকের আগুন, নিভে না কখনো, জ¦লতেই থাকে, কখনো দাউ দাউ, কখনো লেলিহান, কখনো ধিকি ধিকি!

রক্ত ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা।

রক্ত বইছে ¯স্রোতের মত।

তৈরী হয়েছে রক্তের সাগর। রক্তের ফোঁটা, রক্তের ¯স্রোত, রক্তের সাগর কাশ্মীরী তরুণের বুকের রক্ত। রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে আনতে হবে আযাদি!

 

মহারাজা হরি সিং এবং ভারতের গভর্নর জেনারেল মাউন্ট ব্যাটেন-এর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের ফটোকপি।

পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, এটি তৈরী অবস্থায় ছিলো  কাশ্মীর অভিমুখে কাবায়েলী অভিযানের বেশ আগে আগস্টের কোন এক তারীখে। মাসের স্থানে লেখা ছিলো আগস্ট। অর্থাৎ আশা করা হয়েছিলো, আগস্টের মধ্যেই চুক্তিপত্রটি সম্পাদিত হয়ে যাবে। কিন্তু গড়াতে গড়াতে মাস এসে যায় অক্টোবর। ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে কাবায়েলী জিহাদ। তাই সেটাকে অজুহাত হিসাবে খাড়া করা হয়েছে। আগস্টেই যদি চুক্তি সম্পাদিত হয়ে যেতো তখন কী অজুহাত হতো? সম্ভবত আব্দুল্লাহ ও আব্বাসপন্থীদের মধ্যে হানাহানি বাঁধিয়ে দেয়া হতো, আর সেটাই হতো অজুহাত!

ছলের তো আর খলের অভাব হয় না।

জম্মু ও কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ঘোষণা সাড়ম্বরে এসেছে ভারতের জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্তানী টাইমস-এ। ভারত ভুলে গিয়েছিলো, হায়দারাবাদ ও জুনাগরের রাজাদের যদি অধিকার না থাকে পাকিস্তানে যোগ দেয়ার, তাহলে কাশ্মীরের মহারাজারও অধিকার নেই ভারতে যোগ দেয়ার। আর রইলো মুসলিম জনমত, তো সেটা তখনো ভারতের পক্ষে ছিলো না, এখনো নেই। শেখ আব্দুল্লাহ্ তখনো কাশ্মীরী জনমতের প্রতিনিধিত্ব করেননি, এখন তার পুত্র ও পৌত্রও  করছেন না।

আমরা বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত ভারতকে এর জন্য চড়া মূল্যই দিতে হবে, যেমন সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

 

অরুন্ধতী রায় বলেন

রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছড়ানোর যে তথাকথিত অপরাধে ভারতের আদালত আমার বিরুদ্ধে দিল্লী পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে, আমি মনে করি, সেই একই অপরাধে জওয়াহের লাল নেহরুর বিরুদ্ধেও আদালতের কর্তব্য হলো মরণোত্তর বিচারের জন্য মামলা দায়ের করা। কারণ যে কথা আমি আজ বলে অভিযুক্ত হচ্ছি সে কথা নেহরু ভারতরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকা অবস্থায় বলেছেন অনেকবার!

 

জনাব নেহরু বলেন

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লেয়াকত আলী খানের কাছে পাঠানো একটেলিগ্রাম বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহরু বলেন, আমি স্পষ্ট বলতে চাই, জরুরি অবস্থার মধ্যে কাশ্মীরকে সহায়তা করার উদ্দেশ্য রাজ্যটিকে ভারতভুক্ত হতে প্রভাবিত করা নয়। এটা অবশ্যই জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে হবে এবং আমরা এটা মেনে চলবো।

টেলিগ্রাম নং ৪০২... ২৭ শে অক্টোবর, ১৯৪৭... একই টেলিগ্রাম পাঠানো হয়েছে ইউকে প্রধানমন্ত্রীর নামেও।

 

 

জনাব নেহরু বলেন

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লেয়াকত আলী খানের নামে পাঠানো আরেক বার্তায় নেহরু বলেন, কাশ্মীরের ভারতে যোগদান আমরা গ্রহণ করেছি মহারাজার সরকার, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের প্রতিনিধির অনুরোধে, যারা প্রধানত মুসলিম। তারপরো এ শর্ত ছিলো যে, পরিস্থিতি আগের মত স্বাভাবিক হলেই কাশ্মীরের জনগণ যোগদানের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেবে। তখন চাইলে তারা অন্য রাজ্যেও যোগ দিতে পারে।

 টেলিগ্রাম নং ২৫৫ ... ৩১ শে অক্টোবর ১৯৪৭

জনাব নেহরু বলেন

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লেয়াকত আলী খানের কাছে পাঠানো একপত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহরু বলেন, আমি বারবার বলেছি যে, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই জাতিসঙ্ঘের মত আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতায় গণভোটের মাধ্যমে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

পত্র নং ৩৬৮ প্রিমিন ২১ শে নভেম্বর, ১৯৪৭... একই টেলিগ্রাম পাঠানো হয়েছে ইউকে প্রধানমন্ত্রীর নামেও।

 

জনাব নেহরু বলেন

তেসরা নভেম্বর ১৯৪৭ অল ইন্ডিয়া রেডিওতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নেহরু বলেন, আমরা ঘোষণা করছি যে, কাশ্মীরের ভাগ্য চূড়ান্তভাবে  জনগণই নির্ধারণ করবে। এই প্রতিশ্রুতি আমরা শুধু কাশ্মীরের জনগণই নয়, বরং পুরো বিশ্বকে দিচ্ছি। আমরা এটা থেকে ফিরে আসবো না এবং ফিরে আসতে পারবোও না।

 ০০ হাঁ, পুরো বিশ্বকে দেয়া সেই প্রতিশ্রুতি নেহরু অবলীলায় ভঙ্গ করেছেন। তার মৃত্যুর পর থেকে ভারত এখন পর্যন্ত তার নেতার দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেই আসছে। এ জাতির কোন প্রতিশ্রুতিতে সুতরাং বিশ্বাস করা হবে চরম নির্বুদ্ধিতা।

 

২৫ শে নভেম্বর ১৯৪৭ জাতীয় গণপরিষদে দেয়া বিবৃতিতে ‘প-ণ্ডিত’ নেহরু বলেন, আমাদের সদিচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছি যে, জনগণকে যখন তাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে তখন সেটা কোন নিরপেক্ষ বিচারিক সংস্থা, যেমন জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে উচিত হবে।

সহিংস ও উগ্রশক্তি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে, নাকি জনগণের সিদ্ধান্ত, এটাই হলো কাশ্মীর ইস্যু।

৫ই মার্চ নভেম্বর ১৯৪৭ জাতীয় গণপরিষদে দেয়া বিবৃতিতে ‘প-ণ্ডিত’ নেহরু বলেন, আমাদের সদিচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছি যে, জনগণকে যখন তাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে তখন সেটা কোন নিরপেক্ষ বিচারিক সংস্থা, যেমন জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে উচিত হবে।

সহিংস ও উগ্রশক্তি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে, নাকি জনগণের সিদ্ধান্ত, এটাই হলো কাশ্মীর ইস্যু।

২রা জানুয়ারী ১৯৫২ ভারতীয় আইনসভায় নেহরু বলেন, কাশ্মীর ভারত বা পাকিস্তান কারোই সম্পত্তি নয়। কাশ্মীর কাশ্মীরী জনগণের। কাশ্মীর যখন ভারতে প্রবেশ করেছে তখনই আমরা কাশ্মীরী জনতার নেতৃবৃন্দকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলাম যে,  আমরা শেষপর্যন্ত তাদের গণভোটের রায়ই মেনে চলবো। তারা যদি আমাদের চলে যেতে বলে. আমি তাতে কোন আপত্তি করবো না। আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিসঙ্ঘে গিয়েছি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য পাকা কথা দিয়েছি। একটি মহান জাতি হিসাবে আমরা এটা থেকে পিছু হটতে পারি না। আমরা এ প্রশ্নটির চূড়ান্ত সমাধান কাশ্মীরের জনগণের কাছেই ছেড়ে দিলাম এবং আমরা তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বদ্ধপরিকর।

অমৃতবাজার পত্রিকা, কোলকাতা, ৩রা জানুয়ারী ১৯৫২

৭ই আগস্ট, ১৯৫২ ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রদত্ত বিবৃতিতে নেহরু বলেন,  আমাদের পার্লামেন্ট কাশ্মীর প্রশ্নে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাখে না। কাশ্মীর আমাদের অন্তরের মধ্যে আছে। তবে যদি কাশ্মীরী জনগণের সিদ্ধান্তের কারণে এটা ভারতের অংশ না হয়, সেটা আমাদের জন্য কষ্ট ও মনভাঙ্গার কারণ হোক না, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমরা তাদের ধরে রাখবো না। এটা আমি শুধু জাতিসঙ্ঘ ও কাশ্মীরের জনগণকেই বলছি না, এটা আমি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস থেকে বলছি।

যদিও গত পাঁচ বছর অনেক ব্যয় ও বিপদ বয়ে এনেছে, তবু কাশ্মীর আমরা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেবো যদি... বেয়নেটের মাধ্যমে তাদের উপর আমরা নিজেদের চাপিয়ে দিতে যাচ্ছি না।

অমৃতবাজার পত্রিকা, কোলকাতা, ৩রা জানুয়ারী ১৯৫২

 

৬ই জুলাই, ১৯৫১; অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির কাছে পেশকৃত রিপোর্টে, যা ৯ই জুলাই স্টেইটসম্যানেও ছাপা হয়েছে, প-ণ্ডিত নেহরু বলেন, কাশ্মীর ভারত বা পাকিস্তানের জন্য পুরস্কার হিসাবে ভুলভাবে দেখা হচ্ছে। না, এটা সত্য নয়।

মানুষ ভুলে যাচ্ছে যে, কাশ্মীর বেচাকেনার জন্য কোন পণ্যদ্রব্য নয়। এর একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রয়েছে ।

কাশ্মীরের জনগণকেই তাদের ভবিষ্যতের চূড়ান্ত বিচারক হতে হবে।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা