রজব ১৪৩০ হিঃ (১২)

প্রথম পাতা

সম্পাদকীয়

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

তাদের জন্য কথা ছাড়া অন্যকিছু খরচ করার প্রয়োজনই বা কী! দার্শনিক কবি ইকবাল তাই তো বলেছেন, ‘দেখো সরলতা আমাদের এবং চতুরতা অন্যদের’! কোন মুসলিম নেতা কি সেখানে ছিলেন, যিনি অন্তত এটুকু জিজ্ঞাসা করতেন, ইউরোপের ‘ইহুদিনির্যাতনের’ যে অপরাধ, তার দায় শোধ করবে কেন মুসলিম উম্মাহ? কত লক্ষ ফিলিস্তিনী মুসলিম বিতাড়িত হয়েছে তাদের হাজার বছরের বাস্তুভিটা থেকে? ষাট বছ তিনি এলেন এবং আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যধন্য বিদ্যাঙ্গনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে একটি ভাষণ ‘উপহার’ দিলেন। দাতা সৌজন্যের খাতিরে ‘ভাষণ’ বললেও আসলে তা ছিলো শিক্ষকসুলভ ‘উপদেশ’। তার কণ্ঠস্বর, ভাষা ও ভঙ্গি এবং শ্রোতাদের করতালি ও উচ্ছ্বাস-অভিব্যক্তিই বুঝিয়ে দিচ্ছিলো যে, মহামান্য শিক্ষক তার অবুঝ, তবে মনোযোগী ছাত্রদের অনুগ্রহ করে উপদেশ দিচ্ছেন, আর তারা কৃতার্থ হয়ে তা গ্রহণ করছে। আমাদের মানসিক দৈন্য ও হিনমন্যতা সম্ভবত এমনভাবে আর কখনো প্রকাশ পায়নি, যেমন সেদিন পেয়েছে প্রতিটি করতালির মাধ্যমে। একটি সালাম এবং কয়েকটি কথা যাদের এত বিগলিত করতে পারে রে কত রক্ত ঝরেছে ফিলিস্তীনে মুসলিম বুক থেকে? আর ইজ্জত-আবরু! কোন দুর্বল জাতির সে প্রশ্ন তোলাই তো অবান্তর; কিন্তু কেন? ইজ্জত-আবরু, আর বাস্তুভিটা রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়ানোর নাম কেন হবে সন্ত্রাস? কারো কি সাহস ছিলো না প্রশ্ন করার, কত ভেটো পড়েছে জাতিসঙ্ঘে ইহুদীস্বার্থের পক্ষে? কেন এমন ‘অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক’, কোন মূল্যেই যা ছিন্ন হতে পারে না! তারপরো তিনি পেলেন আমাদের করতালি! নয়, এগার’র চারহাজার হত্যাকাণ্ড- এজন্য কায়রোর মাটিতে এত অশ্রু বর্ষণ! কেউ জানতে চাইলো না, আফগানিস্তান তো প্রমাণ চেয়েছিলো, কিন্তু পেলো বিমান থেকে বোমা, কামান থেকে গোলা এবং রক্তের সাগরে ভেসে যাওয়া অসংখ্য লাশ! কেন? আর কত লক্ষ হত্যাকাণ্ডে শোধ হবে চারহাজারের দায়! ইরাক জ্বলছে, বছরা-বাগদাদ সারখার হচ্ছে ; দজলা-ফোরাতে ভাসছে গলিত লাশ, হাজার হাজার! কেন এর বিচার হবে না? আপনি সবল, আমরা দুর্বল, শুধু এজন্য? যদি না হতো আফগানিস্তানের প্রতিরোধ, ইরাকের আত্মঘাত; যদি না হতো ফিলিস্তিনের হামাস ও তার জিহাদ তাহলে কি আজ আমরা পেতাম অন্তত এই সান্ত্বনার ভাষণ এবং ভাষণের সান্ত্বনা? ইরান যদি পিছিয়ে যেতো এবং নতজানু হয়ে পড়তো তাহলে কি আজ শোনা যেতো নিঃশর্ত আলোচনার ‘মিষ্টি’ প্রস্তাব? কেন কেউ প্রশ্ন করলো না, ইহুদিবোমা ও ইরানী বোমায় পার্থক্য কোথায়? তেহরান কেন শাস্তি পাবে, আর তেলআবীব পাবে পুরস্কার? ‘ওদের বন্ধু বলো না, ওরা বন্ধু পরস্পরের’, এছাড়া কী ব্যাখ্যা আছে আর! ‘ক্রুশেড’ ছিলো ভুল উচ্চারণ? ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে না? তাহলে কেন এত ধোঁয়া, এত রক্ত, এত লাশ? কেন এই ধ্বংসযজ্ঞ ফিলিস্তিনে, আফগানিস্তানে, ইরাকে এবং পাকিস্তানে? ইহুদিদের হাতে এত অস্ত্রের যোগানদাতা কে? ১৩টি বোমা ‘চুরি’ হয়ে কোথায় গেলো? তাহলে কেন পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমার নিরাপত্তা নিয়ে এত উৎকণ্ঠা? শুধু কথার প্রলেপ দিয়ে লক্ষ লক্ষ বুকের তাজা ক্ষতের উপশম করা কি আসলেই সম্ভব? না মিস্টার, কিছুতেই না! কথা অনেক শুনেছি; জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবও দেখেছি। আর কথা শুনতে চাই না এবং হতে চাই না ‘পিতৃপরিচয়’ বিক্রির নির্বোধ ক্রেতা। শুধু দেখতে চাই, আফগানিস্তানে ও ইরাকে কোন সৈন্য নেই এবং নেই কোন পুতুল সরকার! শুধু দেখতে চাই, ফিলিস্তিনে কোন ইহুদী বসতি নেই এবং নেই কোন বিভক্তকারী দেয়াল! বিশ্বাস করুন তাহলেই সব ভালো হয়ে যাবে। কোথাও কোন সন্ত্রাস থাকবে না, আপনাকেও ঘরে এসে দিয়ে যেতে হবে না উপদেশ। মিস্টার, আপনি খুব বুদ্ধিমান, আমরা জানতাম, কথায় চিড়ে ভেজে না, আপনার চিড়ে কি সুন্দর ভিজে গেলো! ভাষণের আগে কানে কানে কী বললেন, আর পেয়ে গেলেন সোনার হার এবং তেলের মূল্যহ্রাসের আশ্বাস! তেলটা আপনার খুব দরকার তাই না! সব তেল দিয়ে দেবো, শুধু আপনার মগজ থেকে একটু বুদ্ধি বাদশাহর মগজে দিয়ে দিন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন, নিজেদের সমস্যার সমাধান!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা