যিলক্বদ ১৪৩০হিঃ (১৪)

প্রথম পাতা

সম্পাদকীয়: কলমের প্রতি কৃতজ্ঞতা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

জীবনে যখন যেখানে কারো কাছ থেকে কিছু উপকার পেয়েছি, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কিছু না কিছু লিখেছি; লেখা হয়নি শুধু কলমের কথা, অথচ এমন উপকারী বন্ধু আমার জীবনে আর কে আছে!

জীবনে যখন যেখানে যা কিছু দেখে মুগ্ধ হয়েছি, হৃদয়ের সুরভি মেখে আমি তার কথা লিখেছি। আমি লিখেছি ফুলের কথা, বসন্তের কথা; আমি লিখেছি চাঁদের কথা, জোসনার কথা, আলোর কথা জোনাকির কথা, ভোরের কথা, শিশিরের কথা; কত কিছুর কথা। লিখিনি শুধু কলমের কথা। অথচ কলমই আমার প্রথম ভালোবাসা, কলমই আমার শেষ ভালোবাসা! তাই আমি আজ লিখবো শুধু আমার কলমের কথা।

কলম আমার ব্যথার মলম এবং আমার বেদনার উপশম; কলম আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী এবং আমার বঞ্চিত জীবনের সান্ত্বনা।

কলম আমার কথা শোনে এং আমার কথা বলে। কলম আমার জন্য হাসে এবং আমার জন্য কাঁদে। আনন্দের শুভলগ্নে আলোকিত বর্ণে কলম আমাকে অভিনন্দন জানায় এবং বেদনার বিষণ্ন মুহূর্তে কালো কালির হরফে আমার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে। সুখের দিনে বন্ধরা কাছে থাকে, দুঃখের দিনে চলে যায় দূরে। কিন্তু কলম সুখে, দুঃখে, আনন্দে, বেদনায় আমার সঙ্গে থাকে। জীবনের সুখ-দুঃখের ও আনন্দ-বেদনার প্রতিটি মুহূর্ত তাই কলমের কাছে ঋণী; কলমের ধনে আমি আজ ধনী। মুদ্রার ধন হারিয়ে যায়, কলমের ধন থাকে আজীবন। যখন নেমে আসে মৃত্যুর যবনিকা, মুছে যায় জীবনের রেখা; থাকে শুধু কলমের লেখা, কাগজের বুকে এবং মানুষের বুকে। কাগজ হারিয়ে যায় এবং মানুষ ভুলে যায়, কিন্তু কলমের লেখা রাব্বুল কলমের কাছে থেকে যায়।

কলম আমার জন্য শব্দের মালা গাঁথে এবং কাগজের পাতায় হৃদয়ের মানচিত্র আঁকে। কলম আমার অতীতকে জীবন্ত রাখে এবং ভবিষ্যতকে সমৃদ্ধ করে। কলম আমাকে উজ্জ্বল আগামীর স্বপ্ন দেখায় এবং উদ্দীপ্ত করে নতুন চেতনায়। কলম আমাকে দূর মানযিলের পথ দেখায় এবং জীবনসফরের পাথেয় যোগায়। কলম আমার সামনে উন্মুক্ত করে নতুন নতুন দিগন্ত এবং তুলে ধরে জীবনের অজানা অনেক রহস্য। বার্ধক্যের জীর্ণতা থেকে কলম আমাকে নিয়ে যায় যৌবনের সজীব উদ্যানে এবং শৈশবের নির্দোষ আনন্দের মাঝে।

বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে অতীতের বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার কীভাবে এসেছে আমার কাছে? ছোট্ট এই কলমের কল্যাণে। আমার সামান্য যা কিছু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, কীভাবে আমি তা সংরক্ষণ করবো এবং পৌঁছে দেবো ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে? সামান্য এই কলমের মাধ্যমে। অতীত ও ভবিষ্যতের মাঝে কলম আমার বন্ধন। হৃদয় থেকে হৃদয়ে ভাব ও ভাবনার পারাপারে কলম আমার সেতুবন্ধন।

যেদিন শুনেছি, আসমান থেকে তুমি নেমে এসেছো প্রথম অহীর আলো সঙ্গে করে, সেদিন তোমাকে আমি ভালোবেসেছি; আজীবন ভালোবাসবো। আমার হৃদয়-উদ্যানের প্রতিটি ফুল হে কলম, তোমার জন্য নিবেদিত। তোমাকে যারা ভালোবাসে, তোমার ভালোবাসা যেন তারা পায়, তোমার অকৃপণ দানে তাদের জীবন যেন ধন্য হয়। তোমাকে যারা অসম্মান করে, তোমাকে যারা কলংকিত করে তাদের হাত থেকে আল্ল্লাহ যেন তোমাকে রক্ষা করেন। তোমার কালিতে বিষ মেখে মানুষের জীবন যারা বিষিয়ে তোলে এবং তোমার কালিতে যারা মযলুমের রক্ত ঢেলে উল্ল্লাস করে মানবতার অভিশাপে তারা যেন ধ্বংস হয়।

হে কলম! হে আমার ব্যথার মলম! হে আমার বেদনার উপসম! আজ এ পবিত্র মুহূর্তে গ্রহণ করো আমার হৃদয়ের অভিনন্দন! আমার রক্তের ফোঁটা এবং আমার অশ্রুর প্রতিটি কণা যেন মিশে থাকে তোমার কালির বিন্দুতে।

হে কলম! হে বন্ধু! সারা জীবন শুধু পেয়েছি তোমার দান, কিন্তু রক্ষা করতে পারিনি তোমার সম্মান; তবু আশা করি, তোমার ক্ষমা পাবো আমি। হে কলম! হে বন্ধু! আমার শেষ মিনতি, মৃত্যুর সময় থাকবে তুমি আমার হাতে করুণাময়ের করুণার চি?হ্ন হয়ে।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা