মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮)

তোমাদের জন্য

কাকে বলে ইসলাম?

লিখেছেনঃ মাওলানা ইয়াহইয়া (রহ)

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

(ধারাবাহিক) 

কিয়াম ও রুকূ-সিজদার হাকীকত 

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছালাত হচ্ছে আমার খালিক ও মালিক আল্লাহ রাববুল ইয্যতের সামনে আমার বান্দেগি ও আবদিয়াতের এবং দীনতা ও দাসত্বের প্রকাশ। তো কিয়াম, রুকূ-সিজদা ও বৈঠক, তথা ছালাতের প্রতিটি রোকনের মাধ্যমে বান্দার এই বান্দেগি ও আবদিয়াতেরই প্রকাশ ঘটানো হয়েছে যা আল্লাহ তা‘আলার খুব প্রিয়। সুতরাং বান্দা যখন ছালাতের জন্য কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ায় তখন তার অন্তরে এই চেতনা যেন জাগ্রত থাকে যে, একজন কৃতার্থ বান্দা হিসাবে সে তার দয়ালু মালিকের সামনে দাঁড়িয়েছে। এই ছালাত তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার উপর চাপিয়ে দেয়া কোন আদেশ নয়, বরং এটা তার রূহ ও আত্মারই আকুতি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সে যে আল্লাহ তা‘আলার অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে ডুবে আছে সে জন্য তার রূহ ও আত্মা ব্যাকুল ছিলো আল্লাহ তা‘আলার প্রতি শোকর ও কৃতজ্ঞতা নিবেদন করার জন্য। কিন্তু তার জানা ছিলো না, কীভাবে সে আল্লাহর প্রতি শোকর ও কৃতজ্ঞতা নিবেদন করবে এবং নিজের জীবন ও অস্তিত্বকে ধন্য করবে। সে ব্যাকুল ছিলো, অস্থির ছিলো, দিশেহারা ছিলো এবং তার ভিতরে গভীর একটা যন্ত্রণা ছিলো। তো বান্দাকে সেই যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করার জন্য এবং বান্দাকে বান্দেগি ও আবদিয়াত প্রকাশের মাধ্যমে আত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি লাভ করার উপায় করে দেয়ার জন্যই ছালাতের ফরযিয়াত নাযিল করা হয়েছে। তো কিয়ামের মাধ্যমে বান্দা এখন তার বন্দেগি ও আবদিয়াত নিবেদন করার যেন সূচনা করছে। কেয়ামের মধ্যে বান্দা যদি নীরবে শুধু দাঁড়িয়ে থাকতো তাহলে হয়ত বান্দেগি আদায় হতো, কিন্তু তার রূহের পিয়াস ও আত্মার পিপাসা দূর হতো না। দয়াময় আল্লাহ তো ছালাতের মাধ্যমে বান্দার কাছ থেকে আসলে কিছুই পেতে চান না, বরং বান্দাকে দান করতে চান? কী দান করতে চান? বান্দেগির স্বাদ ও শান্তি এবং আবদিয়াতের সুকূন ও সাকীনা! তাই বান্দাকে তিনি সূরাতুল ফাতিহা এবং সেই সঙ্গে কোরআনের কিছু আয়াত তেলাওয়াত করার আদেশ করেছেন, যাতে বান্দা তার বান্দেগি প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে রূহের গিযা এবং আত্মার খোরাকও হাছিল করতে পারে। সূরাতুল ফাতিহা তো আর কিছু না, বান্দার নিজের যাবতীয় হাজাত ও প্রয়োজনেরই শুধু প্রার্থনা। সেখানেও আল্লাহ বান্দার প্রতি কত দয়া করেছেন। ছালাতে কিয়ামের অবস্থায় বান্দা যখন সূরাতুল ফাতিহা তিলাওয়াত করে তখন আল্লাহ বান্দার প্রতিটি কথার উত্তর দেন। যেমন হাদীছ শরীফে এসেছে, বান্দা যখন বলে, আলহামদু লিল্লাহি রাবিবল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, হামিদানী আবদী- বান্দা তো আমার প্রশংসা করেছে!

বান্দা যখন বলে আর-রাহমানির-রাহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আছনা আলাইয়া আবদী- বান্দা তো আমার গুণ বর্ণনা করেছে!

বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াওমিদ্বীন, তখন আল্লাহ বলেন, মাজ্জাদানী আবদী- বান্দা তো আমার গৌরব বর্ণনা করেছে!

আর বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকা না‘বুদু... তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হাযা বাইনী ও বাইনা আবদী, ওয়া লিআবদী মা সাআলা- এটা হলো আমার মধ্যে এবং আমার বান্দার মধ্যে, আর আমার বান্দা যা চেয়েছে অবশ্যই সে তা পাবে।

তো কিয়ামের অবস্থায় আপনি যদি অন্তরে এই অনুভব-অনুভূতি লালন করতে পারেন যে, আপনি আবদিয়াত

নিবেদন করছেন, আর আল্লাহ খুশী হয়ে তা কবুল করছেন এবং আপনার কথার উত্তরে কথা বলছেন তাহলে সেই ছালাতের, সেই কিয়ামের স্বাদই তো হবে অন্য রকম!

যাই হোক, বলছিলাম যে, কিয়াম হলো আল্লাহর দরবারে বান্দার বান্দেগি প্রকাশের প্রথম ধাপ। এই ধাপটি উত্তমরূপে অতিক্রম করার পর সে বান্দেগির দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করে, অর্থাৎ দিলের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার বড়াই ও বড়ত্বের ধেয়ান করতে করতে আল্লাহু আকবার বলে রুকূতে যায়। রুকূর তাছবীহ হলো সুবহানা রাবিবয়াল ‘আযীম- আমার মহান প্রতিপালক চিরপবিত্র। এসময় বান্দার কর্তব্য হলো, যা সে মুখে বলছে তার ভাব ও মর্ম এবং হাকীকত ও কায়ফিয়াত অন্তরেও যেন ধারণ করে। তাহলেই সে আবদিয়াত ও বান্দেগির আরো ঊর্ধ্ব স্তরে উপনীত হতে সক্ষম হবে।

রুকূ থেকে সরাসরি সিজদায় চলে যাওয়ার পরিবর্তে বিধান হলো সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে আবার কিয়ামের হালাতে ফিরে আসা, তারপর আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাওয়া। কারণ সিজদা হলো আবদিয়াত ও বান্দেগি প্রকাশের সর্বোচ্চ স্তর। সুতরাং সেজন্য চূড়ান্ত প্রস্ত্ততি গ্রহণের প্রয়োজন।

সিজদার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তা‘আলার সর্বোত্তম সান্নিধ্য লাভ করে, যেমন হাদীছ শরীফে এসেছে। আর বাহ্যত যদিও দেখা যায় যে, বান্দা যমিনের উপর সিজদা করছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহ তা‘আলার কুদরতি ‘সাক’ ও কদমের উপর সিজদা করে এবং তার কুদরতি ‘সাক’-এর ঠান্ডক অনুভব করে। তো সিজদা করার সময় বান্দার অন্তরে এই রকম কিছু অনুভূতি জাগ্রত থাকতে হবে। তাহলেই সে সিজদার প্রকৃত স্বাদ ও লয্যত অনুভব করতে পারবে।

সিজদার তাসবীহ হলো, সুবহানা রাবিবয়াল‘আলা- আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালক চিরপবিত্র। ছালাতের মধ্যে যেহেতু সিজদাই হলো বান্দেগির সর্বোচ্চ স্তর সেহেতু তাসবীহের মধ্যেও সর্বোচ্চ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং এই তাসবীহ উচ্চারণের সময় দিলের মধ্যে এই চিন্তা-ধেয়ান সর্বোচ্চ পরিমাণে জাগরূক থাকা চাই যে, আমাদের প্রতিপালক কত মহান, কত গানী ও বে-নেয়ায, আর বান্দা কত অসহায়, অভাবী ও মুহতাজ! এই ‘মাসকানাত ও মুহতাজি’-এর অনুভূতি যত বেশী জাগ্রত হবে সিজদা তত বেশী জানদার ও যিন্দা হবে এবং সিজদার ফায়য ও ফায়যান তত বেশী অর্জিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

কিয়াম ও রুকূ-সিজদা সম্পর্কে যা কিছু এখানে বলা হলো আল্লাহ যেন ছালাতের মধ্যে আমাদেরকে সেই রকমের জানদার কেয়াম ও যিন্দা রুকূ-সিজদা করার তাওফীক দান করেন, আমীন।

আখেরি বৈঠক হলো ছালাতের সমাপ্তি পর্ব, আর এখানে তাহিয়্যাতের মধ্যে যেন ছালাতের খোলাছা ও সারনির্যাস পেশ করা হয়েছে। বান্দার সমস্ত গান্দেগি ও না-লায়েকি সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে ছালাত আদায়ের তাওফীক দান করেছেন। তাই বান্দার কর্তব্য হলো তাহিয়্যাতের মাধ্যমে তাওফীকে ছালাতের উপর শোকর আদায় করা। আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়ছ-ছালাওয়াতু...

আদব ও তাযীম এবং ভক্তি ও ফারমাবরদারির সমস্ত বক্তব্য আল্লাহ তা‘আলারই জন্য এবং আল্লাহরই জন্য সমস্ত ইবাদাত ও ছাদাকাত।

উম্মতে মুহাম্মাদী ছালাতের এই মহান নেয়ামত লাভ করেছে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব হযরত মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। মি‘রাজের পবিত্র রাত্রে তিনি যখন আল্লাহর আদেশে আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন তখন আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের নেয়ামত দান করেন এবং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা উম্মতের জন্য বহন করে আনেন। প্রত্যেক উম্মতই নবীর কাছ থেকে কোন না কোন তোহফা লাভ করেছে, যেমন মূসা আলাইহিস-সালামের মাধ্যমে মান্না ও সালওয়া এবং ঈসা আলাইহিস-সালামের মাধ্যমে মাঈদাহ ও দস্তরখান। কিন্তু পূর্ববর্তী কোন উম্মত তার নবীর কাছ থেকে ছালাতের মত এত উচ্চ মরতবার তোহফা লাভ করেনি। সুতরাং পিয়ারি উম্মতির কর্তব্য হলো পেয়ারা নবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আস-সালামু ‘আলাইকা আইয়ুহান... হে নবী আপনার প্রতি সালাম ও শান্তি এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে রহমত ও বরকত।

আল্লাহ তা‘আলা কত মেহেরবান! পেয়ারা নবীর মাধ্যমে তিনি নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন যে হে বান্দা! কবূলিয়াতের এ মোবারক সময়ে তুমি তোমার নিজের প্রয়োজনের কথা ভুলে যেয়ো না। তুমি তোমার নিজের জন্য এবং আমার নেক বান্দাদের জন্য সালাম ও শান্তি প্রার্থনা করো, যাতে তুমি নিজেও নেক বান্দাদের অন্তভুর্ক্ত হতে পারো। আস-সালামু আলাইনা ওয়া...

সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি।

খাতেমা বিলখায়র অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালাতের প্রতি ঈমানের সঙ্গে মাওত নছীব হওয়া, এটাই হলো মুমিনের যিন্দেগির একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ঈমানের উপর খাতেমাই হলো গ্রহণযোগ্য। ঈমানের উপর যার খাতেমা হবে সে কামিয়াব, আর ঈমানের উপর যার খাতেমা হবে না সে বরবাদ। তাই ছালাতেরও খাতেমা করা হলো তাশাহহুদ-এর মাধ্যমে। আশহাদু আন... আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া নেই কোন ইলাহ এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ হচ্ছেন আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

বান্দা যখন ছালাতের এই দীর্ঘ ও কঠিন মুজাহাদা থেকে ফারেগ হবে তখন তার অন্তরে যেন ইবাদতের গর্ব ও অহঙ্কার সৃষ্টি না হয়, তার অন্তরে যেন এই সলজ্জ অনুভূতি বিরাজ করে যে, যেভাবে ছালাত আদায় করা দরকার ছিলো তেমনভাবে আল্লাহ তা‘আলার শায়ানে শান ছালাত আদায় করা বান্দার পক্ষে সম্ভব হয়নি। অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি তাতে রয়েছে। এখন আল্লাহ তা‘আলা যদি দয়া ও মেহেরবানি করে তার ত্রুটিপূর্ণ ছালাত ও ইবাদত কবুল করে নেন তাহলেই সে কামিয়াব হবে। তাই দু‘আ-ইসতিগফারের মাধ্যমে সেই কাকুতি ও মিনতিটুকুই সে নিবেদন করে আল্লাহর দরবারে। আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী... হে আল্লাহ, (ছালাতের ভিতরে এবং ছালাতের বাইরে) আমি নিজের নফসের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ পারে না গোনাহ মাফ করতে। সুতরাং আপনার পক্ষ হতে আমাকে মাগফিরাত দান করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই পরম ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।

এই হলো সেই ছালাত যার মধ্যে রাখা হয়েছে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চক্ষুর শীতলতা। ‘উঠক-বৈঠকওয়ালী’ ছালাত হয়ত আমরা আদায় করতে পারি, তবে আল্লাহ যেন নবীর চোখের ঠান্ডকওয়ালি ছালাত আমাদের নছীব করেন, আমীন।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়ে গেছে। তা হলো ইকামাতে ছালাত বা ছালাত কায়েম করা। কোরআন শরীফে আল্লাহ তা‘আলা শুধু ছালাত আদায় করতে বলেননি, বরং ছালাত কায়েম করতে বলেছেন। অর্থাৎ শুধু নিজে নিজে ছালাত আদায় করলে হবে না, বরং ছালাত কায়েম করতে হবে। সুতরাং বোঝা গেলো শুধু আদায় করা দ্বারা ছালাতের ফরযিয়ত থেকে তো মানুষ মুক্ত হয়ে যাবে, কিন্তু ছালাত কায়েম করার দায় থেকে মুক্ত হবে না। কেয়ামতের দিন বান্দাকে তার নিজের ছালাত সম্পর্কে যেমন জিজ্ঞাসা করা হবে তেমনি ইকামতে ছালাতের ক্ষেত্রে সে কতটা চেষ্টা করেছে সে সম্পর্কেও তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইকামাতে ছালাতের অর্থ হলো অন্যকে ছালাতের প্রতি দাওয়াত দেয়া। ইকামাতে ছালাতের বিভিন্ন স্তর ও পর্যায় রয়েছে। প্রথম স্তর হলো নিজের পরিবার পরিজন ও সন্তান- সন্ততিকে ছালাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। কারণ এটা তো পরিষ্কার যে, ছালাত তরককারী সোজা জাহান্নামী হবে, আর কোরআনের আদেশ হলো, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। হাদীছ শরীফে যে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের সাত বছর বয়সে ছালাতের আদেশ করো, আর দশ বছর বয়সে ছালাতের জন্য তাদের প্রহার করো, এটা মূলত ইকামাতে ছালাতের অন্তর্ভুক্ত। আরেকটি হাদীছে যে আছে, তোমাদের প্রত্যেকেই শাসক, তোমাদের প্রত্যেককে তার শাসিত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সুতরাং কারো অধীনে যারা কাজ করে তাদেরও ছালাতের দাওয়াত দেয়া এবং যতটা ক্ষমতা ও সক্ষমতা রয়েছে সেই পরিমাণে তাদেরকে ছালাতের জন্য বাধ্য করা তার কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। স্বামী যেহেতু স্ত্রীর শাসক সেহেতু স্বামীর কর্তব্য হবে স্ত্রীকে ছালাতের মুছল্লায় এনে দাঁড় করানো। আসুন এবার আমরা বুকে হাত রেখে নিজেদের অবস্থা একবার চিন্তা করি। যারা নিজেরাই ছালাত আদায় করে না তাদের কথা তো বাদ, কিন্তু যারা ছালাতী ও মুছল্লী তাদের কী অবস্থা! আমরা ফজরের জামাতে চলে যাই, অথচ ছেলে-মেয়ে ঘুমিয়ে থাকে। ‘মায়া’ করে ডাক দেই না, বরং বলি, ছেলে বয়স, পরে ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করে দেখুন, কত বড় যুলুম নিজের উপরে এবং নিজের সন্তানের উপরে!

যে সমাজে, যে জনপদে আমরা বাস করি, অন্তত আমাদের মসজিদের প্রতিবেশী যারা তাদের কাছেও ছালাতের দাওয়াত পৌঁছানো আমাদের কর্তব্য, এমনকি দেশের ও সমাজের অধিপতি যারা তাদের কর্তব্য হলো ছালাতের পরিবেশ তৈরী করা এবং যারা ছালাতে অবহেলা করবে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। যেমন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাঁর ইচ্ছা হয়, যারা ছালাতে আসে না তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিতে। একথা দ্বারা তিনি আসলে বোঝাতে চেয়েছেন যে, শাসনক্ষমতা যাদের হাতে ছালাতের বিষয়ে প্রয়োজনে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে তাদের কতটা কঠোর হওয়া কর্তব্য। কোরআনে আল্লাহ বলেন-

যারা, যখন আমি তাদেরকে কোন ভূখন্ডের উপর ক্ষমতা দান করি তখন তারা ছালাত কায়েম করে।

তো পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে সর্বত্র ছালাত কায়েম করা, নিজ নিজ পর্যায়ে আমাদের সবার অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। আফসোস, মুসলমান আজ ছালাতই ছেড়ে দিয়েছে, যাদের ছালাতের আমল কিছুটা যিন্দা আছে, তাদের মধ্যে ইকামাতে ছালাতের আমল একেবারেই অনুপস্থিত। হে আল্লাহ, আমাদের তুমি পরিবারের মধ্যে, অধীনস্থদের মধ্যে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে ইকামাতে ছালাতের তাওফীক দান করো। আমাদের সমাজপতিদের- কে সমাজের মধ্যে এবং রাষ্ট্রপতিদেরকে দেশের মধ্যে ইকামাতে ছালাতের তাওফীক দান করো, আমীন।

যাকাত

প্রথমে আমরা ঈমান সম্পর্কে সুবিশদ আলোচনা করেছি। কারণ ঈমান হচ্ছে ইসলামের সুউচ্চ ভবনের মূল স্তম্ভ। ঈমান ছাড়া ইসলামী ভবনের অস্তিত্বই হতে পারে না। ঈমানের সম্পর্ক হলো আকায়েদ ও বিশ্বাসের সঙ্গে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ছালাতের আলোচনা করা হয়েছে, কারণ ছালাত হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় রোকন বা স্তম্ভ। এরপর ইসলামের তৃতীয় রোকন বা স্তম্ভ হলো যাকাত। তো এখন যাকাতের হাকীকত সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হবে। যাকাত ইসলামের কত গুরুত্বপূর্ণ রোকন তা বোঝার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, কোরআন শরীফে আল্লাহ যখনই বলেছেন আকীমুছ-ছালাত- তোমরা ছালাত কায়েম করো তখনই সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, ওয়া আতুয্-যাকাত- আর তোমরা যাকাত দাও। কোরআনের বয়ান দ্বারা তো স্পষ্টরূপে বোঝা যায় যে, ছালাত আদায় না করা যেমন মুমিনের কাজ নয়, তেমনি যাকাত আদায় না করাও মুমিনের কাজ নয়, বরং দু'টোই মুশরিকের কাজ। 

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা