মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮)

তোমাদের জন্য

বাতাসের তালব্য শ !

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

সভাপতি সাহেব আজ বেশ হাসি-খুশি। জলসায় এলেন একটি কৌটা হাতে। দেখতে সুন্দর, কারুকাজ করা।

সবার চোখে কৌতূহল। (কৌতূহলে দীর্ঘ-ঊকার, ছেলেরা মেয়েরা কি জানে তা? সভাপতি সাহেব বুদ্ধি করে জিজ্ঞাসা করলে ভালো হতো!)  

ছেলেরা ভাবলো, কী আছে এত সুন্দর কৌটায়? মুগভাজা! মেয়েরা ভাবলো, আচার!  কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে সুমাইয়া শেষটায় জিজ্ঞাসাই করে বসলো, কৌটায় কী আছে হুযূর?! 

সভাপতিঃ (মুখের হাসিটাকে লম্বা করে) কৌটায় করে আজ একটি  শব্দ এনেছি। তোমাদের বানান পরীক্ষা করবো, দেখি পারো কি না।

সবাইঃ (অবাক হয়ে একসঙ্গে) কী শব্দ! কী শব্দ!

সভাপতিঃ (হাসতে হাসতে) বলবো, বলবো, সময় হলে নিজেই বলবো।

শব্দটা অবশ্য সবার চেনা-জানা, বানানটাও তেমন কঠিন না। আছে একটা ডয়ে শূন্য ড়, আর আছে, তালব্য-শ, না না, দন্ত্য-স। শব্দটা তাহলে কী?!

এখন সবাই মিলে মাথা খাটাও, বুদ্ধি চালাও।

যে বলতে পারবে তার জন্য আছে বিরাট পুরস্কার, আর যে পারবে না তার শাস্তি হলো ছোট্ট একটি কানমলা।

শফীকঃ হুযূর, কানমলা ঠিক আছে, কিন্তু পুরস্কারটা কী?

সভাপতিঃ (গম্ভীরতার ভান করে) কী পুরস্কার,  এখন বলা যাবে না পরিষ্কার।

শফীকঃ ঠিক আছে, হুযূরের মর্জি।

শামীমঃ কিন্তু হুযূর, বেজায় রহস্য রহস্য লাগছে যে!

সভাপতিঃ কেন, রহস্যের কী হলো?!

শামীমঃ শব্দ আবার কৌটায় করে আনতে হয়! মুখে বললেই তো হয়!

সভাপতিঃ (লম্বা একটা হাসি দিয়ে) তা হয়, তবে কিনা, আমি হলাম বানানজলসার সভাপতি, মাথায় আমার অনেক বুদ্ধি! কখনো শব্দ আনি মাথায় করে, কখনো মুখে করে, আর কখনো কৌটায় করে।

সুফিয়াঃ পেয়েছি! পেয়েছি! ঢেড়স!

সভাপতিঃ তোমার বুদ্ধি আছে বটে। তবে সমস্যা তিনটি। প্রথম সমস্যা, ঢ-এর মাথায় লাগবে চন্দ্রবিন্দু! দ্বিতীয় সমস্যা ঢেড়সে দন্ত্য-স ও তালব্য-শ দুটোই আছে। তৃতীয় সমস্যা এবং এটাই সবচে’ কঠিন সমস্যা, এত ছোট কৌটায় এত লম্বা ঢেড়স অাঁটবে কীভাবে?!

সবাইঃ তাই তো! তাই তো!

সুমাইয়াঃ আচ্ছা হুযূর, দয়া করে এবার শব্দটা বলে ফেলুন।

সভাপতিঃ তার আগে, পুরস্কার ও পরিষ্কার বানানদু'টো বলো দেখি!

সুমাইয়াঃ এ তো সোজা! দন্ত্য-স এবং মূর্ধন্য-ষ। কী মুশকিল! এবার শব্দটা বলুন না!

সভাপতিঃ এত তাড়া কিসের, রাখো না! তার আগে বলো তো, সাজা ও শাস্তি, কোন স? শামিমঃ (একটু চিন্তা করে বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে) শাস্তিটা পরিমাণে বেশী হলে তালব্য-শ, কম হলে দন্ত্য-স।

সভাপতিঃ বাহ্! বুদ্ধিতে তো অতি বড় পাকা তুমি! আর সাজা?

শামীমঃ (সভাপতি সাহেব মিটিমিটি হাসছেন, শামীম তাতে ভড়কালো না মোটেও।) সাজাটা পিঠের উপর হলে মূর্ধন্য-ষ, কানের লতিতে হলে তালব্য-শ!

বানানবুদ্ধির বহর দেখে সভাপতি সাহেব অবাক! ভাবলেন, একেই বুঝি বলে বুদ্ধির ঢেঁকী! ভালো কথা, ঢেঁকী বানানটা জিজ্ঞাসা করতে হবে। গত জলসায় মেয়েরা ফাঁকি দিয়েছিলো।

তিনি বললেন, সাজা ও শাস্তি, বানান কে বলতে পারে?

সুরাইয়া দাঁড়িয়ে বললো, সাজা ও শাস্তি অর্থ একই, তবে সাজায় হলো দন্ত্য-স, আর শাস্তিতে তালব্য-শ।

সভাপতি সাহেব খুশী হয়ে ঢেঁকীটা সামনে নিয়ে এলেন এবং হাসতে হাসতে বললেনঃ গত জলসার কথা মনে আছে তো! ছেলেরা এবং মেয়েরা বলো দেখি, ঢেঁকী বানানটা কী?

সুফিয়াঃ (বানানটা দেখে এসেছিলো, তাই চট করে বলে দিলো) চন্দ্রবিন্দু, দীর্ঘ ঈকার।

সভাপতিঃ (মনে মনে) নাহ, মেয়েদের সঙ্গে ছেলেরা পারবে না। ছেলেগুলো দিন দিন কী যে হচ্ছে!

সুরাইয়াঃ হুযূর শামীম তো খালি বানান ফাঁকি দেয়। ওকে জিজ্ঞাসা করুন তো, ফাঁক ও ফাঁকিতে বানান কী?

শামীমঃ (দাঁড়িয়ে, কিছুটা রাগ করে) আমি আবার ফাঁকি দিলাম কবে? ফাঁকে চন্দ্রবিন্দু, ফাকিতে নেই।

সভাপতিঃ (মুচকি হেসে) এবার কিন্তু ‘ফাকি’ তোমাকে ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁক ও ফাঁকি দু'টোতেই চন্দ্রবিন্দু আছে।

(শামীম লজ্জা পেয়ে বসে পড়লো, আর ভাবলো, বানানটা তাহলে আরো ভালো করে শিখতে হবে, নইলে যে লজ্জা পেতে হবে! সুমাইয়াটা যা দাঁত বের করে হাসে, বড্ড গা জ্বালা করে।)

সভাপতিঃ আচ্ছা, বলো তো, জেলেরা মাছ ধরে কী দিয়ে?

সবাইঃ (একসঙ্গে) জাল দিয়ে!

সভাপতিঃ এবার বলো, চুলায় জ্বাল দাও কী দিয়ে?

সবাইঃ (একসঙ্গে) কেন, লাকড়ি দিয়ে!

সভাপতিঃ তা তো ঠিক, কিন্তু বাননাটা কী?

সুমাইয়াঃ (সঙ্গে সঙ্গে) মাছধরা জাল শুধু বর্গীয় জ, চুলার জ্বাল, বর্গীয় জ+ব সংযুক্ত।

সভাপতিঃ বেশ, বেশ। আচ্ছা, মাকড়সার জাল?

ছেলেরা মেয়েরা এ ওর দিকে তাকায়, তারপর বলেঃ জানি না তো!

সভাপতিঃ (বিজয়ীর হাসি হেসে) এবার তাহলে আটকা পড়েছো মাকড়সার জালে! শোনো, জেলের জাল, আর মাকড়সার জাল, বানান একই।

সুমাইয়াঃ হুযূর, অনেক তো হলো, এবার কৌটা থেকে শব্দটা বের করুন না!

সভাপতিঃ ঠিক আছে, এখন সময় হয়েছে। সিসিম ফাঁক!

এরপর কিস্সা মুখতাছার, সভাপতি সাহেব হাসিমুখে একে একে সবার দিকে তাকালেন এবং আস্তে আস্তে কৌটার ঢাকনা খুললেন, আর তা থেকে বের হলো... কী বের হলো?! আহ! দ-এর উপর একটা চন্দ্রবিন্দু দিয়ে দাঁড়াও না একটু! বলছি তো কী বের হলো!

বের হলো ইয়া বড়া এক ...!

কিন্তু তার আগেই মেয়েরা মাগো বলে এমন চিৎকার দিলো! আর মাকড়সা! মাকড়সা! বলে উঠি-পড়ি ও পড়ি-উঠি করে দরজার দিকে এমন দৌড় দিলো যেন মাকড়সাটা ওদের গায়ে গিয়ে উঠেছে।

সভাপতি সাহেব তো থ! মাকড়সাকে মেয়েদের এত ভয়! কেন! মাকড়সা কি কামড়ায়!

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা