মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮)

তোমাদের জন্য

আমার ঈদ, সকাল খেকে সন্ধ্যা

লিখেছেনঃ উছমানগনি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

আজ ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ একমাসের সিয়ামসাধনার পর আজ আমাদের আনন্দের দিন। যারা সিয়ামসাধক আজ তাদের প্রতিদান লাভের দিন, আল্লাহর পক্ষ হতে আজ তাদের জন্য মাগফিরাতের ঘোষণা লাভের দিন।

ভোরে যখন জাগ্রত হলাম, মনে হলো অপার্থিব একটি আনন্দ ও পুলক যেন আমাকে শিহরিত করলো। মসজিদে গেলাম। ফজরের জামাতে মসজিদ আজ প্রায় পূর্ণ। ভালো লাগলো। সারা বছর যদি এমন হতো, কত ভালো হতো! 

ঘরে ফিরে কিছুক্ষণ তিলাওয়াত করলাম। আজকের তিলাওয়াতেও যেন অন্যরকম এক আনন্দ। আম্মার হাতের রান্না সেমাই দিয়ে মিষ্টিমুখ হলাম। আম্মা আছেন বলে এখনো আমাদের জীবনে ঈদের আনন্দ আছে। আববা যদি আজ থাকতেন! ঈদের দিনে আববার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়ার দিনগুলো কি আর কখনো ফিরে আসবে। যাদের আম্মা নেই, কিংবা নেই আববা, হে আল্লাহ, তাদেরও জীবনে তুমি ঈদের আনন্দ দান করো। 

ঈদের পোশাক নতুন হওয়া অপরিহার্য নয়, হতে হবে শুধু পাক-পরিচ্ছন্ন। পাক-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে, আতর-খোশবু মেখে সবাই মিলে ঈদগাহে গেলাম। ঈদের জামাতের সৌন্দর্যের সত্যি কোন তুলনা নেই। আর কোন জাতির জীবনে এমন সুন্দর দিন এমন পবিত্রতাপূর্ণ অনুষ্ঠান নেই। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখন ঈদ আছে, ঈদের আড়ম্বর আছে, কিন্ত ঈদের পবিত্রতা নেই।

ঈদের জামাত হলো, খোতবা হলো, মুনাজাত হলো, আর হলো ঈদের কোলাকুলি। বুকের সঙ্গে বুক মিলেছে, কিন্তু হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়! কতটুকু মিলেছে কে জানে!

পারিবারিক কবর যিয়ারত করলাম। এখানে শুয়ে আছেন আমার আববা, যার হাত ধরে একসময় আমি ঈদের জামাতে যেতাম। এখানে শুয়ে আছেন তারাও যাদের হাত ধরে এক সময় হয়ত আমার আববাও ঈদগাহে যেতেন।

চারদিকের আনন্দ-কোলাহলের মধ্যে আমার মনে পড়লো ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের নিপীড়িত-নির্যাতিত মুসলমান ভাইদের কথা। তাদের মনে ঈদের আনন্দ নেই, আছে মৃত্যুর ভয়। আজ ঈদের দিনেও হয়ত সেখানে কোন মায়ের কোল খালি হয়েছে। হায়েনাদের গুলির আঘাতে ঝাঝরা হয়েছে কারো বুক। অথচ আমরা কত নির্বিকার, ঈদের আনন্দে বিভোর!

দুপুরে বেড়াতে বের হলাম আত্মীয়দের বাড়ী। ঈদের খাবার খেলাম নানীর বাড়ী গিয়ে। আত্মীয়-স্বজন সবাই খুশী হলো।

আছরের পর বের হলাম যমুনার তীরে বৈকালিক ভ্রমণে, তবে অন্যান্য দিনের মত সাধারণ ভ্রমণ নয়, রীতিমত ঈদভ্রমণ। তবে পরিবেশের মধ্যে ঈদের পবিত্রতার বড় অভাব! খুবই দুঃখজনক বিষয় যে, আমাদের ঈদও এখন হয়ে পড়েছে অন্যান্য জাতি, বিশেষত হিন্দুজাতির উৎসব অনুষ্ঠানের মত।

যমুনানদী আমাদের বাড়ী থেকে মাইলখানেক দূরে। নদীর এখন ভরা যৌবন। নদীর স্রোত দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে সাগরের পানে। নদীর তীরবর্তী গ্রামটি বেশ সুন্দর। একদিকে অথৈ জলরাশি, অন্যদিকে সবুজের সমারোহ। এটি জেলেদের গ্রাম। নদীতে মাছ ধরেই এরা সংগ্রহ করে জীবনের জীবিকা । আশ্চর্য! এই গ্রামে ঈদের আনন্দের কোন চিহ্ন নেই! দারিদ্র্য ঈদের আনন্দ এভাবে কেড়ে নেয়!

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, এবার ফেরার পালা, কিন্তু নদীতে সূর্য ডোবার অপূর্ব দৃশ্যটি উপভোগ করার লোভ সামলাতে পারলাম না।

সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন করলাম। সত্যি অপূর্ব। ‘সুবহান তেরী কুদরাত’

ঈদের দিনটি ভবিষ্যত ছিলো, বর্তমান হলো, তারপর একটু আগে অতীতের ভান্ডারে সঞ্চিত হয়ে গেলো।

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা