মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮)

তোমাদের জন্য

তাহলে আমি আরো কাঁদতাম

লিখেছেনঃ উম্মে যামেনাহ

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

বুকের কান্না আর চোখের অশ্রু যদি সন্তানহারা মায়ের আশ্রয় না হতো, পৃথিবীর কোন মা বাঁচতো না; ব্যথায়, যন্ত্রণায় মরে যেতো। তাই সন্তানহারা মায়ের বুকে ও চোখে আল্লাহ এত কান্না, এত অশ্রু দিয়েছেন।

যখন শুধু মেয়ে ছিলাম তখন মায়ের কোলে আমি শিশুর মৃত্যু দেখেছি এবং মায়ের বুকফাটা কান্না শুনেছি! 

সন্তানহারা মায়ের কান্না ও চোখের অশ্রু আমি দেখেছি, কিন্তু বুঝিনি, কেন কাঁদে মা! কেন ঝরে তার চোখে এত অশ্রু! আল্লাহ দিয়েছেন, আল্লাহ নিয়েছেন। সুতরাং ছবরে ধৈর্যেই তো মুমিন মায়ের প্রাপ্তি ও তৃপ্তি!  

و بشر الصبرين...  

এ খোশখবর তো তাদেরই জন্য!

মায়ের কোলে আমি দেখেছি কত ‘চাঁদ-সন্তান’! কিন্তু বুঝিনি মাতৃত্বের যাতনা।

মায়ের কোলে কত ‘ফুলশিশু’র মৃত্যু দেখেছি, কিন্তু বুঝিনি মায়ের বুকে সেই মৃত্যুর বেদনা!

মায়ের বুকে কেন এত কান্না? মায়ের চোখে কেন এমন অশ্রুর বন্যা? বুঝিনি! কিছুই বুঝিনি!

যখন মা হলাম, আমার মাতৃত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিলো, কাকে বলে নাড়ীর টান ও রক্তের বন্ধন!

তারপর এলো আমার ‘প্রাণজোনাকি’! আহা, কী পুলক শিহরণ! কী দুরু দুরু কম্পন! কী মৃদু মধুর স্পন্দন! কিন্তু আলোর সঙ্গে এলো কালো ছায়া! আমি আর্তনাদ করে উঠলাম, কালো ছায়া আমাকে গ্রাস করুক, ‘জোনাকি’ তুমি যেয়ো না, তবু হায় সে থাকলো না! তখন বুঝলাম, কাকে বলে সন্তানের মৃত্যু এবং মায়ের মৃত্যুবেদনা! বুঝলাম, কেন মায়েরা কাঁদে! কেন চোখের জলে এমন করে ভাসে!

আমার বুকে কষ্ট ছিলো, যন্ত্রণা ছিলো, কলজে পোড়া গন্ধ ছিলো; আমার বুকে কান্নার ঢেউ ছিলো। তবু বুকের কান্না বুকেই চাপা ছিলো। কারণ আল্লাহর প্রতি আমার লজ্জা ছিলো। কষ্ট ও কান্নার চেয়ে আমার কাছে লজ্জার মূল্য বেশী ছিলো। তারপর জানলাম, সন্তান- শোকে মায়ের কান্না ও চোখের জল আল্লাহর অপ্রিয় নয়; অপ্রিয় শুধু মুখের অসংযম। আরো জানলাম, আমার নবী কেঁদেছেন, আর বলেছেন, হৃদয়ের মমতার চিহ্ন এ অশ্রুজল!

আহ, যদি জানতাম, আমার চোখের জল বিলীন হবে সেই চোখের জলে, তাহলে তো আমি প্রাণভরে কাঁদতাম! আহা, কত শান্তি পেতাম! বুকের কষ্টগুলো অশ্রু হয়ে ঝরতো, আর আল্লাহর কাছে হতো সঞ্চিত! নবীর অশ্রু স্মরণ করে এখন আমি কাঁদি, প্রাণভরে কাঁদি। আহা, সে কান্নার কী শান্তি!

কত দয়া আপনার হে আল্লাহর নবী! আপনার সেই কান্না, সেই অশ্রু, সে তো সান্ত্বনা সন্তান-হারা মায়ের জন্য! আমরা কেন তাহলে পড়ি না আপনার বাণী, আপনার জীবনী! জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, বেদনা ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য হে আল্লাহর নবী, আপনি তো রেখে গিয়েছেন অনেক আলো, আশ্বাস ও সান্ত্বনা!  হে আল্লাহর নবী,আপনার প্রতি আমার দুরূদ ও সালাম।


 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা