রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭)

শেষের পাতা

শেষ কথা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

পোলারে মুরির ভর্তা কিনা দিছে, মায়’- এটি একটি মর্মস্পর্শী দৃশ্যের বিবরণ, আমার মায়ের ভাষায়, যে ভাষায় -আফসোস- ইচ্ছা থাকলেও আমি এখন কথা বলতে পারি না!

মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখলাম দৃশ্যটি। ছেলের গায়ে জামা নেই, পায়ে পাদুকা নেই। তবু তার মুখে রাজ্যপ্রাপ্তির পুলক-আভাস! কারণ আর কিছু না, ‘পোলারে মুরির ভর্তা কিনা দিছে, মায়!’

মায়ের শাড়িটি শতচ্ছিন্ন, সাঁঝের বেলা দেহে ও মুখাবয়বে রাজ্যের ক্লান্তির ছাপ! হয়ত ইটভাঙ্গার কাজ শেষে ফিরেছে! তবু তার মুখম-লে মমতার পরিপূর্ণ তৃপ্তির অপূর্ব এক উদ্ভাস!

বহুবারের মত আজ এখানে, আল্লাহর ঘর থেকে বের হয়ে, পথের ধূলোবালির উপর দাঁড়িয়ে আবার মনে হলো, রাজরানীর মায়া, আর ভিখারিণীর মমতা, অভিন্ন! দু’জনেই মা! দু’জনেরই ছিলো একই রকম প্রসববেদনা! হয়ত প্রসবের পরিবেশ ছিলো সম্পূর্ণ আলাদা! আয়োজন ছিলো একেবারে ভিন্ন! হয়ত একজনের বুকে ছিলো দুর্ধের প্রাচুর্য, অন্যজনের ...! কিন্তু প্রসবের বেদনা ছিলো অভিন্ন! দু’জনেরই কদমের নীচে নিজ নিজ সন্তানের জান্নাত!

ছেলেটির তৃপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, এই যে মা তার বড় কষ্টের উপার্জনের দু’টি টাকা ব্যয় করে তার মুখে এই আনন্দ-উদ্ভাসের আয়োজন করলেন, এই ছেলেটির কি মনে থাকবে আজকের সাঁঝবেলার এই সুখস্মৃতির কথা! যখন তার মা হবেন বার্ধক্যভারে আক্রান্ত, আর সে দুর্বল হলেও হবে জোয়ান ও কর্মক্ষম! তার মা কি পাবে তার কাছে একলোকমা ভাত, একটুকুরো কাপড়, একটু মাথা-গুঁজার ঠাঁই, একটু সম্মানের সঙ্গে?!

আচ্ছা, এই ছেলেটিকে কে দেবে এই শিক্ষাটুকু! আমরা কেউ কি পারি না, এই সব অবহেলিত ‘শিশু’র জন্য একটু দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে? এমন সুসংক্ষিপ্ত শিক্ষা, যা গ্রহণ করা তাদের পক্ষে সহজে সম্ভব? পারি না! আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না!!

মা, তুমি আমাকে কত বড় শিক্ষা দিয়ে গেলে! কত বিপুল দানে আমাকে সমৃদ্ধ করে গেলে! একটু সতর্ক হলে হয়ত আমি তোমাকে কিছু প্রতিদান...! এখন শুধু প্রার্থনা করি তোমার জন্য, তোমার সন্তানের জন্য আকাশের করুণা ও কল্যাণ

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা