জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮)

বিজ্ঞান বিচিত্রা

إن في خلق السموت والأرض واختلاف الليل والنهار لآيت لأولي الألباب

মহাকাশ অভিযান ,মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা!!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই চলছে মহাকাশ অভিযান এবং একে কেন্দ্র করে উন্নত দেশগুলোর অন্তহীন প্রতিযোগিতা। শুরুতে রাশিয়া এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সফল চন্দ্রাভিযানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যায়। সেই এগিয়ে যাওয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাই বলে প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়নি, বরং ক্রমেই তা বিস্তার লাভ করছে। সম্প্রতি মহাকাশ অভিযানে চীনের অগ্রগতি বিজ্ঞানজগতে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। চাঁদের যে অংশে কখনো সূর্যের আলো পৌঁছে না, বরং সবসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে যেখানে এখন পর্যন্ত কোন মহাকাশ -যান অবতরণ করতে পারেনি, চীন চাঁদের ঐ অন্ধকার অংশে মহাকাশ-যান অবতরণ করাতে সফল হয়েছে।

***

চাঁদের পর মঙ্গল গ্রহের অভিযানও এখন পুরোনো বিষয়, যদিও মনুষ্যবাহী যান এখনো মঙ্গলে পাঠানো সম্ভব হয়নি। মহাকাশ অভিযানে নতুন বিষয় হিসাবে সম্প্রতি রোমাঞ্চকর আলোচনায় এসেছে সূর্যের অভিমুখে অভিযান। এ পর্যন্ত মহাকাশে যতগুলো অভিযান পরিচালিত হয়েছে তার মধ্যে এটাই হচ্ছে সবচে’ ঝুঁকিপূর্ণ। অভিযানের বাস্তবায়নপর্ব শুরু হয়েছে ২০১৮ এর ১২ই আগস্ট। ঐ দিন নাসার বিজ্ঞানীরা সূর্যের রহস্য ভেদ করার উদ্দেশ্যে নভোযান পার্কার সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছেন।

১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশী তাপ সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন এই ‘সূর্যযান’ সরাসরি করোনা-এ প্রবেশ করবে। তারপর সাতবছর সময়ের মধ্যে ষাট লাখ কিলোমিটার দূর দিয়ে সূর্যের চারপাশে চব্বিশবার প্রদক্ষিণ করবে এবং কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে, আর বোঝার চেষ্টা করবে এই নক্ষত্রটির আচরণ। ঐ সময় পার্কার সোলার প্রোর্ব-এর গতি হবে অন্তত ছয় লাখ সত্তর হাজার কিলোমিটার। এরূপ গতি এর আগে মানুষের তৈরী কোন মহাকাশযান অর্জন করতে পারেনি। করোনা হচ্ছে সূর্যকে ঘিরে থাকা উজ্জ্বল আভাযুক্ত এলাকা। এর অদ্ভুত আচরণ বিজ্ঞানীদের কাছে বড় রহস্যপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেরিত পার্কার-এর সঙ্গে পাল্লা দিতে অন্যান্য দেশ উঠে পড়ে লেগে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। খোদ নাসা এ বিষয়ে আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে যে, নক্ষত্রলোকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের মধ্যে স্বতন্ত্র স্পেস ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এমনকি ‘টুইটার প্রেমিক’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত বছরের ৯ই আগস্ট টুইট করেছেন, ‘স্পেস ফোর্সই এখন সময়ের দাবী।’

এর আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, ‘মহাকাশ একসময় ছিলো শান্তিপূর্ণ, কিন্তু এখন সেখানে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মহাকাশ যুদ্ধক্ষেত্রের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ চ্যালেঞ্জ থেকে সরে আসবে না।

এর পর পেন্স যে অদ্ভুত কথাটি বলেছেন তা হলো, ‘মহাকাশ বা পৃথিবী, যুক্তরাষ্ট্র সবখানে সবসময় শান্তি চেয়েছে, কিন্তু প্রমাণিত সত্য এই যে, শক্তি দ্বারাই শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভবিষ্যতে মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী সেই শক্তিমত্তা নিয়েই হাজির হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে বোঝা যায়, ইতিমধ্যেই তার ভিতরে ভয় ঢুকে গিয়েছে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের, যার নাম মহাচীন।

একদিকে চীন সম্ভাব্য সাইবার যুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত হচ্ছে; কারণ শুরু থেকে শেষ আধুনিক সভ্যতার সবকিছু ডিজিটাল-নির্ভর। সুতরাং একটামাত্র সফল সাইবার হামলা শত্রু পক্ষের সবকিছু অচল করে দিতে পারে। অন্যদিকে মহাকাশ যুদ্ধের প্রস্তুতিরূপে এরই মধ্যে চীন লেজার ও মাইক্রোওয়েভ -নির্ভর অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলতে শুরু করেছে, যা কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসের কাজে ব্যবহৃত হবে। চীনবিষয়ে বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ফিসার মার্কিন কংগ্রেসে শুনানিতে বলেন, কক্ষপথজুড়ে জালের মত ছড়িয়ে আছে মার্কিন গোয়েন্দা, যোগাযোগ ও নেভিগেশন উপগ্রহ, যা চীনের মহাকাশ হামলার লক্ষ্যস্থল হবে। তিনি আরো বলেন, চীনা অস্ত্র সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর উপর নিখুঁত হামলা চালাতে সক্ষম হবে। এরপর ফিসারের ‘বড় সুন্দর’ একটা অভিযোগ, ‘চীন মহাকাশকে সামরিকীকরণ করছে।’ তিনি অবশ্য বলেননি, ‘শান্তশিষ্ট’ আমেরিকা মহাকাশজুড়ে কী করছে? এদিকে রাশিয়াও বসে নেই। ইতিমধ্যে রাশিয়া উপগ্রহবিধ্বংসী এক নতুন অস্ত্র উদ্ভাবন করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

***

সম্ভবত অন্য এক দিক থেকেও মানবজাতির ধ্বংসের আয়োজন সম্পন্ন হচ্ছে। বেশ কিছু দিন হলো ভিনগ্রহের সম্ভাব্য বুদ্ধিমান প্রাণী বা এলিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচী গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মার্কিন বিজ্ঞানীরা এমন বার্তা পাঠাতে চাচ্ছেন যা ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা বুঝতে পারে। এর সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সম্প্রতি পরলোক গমনকারী বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিশে^র সবকিছু ধ্বংস করে ফেলতে পারে ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণী বা এলিয়েন, যাদের প্রতিরোধ করার শক্তি হয়ত আমাদের নেই। সুতরাং আমাদের পক্ষ হতে পাঠানো বার্তা দ্বারা আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে তারা সতর্ক হয়ে যাবে, যা আমাদের পুরোপুরি ধ্বংসের কারণ হতে পারে। এমনকি এলিয়েনদের পক্ষ হতে পাঠানো কোন ধরনের বার্তায় সাড়া দেয়াও আমাদের জন্য বুদ্ধির কাজ হবে না।

স্টিফেন হকিং বলেন, ‘যদি এরূপ ঘটনা ঘটে তাহলে সেটা হবে ক্রিস্টোফার কলাম্বাসের সঙ্গে আমেরিকার আদিবাসীদের প্রথম সাক্ষাতের মত যা মোটেই প্রীতিকর ছিলো না।

মোটকথা, মহাকাশভিত্তিক যে অভিযান-উন্মাদনা পরাশক্তি-গুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে আজ হোক, বা কাল, কোন না কোনভাবে তা মানবজাতির ধ্বংসই ডেকে আনবে বলে মনে হয়। বাকি ভবিষ্যতের জ্ঞান তো শুধু মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার হাতে! *

ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণী বা এলিয়েনদের উদ্দেশ্যে কোন বার্তা প্রেরণ করার অর্থ হবে আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাদের সতর্ক করে দেয়া, যা আমাদের জন্য ধ্বংসের কারণ হতে পারে। -স্টিফেন হকিং

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা