মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

সংযোজিত

কেন...

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 কেন তুমি আমার কাছে এলে! এলেই যখন, কেন কলম হাতে নিলে না! কেন চাঁদের কথা, জোসনার কথা, জোনাকির কথা লিখলে না! কেন বর্ষার কথা, বৃষ্টির কথা, রঙধনুর কথা লিখলে না! কেন জীবনের কথা, স্বপ্নের কথা এবং স্বপ্নভঙ্গের কথা লিখলে না! কেন পুষ্পের কথা, পাপড়ির কথা, কলি ও ফুলের কথা লিখলে না! আমার যত কাছেই থাকো, তোমার হাতে যদি কলম না থাকে, কলমের সঙ্গে কলবের যদি সংযোগ না থাকে, আমার যত কাছেই থাকো, আমি তোমাকে চিনি না! আমি তোমাকে জানি না! আমি তোমাকে বুঝি না!

কলম ও কালি ছাড়া তুমি বেঁচে থাকো কীভাবে! জীবনের কথা, স্বপ্নের কথা না লিখে তুমি শান্তিতে থাকো কীভাবে! যার হাতে কলম নেই, কলমে ঝর্ণার প্রবাহ নেই তার জীবন তো মরুভূমি! যার হাতে কলম আছে, যার বুকে হৃদয় আছে, যার হৃদয়ে ভাবের প্রবাহ আছে তার জীবন হলো মরূদ্যান। মরুভূমির মরিচীকা এবং মরূদ্যানের শীতল ছায়া, শীতল পানি, কোনটা তোমার প্রিয়! বলো, বলো, রাব্বুল কলমের কসম করে বলো!

(আকরাম হোসাইনের লেখা অবলম্বনে)

 

***

কোথায়, কত দূরে তুমি

ছিফাতুর-রহমান, মাদরাসাতুল মাদীনাহ

জ্ঞানের অঙ্গনে, কবিতার জলসায় সমুজ্জ্বল প্রদীপ তুমি! নগর সভ্যতার স্থাপত্যশিল্পের গর্ব তুমি! প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে, স্রষ্টার অকৃপণ দানে ধন্য তুমি! আলহামরা, আল-যাহরা তোমার অহঙ্কার! কুরতুবা, গারনাতা, ইসবিলিয়া তোমার অলঙ্কার! তোমার মাটিতে জন্ম ইবনে রুশদ, ইবনে জোবায়র, ইবনুল আরাবী, আবূ হাইয়ান আন্দালুসী এবং আরো কত জানা অজানা ইলমের মহান সাধক!তোমার মুখরিত বিদ্যাঙ্গন, তোমার সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার অন্ধকার ইউরোপকে জ্ঞানের আলো দান করেছে! তারিক বিন যিয়াদের তাকবীর -ধ্বনি, ইউসুফ বিন তাসফীনের জিহাদী হুঙ্কার তোমার দুশমনদের দিলে কম্পন সৃষ্টি করেছে! কত মুজাহিদীন তোমার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। কোথায় তুমি! কত দূরে হে আন্দালুস!

তোমার যমিনে লাখো মুমিনের সিজদায় ধন্য তুমি, তোমার বুকে গড়ে ওঠা হাজারো মসজিদের মিনার চূড়া থেকে উঠেছে আযানধ্বনি! কিন্তু আজ! দীর্ঘ আটশ বছর তোমার আকাশে উড়েছে ইসলামের হিলালী ঝান্ডা! তুমি ছিলে আমাদের গর্ব, শত্রুর ত্রাস! তোমার সাগরতীরেই তো জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম ফিরে যাওয়ার সব জাহায! কিন্তু আজ! শুধু ফিরেই গেলাম না, বিতাড়িত হলাম! আগুন-খুনের তুফান পাড়ি দিয়ে ফিরে গেলাম। ফিরে যেতে হলো।কিন্তু কেন এমন হলো! কোথায় কত দূরে তুমি হে আন্দালুস! তোমার কাছেই জানতে চাই এর জবাব!

 

***

বুড়ি দাদুর কাছ থেকে শিক্ষা

কাফেলা তৈরী হলো, আল্লাহর বান্দাদের ঘরে ঘরে যাওয়া হবে কোরবানির হাদিয়ার বেতাকা বিতরণ করার জন্য। আলহামদু লিল্লাহ্ কাফেলায় আমাকেও শামিল করা হলো।রওয়ানা হওয়ার আগে পুরো কাফেলা ছালাতুল হাজাত পড়ে নিলো। তারপর আমরা যিকিরের সঙ্গে রওয়ানা হলাম। এমন মধুর অভিজ্ঞতা হলো, যা জীবনের ভোলার মত নয়! কত পরিবার কতভাবে যে, শুকরিয়া জানালো! নিজেকে তখন খুব ছোট মনে হলো যে, আমরা তো কখনো এভাবে শোকর আদায় করি না। আমরা জানি শোকর আদায় করার ফযীলত, কিন্তু আমল করি না, ওরা জানে না, কিন্তু শোকরের আমলটা ঠিকই করে।

একবুড়ী দাদী তো কিছুতেই বেতাকা গ্রহণ করবেন না, কারণ তার চেয়ে বেশী কষ্টে যারা আছে তাদের দিলেই ভালো। আমরা শুধু মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলাম বুড়ি দাদির দিকে! নিজেদের জীবনের লজ্জাজনক কত কিছু যে তখন মনে পড়লো! যখন বললাম, আপনি গ্রহণ করলে আমরা খুশী হবো, আমরা চেষ্টা করবো সবার কাছে যাওয়ার জন্য। তখন তিনি গ্রহণ করলেন। আল্লাহ্ ‘দাদী মা’কে দুনিয়া আখেরাতে শান্তিতে রাখুন।এমনো পরিবার ছিলো, যাদের হাতে বেতাকা দিলাম, আর তাদের চোখে পানি এসে গেলো!

এক পরিবার থেকে বললো, বাবা, তোমরা তো মানুষ না, তোমরা তো ...! প্রথম অংশটা তো সত্য, সেটার স্থানে আল্লাহ্ যেন দ্বিতীয় অংশটা সত্য করে দেন। আজ মাদরাসাতুল মাদীনার যা কিছু কল্যাণ তা কৃতজ্ঞ মানুষের চোখের পানির ওছিলায়, আর যা কিছু কমতি তা আমার মত তালিবে ইলমের কারণে....পুরো আলিম সমাজকে আল্লাহ্ খিদমতে খালকের ভরপুর তাওফীক দান করুন, আমীন। এমনকি নবুয়ত লাভের আগেও খিদমতে খালকই ছিলো আমার প্রিয় নবীর পরিচয়।

ফয়যুল্লাহ্ বিন আব্দুল হান্নান মাদরাসাতুল মাদীনাহ্  ৭/১২/৪৪ হি.

***

আমার চাওয়া শুধু তোমাকেই পাওয়া!

মুহম্মদ আমীনুল ইসলাম, মাওলানা ম্যনশন, রামপুর ফেনী

এখন আমি কত স্বপ্ন দেখি! কত কিছুর আশা করি! আমার চোখে শুধু রঙ্গীন স্বপ্ন, আর স্বপ্ন! আমার বুকভরা শুধু আশা, আর আশা! হৃদয়ে আমার কী অপরিসীম আকুতি, প্রতিটি স্বপ্ন যেন আমার জীবনে বাস্তব হয়! প্রতিটি আশার সোনালী ফসল যেন ঘরে তুলতে পারি। স্বপ্ন দেখা এবং আশায় বুক বাঁধা, এই তো মানুষের দু’দিনের জীবন! শৈশবেও থাকে কিছু স্বপ্ন, কিছু আশা! কৈশোরে এসে জীবনের রঙ যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি আশা ও স্বপ্নেরও রূপবদল হয়। আর যৌবনের আশা ও স্বপ্নগুলো তো হয় যৌবনেরই মত, যেন আকাশের রঙধনু! কিংবা মেঘ থেকে ঝরা রিমঝিম বৃষ্টি! জলাশয়ে যখন দেখি অসংখ্য পদ্মফুল ফুটে আছে তখন মনে হয়, প্রতিটি পদ্মফুল আমার জীবনের একটি করে স্বপ্ন, একটি করে আশা! একসময় দেখি, পদ্মফুল তো গুণে গুণে শেষ, কিন্তু হৃদয়ের জলাশয়ে তখনো অনেকগুলো পদ্মফুল বাকি!

রাতের আকাশে যখন অসংখ্য তারা দেখি, তখন মনে হয়, প্রতিটি তারা আমার জীবনের একটি করে স্বপ্ন, একটি করে আশা। একসময় দেখি ভোর হয়েছে, তারাগুলো নিভে গিয়েছে, কিন্তু আমার হৃদয়ের আকাশে তখনো আশা ও স্বপ্নের অনেক তারা জ্বলজ্বল করছে !তাই তো জগতের শ্রেষ্ঠ মানব বলেছেন, ‘মানুষ বুড়ো হয়, অথচ তার স্বপ্নগুলো যুবক হতে থাকে। তার আশা-আকাক্সক্ষার দীর্ঘতা তার জীবনের ক্ষুদ্র বৃত্তকে অতিক্রম করে যায়!

কিন্তু আমি এমন হতে চাই না; আমি এমন জীবন অর্জন করতে চাই, যেখানে জীবনের সমস্ত স্বপ্ন, সমস্ত আশা গিয়ে বিলীন হবে একটি মাত্র স্বপ্নের মধ্যে, একটি মাত্র আশার মধ্যে এবং একটি মাত্র চাওয়ার মধ্যে। জীবনের সমস্ত স্বপ্ন থেকে, সমস্ত আশা থেকে এবং সমস্ত চাওয়া থেকে এবং পাওয়া থেকে আমি মুক্ত হতে চাই। জীবনের পরম সৌভাগ্যের সেই দিনটির প্রতীক্ষায় আমি আছি, যখন আমার স্বপ্নের কেন্দ্র হবে শুধু আল্লাহ্! আমার আশার বিন্দু হবে শুধু আল্লাহ্! যখন আমার একমাত্র চাওয়া ও পাওয়া হবে শুধু আল্লাহ্!

 

০০ প্রিয় আমীন! তোমার লেখাটি ছিলো এই-

আমার চাওয়া শুধু তোমাকেই পাওয়াএখন আমি কত স্বপ্ন দেখি, কত আশা করি, বুকে কত স্বপ্ন লালন করি, কত আশা ধারণ করি, কখনো স্বপ্নে বিভোর থাকি। কখনো আশায় আশায় বুক বাঁধি। আমার স্বপ্ন যেন পূর্ণ হয়, আশা যেন অক্ষুণ্ন রয়, জীবন যেন ধন্য হয়।কিন্তু আমার সর্বশেষ স্বপ্ন এবং সর্বশেষ আশা অন্যকিছু পাওয়া; আর সেটা আমার সর্বশেষ চাওয়া এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া। একদিন আমি সবকিছু থেকে মুক্ত হতে চাই। কোন কিছু চাওয়া থেকে, কোন কিছু পাওয়া থেকে। সেদিন থেকে আমার চাওয়া শুধু আল্লাহ্। আমর পাওয়া শুধু আল্লাহ্। আমার স্বপ্ন শুধু আল্লাহ্! আল্লাহ্ এবং শুধু আল্লাহ্। তুমি কবুল করো হে আল্লাহ!

০০ প্রিয় আমীন, দেখো, তোমার লেখার কাঁচা মাল দিয়ে তুমি আমাকে কত সাহায্য করেছো, কী সুন্দর একটি লেখা তৈরী হয়েছে!

আচ্ছা, বলো দেখি, তোমার লেখাটা হুবহু ছেপে দেয়া ভালো হতো, না সম্পাদনা করে প্রকাশ করা ভালো হয়েছে! কোনটা তোমাদের সবার জন্য উপকারী।

***

একটি ছেলে একটি লেখা পাঠিয়েছিলো, কৃষ্ণচূড়ার কথা- এই শিরোনামে। লেখাটি মোটামুটি সুন্দর ছিলো। তাই নির্বাচন করেছিলাম সম্পাদনা করে সাজিয়ে গুছিয়ে এখানে প্রকাশ করবো বলে। শিরোনামটিও লিখে রেখেছিলাম। এমনকি কৃষ্ণচূড়া গাছের ছবিও ঠিক করা ছিলো এখানে দেয়ার জন্য। কিন্তু বলতে কষ্ট হচ্ছে, সত্যি কষ্ট হচ্ছে, লেখাটি আমি হারিয়ে ফেলেছি, সেই সঙ্গে লেখকের নামটিও!

এই ছেলেটির বয়সে আমার সঙ্গে যদি হতো এমন ঘটনা, কেমন হতো আমার কষ্টের অনুভূতি! তুমি যেই হও, হে অদেখা বন্ধু! বুড়ো মানুষটিকে মাফ করে দিয়ো। শৈশব থেকেই কৃষ্ণচ‚ড়া আমার পছন্দের গাছ। আমার এক প্রিয়জন হযরতপুরে আমার জানালার পাশে কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগিয়েছিলো। এখনো আছে গাছটি এবং সগৌরবে। মৌসুমের সময় গাছের চূড়া যেমন লালে লাল হয়ে থাকে, তেমনি মাটিতেও বিছানো থাকে যেন লাল গালিচা!

কৃষ্ণচূড়ার লাল বর্ণের প্রতাপ যখন দেখি, আমার অন্তরে আশ্চর্য এক অনুভ‚তির সৃষ্টি হয়। আমার ইচ্ছা হয়, যেখানে যেখানে আছে শহীদানের কবর, একটি করে কৃষ্ণচ‚ড়ার গাছ ওখানে রোপণ করি, আর....

***

অম্লমধুর প্রতীক্ষা, প্রতীক্ষার অম্লমধু!

 আব্দুল্লাহ্ বিন আনোয়ার মাদরাসাতুল মাদীনাহ

প্রিয় কিছুর জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করাকে বলা হয় ‘প্রতীক্ষা’। সবারই জীবনে থাকে  প্রিয় কিছুর প্রতীক্ষা। মৌমাছির প্রতীক্ষা ফুলের জন্য, জোনাকির প্রতীক্ষা সন্ধ্যার আঁধারের জন্য, শিল্পীর প্রতীক্ষা অমর কোন শিল্পকর্মের জন্য, কবির প্রতীক্ষা সুন্দর ছন্দের সুন্দর কবিতার জন্য, ময়ূরের প্রতীক্ষা মেঘলা আকাশের জন্য, কোকিলের প্রতীক্ষা বসন্তের জন্য!আমারো প্রতীক্ষা ছিলো প্রিয় মানুষের প্রিয় চিন্তার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার!

প্রতীক্ষা সাধারণত মধুরই হয়ে থাকে। তবে তার সঙ্গে যদি যুক্ত হয় কিছু অম্লত্ব তাহলে সেই প্রতীক্ষার স্বাদই হয় অন্যরকম। তার নাম হয় অম্লমধুর প্রতীক্ষা! যেদিন থেকে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি ‘মাদানী হিফয’ এর নতুন চিন্তার বিপ্লবী রূপ, সেদিন থেকে আামর হৃদয়ের প্রতীক্ষা, আমিও এই নতুন চিন্তার ছাত্র হবো। কিন্তু এই প্রতীক্ষার মধ্যে অনিচ্ছাসত্ত্বেও কিছু অম্লত্ব ছিলো, কারণ আমি তো হিফযের জীবন পার হয়ে এসেছি বেতের যন্ত্রণার উপর ছবর করে করে! অথচ আমারই চোখের সামনে আমার সহপাঠীরা হিফযের মধুর জীবন যাপন করলো, যেখানে না ছিলো বেত, না ছিলো বেতের যন্ত্রণা! ছিলো মিষ্টি এবং মধুর আপ্যায়ন। আর তাদের সময় লাগলো আমার তিনভাগের একভাগেরও কম।

সবারই এখন বিস্ময়মুগ্ধ প্রশ্ন, কীভাবে সম্ভব হলো তা! কীভাবে হলো তা তো জানি না, তবে হয়েছে যে, তা তো চোখের সামনে সন্দর মধুর বাস্তবতা! ছয়মাস সতের দিন আগে যারা হিফয শুরু করেছে আজ তাদের সৌভাগ্যের দিন। আজ তাদের শেষ দরসের অনুষ্ঠান। এদিকে আমার প্রতীক্ষার মধুতে একটু একটু করে অম্লতা যুক্ত হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, আমার প্রতীক্ষার অবসান হবে বেদনার সঙ্গে। একবার ভাবি, হুযূরকে বলি আমার প্রতীক্ষার কথা, যদি হুযূরের দিলে দয়া হয়! হতেও তো পারে! কিন্তু সাহস হয় না। তবু কিসের যেন একটা আশা, হয়ত আমিও শামিল হয়ে যাবো এই মহান কাফেলার সৌভাগ্যবান ছাত্র হিসাবে। তাতে এ কাফেলা যতদিন থাকবে ‘সালাফ’ হিসাবে আমি পেতে থাকবো সবার অনূখা হিফযের আজর ও প্রতিদান। শেষ পর্যন্ত করুণাময়ের করুণায় কীভাবে যেন সুযোগ হয়ে গেলো দরসে বসার... সবার হলো শেষ দরস, আমার হলো একই সঙ্গে প্রথম ও শেষ দরস।

এখনো বুঝতে পারি না, এই যে আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষা, কোনটি বেশী প্রিয়, প্রতীক্ষার  অম্লমধু, না অম্লমধুর প্রতীক্ষা! সেই করুণাময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা যিনি কোরআনি খিদমতের এমন বৈপ্লবিক চিন্তাকে আলোর মুখ দেখিয়েছেন। 

                                                ***

একটি চিঠিঃ আমার কথা, আমার ব্যথা

                   মুহম্মদুল্লাহ্ আনছারী, কানুদাসকাঠি, রাজাপুর, ঝালকাঠি
প্রিয় সম্পাদক, পুষ্প! আপনাকে বলতে চাই আমার হৃদয়ের কিছু ব্যথা-বেদনার কথা! লেখক হওয়া আমার জীবনের স্বপ্ন ছিলো! শৈশব থেকেই বই পড়ার প্রতি প্রবল অনুরাগ ছিলো। তখন থেকে কিছু না বুঝেই স্বপ্ন দেখি, আমিও বই লিখবো। কিছুদিন আগে ‘এসো কলম মেরামত করি’ বইটি অপ্রত্যাশিত -ভাবে হাতে আসে। পড়ে অভিভূত হই। জানতে পারি রোযনামচার কথা। তাতে আমার সামনে যেন অজানার নতুন দিগন্ত খুলে গেলো! তখন থেকে যত্নের সঙ্গে নিয়মিত রোযনামচা লিখে যাচ্ছি। ভাবি, আপনার কাছে যারা আছে, কত ভাগ্যবান তারা, আর কত দুর্ভাগা আমি!

হঠাৎ করেই পুষ্পের আরাকান সংখ্যা হাতে এলো। আরো পরে পেলাম পুষ্পের ষষ্ঠ সংখ্যা, আরো পরে, আলকুদস সংখ্যা এবং তৃতীয় সংখ্যা! আমি তো দূর পাড়াগাঁয়ে বদ্ধ জলাশয়ের বাসিন্দা; জানতাম না, পৃথিবীতে নদী ও সাগর আছে! পুষ্পের পাতায় পাতায় দেখলাম, শিশুরা, কিশোর তরুণেরা রোযনামচা পাঠায়, আর  তা কিসুন্দর ছাপা হয়। খুব ইচ্ছে হলো, আমিও রোযনামচার কয়েকটি পাতা আপনার কাছে পাঠাই, পুষ্পের পাতায় প্রকাশের জন্য নয়, শুধু আপনার দেখার জন্য; আপনার পরামর্শ ও উপদেশ পাওয়ার জন্য। একটা চিঠিও লিখলাম। কিন্তু দূর পাড়াগাঁয়ের ছেলে বলে, সাহস হলো না। তাই রেখে দিলাম। আজ সারা রাত মনে খুব অস্থিরতা অনুভব করলাম, শেষপর্যন্ত আর স্থির থাকতে পারলাম না। এই চিঠিটি এবং তার সঙ্গে কয়েকদিনের রোযননামচা পাঠালাম। যদি আপনার দয়া হয় এবং স্বাস্থ্য অনুকূল হয় তাহলে লেখার দোষত্রুটি ও সম্ভাবনার কোন দিক থাকলে তা পর্যালোচনা করে আমাকে জানালে বাধিত হবো।

দূর পাড়া গাঁয়ের একজন ভাঙ্গাস্বপ্নের মানুষ আপনার কাছে এতটুকু আশা কি করতে পারে না! আরেকটু বড় আশা যদি করি! পুষ্পের পাতায়...

২০/৪/৪০ হি.পরীক্ষা শেষ হলো। আলহামদু লিল্লাহ্ সবক’টি পরীক্ষা অত্যন্ত ভালো হয়েছে। এখন আটদিনের ছুটি। ছুটিটা কীভাবে যাপন করবো তার জন্য একটা সংক্ষিপ্ত নিযামুল আওকাত তৈরী করলাম। আল্লাহ্ যেন নিযামুল আওকাত অনুযায়ী পূর্ণ বরকতের সঙ্গে কাজ করার তাওফীক দান করেন, আমীন।

১৯/৪/৪০হি.আশ্চর্য! লেখাপড়া নেই, মেহনত নেই, লম্বা মুনাজাত করে, ফল যেন ভালো হয়! কলমের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, কলবের সঙ্গে কলমের সংযোগ নেই অথচ লেখক হওয়ার স্বপ্ন! শুধু স্বপ্নে, শুধু মুনাজাতে কি কিছু হয়!

২১/৪/৪৪ হি.সন্ধ্যার অস্তগামী সূর্যটার দিকে তাকিয়ে আছি। কী নিস্তেজ! অথচ একটু আগে, কী তাপ, উত্তাপ ও প্রতাপ!গতকাল যিনি মারা গিয়েছেন, তার কথা মনে পড়লো। ছিলেন গ্রামের ত্রাস, কিন্তু শেষে হয়ে গেলেন রোগব্যাধির গ্রাস! কী কঠিন মৃত্যু ও মৃত্যুযন্ত্রণা! সবকিছু তো দেখি, তবু কেন শিক্ষা নিই না।

০০ নিজেকে ছোট ভাবো কেন! তুমি তো শহরের, এমনকি মাদরাসাতুল মাদীনাহরও অনেক ছেলের চেয়ে ভালো। আশা করি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে।

***

আর কত দেরী!

মু‘আয বিন আযীযুল হক!

কিছু দিন থেকে আমার একটি প্রশ্ন, প্রতিটি শিশু পৃথিবীতে নিষ্পাপ হয়েই আসে। সৃষ্টার দয়া ও দানে এই মানববাগানে প্রতিটি শিশু একটি কলি হয়ে আত্ম-প্রকাশ করে। কিন্তু কতদিন এ পবিত্রতা ও নিষ্পাপতা আমরা নিজেদের মধ্যে সজীব রাখতে পারি! আমাদের ভিতরটা কেন অন্ধকারের দুর্গন্ধে পচে যায়! আর প্রজন্মপরম্পরায় আমাদের অধঃপতন মাত্রা ও গুণে বেরেই চলেছে; যার অনিবার্য পরিণতি আমাদের চোখের সামনেই দীপ্তমান

আচ্ছা, এই যে আমাদের পৃথিবীটা অসভ্যতার কালো ছায়ায় ছেয়ে যাচ্ছে তাতে আমাদের আলিম ও  তালিবানে ইলমের কি কোন দায় আছে! তাহলে কেন এখনো আমরা এত নির্লিপ্ত, উদাসীন! এখনো কি সময় হয়নি! আর কত দেরী!

০০ আমিও তো বলি, এখনো কি সময় হয়নি বানান শুদ্ধ করার! বিশুদ্ধ ভাষা শেখার আর কত দেরী!

০০ প্রিয় মু‘আয, কিছু শব্দের বানান তুমি ঠিকই লিখেছো, যেমন: অনিবার্য, বিশুদ্ধতা, কলুষতা; কিন্তু কিছু শব্দের বানানে অমার্জনীয় ভুল হয়েছে। লাল শব্দগুলো দেখো।

০০ অন্ধকারের মধ্যে কোন দুর্গন্ধ নেই। আর কোন কিছু দুর্গন্ধে পচে যায় না, পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তুমি এভাবে লিখতে পারো, ‘আমাদের ভিতরটা কেন ঘোর অন্ধকারে ছেয়ে যায়! মন্দ জিনিস দীপ্ত হয় না, স্পষ্ট হতে পারে। আর উজ্জ্বল কিছুকে বলে দীপ্ত, আর গুণটি হলো দীপ্তি। দীপ্তিকে আবার বলতে পারো দীপ্তিমান! আশা করি তোমার লেখা ও রোযনামচা অব্যাহত থাকবে।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা