যিলক্বদ ১৪৩০হিঃ (১৪)

কচি ও কাঁচা

ছোটদের রোযনামচা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

১ - ৫ - ৩০ হিঃ

আজ একটি সুন্দর কবিতা পড়েছি একটি পত্রিকায়, কবিতাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। ভেবেছিলাম পত্রিকা থেকে কবিতাটি লিখে রাখবো, কিন্তু পত্রিকাটি পরে আর পেলাম না। অংকের আপা আজ বললেন, তোমরা কি জানো, অংকশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অনেক! শূন্য ছাড়া তো অংকের জগত অচল, সেই শূন্য হচ্ছে একজন মুসলিম অংকশাস্ত্রবিশারদের আবিষ্কার। বিশারদ শব্দটি আমি বুঝতে পারিনি। আপা বললেন, বিশারদ মানে যিনি অনেক জানেন।

৫ - ৫ - ৩০ হিঃ

আগামীকাল আমরা সবাই মিলে দেশের বাড়ী যাবো; খুব মজা হবে! সবাই মানে, আম্মু, আমি, বড় আপু, আর বড় ভাইয়া। আব্বু তো বিদেশে। কত দিন হলো আব্বু আসতে পারেন না। আমাদের জন্যই আব্বু আজ আমাদের থেকে দূরে। মেঝ আপা এবং ছোট ভাইয়া যেতে পারবেন না তাদের মাদরাসা খোলা দেখে। আকীদা সিরিজের বইগুলো আমার খুব ভালো লাগে। সুযোগ পেলেই আমি বইগুলো পড়ি। আজ পড়ছিলাম জান্নাত বইটি। পড়তে পড়তে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে জান্নাত দান করেন, আমীন।

১১ - ৫ - ৩০ হিঃ

সম্পাদক ভাইয়ার কাছে কতগুলো চিঠি পাঠালাম; কোন চিঠির জবাব নেই। পেলেন কি না তা তো জানাবেন! তাও না! যারা বড় মানুষ তারা আসলে ছোটদের মনের কথা বুঝতে পারে না। বুঝলে ঠিকই আমার চিঠির জবাব পেতাম। এবার ঠিক করেছি, আর চিঠি লিখবো না। বয়েই গেছে আমার চিঠি লিখতে!

১৩ - ৫ - ৩০ হিঃ

মানুষ চাঁদে গিয়েছে, চল্লিশ বছর হয়েছে। যিনি প্রথম চাঁদের বুকে পা রেখেছেন তার নাম নেইল আর্মস্ট্রং। নেইল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে চাঁদের গায়ে একটি লম্বা ফাটল দেখেছেন। তারপর তিনি জেনেছেন, আমাদের নবীজীর চাঁদ দু'টোকরো করার মুজিযা। এজন্য তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর কী কুদরত! এসব কথা আমি জানতে পেরেছি, সম্পাদক ভাইয়ার একটি বই থেকে। অনেক আগে তিনি বইটি লিখেছেন ছোটদের জন্য। বইটির নাম হলো ‘চাঁদ দু'টুকরো হলো’। বইটি এখন পাওয়া যায় না, আমার আব্বু যখন ছাত্র ছিলেন তখন বইটি সংগ্রহ করেছিলেন।

১৬ - ৩ - ৩০ হিঃ

কয়েকদিন আগে আমাদের গ্রামের বাড়ীতে আসার কথা ছিলো, কিন্তু আসা হয়নি। আজ আমরা গ্রামের বাড়ীতে এসেছি। সদরঘাট থেকে বড় লঞ্চে উঠেছি সকাল আটটায়। চাঁদপুর এসেছি দুপুর একটায়। নদীভ্রমণ ছিলো খুব আনন্দের। লঞ্চটা যখন পাড়ের খুব কাছ দিয়ে যাচ্ছিলো তখন দেখলাম, পাড় ভাঙ্গছে, আর মানুষের ঘরবাড়ী নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। মানুষগুলো কেমন চোখে পানির দিকে তাকিয়ে ছিলো! নদী যাদের ঘরবাড়ী ভেঙ্গে নিয়ে যায় তারা একেবারে গরীব হয়ে যায়, তাদের মাথাগুজার কোন জায়গা থাকে না। অনেকে তখন শহরে গিয়ে বস্তিতে আশ্রয় নেয়।

১৮ - ৩ - ৩০ হিঃ

গ্রামে চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ! একেবারে চোখ জুড়িয়ে যায়! সকালে পাখীর ডাক শুনতে খুব ভালো লাগে। গ্রামে শহরের মত কোলাহল নেই। গাড়ীর ধোঁয়া নেই। যানজট নেই। পুকুর থেকে ধরা তাজা মাছ খেতে কী মজা! তবু কেন গ্রামে থাকতে ইচ্ছে করে না! কেন শহরে যাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করে। আসলে বান্ধবীদের জন্য মনটা এমন করে।

১৯ - ৫ - ৩০ হিঃ

গ্রামের বাড়ী আম্মুর খুব ভালো লাগে। তাই গ্রামে এলে আম্মু আর যেতেই চান না। আমি যতই বলি, আম্মু, ঢাকা চলো, আমার পড়ার ক্ষতি হচ্ছে, আম্মু বলেন, এই না এলাম; এখনই যাবো কী! থাকি না আরো কটা দিন। তুমি পড়লেই তো পারো, কে তোমাকে মানা করে। আমার দুই চাচাত বোন অবশ্য আমাকে আনন্দ দেয়ার খুব চেষ্টা করে। আমাকে নিয়ে এবাড়ী ওবাড়ী বেড়াতে যায়। কলাগাছের ভেলায় করে পুকুরে বেড়াতে বলে, আমি যে সাঁতার জানি না, আমার যে ভয় করে সেটা বলি কীভাবে! তাই শুধু বলি, আমার ইচ্ছে করে না।

২৩ - ৫ - ৩০ হিঃ

বড় ভাইয়া আমার জন্য একটি বই পাঠিয়েছেন ঢাকা থেকে। বইটির নাম হলো, ছোটদের মহাকাশ। আমি তো অবাক, মহাকাশটা বুঝি ছোটদের! আম্মু বললেন, বোকা মেয়ে, আসল কথা হলো, মহাকাশ সম্পর্কে ছোটদের জন্য লেখা হয়েছে তো, তাই বইটির নাম রাখা হয়েছে ছোটদের মহাকাশ। আমি বললাম, সে তো আমি বুঝতেই পেরেছি। আমি তো দুষ্টুমি করে বললাম। আম্মু এমনই। কোনটা সত্যি সত্যি বলা, আর কোনটা দুষ্টুমি করে বলা, বুঝতে পারেন না। বইটা খুব কঠিন, ছোটদের মত হয়নি।

২৬ - ৫ - ৩০ হিঃ

দনের আকাশে যে সূর্যটা আমরা দেখি সেটা নাকি রাতের আকাশের তারকাগুলোর মত একটা তারকা। অনেক কাছে বলে এত বড় দেখা যায়! আর রাতের তারাগুলো দিনেও নাকি থাকে, কিন্তু সূর্যের আলোর কারণে দেখা যায় না। পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হলে নাকি এত অন্ধকার হয় যে, আকাশে তারা দেখায় যায়! কোন কোন তারকা নাকি সূর্যের চেয়ে বড়। অনেক দূরে বলে এত ছোট দেখা যায়। আর বহু তারা এত দূরে যে খালি চোখে দেখাই যায় না!

২৮ - ৫ - ৩০ হিঃ

আজ জেলেরা পুকুরে জাল ফেলেছিলো একটা বড় রুই মাছ ধরা হয়েছে। মাছটাকে ডাঙ্গায় তুলে আনতে জেলেদের কষ্ট হয়েছে। একবার তো ছুটেই যাচ্ছিলো। এত বড় জ্যান্ত মাছ দেখে আমাদের যে কী আনন্দ! আম্মুকে বললাম, আম্মু, প্রতিদিন যদি একটা করে মাছ ধরা হয় তাহলে আরো কয়েকদিন থাকা যায়। আম্মু হেসে বললেন, দুষ্টু মেয়ে! দেখো, আমি নাকি দুষ্টু মেয়ে। ওবাড়ীর খালারা তো বলে, আমার মত মিষ্টি মেয়ে হয় না। আম্মু কবে যে আমাকে ভালো মেয়ে বলবে! দুষ্ট মেয়ে হলে তখন বলবে, ভালো মেয়ে!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা