মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮)

টেকনাফ ও তেতুলিয়া (স্বদেশ)

রাজনীতিতে ভাষার শালীনতা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

‘রাজনীতিতে এখন সব আছে, নেই শুধু নীতি’, কথাটা যিনিই বলে থাকুন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা বড় নির্মম সত্য। একটা সময় অখন্ড ভারতবর্ষে রাজনীতি ছিলো আদর্শের বিষয়। যারা রাজনীতি করতেন আদর্শের জন্য করতেন এবং সেই আদর্শের প্রতি তারা বিশ্বস্ত ছিলেন। তখন রাজনীতিতে আর যাই হোক দুর্নীতি ও অর্থকেলেঙ্কারি ছিলো না। রাজনীতি করতেন অভিজাত লোকেরা, তাই রাজনীতির আলাদা একটা আভিজাত্য ছিলো। 

ভারত বিভাগের মাধ্যমে যখন স্বাধীনতা এলো তখন রাজনীতি ও রাজনীতিকদের মধ্যে লক্ষণীয় একটা পরিবর্তন এলো। তারপরো ছিলো সামান্য আদর্শ এবং কিছুটা আভিজাত্য। একাত্তরে আবার দেশ ভাগ হলো, বলতে গেলে তখন থেকেই রাজনীতিতে নীতি, আদর্শ ও আভিজাত্যের ধ্বস নেমেছে। 

এখন রাজনীতি মানেই যেন দুনীর্তি, রাজনীতি মানেই যেন কেলেঙ্কারি। সৎ ও অভিজাত মানুষর এখন রাজনীতি থেকে দূরে, রাজনীতি এখন দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বার্থান্ধ ও ইতর মানুষের যেন অবাধ বিচরণক্ষেত্র। এটা আমার কথা নয়, সুশীল সমাজ নামে যাদের পরিচিতি তাদেরই কথা।

সবচে’ দুঃখজনক ও লজ্জাজনক হলো রাজনীতিকদের মুখের ভাষা। প্রতিপক্ষের প্রতি গালি, কটুক্তি, ও ইতর শব্দ ব্যবহার করা ছাড়া রাজনীতির লোকেরা যেন কথাই বলতে পারেন না। সংসদের বাসিন্দারা, স্বয়ং সংসদের অধিবেশনে এমনকি বস্তির লোকদেরও লজ্জায় ফেলে দেন। সত্যের খাতিরে বলতে হয়, আর সবার মধ্যে এখনো সভ্যতা ও শালীনতার ছিটেফোঁটা থাকলেও একটি দল যেন শালীনতা ও ভব্যতার সীমা পার হয়ে গেছে। আমরা একবারও ভেবে দেখি না, এতে নিজেদের কাছে এবং অন্যান্য জাতির কাছে আমরা কতটা ছোট হয়ে যাচ্ছি।

রাজনীতিতে পথের ও মতের ভিন্নতা থাকবে এবং বর্তমান বাস্তবতায় হয়ত দুর্নীতি ও স্বার্থপ্রীতিও থাকবে। কিন্তু এতটুকু কি হতে পারে না যে, মুখের ভাষায় আমরা ন্যূনতম শালীনতা বজায় রাখবো! কারো নীতি ও অবস্থানের সমালোচনা করবো, কিন্তু ব্যক্তিগত কটুক্তি ও চরিত্রহননের ইতরতা থেকে দূরে থাকবো! নিজেরাই আমরা নিজেদের কাছে কি এই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারি না যে, আমরা সবকিছু করবো, কিন্তু মুখের ভাষা খারাপ করবো না, প্রতিপক্ষ সম্পর্কে কোন কটুক্তি করবো না! আসলেই কি আমরা এটা পারি না!  

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা