রবিউল আওয়াল ১৪৩২হিঃ (১৯)

কচি ও কাঁচা

ছোটদের রোজনামচা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

৪-২-৩২হিঃকাল বড় চাচা বললেন, মেয়েকে এত পড়িয়ে কী লাভ বলো তো! ওদের জীবন তো কাটবে সেই চুলার পাড়েতার চেয়ে বিয়ে দেয়ার চিন্তা করোবয়স তো এগার হলো! আববু কিছু বললেন না, চুপ করে থাকলেন

 

সত্যি তো! মেয়েদের জীবন তো চুলার পাড়ে! কিন্তু না, আমি লেখা-পড়া করবোআপারা বলেন, লেখা-পড়ায় ছেলে-মেয়ে সবারই সমান অধিকারআমার ভাই যদি পড়ে, আমিও পড়বো 

আমি জানি, আববু আমার লেখা-পড়া বন্ধ করবেন নাআব্বু অনেক ভালোআব্বু যা করেন আম্মুর সঙ্গে পরামর্শ করেই করেনআর আম্মুর মনের কথা তো জানিআম্মুরা পাঁচ ভাই, এক বোনপাঁচ ভাই সবাই বড় আলিম, কিন্তু আম্মু! শুধু কোরআন পড়তে পারেন, আর কাঁচা কাঁচা হরফে নাম লিখতে পারেনতাই আম্মু চান, তার লেখা-পড়ার স্বপ্নটা আমি যেন পূর্ণ করতে পারি

৬-২-৩২হিঃ  আজ সারা দিন মনটা খুব খারাপ ছিলোমন খারাপ হলে আমি আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকিআম্মু আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন, আমার খুব শান্তি লাগেমনের কষ্টগুলো দূর হয়ে যায়

৮-২-৩২হিঃ  এত রাত হলো তবু ওয়ায থামে নামাইকে সেকি চিৎকার! মহল্লায় কারোই ঘুমোবার জো নেইওয়ায হচ্ছে অনেক দূরে এক মাদরাসার মাঠে, কিন্তু তার দিয়ে মাইক টেনে আনা হয়েছে এখান পর্যন্তমানুষকে কষ্ট দিয়ে ওয়ায করার মানে! এমন ওয়াযে কি কোন ছাওয়াব হবে, না কারো হিদায়াত হবে!

না পারছি পড়তে, না পারছি ঘুমুতেওদিকে আম্মুর মাথা ধরে আছেভেবেছিলেন সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়বেনকিন্তু কীভাবে ঘুমুবেন! লোকেরা যাত্রা গান করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে, ওয়ায নছীহতও করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে

১০-২-৩২হিঃ  পুষ্প যত পড়ি ততই ভালো লাগেএবার বাতাসে তালব্য- শটা দারুণ হয়েছেকেউ জানে না, সভাপতি সাহেবের কৌটায় কী! শুধু বললেন, এমন জিনিস, যাতে আছে ডশূন্য ড়কেউ বলে, বড়শি, কেউ বলে ঢেঁড়সসভাপতি সাহেব কৌটার ঢাকনা খুললেন, আর তা থেকে বের হলো একটা মাকড়সা মেয়েরা তো ভয়ে অস্থির, যদি গায়ে এসে ওঠে! তাই উঠি-পড়ি করে দরজার দিকে দিলো দৌড়

১১-২-৩২হিঃ নজরুলের একটি ছড়া আছে, ভোর হলো, দোর খোলো/ খুকুমণি ওঠো রে/ ঐ ডাকে জুঁই-শাখে/ ফুলখুকি ছোটো রে!

এই ছড়াটা থেকে জানা হলো, জুঁই-এ চন্দ্রবিন্দু আছেচন্দ্রবিন্দু না দিলেও নাকি হয়চন্দ্রবিন্দু- সমাচার পড়তে খুব ভালো লাগে।

১৪-২-৩২হিঃ  সুমি বলে, সম্পাদক ভাইয়া বানানে ভুল হলে খুব রাগ করেআমি বলি, সম্পাদক ভাইয়া তো ভালোভালো মানুষ কি রাগ করে! বানানে ভুল হলে সম্পাদক ভাইয়া মনে কষ্ট পানপাবেনই তো! এত করে বলছেন, তবু কেউ যেন বানানটা শিখতেই চায় নাবানানে ভুল হওয়া তো লজ্জার কথা

১৫-২-৩২হিঃ  নুরুটা একটু আগে রেগে মেগে আমার বই-খাতা সব তছনছ!করে দিয়ে গেলোও তো আমার ছোটো, তবু আমার সঙ্গে কেমন করে! ছেলে হয়েছে দেখেই ওর এত দাপটছেলেরা বড় হোক, ছোট হোক, মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেইবড় আপুকে শশুরবাড়ীতে সবার মন যুগিয়ে চলতে হয়তবু সবাই তার সঙ্গে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করেকেন, এমন হবে কেন? 

 নূরুটা শুধু কি আমার সঙ্গে! মায়ের সঙ্গেই ও কেমন রুক্ষব্যবহার করেমা তো ভয়ে ভয়ে থাকেন, কখন ওর মেজাজ বিগড়ে যায়

১৭-২-৩২হিঃ   একটি বিজ্ঞান-বইয়ে পড়লাম, আমাদের এই গ্রহ পৃথিবী দেখতে ঠিক কমলালেবুর মতযদি আমরা কল্পনা করি যে, এই কমলালেবুটির উত্তর থেকে দক্ষিণে একটি শলাকা ঢোকানো হয়েছে, যেমন চাকার মাঝখানে লৌহদ- ঢোকানো থাকে, আর সেটাকে কেন্দ্র করে চাকাটা ঘোরেতো পৃথিবী এই কাল্পনিক শলাকাটি কেন্দ্র করে ঘুরছে, যাকে বলা হয় অক্ষরেখাঅক্ষরেখাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর একবার ঘুরতে সময় লাগে চবিবশ ঘণ্টাএই ঘূর্ণনের সময় পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের দিকে থাকে সেখানে সূর্যের আলো পড়েসেটা হলো দিনআর সূর্যের বিপরীত দিকটা থাকে অন্ধকারসেটা হলো রাত

১৮-২-৩২হিঃ  ছোটদের জন্য যারা বিজ্ঞানের বই লিখেছে তারা সহজ করে লিখতে পারেনি, কঠিন করে লিখেছেছোটদের জন্য লিখতে হলে আগে নিজে ছোট হতে হবেসম্পাদক ভাইয়া যখন ছোটদের জন্য লেখেন, মনে হয় ভাইয়া নিজেই ছোট হয়ে গেছেনতাই না ছোটরা এত মজা করে সম্পাদক ভাইয়ার লেখাগুলো পড়ে! সম্পাদক ভাইয়া যদি ছোটদের জন্য বিজ্ঞানের বই লিখতেন তাহলে খুব মজা হতো। 

২২-২-৩২হিঃ  আজ ছোট খালারা এসেছিলোমাদরাসায়ও বিশেষ ছুটি ছিলো, তাই সারাটা দিন বেশ আনন্দ হৈচৈ করে কাটলোবাগানে গাছের ডালে রশি ঝুলিয়ে বেশ দোল খাওয়া হলোবিকেলে বেডমিন্টন খেলা হলোআমি তেমন পরি না দুই খালাত বোন বেশ খেলতে পারেওরা দুজন সবদিক থেকেই আমার চেয়ে ভালোলেখা-পড়ায়ও, খেলাধূলায়ও

খালাত বোন মিশি আমার চেয়ে একবছরের ছোট, কিন্তু জানে অনেক কিছুঅনেক বই পড়ে, আর পাকা পাকা কথা বলে

১৯-৭-৩১হিঃ এসো আরবী শিশি তৃতীয় খ- আগামীকাল শেষ হবেমাদরাসার বড় আপা এটা পড়ানতার পড়ানো খুব সুন্দরআগাগোড়া সমস্ত পড়া বুঝিয়ে এবং মুখস্থ করিয়ে দেন

কোরআন শরীফের আয়াতগুলো এবং হাদীছগুলো কত সহজ! যারা আরবী পড়ে না, তারা তো কোরআন-হাদীছ বোঝে নাযারা কোরআন বোঝে, হাদীছ বোঝে তাদের কত সৌভাগ্য! এখন আমরা এসো কোরআন শিখি প্রথম খ- শুরু করবোআপা বলেছেন, সবক শুরু হওয়ার আগে কিতাবটি একটু একটু করে দেখতে

আববু কাল ঢাকা থেকে আসবেনআববু কাছে না থাকলে আমার ভয় ভয় করে

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা