আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

কচি ও কাঁচা

বানানের জলসায় ফিলিস্তীনের ইতিহাস!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

বানান জলসার সভাপতি আজ আরো বেশী দুঃখী দুঃখী চেহারা নিয়ে বসে আছেন। একে একে সবাই যখন হাজির হলো তখন তিনি সভার কাজ শুরু করে বললেন, দেখো, মুসলমানদের উপর এখন একটার পর একটা বিপদ আসছে তো আসছেই। আরাকানের মুহাজিরীনের উপর কত বড় যুলুম হচ্ছে! এই যুলুম থেকে তাদের কীভাবে উদ্ধার করা যায়? কীভাবে এই মযলূম মুসলমানদের একটু সাহায্য করা যায়, এসব নিয়ে যখন মুসলিম জাতি এবং বাংলাদেশের মুসলমানেরা খুব পেরেশান তখন মুসলমানদের উপর নতুন এক বিপদ নেমে এসেছে; এমন বিপদ যা আগের সব বিপদের চেয়ে অনেক বড়, অনেক কঠিন?

সবাই ভয় পেয়ে একসঙ্গে ঃ কী বিপদ হুযুর!

সভাপতি ঃ কেন, তোমরা কিছু জানো না?

ছুফিয়া ঃ আমরা তো যা জানি, আপনার কাছ থেকেই জানি। আপনি না বললে কীভাবে জানবো হুযূর!

সভাপতি ঃ আচ্ছা, এক কাজ করো; আজ বানানের জলসা থাক। যদিও আমার ইচ্ছা ছিলো, অনেক দিন পর বানানের জলসা শুরু হবে, তো একটা নতুন গল্প দিয়ে শুরু করবো। সেটা এখন থাক। এসো আজ মুসলমানদের নতুন বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করি; তারপর দু‘আ করি, আল্লাহ যেন এই বিপদ থেকে এবং সমস্ত বিপদ থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করেন। চলো শুরু থেকেই শুরু করি।

সবাই ঃ জ্বি আচ্ছা!

সভাপতি ঃ প্রথমে বলো, ফিলিস্তীন শব্দটি কি শুনেছো তোমরা?

বশির ঃ জ্বি হুযুর! ফিলিস্তীন হচ্ছে আরবের একটি দেশ। সেখানে আরবের অনেক মুসলিম বাস করে।

সভাপতি (খুশী হয়ে) ঃ মাশাআল্লাহ, তুমি তো খুব সচেতন! অনেক কিছু জানো!

এবার বলো, বাইতুল মাকদিস শব্দটি তোমরা কেউ শুনেছো?

সাবই নীরবে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে। অর্থাৎ কেউ শুনেনি। তখন সভাপতি সাহেব বললেন ঃ বাইতুল মাকদিস হলো ফিলিস্তীনের একটি শহর। এই শহরকে বলা হয় পবিত্র শহর।

শফীক ঃ কেন হুযূর! আমরা তো জানি, মক্কা শরীফ হলো পবিত্র শহর। সেখানে রয়েছে আল্লাহর ঘর, আমাদের কিবলা। আমরা মক্কা শরীফের কাবাঘরের দিকে মুখ করে নামায পড়ি।

মুসলিম ঃ মদীনা শরীফও পবিত্র শহর। সেখানে আমাদের নবীজী হিজরত করেছেন। সেখানে রয়েছে মসজিদে নববী। নবীজীর কবর হলো ঐ শহরে।

ছুফিয়া ঃ বাইতুল মাকদিস পবিত্র শহর হলো কীভাবে, হুযূর?!

সভাপতি ঃ বাইতুল মাকদিস শহরটি পবিত্র হওয়ার সবচে’ বড় কারণ হলো, ঐ শহরে রয়েছে মসজিদুল আকছা।

ইসলামের শুরুর যুগে এই মসজিদের দিকে মুখ করে আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়তেন এবং ছাহাবা কেরামও নামায পড়তেন।

এখন যেমন মক্কা শরীফের কাবাঘর হচ্ছে আমাদের কেবলা, মুসলিম উম্মাহর কেবলা, তেমনি তখন মসজিদুল আকছা ছিলো আমাদের নবীজীর কেবলা; ছাহাবা কেরামের কিবলা। এ জন্য মসিজদুল আকছাকে বলা হয় মুসলিম উম্মাহর প্রথম কেবলা।

নতুন কথা শুনে সবাই খুব অবাক!

সবার মনের কথাটাই যেন ছুফিয়া বললো ঃ হুযূর, আপনার কাছ থেকে অনেক সুন্দর কথা জানা হলো, আপনাকে অনেক ‘জাযাকাল্লাহ’!

সভাপতি ঃ ওয়া ইয়্যাকুম। আচ্ছা, এবার তোমরা মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকাছার ছবি দেখো। এই যে এটা হলো মসজিদুল হারামের ছবি, মাঝখানে দেখো, কী সুন্দর কা‘বা ঘরের ছবি। চারপাশে যে খোলা চত্বর, ওখানে তাওয়াফ হয়। তারপরে চারপাশে যে ইমারত সেটা হলো মসজিদুল হারাম

 

মসজিদের উপরে যে সুন্দর সবুজ গম্বুজ দেখছো, এর নীচে হলো আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র কবর। এটা হলো মসজিদের কেবলার দিক।

বলো তো, আমাদের কিবলা কোন দিকে?

সবাই একসঙ্গে ঃ কেন, পশ্চিম দিকে!  মক্কা শরীফ এবং কা‘বা শরীফ তো পশ্চিম দিকে!!

সভাপতি (খুশী হয়ে) ঃ ঠিক বলেছো। এবার শোনো, মদিনা শরীফ থেকে দক্ষিণ দিকে হলো মক্কা এবং কা‘বা। তাহলে মসজিদে নববীর কেবলা হবে কোন্ দিকে?

সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো! সবার আগে ছুফিয়া বলে উঠলো ঃ  তাহলে তো মদীনা শরীফের কেবলা হবে দক্ষিণ দিকে, হুযূর!

সভাপতি (খুশী হয়ে) ছুফিয়ার তো মাশাআল্লাহ অনেক বুদ্ধি! তুমি ঠিকই বলেছো। তোমাকে জাযাকাল্লাহ! সবাই সভাপতি সাহেবের কথা শুনলো এবং তিন হারামের ছবি দেখলো। দেখে অবাক হলো, মুসলিম যেন সবার পক্ষ হতে বললো ঃ হুযূর, আমরা তো কিছুই জানি না! আমাদের তো অনেক জানতে হবে, অনেক পড়তে হবে, অনেক শিখতে হবে!

সভাপতি ঃ আমি খুশী যে, তোমরা পড়ার প্রয়োজন এবং শেখার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছো।

ছুফিয়া ঃ হুযূর, তাহলে তো সত্যি বাইতুল মাকদিস অনেক পবিত্র শহর! মসজিদুল আকছা অনেক পবিত্র মসজিদ!! কতদিন মসজিদুল আকছা মুসলমানদের কিবলা ছিলো হুযূর? তারপর কী হলো?

সভাপতি ঃ আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে ষোলমাস মসজিদুল আকছা মুসলমানদের কিবলা ছিলো। তারপর নতুন আয়াত নাযিল হলো যে, তোমরা মক্কার বাইতুল্লাহর দিকে মুখ করে নামায পড়ো। এখন থেকে কা‘বা হলো তোমাদের কিবলা।

মুশফিকা ঃ শুনেছি, মসজিদুল হারামে এক রাকাতের ছাওয়াব একলাখ রাকাতের সমান?!

সভাপতি ঃ তুমি ঠিকই শুনেছো।

ছুফিয়া ঃ আর মদীনা শরীফের মসজিদে নববী?!

সভাপতি ঃ মসজিদে নববীরও অনেক ফযীলত। সেখানে একরাকাতের ছাওয়াব একহাজার।

মুসলিম ঃ মসজিদুল আকছার কী ফযীলত হুযুর?

সভাপতি ঃ আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মসজিদুল আকছায় এক রাকাত নামায অন্যান্য মসজিদের পাঁচশ রাকাত হতে উত্তম, তবে দুই মসজিদ ছাড়া।

মুশফিকা ঃ বিপদের কী হলো হুযূর, বিপদের কথা শোনার পর থেকে আমার ...?

সভাপতি ঃ বলছি, তার আগে বাইতুল মাকদিস এবং মসজিদুল আকছার আরো ফযীলত শোনো। আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মি‘রাজের ঘটনা কি তোমরা জানো?

সবাই একসঙ্গে ঃ জানি না তো!!

সভাপতি (বিরক্তি প্রকাশ করে) তোমরা সীরাতের কিতাব পড়ো না কেন? না পড়লে জানা হবে কীভাবে?!

সবাই লজ্জিত হয়ে ঃ এখন থেকে আমরা অনেক পড়বো হুযূর!

সভাপতি ঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন শোনো মি‘রাজে কথা। হিজরতের আগে আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় ছিলেন তখন আল্লাহ তাঁকে এক রাতের মধ্যে মক্কা থেকে সেই দূরে বাইতুল মাকদিসের মসজিদুল আকছা পর্যন্ত নিয়েছিলেন। সেখানে আগের যামানার নবী-রাসূল একত্র হয়েছিলেন, আর নবীজী তাঁদের ইমাম হয়ে নামায পড়িয়েছেন। তারপর সেখান থেকে আসমানে গিয়েছেন। আবার ঐ রাতেই আসমান থেকে মসজিদুল আকছায় এবং সেখান থেকে মক্কায় ফিরে এসেছেন।

সবাই একসঙ্গে ঃ সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!!

শফিক ঃ আমাদের নবীজী কিসে করে গিয়েছিলেন অত দূর?

সভাপতি ঃ হযরত জিবরীল আ. জান্নাত থেকে একটা সওয়ারি এনেছিলেন। দুনিয়াতে যেমন ঘোড়া তেমনি এক সওয়ারি, যার নাম হলো বোরাক। বোরাকে সওয়ার হয়ে তিনি হারাম থেকে বাইতুল মাকদিস গিয়েছেন এবং সেখান থেকে আসমানে গিয়েছেন। জান্নাতের সওয়ারি তো, চোখের পলকে চলে যায় বহু দূর।

ছুফিয়া ঃ হুযূর, বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে জানা হলো; মসজিদুল আকছা সম্পর্কে জানা হলো; আবার নবীজীর মি‘রাজ সম্পর্কে জানা হলো। এবার মুছীবতের কথা বলুন। আমরা তো কিছুই জানি না, কিসের মুছীবত!!

সভাপতি ঃ বাইতুল মাকদিস এবং মসজিদুল আকছা যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের অধিকারে ছিলো। ফিলিস্তীনে, বাইতুল মাকদিসে আরবের মুসলমানেরা বাস করতো। তারা মসজিদুল আকছায় নামায পড়তো আর আল্লাহর শোকর আদায় করতো। বড় শান্তিতেই ছিলো মুসলমানেরা। তাদের¬¬ বলা হতো ফিলিস্তীনী মুসলিম। কিন্তু ...

এটা সভাপতি সাহেবের সবসময়ের অভ্যাস, ‘কিন্তু’ বলে একটু থামবেন। ধীরে ধীরে সবার মুখে দিকে তাকাবেন। তারপর শুরু হবে সামানের কথা। সবাই সেটা জানে। তাই চুপচাপ অপেক্ষা করে। কিন্তু এখন তো হচ্ছে বিপদের কথা! তাই সবাই পেরেশান হয়ে ঃ কিন্তু কী হুযূর!

সভাপতি ঃ ইহুদিরা খুবই দুষ্ট জাতি। মুসলমানদের প্রতি ওদের বিদ্বেষ ইসলামের শুরু থেকেই। ইহুদিরা আজ থেকে সত্তর বছর আগে বাইতুল মাকদিস এবং মসজিদুল আকাছা জোর করে দখল করে নিয়েছে।

সবাই এক সঙ্গে ঃ ইন্না লিল্লাহ! বলেন কি হুযূর! এত বড় যুলুম!

সভাপতি ঃ তখন থেকে ইহুদিরা ফিলিস্তীনের মুসলমানদের উপর এত যুলুম করছে যা কল্পনা করাও সম্ভব না। ছোট শিশুকেও ওরা গুলি করে হত্যা করে।

সবাই একসঙ্গে ঃ আহারে!!

সভাপতি ঃ এখন ইহুদিরা বলছে কী, বাইতুল মাকদিসের উপর মুসলমানদের কোন অধিকার নেই। বাইতুল মাকদিস হলো ইহুদিদের। ইহুদিরা বাইতুল মাকদিসকে তাদের দেশের রাজধানী বানাবে।

মুসলিম ঃ কী যুলুমের কথা হুযূর!

সভাপতি ঃ আমেরিকার বড় দুষ্ট প্রেসিডেন্ট হলো মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প! মুসলমানদের দু’চোখে দেখতে পারে না। তার  তো খুব শক্তি, তাই ইহুদিদের সাহায্য করে বলছে কী, তোমরা জেরুসালেমকে রাজধানী বানাও। ভয় কী! আমি আছি তোমাদের সঙ্গে!!

মুসলিম ঃ আমাদের তো তাহলে জিহাদ করতে হবে। বাইতুল মাকদিস মুক্ত করতে হবে।

সভাপতি ঃ প্রথমে আমাদের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. জিহাদ করে বাইতুল মাকদিস এবং মসজিদুল আকছা খৃস্টানদের দখল থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

একশ বছর, দু’শ বছর করে দীর্ঘ চারশ সত্তর বছর বাইতুল মাকদিস এবং মসজিদুল আকছা মুসলমানদের কাছে ছিলো। যখন ইচ্ছা তখন যে কোন মুসলিম বাইতুল মাকদিস যেতে পারতো এবং মসজিদুল আকছায় নামায পড়তে পারতো। কিন্তু ...

সভাপতি সাহেবের অভ্যাস। একটু থামলেন, তারপর ধীরে ধীরে সবার দিকে তাকাতে থাকলেন।

সবাই তখন সামনের কথা জানার জন্য ব্যাকুল।

ছুফিয়া ঃ তারপর কী হলো হুযূর! বাইতুল মাকদিস, মসজিদুল আকছা কীভাবে আমাদের হাতছাড়া হলো হুযূর?

সভাপতি ঃ সে বড় দুঃখের কথা, কষ্টের কথা এবং লজ্জার কথা!!

ধীরে ধীরে মুসলমান জিহাদ ভুলে গেলো। আরাম আয়েশ, ভোগবিলাসে ডুবে গেলো। দুনিয়ার লোভে, ক্ষমতার লোভে পড়ে গেলো। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও হানাহানি শুরু করলো। এই সুযোগে খৃস্টানরা বাইতুল মাকদিস দখল করে নিলো।

ছুফিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে ঃ আহারে, কেন মুসলমানের রা জিহাদ ভুলে গেলো!!

মুসলিম ঃ তারপর কী হলো হুযূর?

সভাপতি ঃ একে একে নব্বই বছর, মানে একশ বছরের কাছাকাছি বাইতুল মাকদিস ও আলআকছা খৃস্টানদের দখলে ছিলো। তারপর আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর প্রতি দয়া করলেন। মহান মুজাহিদ গাজী ছালাহুদ্দীন পয়দা হলেন। তিনি বড় হলেন এবং মিশরের শাসক হলেন। তিনি ছিলেন আদর্শ মুসলিম এবং আদর্শ মুজাহিদ। বাইতুল মাকদিসের জন্য তাঁর প্রাণ কাঁদছিলো। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন। জীবন দিতে হয় দেবো। আল্লাহর রাস্তায় জীবন দিয়ে জিহাদ করবো। জিহাদ করে বাইতুল মাক্দিস এবং আলআকছাকে অবশ্যই মুক্ত করবো।

সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। খুশী হয়ে একসঙ্গে ঃ তারপর কী হলো হুযূর?!

সভাপতি ঃ মুসলমানদের তিনি জিহাদের ডাক দিলেন। তার ডাকে মুসলিম উম্মাহ জেগে উঠলো এবং জিহাদের ফৌজে শামিল হলো।

গাজী ছালাহুদ্দীন জিহাদ করলেন এবং খৃস্টানদের দখল থেকে বাইতুল মাকদিস উদ্ধার করলেন।

সবাই একসঙ্গে ঃ আলহামদু লিল্লাহ! আল্লাহু আকবার!!

সভাপতি সাহেব ঃ কিন্তু ...

ছুফিয়া ঃ হুযূর দয়া করে জলদি বলুন, তারপর কী হলো?! আবার কীভাবে বাইতুল মাকদিস, মসজিদুল আকছা আমাদের হাতছাড়া হলো?!

সভাপতি ঃ তারপর আল্লাহর রহমতে হাজার বছর ধরে ফিলিস্তীনের ভূমিতে আরবের মুসলমানরা বাস করছে। তাদেরকে বলা হয় ফিলিস্তীনী। তো ফিলিস্তীনের ভূমিতে ফিলিস্তীনীরা বাস করবে, এটাই তো নিয়ম।

সবাই একসঙ্গে ঃ জ্বি এটাই তো নিয়ম। বাংলাদেশে যেমন বাংলাদেশের মানুষ বাস করে,

সভাপতি ঃ এভাবেই চলছিলো। ফিলিস্তীনে ফিলিস্তীনী মুসলিমরা শান্তিতেই বাস করছিলো। হঠাৎ শুরু হলো যুলুম।

সবাই একসঙ্গে ঃ কী যুলুম হুযূর?

সভাপতি ঃ ইহুদিদের নাকি আলাদা দেশ নেই। তাই বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের তুলে এনে ফিলিস্তীনে জায়গা দিতে হবে।

মুসলিমা ঃ ওরা তো বিভিন্ন দেশে বাস করছে। ওদের তো কোন কষ্ট নেই। ওদের ফিলিস্তীনে জায়গা দিতে হবে কেন?

সভাপতি ঃ সেটা তো হলো গায়ের জোরের কথা! মুসলিমরা এখন দুর্বল। তাদের কথা তো এখন কেউ শুনতেই চায় না।

ছুফিয়া ঃ তাহলে ফিলিস্তীনের আসল বাসিন্দারা যাবে কোথায়?

সভাপতি ঃ সে কথা তো কেউ ভাবে না। শুধু বলে, যেখানে খুশী যাও।

সবাই একসঙ্গে ঃ বড় যুলুম তো? তারপর কী হলো হুযূর?

ফিলিস্তীনের বিশাল এলাকা ইহুদিরা দখল করে নিলো। সেখানে তাদের আলাদা দেশ বানালো। নাম হলো ইসরাইল।

মুসলিম ঃ জ্বি হুযূর, ইসরাইল নামটা শুনেছি। তাহলে এটা হলো ইহুদিদের অবৈধ দেশ! জোর করে দখল করা দেশ।

সভাপতি ঃ ঠিক বুঝেছো। মুসলমানরা তো দুর্বল। তারা আর কী করবে! অবৈধ হলেও শেষ পর্যন্ত মেনে নিতে হলো ইসরাইল নামের দেশটাকে। ফিলিস্তীনীরা বললো। ঠিক আছে। যতটুকু তোমরা জোর করে দখল করে নিয়েছো সেখানে তোমরা থাকো। ফিলিস্তীনের বাকি অংশে আমরা থাকি। আমাদের দেশ ফিলিস্তীন, তোমাদের দেশ ইসরাইল।

এখন দেশের জন্য তো রাজধানী দরকার!

শফীক ঃ জ্বি। বাংলাদেশের রাজধানী যেমন ঢাকা!

সভাপতি ঃ হাঁ, তাই। তো ইসরাইলের রাজধানী হলো তেলআবীব। ফিলিস্তীনীরা বললো, ঠিক আছে। ফিলিস্তীনের রাজধানী হবে আলকুদস।

রহিমা ঃ তাহলে তো যেমন করেই হোক বিবাদ মিটে গেলো!

সভাপতি ঃ কিন্তু ইহুদিরা গোঁ ধরে বসলো। আমাদের রাজধানী হবে জেরুসালেম।

মুশফিকা ঃ আচ্ছা হোক। আলকুদস হবে ফিলিস্তীনের রাজধানী,্ আর জেরুসালেম হবে ইহুদিদের রাজধানী।

সভাপতি ঃ তোমরা বুঝতে পারোনি। আসলে আলকুদস, আর জেরুসালেম দু’টো একই শহরের নাম। ইহুদি, খৃস্টান এবং দুনিয়ার সব অমুসলিমরা বলে, জেরুসালেম। আর মুসলিমরা বলে আলকুদস। কখনো বলে বাইতুল মাকদিস।

শফিক ঃ ইহুদিরা খুব খবিছ জাতি। তাই না হুযুর! জোর করে জমি দখল করলো। করে তাতে নিজেদের দেশ বানালো। ওদেরতো একটা রাজধানী আছে। এখন আবার গোঁ ধরেছে জেরুসালেমকে বানাবে রাজধানী! তা হলে ফিলিস্তীনের রাজধানী হবে কোথায়?

সভাপতি ঃ ফিলিস্তীনের মুসলমানেরা তারপরো ঝগড়া বিবাদ চায় না। তারা বলে, আচ্ছা ঠিক আছে, চলো তোমরা বলো জেরুসালেম শহরকে আমরা দু’ভাগ করে নিই। পশ্চিম অংশটা হবে তোমাদের রাজধানী। আর পূর্ব অংশটা ফিলিস্তীনের রাজধানী।

শফীক ঃ যাক, একটা সমাধান তো হলো!

সভাপতি ঃ না, হলো আর কোথায়। ইহুদিরা বলে। তা চলবে না। আমাদের চাই পুরো জেরুসালেম। পুরোটাই হবে ইসরাইলের রাজধানী।

ছুফিয়া ঃ বড় যুলুমের কথা! কিন্তু কেউ কিছু বলছে না কেন ইহুদিদের?

সভাপতি ঃ সেটাই তো দুঃখের কথা। এখন দুনিয়াতে মুসলমানদের পক্ষে কেউ নেই। আমেরিকা এত বড় দেশ। সেও বলে, ইসরাইলের কথাই ঠিক। পুরো জেরুসালেমই হবে ইসরাইলের রাজধানী।

ছুফিয়া ঃ হুযুর, মুসলমানদের সংখ্যা তো কম না। দেশও কম নয়। সবাই মিলে এক হয়ে প্রতিবাদ করে না কেন? ইহুদিদের শায়েস্তা করছে না কেন?

সভাপতি ঃ সেটাই তো আমাদের দোষ। এখনো আমরা আত্মকলহে লিপ্ত। এখনো আমরা এক হতে পারি না। দুনিয়ার সব মুসলমান এক হলে কিন্তু আমাদের উপর যুলুম করা এত সহজ হবে না।

ছুফিয়া ঃ এখন তাহলে আমাদের করণীয় কী হুযূর?

সভাপতি ঃ এসো, প্রথমে ভাবি নিজেদের কথা। আমরা নিজেরা মিলে মিশে এক হয়ে থাকার চেষ্টা করি। কখনো পরস্পর ঝগড়া বিবাদ করবো না। যখন নিজেরা ঠিক হয়ে যাবো, মিলে মিশে থাকা শিখবো তখন পুরা সমাজ এবং পুরা দেশের মানুষ ঠিক হয়ে যাবে। বাংলাদেশকে দেখে দুনিয়ার অন্যান্য মুসলিম দেশও শান্তির সঙ্গে, একতার সঙ্গে বাস করবে। তখন মুসলিম জাতির শক্তি হবে। কেউ তাদের উপর যুলুম করার সাহস পাবে না। আরেকটা কথা।

সবাই একসঙ্গে ঃ কী কথা হুযূর।

সভাপতি ঃ আমাদের সবার কর্তব্য নিজ নিজ কাজে পূর্ণ যোগ্যতা ও শক্তি অর্জন করা। যোগ্যতা ছাড়া, শক্তি ছাড়া পৃথিবীতে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচা যায় না।

তো আমরা নিজেদের জীবনে এ দু’টো অর্জন করার চেষ্টা করতে পারি।

সবাই একসঙ্গে প্রতিজ্ঞা করলো, এখন থেকে তারা মিলেমিশে একতার সঙ্গে থাকবে। লেখাপড়ায় এবং সমস্ত কাজে যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করবে। তারপর বড় হয়ে সারা দুনিয়ার মানুষকে এক হয়ে এবং নেক হয়ে থাকার দাওয়াত দেবে। আর দাওয়াত দেবে, সবাই সর্বক্ষেত্রে যেন যোগ্যতা ও শক্তি অর্জনের চেষ্টা করে।

সভাপতি (খুশী হয়ে) ঃ তোমরা তো ভালো ছেলে-মেয়ে! তোমরা পারবে।

আল্লাহ তোমাদের অনেক অনেক তাওফীক দান করুন।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা