যীকা‘দা ১৪৩৯ হিঃ (৩/৫)

বিজ্ঞান বিচিত্রা

إن في خلق السموت والأرض واختلاف الليل والنهار لآيت لأولي الألباب

অতীতে ফিরে যাওয়া কি সম্ভব?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

সত্যকথা যদি বলি, এ প্রশ্নটি নিয়ে চিন্তা করার, আমাকে সাহস যুগিয়েছেন আমার প্রিয় হযরত আলী মিয়াঁ রহ.।  আমার জানামতে মাদরাসা-অঙ্গনে তিনিই প্রথম টাইম মেশিন বা সময়বাহনের কথা কল্পনা করেছেন। সেই কল্পনা থেকেই রচিত হয়েছে من النجوم إلى الأرض নামক  তাঁর বিখ্যাত গল্পটি, যার সাহায্যে তিনি  পৌঁছে গিয়েছিলেন ছাহাবাযুগের মদীনায়। দূর তারকালোক থেকে তিনি

অবলোকন করেছেন ছাহাবা-যুগের মদীনার ঘটনাপ্রবাহ ও জীবনচিত্র।

কল্পনা করতে দোষ কী!! তবে প্রশ্ন হলো বাস্তবে তা সম্ভব কি না?

শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে বিজ্ঞানের জগতে এ প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। একদল পক্ষে বলছেন, তো আরেক দল জোরালোভাবে তা প্রত্যাখ্যান করছেন।

কল্পনাবিলাসী বিজ্ঞানীরা মনে করেন, যদি আমরা টাইম মেশিন বা সময়বাহনে আরোহণ করতে পারি তাহলে অতীতের দিকে ফিরে যেতে পারি। টাইমমেশিন তাহলে কী? ঐ বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা হলো,আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে বলা হয়েছে, মহাকর্ষ স্থান-কালকে বাঁকিয়ে ফেলতে পারে।

তো খুব শক্তিশালী একটা মহাকর্ষক্ষেত্র যদি তৈরী করা সম্ভব হয় তাহলে সেটা স্থান-কালকে এমনভাবে বাঁকাতে পারবে যে, বেঁকে এসে সেটা নিজের সঙ্গেই যুক্ত হবে। ফলে একটা ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভ (সিটিসি) তৈরী হবে, যা ব্যবহার করে অতীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব। অন্তত তাত্ত্বিকভাবে অবশ্যই সম্ভব।

এ চিন্তাকে যারা অসম্ভব মনে করেন তাদের যুক্তি হলো, ‘আপনি যদি সিটিসি ব্যবহার করে অতীতে ফিরে যান তাহলে তো আপনাকে নিজেরই মুখোমুখি হতে হবে! অর্থাৎ আপনার দু’টি আলাদা সত্তা হবে, যা অসম্ভব।

যুক্তি আরো আছে; ধরুন, সময়ের বাহনে চড়ে আপনি গেলেন কয়েক দশক অতীতে। দেখা হলো আপনার বর্তমান দাদার সঙ্গে, যিনি তখন মাত্রই শিশু। অর্থাৎ তখনো আপনার, এমনকি আপনার বাবারও জন্ম হয়নি। আপনি কী করলেন, কোন কারণে, বা অকারণেই ‘শিশু দাদা’কে হত্যা করলেন। তাহলে তো আপনি নিজেই আপনার জন্ম রুখে দিলেন। অথচ আপনি তো আছেনএবং মনের সুখে দিব্বি ‘টাইমট্রাভেল’ করছেন!

হকিং বলেন, সময়ভ্রমণের পক্ষের যুক্তি বুঝতে হলে পদার্থবিদ্যার সূত্র ধরে চিন্তা করতে হবে। বিষয়টা কিন্তু কঠিন কিছু নয়। শিশুও জানে, প্রতিটি বস্তু ত্রিমাত্রিক স্থানে অবস্থান করে। মাত্রাতিনটি হচ্ছে দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা। আরেকটা দৈর্ঘ্য আছে সময়ের এবং বয়সের। একজন মানুষ আশি বছর বাঁচলেন। এটা সময়ের দিক থেকে তার দৈর্ঘ্য। পাহাড়গুলো দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার বছর ধরে, এটা সময়ের দিক থেকে পাহাড়গুলোর দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ সবকিছুর দৈর্ঘ্য স্থানের দিক থেকে যেমন আছে, তেমনি আছে সময়ের দিক থেকে। এটাকে আমরা বলতে পারি চতুর্থ মাত্রা। তাহলে সময়ভ্রমণের মানে হতে পারে এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে চলাচল।

ধরুন, আপনি সোজা সামনে চলছেন, এটা হলো দৈর্ঘ্যরে একমাত্রিক চলাচল। যদি ডানে বা বায়ে মোড় নেন তাহলে সঙ্গে আরেকটি মাত্রা যুক্ত হবে, যাকে বলবো দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের দ্বিমাত্রিক চলাচল। পথে যদি চড়াই-উৎরাই থাকে তাহলে আরেকটি মাত্রা যুক্ত হয়ে দাঁড়াবে দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও উচ্চতা, এই ত্রিমাত্রিক চলাচল।

এখন প্রশ্ন হলো, চতুর্থ মাত্রাটি, অর্থাৎ সময়মাত্রাটি ব্যবহার করে কীভাবে সামনে বা পিছনে আসা যায়?

চলচ্চিত্রে অনেক সময় টাইম মেশিন দেখানো হয়, যাতে চড়ে সময়-সুড়ঙ্গ পার হয়ে চলে যাওয়া যায় অতীতে বা ভবিষ্যতে। বুদ্ধিটা মন্দ নয়। বিজ্ঞানীরাও ভাবছেন সময়-সুড়ঙ্গের কথা। নাম দিয়েছেন ওয়ার্মহোল। আমাদের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য ওয়ার্মহোল। কিন্তু এত ক্ষুদ্র যে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়।

বিষয়টি সহজে বুঝুন এভাবে- ‘জগতের কোন কিছুই একদম মসৃণ নয়। সবচে’ মসৃণ বস্তুতেও কিছু ভাঁজ বা কুঞ্চন থাকেই। সময়ের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। অনুপরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র এই সময়-কুঞ্চনগুলোতেই রয়েছে ওয়ার্মহোল বা সময়-সুড়ঙ্গের অস্তিত্ব। ওয়ার্মহোল আসলে কী করে? উত্তর হলো, যা দু’টি আলাদা সময় ও স্থানকে যুক্ত করে। অর্থাৎ এই সময়-সুড়ং দিয়ে একটি সময় ও স্থান হতে অন্য একটি সময় ও স্থানে গমন করা সম্ভব।

এখানে একটা সমস্যা আছে। সময়-সুড়ঙ্গ কত চওড়া? ১ সেন্টিমিটারের ১ লক্ষ কোটি কোটি কোটি কোটি ভাগের এক ভাগ পরিমাণ চওড়া হতে পারে। তাহলে এই সময়-সুড়ঙ্গ দিয়ে আস্ত একটা মানুষ কীভাবে পার হবে?!

কতিপয় বিজ্ঞানীর উর্বর মস্তিষ্ক এখানেও থেমে নেই। তারা ভাবেন,  কোনভাবে যদি একটা ওয়ার্মহোলের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করা যায় এবং কোন প্রক্রিয়ায় আয়তনে সেটাকে মানুষের পারাপারের মত বড় করে নেয়া যায় তাহলে আর সমস্যা থাকে না।  হয়ত ঐ সময়-সুড়ঙ্গের এক প্রান্ত থাকবে পৃথিবীতে, অপর প্রান্ত প্রয়োজনমত স্থাপিত হবে অতীতের (বা ভবিষতের কোন স্থানে। বলাবাহুল্য, সেই স্থাপনটি হবে স্থানান্তরযোগ্য।

সময়-ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচে’ বড়

সমস্যা হলো কিছু স্ববিরোধিতা, যার একটির নাম হলো, ‘দাদাতত্ত্ব’ (পূর্বে এটি আলোচিত হয়েছে)

বস্তুত টাইম মেশিন বা সময় সুড়ঙ্গ মহাবিশ্বের একটি মৌলিক নীতির বিরোধী। নীতি বা সূত্রটি হলো,‘ফলাফলের আগে কারণ ঘটে, এর উল্টোটা কখনো নয়।’

ফলে আমার বিশ্বাস, কোন না কোনভাবে সময়-সুড়ঙ্গ ধ্বংস হয়ে যাবে।

তবে আরেকটি উপায়ের কথা বলা যেতে পারে। তা এই যে, সময় প্রবাহিত হয় সদা প্রবহমান নদীর মত। আর নদীর মত সময়েরও প্রবাহের গতি একেক স্থানে একেক রকম। একশ বছর আগে কথাটা প্রথমে বলেছিলেন আইনস্টাইন। প্রমাণ আছে হাতের কাছেই। আমরা ‘জিপিএস’ ব্যবহার করি উপগ্রহের মাধ্যমে। উপগ্রহে আছে খুব নিখুঁত ঘড়ি, তবে শতভাগ নিখুঁত নয়। পৃথিবীর ঘড়ির তুলনায় উপগ্রহের ঘড়ি প্রতিদিন এক সেকেন্ডের একশ কোটি ভাগের এক ভাগ দ্রুত চলে। এটাকে হিসাবে না ধরলে জিপিএস-এর নির্দেশনা ভুল হবে। উপগ্রহ-ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ির তুলনায় দ্রুত চলার কারণ হলো, পৃথিবীর ভর। সূত্রটি হলো,বস্তু যত ভারী হবে সেটি তত ধীর হবে।তো ভরের কমবেশীর কারণেই পৃথিবীর ঘড়ি ধীর, মাহশূন্যে উপগ্রহ-ঘড়ির গতি দ্রুত।

এখান থেকেই দেখা দেয় সময়-ভ্রমণের আরেকটি সম্ভাবনা

দেখুন, আমাদের মিল্কিওয়ে গ্লাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে গ্লাক্সির সবচে’ ভারী বস্তুগুলো।

সেখানেই রয়েছে সুপার-ম্যাসিভ ব্লাকহোল (অতি ভারী কৃষ্ণগহ্বর)। এর ভর চল্লিশ লাখ সূর্যের সমান। এ ভর আবার কেন্দ্রীভূত আছে একটি মাত্র বিন্দুতে। এর স্পর্শ এড়িয়ে আলোও বের হতে পারে না। এ কারণেই সময়কে সবচে’ বেশী বিকৃত করে কৃষ্ণগহ্বর এবং তৈরী করে প্রাকৃতিক টাইম মেশিন।

সহজে বোঝার জন্য আরেকটু ব্যাখ্যা করি। মনে করুন, কেউ মহাকাশ যানে করে কৃষ্ণগহ্বর ভ্রমণে গেলেন। পৃথিবী থেকে দেখা যাবে প্রতি ১৬ মিনিটে একবার তিনি কৃষ্ণগহ্বরটি প্রদক্ষিণ করছেন। কিন্তু নভোচারী নিজে ১৬ মিনিটের পরিবর্তে অনুভব করবেন ৮ মিনিট। এভাবে তিনি সময় ভেদ করে চলতে থাকবেন। ফিরে এসে তিনি দেখবেন পৃথিবীর সময় থেকে পিছিয়ে আছেন অর্ধেক। তার মানে হলো, কৃষ্ণগহ্বর হচ্ছে একটি টাইম মেশিন, যাতে ওয়ার্মহোল সমস্যা নেই। তবে ভাবনাটি বাস্তবসম্মত নয়। অধিকতর গ্রহণযোগ্য একটি উপায় অবশ্য আছে।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

০০ সত্য কথা হলো, বিষয়টি আমি তেমন বুঝতে পারিনি, বিজ্ঞানচিন্তা-এর একটি লেখা অবলম্বন করে লিখে গিয়েছিমাত্র। এজন্য বিজ্ঞান- চিন্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আন্তরিকভাবে কামনা করি,আমাদের ছেলেরা বিজ্ঞান -চিন্তায় আগ্রহী হোক। বিজ্ঞান আমাদের ছিলো, আবার আমাদের হোক, আমরা শুরু করলাম, তোমরা এগিয়ে নাও।

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা