যীকা‘দা ১৪৩৯ হিঃ (৩/৫)

বিজ্ঞান বিচিত্রা

বাস্তবের টাইমট্রাভেলার

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

সের্গেই ক্রিকালেভ, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বনামধন্য নভোচারী। মহাকাশে তিনি ৮০৩ দিন ৯ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট অবস্থান করেছেন। এসময় তিনি পাঁচহাজারবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছেন। এটা ছিলো একটা বিরল রেকর্ড যা তার আগে বা পরে আর কারো নামের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। মহাকাশের গতিশীল অবস্থায় তিনি দীর্ঘ দিন ছিলেন। আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার কাল দীর্ঘায়নের সূত্রমতে তার ঘড়ি কিছুটা ধীর হয়ে যায়। ফলে বিজ্ঞানীদের হিসাবমতে মহাকাশ ভ্রমণকালে তার কাল দীর্ঘায়ন ঘটেছিলো ০.০২ সেকেন্ড। পৃথিবীর তুলনায় তার বয়স০.০২ সেকেন্ড কম বেড়েছে। এভাবে তিনি হয়েছেন প্রকৃত অর্থেই টাইমট্রাভেলার। তিনি যদি এর দিগুণ সময় মহাশূন্যে অবস্থান করতেন তাহলে পৃথিবীর তুলনায় তার বয়স সেই অনুপাতে কম বৃদ্ধি পেতো। তিনগুণ পাঁচগুণ দশগুণ হলে সেই অনুপাতে ...।

পৃথিবীতে মানবজাতির ইতিহাসে কত রাজ্যের ভাঙ্গা-গড়া ঘটেছে। প্রতিটি ভাঙ্গা-গড়ার সঙ্গে কত মানুষের কত হাসি-কান্না ও আনন্দ -বেদনা যুক্ত হয়েছে! কিন্তু মহান নভোচারী সের্গেই! তার দুঃখের কাহিনী অবশ্যই এক বিরল ব্যতিক্রম।

ঘটনা এই যে, ১৯৯১ এর ২০শে ডিসেম্বর সর্বশেষ সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট গর্বাচভের হাতে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভক্তি সম্পন্ন হয় তখন সের্গেই তার দেশে ছিলেন না; এমনকি পৃথিবীতেই ছিলেন না! কারণ এর সাত মাস আগে তিনি নিজের দেশ ছেড়ে এবং এই গ্রহ ত্যাগ করে মহাকাশে পাড়ি জমান।

মহাকাশ স্টেশন মির-এ অবস্থান করে তিনি বহু জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিমগ্ন ছিলেন, পরবর্তী সময়ে যা মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। দুঃখের বিষয় এই যে, মির মহাকাশ স্টেশনে গবেষণারত অবস্থায় তাকে শুনতে হয়, তার স্বদেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভক্তির বেদনাদায়ক সংবাদ।

খুব সঙ্গত কারণেই সের্গেই-এর মহাকাশ মিশন নিয়েও দেখা দেয় চরম অনিশ্চয়তা। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের মধ্যে আর যাই হোক উচ্চাভিলাষী কোন বৈজ্ঞানিক মিশন নিয়ে চিন্তাও করা যায় না। এসব কারণে সম্পূর্ণ এক অনিশ্চয়তার মধ্যেই পূর্ব-পরিকল্পিত মেয়াদের চেয়ে একমাস বেশী সময় তাকে মহাশূন্যে অবস্থান করতে হয়। বলা যায়, আপন গ্রহে ফিরে আসার ভিসাই পাচ্ছিলেন না!! ১৯৯২, ২৫শে মার্চ তিনি পৃথিবীতে ফেরার অনুমতি পান। ফিরে এসে তিনি রুশ না হয়েও রাশিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।

পরে তার জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরী করা হয় আউট অব দ্য প্রেজেন্ট নামে। *

     (স্টিফেন হকিং একটি বড় কৌতুক করেছিলেন ২০০৯ সালের ২৮শে জুন। তিনি একটি পার্টির আয়োজন করেছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাতে তিনি কতিপয় বিজ্ঞানীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যারা টাইম ট্রাভেলের ধারণায় বিশ্বাসী। যে হলে পার্টির আয়োজন হয়েছিলো তার দরজায় বড় বড় হরফে লেখা ছিলো ‘ওয়েলকাম টাইম ট্রাভেলার্স’। মজার বিষয় হলো, ঐ সকল আমন্ত্রিত বিজ্ঞানী পার্টিতে আসেননি। হকিং অবশ্য তাতে মোটেও অবাক হননি। কারণ তিনি আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন পার্টি শেষ হওয়ার পর।

এরূপ মজার কৌতুক করে স্টিফেন হকিং আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? তিনি ঐ সকল বিজ্ঞানীর কাছে এ বার্তাটি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন যে, টাইম ট্রাভেল করে অতীতের দিকে যাওয়া, আসলে এটা অবাস্তব একটা কল্পনা। তা যদি সম্ভব হয় তাহলে তোমরা একটু আগে অতীত হওয়া আমার পার্টিতে অবশ্যই উপস্থিত হতে পারো।

কৌতুক তো কৌতুকই। সুতরাং প্রশ্নটি তার পরো থেকে যায়।

পৃথিবী আমাদের প্রিয় বাসভূমি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি পৃথিবীতে আমাদের জীবনকে করে তুলেছে অনেক বেশী আনন্দময় ও ছন্দময়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের অজ্ঞাতেই পৃথিবী হয়ে উঠছে বসবাসের অযোগ্য। এর পিছনে কারণ অনেক। একটি বড় কারণ হলো দূষণ। বিভিন্ন সূত্র থেকে বর্জ্য তৈরী হচ্ছে, আর তা গিয়ে মিসছে নদী-সাগরে। সৃষ্টি হচ্ছে পানিদূষণ। বিভিন্ন গ্যাস ও ধোঁয়া বের হয়ে মিশছে বাতাসে। সৃষ্টি হচ্ছে বায়ুদূষণ। এজন্য মানুষ এবং মানুষের প্রযুক্তিনির্ভর জীবনই দায়ী। তার উপর দায়ী প্রকৃতি ও জলবাযূর সঙ্গে মানুষের অসচেতন ও অসংযত আচরণ।

এটি অবশ্যই সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য বিরাট হুমকি ও আশঙ্কার বিষয়। তবে আরো বড় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে মহাকাশ-দূষণ। পৃথিবীদূষণের মত মহাকাশদূষণের পিছনেও মানুষই দায়ী। প্রতিনিয়ত মহাকাশে বর্জের‌্য স্তূপ তৈরী হচ্ছে। এসব বর্জ্যরে প্রধান উৎস হচ্ছে উৎক্ষিপ্ত রকেট ও নিষ্ক্রিয় কৃত্রিম উপগ্রহ। রকেট ও উপগ্রহের লাখ লাখ ভগ্ন খ- ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর কক্ষপথে। আরো আছে নভোচারীদের ফেলে আসা বিপুল আবর্জনা।...

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা