মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

সম্পাদকের রোযনামচা

সম্পাদকের রোযনামচা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 ২৬-৫- ৪১ হি. বৃহস্পতিবার

পুষ্পের তৃতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত প্রথম কিস্তি ‘ইয়াদেঁ-এর তরজমাটা হঠাৎ করেই সামনে এলো। ভাবলাম, সামনে যখন এসেছে, একটু দেখি; দেখলাম। একেবারে শুরুতেই একটা শব্দে নযর আটকে গেলো। শব্দটা হলো ‘গন্ধ’। মনে হলো, এত ভালো একটি লেখার শুরুতে ‘গন্ধ’ শব্দটা কেমন যেন দুর্গদ্ধ ছড়ায়! মূল উর্দূতে দেখলাম, রয়েছে: فرقہ واریت کی بو آتی ہے তরজমাটা তাহলে অন্যয় কিছু হয়নি! কিন্তু ঐ যে বললাম, ফুলের মত সুবাসিত একটি লেখার শুরুতে গন্ধ শব্দটা একটু হলেও দুর্গন্ধ ছড়ায়! ইচ্ছে হলো, দেখি তো, আমার স্নেহাষ্পদ আবুল বাশার কী শব্দ ব্যবহার করেছেন! না, আমার মত তিনিও ‘গন্ধ’ অতিক্রম করতে পারেননি! ভাবছি কী শব্দ এখানে সুসঙ্গত হবে, হতে পারে! হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা! বেশ তো! ‘বাস ও আভাস’! দেখুন তো এখন, কত সুন্দর হলো- ‘সম্প্রদায়-প্রীতির’ বাস ও আভাস আসে। ভালোই তো হলো, না!এধরনের শব্দযুগলের বেশ কদরও রয়েছে লেখকমহলে। যেমন ‘দীপ ও প্রদীপ, ‘যুক্তি ও প্রযুক্তি’, স্মরণ ও অনুসরণ, বাস ও বসবাস, ছল ও ছলনা, খেলা ও খেলনা, তাড়া ও তাড়না...অবশ্য নতুন একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, স-এর সমাবেশগত তানাফুর ও শ্রুতিকটুতা! তো এটা সহজেই দূর হতে পারে, যদি বলি, ‘সম্প্রদায়প্রীতির বাস ও আভাস পাওয়া যায়। ’লেখার জীবনের শুরু থেকেই এ ভালো অভ্যাসটি আমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে যে, যতই ব্যস্ততা ও ব্যতিব্যস্ততা থাক, নিজের পিছনের লেখা আমি পড়ি এবং নির্মম সমালোচকের দৃষ্টিতে পডি। তাতে শুধু নিজের কলমের ক্রটি, দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা-গুলো অপরাধীর মত সামনে এসে দাঁড়ায়। যদ্দুর পারি সংশোধন করে যাই। এতে দু’টো লাভ, মনের বন্দরে আত্মপ্রসাদের নৌকা ভিড়তে পারে না এবং কলমের সাধনার কিশতি বন্দর ত্যাগ করতে পারে না।আরেকটা কথা, ... থাক!

২৭- ৫- ৪১ হি. শুক্রবার

হযরতপুর প্রাঙ্গণ থেকে বের হচ্ছি আশরাফাবাদের উদ্দেশ্যে; মাদানী মাক্তাবের একটি শিশু কী স্নিগ্ধ লাজুকতার সঙ্গে সামনে এসে আগে বাড়িয়ে দিলো, পুষ্পের জন্য লেখা! অনুভব করলাম, কোমল একটি আনন্দ-তরঙ্গ বয়ে গেলো হৃদয়ের গভীরে। এই নিষ্পাপ শিশুরা যদি বড় হয়; বড় হওয়ার সুযোগ পায়, ‘আমাদের মন্দছায়া থেকে নিরাপদ থেকে, কত ভালো হয়! প্রার্থনা করি, ওদের কচি হাতের কাঁচা কলম একদিন যেন...! আনন্দের ছোট্ট তরঙ্গটি ধীরে ধীরে এমন বিস্তার লাভ করলো যে, সারাটা পথ... যদি সুযোগ হয় এ সংখ্যাতেই এ সম্পর্কে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে।

২৮- ৫- ৪১ হি. শনিবার

একজন পাঠিকা, সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন কাশ্মীর সংখ্যা হাতে পেয়ে। ‘... চিনারপাতার আগুন আমার হৃদয়ের পাতায়ও যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নাহ্, আর সহ্য হয় না!...সহ্য তো আমারো হয় না! কিন্তু আগুনের একটু উত্তাপ যদি দূর থেকে হলেও ভোগ করি, তাতে কিছুটা সান্ত্বনা তো আসে! চিটিটি পড়ছি, আর ভাবছি,  পুরো চিঠিটা পুষ্পে প্রকাশ করবো আমার মন্তব্যসহ; কিন্তু...শেষ লাইনটা পড়ে মনের ইচ্ছা মনে রেখে দিতে হলো, ‘এ চিঠি শুধু আপনার জন্য, আপনার কাছে মনের ব্যথা ও কষ্ট তুলে ধরার জন্য!আমাদের মায়েরা, মেয়েরা, বোনেরা কী প্রতিভা ও সম্ভাবনা নিজেদের মধ্যে ধারণ করে! একটা কলম, একটুকরো কাগজ হাতে পেয়েই কেমন জ্বলে উঠতে চায়! যদি...এই ‘যদি’র আগুনে আর কতকাল দগ্ধ হতে হবে আমাকে, কে জানে!

২৯- ৫- ৪১ হি.

একটা রম্যরচনা পাঠিয়েছে এক তালিবে ইলম চট্টগ্রাম দারুল মা‘আরিফ থেকে। সম্ভবত আরবী আদবের উচ্চস্তরে অধ্যয়নরত।বাংলা গদ্য সাহিত্যের অন্যতম কঠিন ও জটিল এবং নাযুক ও সংবেদনশীল শাখা হলো রম্যসাহিত্য। লেখার চর্চা ও পরিচর্যার অনেকগুলো ধাপ রয়েছে, সহজ থেকে কঠিন, কঠিন থেকে কঠিনতর...তো লেখাচর্চার ক্ষেত্রে ধীর পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করে করে অগ্রসর হওয়া দরকার।যেমন রোযনামচা লেখা, সহজ সরল ভাষায় ছোট ছোট ভ্রমণ-কাহিনী লেখা; চিঠির চল তো উঠে গিয়েছে, তবু ভাই-বোনকে, বন্ধু-বান্ধবকে নিয়মিত চিঠি লেখা; পড়ার সময় কোন গল্প বা লেখা পছন্দ হলে ঐ লেখাটি অবলম্বন করে নিজের মত করে লেখা ...কোন প্রস্তুতি ছাড়া হঠাৎ করে লেখার কঠিন স্তরে অনুপ্রবেশ করা, লাভজনক নাও হতে পারে, বরং ... ।

৩-৬- ৪১ হি.

রম্যরচনা কাকে বলে এবং তাতে কী কী উপাদান থাকতে হয়? রম্যরচনা কখন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে? ... এ বিষয়গুলো জানা থাকা দরকার।রম্য শব্দটির অর্থ হলো সুন্দর, মনোরম; যা অন্তরে হাস্যরস ও আনন্দ সৃষ্টি করে। তো এমন লেখাকেই রম্য লেখা/রচনা বলা হবে যা পাঠকের অন্তরে হাস্যরস সৃষ্টি করে। অবশ্য এ হাস্যরস বিভিন্ন মাত্রায় হতে পারে, কখনো শুধু ঠোঁটের ফাঁকে মুচকি হাসি দেখা দেবে, কখনো সৃষ্টি হবে হাসির এমন তোড় ও তরঙ্গ যে, পড়া থামিয়ে কিছুক্ষণ হেসে নিয়ে তারপর পড়া শুরু করতে হবে।...রম্যরচনা তখনই সার্থক হবে যখন হাসির ছলে পাঠকের সামনে জীবনের কোন না কোন বার্তা ও পায়গাম দেয়া হবে। সমাজের দেহে যেসব দুষ্ট ক্ষত রয়েছে সেগুলোর দিকে তির্যক ইঙ্গিত থাকবে, যাতে পাঠকের অন্তরে সেগুলোর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়।মূল বক্তব্যের পথে যেতে যেতে যত বেশী বিভিন্ন চিত্র ও চরিত্রের প্রতি যত বেশী ‘মিসরির ছুরি’ দ্বারা আঘাত করা হবে রম্যরচনা তত বেশী সার্থকতা লাভ করবে।এখানে একটি জরুরি কথা, পাঠক যতই হাসুন, হাসতে হাসতে তার পেটে খিল ধরে যাক, লেখার অবয়ব থেকে এটা যেন স্পষ্ট বোঝা যায়, লেখক মোটেই হাসছেন না। তিনি শুধু নিরীহ গোবেচারা হয়ে কলম চালিয়ে যাচ্ছেন।...উপরে যে কথাগুলো বলা হলো সেগুলোকে নীতি ও মানদণ্ডরূপে গ্রহণ করে পুষ্পের রমরচনাগুলো পড়ে দেখা যায়! অন্যান্য রম্যরচনাও একই মানদণ্ড সামনে রেখে পড়া যায়।

৬- ৬- ৪১ হি.

রম্যরচনা যে কোন ছোট্ট হাসির ঘটনা, চটকদার খবর, এমনকি বেদনার বিষয়কে কেন্দ্র করেও হতে পারে। হয়ত মূল ঘটনাব দেহাবয়ব তিন চার লাইনের বেশী নয়। কিন্তু রম্যলেখক সেটাকেই বিভিন্ন সঙ্গ ও প্রসঙ্গ যুক্ত করে করে দীর্ঘ অবয়ব দান করতে থাকেন। এভাবে লেখাটি বহুমাত্রিকতা লাভ করে এবং প্রয়োজনীয় দেহাবয়ব অর্জন করে। এ পসঙ্গে ‘জীভে পানি আসে এবং আসে জল’ লেখাটি পড়ে দেখুন। ছোট্ট একটি খবর, যার শিরোনাম ছিলো ‘তেতুল হুযূর’ সেটিকে অবলম্বন করে পুরো লেখাটি লতায় পাতায় কত দীর্ঘ এবং কীরূপ বহুমুখী একটি অবয়ব গ্রহণ করেছে! 

৯- ৬- ৪১ হি.

আত্মীয়’র হাতে আত্মীয়, এমনকি সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন, এ বিষয়ে লিখতে গিয়ে নয়া দিগন্তে একজন শিরোনাম দিয়েছেন, ‘নৈতিক শিক্ষার অভাবে মমতার বন্ধন রক্তিম’।‘রক্তিম’ শব্দটি সাধারণত রূপক-ভাবে এবং ভালো অর্থে ব্যবহৃত হয়। রক্তিম সূর্য, রক্তিম শুভেচ্ছা, লাজরক্তিম মুখমণ্ডল ইত্যাদি। পক্ষান্তরে এখানে যা বোঝাতে চাওয়া হয়েছে তার জন্য লিখতে হবে, ‘নৈতিক শিক্ষার অভাবে মমতার বন্ধন আজ রক্তাক্ত। 

১৮- ১২- ৪৪ হি.

এখানে এসে দীর্ঘ বিরতি পড়েছিলো, বিসমিল্লাহ্ বলে আজ আবার শুরু করছি। অষ্টম সংখ্যার ‘আহলান ওয়া সাহলান’ লেখাটি আজ পড়তে গিয়ে বেশ একটা ‘হোঁচট’ খেলাম। প্রশ্ন নিছক সৌন্দর্যের নয়, সুন্দর থেকে আরো সুন্দরের। পুরো লেখাটা আগে একবার পড়ে নাও। তারপর এই সম্পাদনাটি দেখো, ‘পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের যেমন প্রয়োজন মানুষের, ফুলের কি তেমন প্রয়োজন ছিলো?’ পুষ্পে প্রকাশিত হওয়ার আগে ছিলো এমন, ‘পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের যেমন প্রয়োজন ছিলো মানুষের, ফুলের কি তেমন প্রয়োজন ছিলো? হঠাৎ মনে হলো, খাদ্যের প্রয়োজন তো সর্বকালীন! সুতরাং এখানে কালনির্দেশক শব্দ ঠিক নায়, তাই ‘ছিলো’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ভালোই ছিলো, নযর এড়িয়ে গিয়েছে যা তা হলো ‘মানুষ’! চিন্তা করে দেখো, এখানে শব্দটির হযফ ও উহ্যায়ন উত্তম, না যিকির ও উল্লেখায়ন! এবার সম্পাদিত রূপটি দেখো: ‘পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের যেমন প্রয়োজন, ফুলের কি তেমন প্রয়োজন ছিলো? এবার ‘ছিলো’ শব্দটি আগে এনে পড়ে দেখো: ফুলের কি ছিলো তেমন প্রয়োজন?‘না, বেঁচে থাকার জন্য ফুলের প্রয়োজন ছিলো না, যেমন প্রয়োজন ছিলো খাদ্যের।’এখানেও দ্বিতীয় অংশে ‘ছিলো’ শব্দটি বাদ দিয়ে পড়ে দেখো, কোনটি উত্তম এবং শ্রুটির পক্ষে অধিক সুখকর! তারপর দেখো,  লেখা হয়েছে: ‘ফুল ছাড়া কি পৃথিবীর জীবন অসম্ভব ছিলো? না, বেঁচে থাকার জন্য ফুলের প্রয়োজন ছিলো না, যেমন প্রয়োজন ছিলো খাদ্যের। এখানে প্রশ্নের সঙ্গে উত্তরের শৈলীগত অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে, যা অলঙ্কারসম্মত নয়। কর্তব্য ছিলো এভাবে লেখা, ‘ফুল ছাড়া কি পৃথিবীর জীবন অসম্ভব ছিলো? না, ফুল ছাড়া জীবন অসম্ভব ছিলো না, যেমন অসম্ভব ছিলো খাদ্য ছাড়া জীবন।’

১৯- ১২- ৪৪ হি.

শব্দটা লিখতে সত্যি আমার কষ্ট হচ্ছে। আমার প্রিয় তালিবে ইলম, দ্বীনী ঘারানায় ‘ছাহিবে কলম’ হিসাবে যথেষ্ট সমাদৃত। তিনি লিখেছেন, ‘রাসূল মুখ বিকৃত করলো!’ কল্পনা করা যায়, এমন রাসূলের শানে এমন শব্দ আসতে পারে কোন রুচিশীল কলম থেকে! শব্দটা কী চিত্র তুলে ধরে পাঠকের সামনে! শানে রিসালাত কী এমন শব্দ ‘বরদাশত’ করে! এমন লেখা পড়ে যারা লেখা শিখবে, তাদের কলম থেকে কি রুচিশীল লেখা আশা করা যায়! ‘মানুষ মত্রই ভুল করে এবং লেখকও একজন মানুষ! কথাটা সঙ্গত, স্বাভাবিক ভুলের ক্ষেত্রে; অপরাধ পর্যায়ের ভুলের ক্ষেত্রে নয়। সুদীর্ঘ সময়ের নিবিড় চর্চা ও সাধনা দ্বারা এরূপ গুরুতর ভুলের ঊর্ধ্বে ওঠার পরই ‘পাঠকের জন্য’ লেখা শুরু করতে হয়, এর আগে কিছুতেই নয়। সমস্ত ইলম ও ফনের ক্ষেত্রে এটা সত্য বলে মান্য করা হয়, শুধু লেখার জগতে আমরা কেমন যেন হয়ে যাই!এমনিতেও عَـبَسَ এর অর্থ মুখ বিকৃত করা কিছুতেই নয়, বড় জোর বলা যায়, মুখ গোমড়া করা, আরো সঙ্গত শব্দ হলো, মুখভার করা। শানে রিসালাতের ক্ষেত্রে সবচে’ উপযুক্ত শব্দ হলো, ‘তিনি অপ্রসন্ন হলেন।

১০- ৮- ৪০ হি.

অষ্টম সংখ্যার ‘প্রথম কথা’র শুরুতে দেখো: ‘এক সুন্দর প্রভাতে, সূর্যোদয়ের ঠিক পূর্বক্ষণে যে সত্যটি আমার অন্তর্দিষ্টিতে উদ্ভাসিত হয়েছে পরম সত্তার অশেষ করুণায়, সেটাই আমার আজকের ‘প্রথম কথা’!মনে পড়ে, বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাক্যটির বর্তমান রূপ পেয়েছি। ‘ঠিক’ শব্দটি বাদ দিলে অর্থগত তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু প্রথম পর্বের চেয়ে দ্বিতীয় পর্বটি বড় হওয়া ভালো। তাছাড়া সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি জোরালো ভাব আসে, যা বক্তব্যের সঙ্গে সুসঙ্গত। ‘ঠিক আগে/ঠিক আগমুহূর্তে’, এটা ‘প্রভাত ও সূর্যোদয়ের সমশ্রেণীর নয়। ‘পরম সত্তার অশেষ করুণায়’ এটা হতে পারে ‘উদ্ভাসিত’ হওয়ার কারণ। সেক্ষেত্রে (,) কমা হবে করুণায়-এর পরে। অর্থগত দিক থেকে সেটাই সঙ্গত। তবে এ অংশটি স্বাভাকি মাত্রার চেয়ে দীর্ঘ হয়ে যায়। আবার হতে পারে পরবর্তী অংশের কারণ। তখন (,) কমা হবে ‘উদ্ভাসিত হয়েছে-এর পরে। তবে অর্থগত দিক থেকে এটি তেমন গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে আরো চিন্তাভাবনা করে বাক্যটি আরো সুষম করতে হবে, কিন্তু সময়ের যে বড় অভাব!

২০- ১২- ৪৪ হি.

অষ্টম সংখ্যার প্রথম কথা’র দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ দেখো, ‘আমি হয়ত ভাবি, বিভিন্ন জাগতিক অভাবের কারণে আমাদের জীবনে বিভিন্ন জাটিলতা দেখা দেয়।....এখানে ‘বিভিন্ন’ শব্দের পুনরুক্তি দূর করা যায় দ্বিতীয় স্থানে ‘নানান’ শব্দটি ব্যবহার করে।তারপর কথা হলো, এ বাক্যটির ব্যাখ্যারূপে সামনে তিনটি বাক্য এসেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বাক্যের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে প্রথম বাক্যটি হতে পারতো এমন: ‘কখনো আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সামনের চলার পথ কঠিন হয়ে যায়। এখানে প্রথম বাক্যটি যদি একটু ছোট করতে চাই, তাহলে ভেবে দেখতে হবে, সবচে’ কম দরকারী অংশ কোনটি! দেখো: ‘কখনো আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চলার পথ কঠিন হয়ে যায়। ’‘অর্থাৎ’... এখানে হলো নতিজা ও ফল। এটি হলো বক্তব্যের মূল। এটি বলার জন্যই আগের এতগুলো বাক্যের বিস্তার। ‘অর্থাৎ’ শব্দটির আলাদা আবহ আছে, বলা যায়, এটি ‘পুস্তকীয়’ শব্দ। এর স্থলে ‘এভাবে’ শব্দটি ব্যবহার করে পড়ো দেখি! 

২৫- ১২- ৪৪ হি.

অষ্টম সংখ্যার সম্পদকীয়র দ্বিতীয় অংশের শুরুতে দেখো: ‘এখানে আমরা আমাদের আলোচনাকে বিশ^পর্যায়ে ব্যাপ্ত করতে চাই না...এখানে সর্বনামের বাহুল্য আছে, তাছাড়া আছে ‘আলামাতে মাফঊল’ -এর অপয়োজনীয় ব্যবহার। সম্পাদিত রূপটি দেখো: ‘এখানে আলোচনাটি আমরা বিশ্বপর্যায়ে ব্যাপ্ত করতে চাই না....।

২৮- ১২- ৪৪ হি.

অষ্টম সংখ্যার সম্পাদকীয়র শুরুটি যদি এভাবে হতো, ‘সারা পৃথিবীতে শিক্ষার মোটামুটি দু’টি ধারা রয়েছে... তাহলে পাঠকচিত্তে আকর্ষণ ও কৌতূহল সৃষ্টি হতো না মূল বক্তব্যটির প্রতি। পক্ষান্তরে বর্তমান রূপটি দেখো, শুরুতেই রয়েছে মূল বক্তব্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করার পর্যাপ্ত উপাদান। লেখার প্রথমে কিন্তু এটা ছিলো না, পরে সম্পাদনার সময় এটা যুক্ত হয়েছে।

২৯- ১২- ৪৪ হি.

দীর্ঘ ব্যবধানের পর পুষ্পের কাজ আবার শুরু করেছি। বেশ বুঝতে পারছি, যথেষ্ট ছন্দপতন ঘটে গিয়েছে। আগের অবস্থাটা এখন নেই, না স্বাস্থ্যের দিক থেকে, না উদ্যম উদ্দীপনার দিক থেকে! না পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগের দিক থেকে! তবে চেষ্টা তো করতেই হবে, আগের অবস্থার যত কাছে যাওয়া যায়! আল্লাহ্ যদি সাহায্য করেন, কিছু তো অসম্ভব নয়! 

২ - ১- ৪৪ হি.

চার বছর আগে যে শিশুটির বয়স ছিলো আটবছর, এখন তারা বারো বছরের বালক। কে জানে, এ সময়টা ওরা পুষ্পের সান্নিধ্যে যাপন করেছে কি না! ওদের মা-বাবা এ বিষয়ে কতটা সচেতন ছিলেন!

৬ - ১- ৪৪ হি.

যাকে বলে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত, একটি মেয়ের কাছ থেকে একটি চিঠি এসেছে, গতকাল। জানতে চেয়েছে, ওদের প্রিয় সম্পাদক ভাইয়া এবং ওদের প্রিয়তম পুষ্প এখন কী অবস্থায় আছে। পুষ্পের দেখা কি ওরা আর কখনো পাবে!প্রিয় পুষ্পকে সবসময় নাকি ‘শরণ’ করে! কত ভালো হতো, যদি ঠিক বানানটা লিখতো। হাতের কাছে লোগাত থাকা খুব জরুরি। কেউ লেখে স্বরণ, কেউ লেখে শরণ। দু’একজন স+ম পর্যন্ত ঠিকই লেখে, খুশী হতে যাবো, এমন সময় দেখি, শব্দটা শেষ করেছে দন্ত্য-ন দিয়ে, স্মরন! ‘স্মরণ’ লিখতে জানে খুব কম ছেলে-মেয়ে। মাশাআল্লাহ্, স্বরন ও শরন লেখার নমুনাও আছে! বানানের বিষয়ে এত অবহেলা, এত নির্লিপ্ততা সত্যি দুঃখজনক। মেয়েটি লিখেছে, আমাদের জন্য পুষ্পের বিচ্ছেদ খুব ‘দুক্ষজনক’! হাঁ, আমার জন্য তো আরো দুঃখজনক।

৭ - ১- ৪৪ হি.

আবারো একই ভুল, ‘মহানবী স. হযরত আয়েশাকে বাচ্চা-বয়সে বিয়ে করেছেন। তোমার বাবা তোমার মাকে বিয়ে করেছেন, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু এমন সর্বোত্তম অভিজাত স্থানে বিবাহের স্থানে বিয়ে! বলি, রুচিহীনতারও তো একটা সীমা থাকা দরকার। বিবাহের নিমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়, ‘শুভবিবাহ’! কেন, ‘শুভবিয়ে’ নয় কেন! আচ্ছা, ‘বাচ্চা বয়সে’, এখানে এ শব্দপ্রয়োগ ‘বাচ্চা মানুষের’ কাজ মনে হয় না! আরো কথা আছে, থাক!

১০- ১- ৪৪ হি.

সম্পাদকের রোযনামচা না হলে মাদরাসার কোরবানি ও যাবীহা প্রসঙ্গে কিছু লিখতে পারতাম, কথাটা ভাবছি, এমন সময় দেখি, এক মাওলানা তালিবে ইলম লেখা নিয়ে হাযির। লেখার শিরোনাম হলো, ‘যাবীহার চোখে অশ্রু’!ভাবলাম, এটা নিয়েই না হয় কিছু লিখি। যাবীহা ও অশ্রু, শব্দদু’টি সমশ্রেণীর নয়। এখানে মন না চাইলেও লিখতে হবে ‘পানি’। যদি লিখি, যাবীহার চোখ অশ্রুসজল তাহলে কিন্তু মোটামুটি চলে! কারণ... ।

৪- ১- ৪৪ হি.

আল্লাহর রহমতে মাদানী মক্তবের বেশ কিছু শিশু লেখা দিয়েছে। বানানভুল যথেষ্ট কম। আমার ধারণার চেয়ে অনেক কম। তদুপরি বয়স হিসাবে, লেখার গতি বেশ সাবলীল।...একটু আশাবাদী হতে চাই, কিন্তু কেমন যেন ভয় করে! (চলবে ইনশাআল্লাহ্) 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা