রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

কিশোর পাতা

তাঁকে/সবাইকে

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

তাঁকে

একদিন তাকে আমি পেয়েছিলাম এখানে এই পথের ধারে। অবহেলায় পড়েছিলো পথের ধূলার মধ্যে। পথচারী কেউ ফিরে তাকিয়েছে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে, কেউ এত বেশী ব্যস্ততার মধ্যে ছিলো যে, ফিরে তাকাবারও অবসর হয়নি।

পথের ধূলায় সে ছিলো নিজের চিন্তায় বিভোর। তারও যেন অবসর ছিলো না কারো অবহেলা গায়ে মাখার!

পথের ধূলায় এভাবে অবহেলায় তাকে পড়ে থাকতে দেখে কোথায় যেন টান পড়েছিলো আমার ভিতরে! আমারও ব্যস্ততা ছিলো; আমারও পথচলার তাড়া ছিলো। কিন্তু পথের দাবী ভুলে আমি থমকে দাঁড়ালাম তাকে ধূলিশয্যায় এভাবে অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখে। হৃদয়ের কিছু একটা বন্ধন এমনও থাকে, যাকে মানুষ সারা জীবন ভুলে থাকে। সেই বন্ধন হঠাৎ কোন এক উপলক্ষে জেগে ওঠে! পুরো অস্তিত্বকে তখন নাড়া দিয়ে যায়। সেদিন আমার জীবনেও হয়ত তেমন কিছু হয়েছিলো!

সেও তাকালো চোখ তুলে আমার দিকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা এত মানুষ গেলো তার পাশ দিয়ে। কারো দিকে তাকায়নি সে। আমার দিকে তাকালো। তারো কি হৃদয়ের কোন

তারে টান পড়েছিলো সেদিন?

এবং আরো অবাক হলাম যখন প্রায় মিনতিঝরা কণ্ঠে বললো আমাকে, হে পথিক, জানি না কে তুমি! পথের শেষে কোথায় তোমার ঠিকানা!! তবু আমি যেতে চাই তোমার সঙ্গে। তুলে নাও আমাকে পথের এই ধূলিশয্যা থেকে! তুমি যদি তুলে না নাও হয়ত কেউ নেবে না। পথের ধূলার মধ্যেই হয়ত পড়ে থাকবো আমি জীবনের বাকি দিনগুলো!! তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমি যেতে চাই তোমার সঙ্গে! হয়ত অদৃশ্যের কোন বন্ধনের দাবী আছে তোমার প্রতি আমার!!

বুঝতে পারিনি তার রহস্যঘেরা কথার কোন মর্ম। শুধু অবাক হয়ে ভেবেছি, এত মিনতি ঝরে, ঝরতে পারে কারো কণ্ঠ থেকে!!

কিছু না বুঝেই অনেকটা যেন ভিতরের কোন বন্ধনের টানে তুলে নিলাম তাকে পথের ধূলা থেকে। তারপর জীবনের দীঘ পথ পাড়ি দিলাম তার সঙ্গে, কিংবা তাকে সঙ্গে করে। কিন্তু এ রহস্য চিরকাল রহস্যই রয়ে গেলো, আমি তাকে তুলে নিলাম, না সে আমাকে তুলে নিলো পথের ধূলা থেকে! একটু একটু করে যতই জানছি তাকে, রহস্যের ঘোর যেন জটিল থেকে জটিল হয়ে চলেছে আমার জীবনে!

আমার জীবনে কখনো কোন কিছুর অভাব ছিলো না। আলোর বড় অভাব ছিলো। অন্ধকার পথে এবং পথের অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে খেয়ে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছি জীবনের দীর্ঘ সফর। কখনো আলোর পরশ অনুভব করিনি আমার জীবনে। যদি সত্য বলি, জীবনে আলোর প্রয়োজন রয়েছে, এটাই জানা ছিলো না আমার। পথের ধূলা থেকে তুলে নিয়ে তাকে যেদিন আলিঙ্গন করলাম। জীবনের আকাশ থেকে আঁধার যেন ধীরে ধীরে সরে যেতে লাগলো! একটু একটু করে যেন পূর্বদিগন্তে আলো ফুটতে শুরু করলো!

একদিন নিজের কাছে মনে হলো, আমি এখন এক আলোকিত মানুষ। অহঙ্কার হলো না, কৃতজ্ঞতার অনুভূতি হলো। তখন একটু একটু করে মনে হতে লাগলো পথের ধূলা থেকে হয়ত সে-ই আমাকে ...! হৃদয়ের নরম মাটিতে চিন্তাটা মাত্র শিকড় বসাতে শুরু করেছে। হঠাৎ করেই আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো সে! পথিক, তোমার তো পথচলা শেষ হয়ে আসছে। বিদায় দাও। এবার যাই আমি। আবার  পড়ে থাকবো পথের ধূলিশয্যায় নতুন কোন পথিকের আশায়!!

***

পথের ধূলায় তাকে পেলাম। জীবনের চলার পথে তাকে আপন করে নিতে চাইলাম। একটু একটু করে তাকে চিনতে শুরু করলাম। কিন্তু তার আগেই এসে গেলো বিদায়ের বেলা। বেজে উঠলো হারানোর সুর। বড় আফসোস হয়, যাওয়ার সময় তার ঠিকানা জেনে রাখা হলো না।

***

হে প্রিয় বন্ধু! তুমি কি কখনো দেখেছো তাকে পথের ধূলিশয্যায় পড়ে থাকতে অবহেলায়! যদি দেখা পাও,  পথচলার ব্যস্ততা কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়ে একটু দাঁড়িয়ো তার পাশে। হয়ত সে তোমাকে বলবে তাকে তুলে নিতে! তোমার সঙ্গে তোমার ঠিকানায় তাকে নিয়ে যেতে। নাও যদি বলে, তুমি নিজেই এগিয়ে গিয়ে পরম মমতায় তুলে নিয়ো তাকে। আর কিছু না হোক, জীবনটা তোমার ...!

 

সবাইকে

বৃষ্টির জল আকাশ শুধু তোমাকেই দান করে না; দিনের সূর্য এত আলো, এত তাপ ও উত্তাপ শুধু তোমাকেই দান করে না; রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ তার  ‍স্নিগ্ধ  জোসনা শুধু তোমাকেই দান করে না, আমাকে, তোমাকে, তাকে এবং সবাইকে দান করে।

এই যে ভোরে শিশির ঝরে, এই যে মেঘেরা আল্পনা আঁকে, এই যে অন্ধকার রাতে তারাদের মেলা বসে তা শুধু আমার, তোমার এবং তার জন্য নয়, সবার জন্য। তাহলে কেন আমি নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকি! কেন সবাইকে ভালোবাসি না!! প্রকৃতির মত কেন নিজেকে আমি সবার জন্য অবারিত করি না!!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা