মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

কিশোর পাতা

একটি আকুতি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

একসময় আমার অবস্থা এমন ছিলো যে, চোখ থেকেও যেন আমি অন্ধ! সবকিছু দেখি, কিন্তু কিছু যেন দেখতে পাই না। এমন বিশাল একটা নীল আকাশ, কালো-সাদা মেঘের ভেসে যাওয়া, রোদ-বৃষ্টি ও রঙধনু, অথচ আমি দেখতে পাই না। চাঁদ আছে, জোসনা আছে, অসংখ্য তারা আছে, কিন্তু আমি দেখতে পাই না। আমার চারপাশে কত সবুজ,  কত পাখী কত গান, কত নদী, কত ঝরনা, অথচ আমি দেখতে পাই না।

সব নেইয়ের মধ্যে আমার একটি জিনিস ছিলো, অন্তরের গভীরে একটি আকুতি ছিলো। আমার উপরে নীচে, ডানে বামে, আমার চারপাশের সবকিছু আমি দেখতে চাই, এমন দেখা যা হৃদয় ও আত্মাকে প্রশান্তির শীতল স্পর্শ দান করে। কিন্তু কোথায় পাবো সেই দৃষ্টি!

আমার চারপাশে অনেক লেখা ছিলো। লেখাগুলোর মধ্যে আমি আলোর দেখা পেতে চাই, কিন্তু পাই না। জীবনের সঠিক পথের পরিচয় পেতে চাই, কিন্তু পাই না। এমন লেখার তাহলে কী মূল্য, যাতে পাঠকের কোন বার্তা নেই এবং নেই কোন দিকনির্দেশ! এতকিছু নেইয়ের মধ্যে আমার কাছে খুব সাধারণ ও সামান্য একটা কলম ছিলো! যখন সুযোগ হতো আমি কলম হাতে বসতাম। আমি কিছু লিখতে চাই, এমন লেখা যা আমাকে এবং আমার লেখা যারা পড়বে তাদের অন্ধকারের রাজ্য থেকে আলোর জগতে নিয়ে আসবে। আমার এবং আমার পাঠকের হৃদয় ও আত্মা প্রশান্তি লাভ করবে। কিন্তু আমি লিখতে পারি না!

না পারার মধ্যেও যখন কিছু লিখি, একটু ভালো লাগে! কিন্তু বুঝতে পারি, এটা তো আসলে ভালো লাগা নয়, নিজের সঙ্গে প্রতারণা! এমনকি কেউ যদি আমার এ লেখা পড়ে, তার সঙ্গেও হবে প্রতারণা!

ভিতরের অস্থিরতাটা যখন মনকে অতিক্রম করে হৃদয়কে এবং হৃদয়কে অতিক্রম করে আত্মাকে স্পর্শ করে তখন মনে হতো, আর তো পারি না! বেঁচে থাকার কোন অর্থ তো খুঁজে পাই না!

এই পৃথিবীর জনারণ্যে এমন কেউ কি আছে, যে আমাকে দেখতে শেখাবে, পড়তে শেখাবে, লিখতে শেখাবে, ভাবতে শেখাবে! আমার হৃদয় ও আত্মার সবযন্ত্রণা দূর করবে! যে আমাকে বাঁচতে শেখাবে, আমাকে জীবনের উদ্দেশ্য ও সার্থকতা বোঝাবে!

 ***

জীবনের এই কঠিন সময়ে, চারপাশ থেকে ঘিরে ধরা এই ভয়ানক হতাশার মধ্যে একদিনদেখা পেলাম আমি পুষ্পের! আচ্ছা, এমন সুন্দরও হতে পারে কোন নাম, যার উচ্চারণেও পাওয়া যায় অপার্থিব সুবাস! এমনো হতে পারে কোন লেখা, যা শুধু আলো ছড়ায়, জীবনের প্রতি আহ্বান জানায়, জীবনকে সুন্দর বার্তা দেয় এবং.. এবং হতাশার অন্ধকারের মধ্যে আশার প্রদীপ জ্বালে।

পুষ্পের সান্নিধ্যে সেদিন আমি যেন নতুন জীবন লাভ করলাম! জীবনের যেন নতুন অর্থ খুঁজে পেলাম! প্রকৃতিকে দেখতে, প্রকৃতির সৌন্দর্য অনুভব করতে শিখলাম এবং.. প্রকৃতির মাঝে পরম সত্তার আলোক-উদ্ভাস অনুভব করলাম। আমার হৃদয় ও আত্মা পরম প্রশান্তি লাভ করলো।পুষ্পের কল্যাণে আমি পড়তে শিখলাম, লিখতে শিখলাম এবং .. এবং যা দেখি, আর যা দেখি না, তার গভীরে গিয়ে ভাবতে শিখলাম। পরম বিস্ময়ের সঙ্গে তখন দেখি, আমার হৃদয় ও আত্মা প্রতিদিন একটু একটু করে সমৃদ্ধ হচ্ছে, নতুন চিন্তায়, নতুন চেতনায়, নতুন ভাবে, ভাবনায়!

কবির, জামেয়া হোসায়নিয়া, বালাগঞ্জ, সিলেট

০০ তুমি যা লিখেছো তা তো পুষ্পের পাতায় দিতে পারলাম না, তবে তুমি যা লেখোনি, অথচ তোমার লেখা থেকে আমি তা পড়তে পেরেছি, তা পুষ্পের পাতায় তুলে দিলাম। তোমার লেখার অনুলিপি আছে তোমার কাছে! মিলিয়ে দেখো, যদি বুঝতে পারো, আশা করি তোমার সামনে জীবনের নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে। এই কামনা করে তোমাকে পুষ্পের এবারের অতিথি- সম্পাদকরূপে বরণ করা হলো।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা