মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

কিশোর পাতা

আমাকে...

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

দিনের আলোতে, রাতের অন্ধকারে, ভোরের রাঙা সূর্যের প্রভায়, সন্ধ্যা- দিগন্তের বিষণ্ন লালিমায়, জনতার কোলাহলে, প্রকৃতির নির্জনতায় যখন আমি আত্মপ্রকাশ করি, তুমি আমাকে প্রশ্ন করো, ‘কে আমি’? সাগরের উর্মিমালায়, বহমান ঝরণার কুলকুল সঙ্গীতে, জলপ্রপাতের উদ্দাম উচ্ছলতায় এবং দীঘি ও সরোবরের শান্ত জলরাশির আয়নায় যখন আমি আত্মপ্রকাশ করি, তুমি আমাকে প্রশ্ন করো, ‘কে আমি’? তুষার-আবৃত পবর্তের শুভ্র চূড়ায়, বৃষ্টি ধোয়া রোদের আকাশে যে রঙধনু তার বর্ণচ্ছটায়, সাদাকালো মেঘের আল্পনায়, চাঁদের জোসনায় এবং তারাদের ঝিলিমিলিতে যখন আমি আত্মপ্রকাশ করি, তুমি আমাকে প্রশ্ন করো, ‘কে আমি’? কেন তোমার এ প্রশ্ন? তোমার জীবনে আমি কি এত দূরের, এত অপরিচিত এবং এত অপ্রয়োজনীয়!! তোমাকে আমি তাহলে এত আপন করে চিনি কীভাবে!  এত আপনার করে জানি কীভাবে? তোমার প্রশ্ন আমাকে আহত করে এবং ব্যথিত করে। তবু আমি তোমাকে বলি আমার পরিচয়। বলি, আমার সঙ্গে তোমার গভীর সম্পর্ক ও নিবিড় বন্ধনের কথা, আমার ভাষায়! তবে চেষ্টা করি, প্রতিটি কথা যেন হয় তোমার বোধ ও বুদ্ধির নিকটবর্তী। আমি আশা করি এবং আশায় থাকি যে, এখন অন্তত তুমি চিনবে আমাকে এবং হৃদয়ঙ্গম করবে আমার সঙ্গে তোমার সম্পর্কের অটুট বন্ধন। কিন্তু ...! তুমি বোঝো না, বুঝতে চাও না। তুমি আবার প্রশ্ন করো, আমি আবার বলি! আরো সহজ করে, আরো কোমল ও মোলায়েম করে। কিন্তু ...!  আমার তখন বেদনার অন্ত থাকে না! 

 আচ্ছা, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাও না?  কিংবা তুমি কি আমার ভাষা বুঝতে পারো না? দেখো, দু’দিনের এ জীবনকে বিদায় জানাবার এবং জীবনকে অনন্ত কালের জন্য বরণ করবার সময় কিন্তু ঘনিয়ে এসেছে। যে কোন সময় ডাক আসতে পারে মহাকালের গর্ভ থেকে, ‘চলো সময় হয়েছে ফিরে যাওয়ার’। এখনই সময় তোমার আমাকে চেনার, আমাকে জানার এবং আমাকে আপন করে বরণ করে নেয়ার।  আগামী জীবনকে সৌভাগ্যের সঙ্গে বরণ করার জন্য তোমাকে তো এখনই প্রস্তুত হতে হবে! সেখানে ঐ জগতে আমাকে তোমার প্রয়োজন হবে বন্ধু! তখন তুমি আমাকে চিনবে কীভাবে, এখন যদি আমাকে চিনতে না পারো! এখন যদি আমার সঙ্গে তোমার নিবিড় বন্ধনের রহস্য অনুধাবন করতে না পারো, তখন তাহলে সম্পর্কের, বন্ধনের দাবীতে আমার কাছে এসে দাঁড়াবে কীভাবে! আমাকে চিনতে চাও! আমার পরিচয় জানতে চাও! আমার সঙ্গে তোমার বন্ধননিবিড়তা অনুভব করতে চাও! তাহলে প্রথমে তাকাও কোমল দৃষ্টিতে একটু মমতার সঙ্গে; এই যে সবুজ পাতা, এই যে ফুলের পাপড়ি; তারপর শুনতে চেষ্টা করো একটু নিমগ্নতার সঙ্গে; এই যে বসন্তের বাহার, এই যে কুকিল বুলবুলির গান, এই যে প্রকৃতির বাণীতরঙ্গ! দেখো এবং শোনো, তারপর ফিরে তাকাও নিজে ভতরে, হৃদয়ের অঙ্গনে এবং আত্মার গভীরে, দেখতে পাবে তুমি আমাকে,  আমার স্বরূপে স্বপরিচয়ে!আমি তো তোমার সঙ্গে আছি, তোমার প্রথম কান্নার সময় থেকে!  আমি তো তোমার সঙ্গে থাকি যখন তুমি নিঃসঙ্গতার  যন্ত্রণায় দগ্ধ হও এবং যখন তুমি বহুসঙ্গের জ্বালাতনে অস্থির হও!! যখন তুমি তৃপ্তি ও প্রাপ্তির আনন্দে উদ্বেলিত হও এবং যখন তুমি অপ্রাপ্তি ও অতৃপ্তির বঞ্চনায় হও অস্থির। আমি তোমার সঙ্গে ছিলাম, তোমার সঙ্গে আছি এবং তোমার সঙ্গে থাকবো। তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক তো অবিচ্ছেদ্য এবং চিরকালের!! তুমি কায়া, আমি ছায়া!! ছায়া ও কায়ার রহস্যে ঘেরা আমাদের সম্পর্ক ও বন্ধন। এ রহস্যের আবরণ একটু যদি উন্মোচন করতে পারো তাহলেই খুব সহজে চিনতে পারবে আমাকে।কেন চিনতে পারো না আমাকে? এত কাছের হয়েও কেন ভাবো আমাকে এত দূরের! কায়া থেকে ছায়ার এবং ছায়া থেকে কায়ার দূরত্ব কতটুকু! আমি তোমার বুকের, তোমার হৃদয়-স্পন্দনের এত কাছে, অথচ অপরিচয়ের কত বড় শূন্যতা আমাদের মাঝে! জানো, কীভাবে অতিক্রম করবে এ বিরাট দূরত্ব! কীভাবে পূর্ণ হবে এ বিশাল শূন্যতা! গভীর রাতের নির্জনতায় ডাকবে তাঁকে, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাকে এবং সৃষ্টি করেছেন তোমার সঙ্গে আমার নিবিড় বন্ধন। হৃদয়ের সবটুকু আকুতি ও মিনতি নিবেদন করে বলবে তাঁকে, দয়া করো হে দয়াময়! ছায়াঘেরা এ রহস্যের আবরণ আমার জন্য উন্মোচন করে দাও! আমি চিনতে চাই তাকে! আমি বুঝতে চাই তাকে! আমি যেতে চাই তার গভীর সান্নিধ্যে! আমি পেতে চাই তার সঙ্গে সম্পর্কের তাপ ও উত্তাপ এবং নিবিড় বন্ধনের উষ্ণতা। আচ্ছা, আমি যদি প্রশ্ন করি, কে তুমি? কী তোমার পরিচয়? কী হবে তোমার উত্তর? আমাকে যে প্রশ্ন করো তুমি সে প্রশ্নেরও কী হতে পারে না একই উত্তর!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা