জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮)

কিশোর পাতা

পুষ্পেরউদ্যানে তোমাদের স্বাগতম!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

পুষ্পেরউদ্যানে তোমাদের স্বাগতম!

 

কত দিন হলো, পুষ্প অসুস্থ। কাছের দু’একজন জানতো পুষ্পের অসুস্থতার কথা। ওরা সকাল-বিকাল আসতো পুষ্পকে দেখতে, পুষ্পের খোঁজ নিতে।

দূরের ছেলেরা মেয়েরা তো কিছুই জানতো না। তাই তরা শুধু পেরেশান, কী হলো পুষ্পের! এত দিন হয়ে গেলো পুষ্প আসে না কেন?!

শেষে কীভাবে যেন সবার জানা হয়ে গেলো, পুষ্প তো এখন খুব অসুস্থ, যাকে বলে শয্যাশায়ী! ছেলেদের মনটা ভার হলো; মেয়েদের চোখে জল এলো। ছেলেরা মেয়েরা খুব করে দু’আ করলো। তাদের পুষ্প যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। সুস্থ হয়ে সেজেগুজে পুষ্প যেন তাদের কাছে আবার আসে বেড়াতে।

ছেলেরা মেয়েরা প্রতিজ্ঞা করে, পুষ্প যখন আসবে, পড়া দিয়ে লেখা দিয়ে এবং সুন্দর সুন্দর আচরণ দিয়ে পুষ্পকে আমরা খুশী করবো।

এর মধ্যে হয়েছে এক কা-! একটি ছেলে, আর দু’টি ছোট্ট মেয়ে, ওরা নাকি ভাই-বোন, কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়েছে, পুষ্পের কাছে যাবে! আহারে অসুস্থ পুষ্পটা শুকিয়ে হয়ত এতটুকুন হয়ে গেছে! ওরা ভাবলো, আমাদের একটু আদর পেলে পুষ্প তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।

কাজটা কিন্তু বুদ্ধির হয়নি। অচেনা, অজানা পথ! কত রকম দুর্ঘটনাই তো হতে পারে। মা-বাবাকে না বলে এভাবে বের হয় কেউ!

যাক, আল্লাহ্ সাহায্য করেছেন, ওরা পুষ্পের উদ্যানে ঠিকঠাক এসে পৌঁছেছে। এদিকে পুষ্প প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছে। পুষ্পকে ওরা আদর করবে কী! পুষ্পই বরং আদরে আদরে ওদের ভরিয়ে দিলো। তারপর খুব করে বকে দিলো।

ওরা যখন কাঁদো কাঁদো, পুষ্প তখন হাসিমুখে বললো, আচ্ছা, আর বকবো না, তবে তোমরাও আর এমন ভুল করো না। আচ্ছা, এখন একটু আমার বাগানে ঘুরে বেড়াও। তোমাদের আব্বুকে খবর দিচ্ছি। তিনি এসে তোমাদের নিয়ে যাবেন।

 

সেই ছেলেটি এখন সাঁতার জানে

আমাদের গ্রামটি নাদীর তীরে। নদীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর। নদীতে সাঁতার কেটে গোসল করতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি সাঁতার কেটে নদী পার হতে পারি।

একদিনের ঘটনা। একটি ছেলে, আমাদের আত্মীয়। সে সাঁতার জানতো না। তবু সে নদীতে গোসল করতো, আর ছেলেদের সঙ্গে খেলা করতো, কখনো হাঁটু পানিতে, কখনো কোমর পানিতে, আবার কখনো বুক পানিতে। তো ছেলেটি বুক পানিতে খেলা করছে, হঠাৎ পা পিছলে সে পড়ে গেলো নদীর গভীরে। অন্য ছেলেরা তখন চিৎকার শুরু করলো। তাদের চিৎকার শুনে আব্বু নদীর তীরে ছুটে গেলেন। আমিও আব্বুর পিছনে পিছনে গেলাম। আব্বু ছেলেটিকে নদী থেকে উদ্ধার করলেন। সে তখন অজ্ঞান। সবাই ভাবলো ছেলেটি আর বেঁচে নেই। ছেলেটির মা তো কাঁদতে কাঁদতে অস্থির।

ছেলেটি হাসপাতালে নেয়া হলো। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, এখনো বেঁচে আছে। আশা করা যায়, আল্লাহ্র রহমতে বেঁচে যাবে।

আল্লাহ্র রহমতে ছেলেটি সুস্থ হয়েছিলো। আব্বু তাকে সাঁতার শিখিয়েছেন। এখন সে খুব ভালো সাঁতার জানে। সাঁতার কেটে নদী পার হতে পারে।

্আমরা তো নদীর দেশের মানুষ। প্রত্যেক ছেলের উচিত ছোট বয়সেই সাঁতার শিখে নেয়া।

রিফ‘আত

০০ প্রিয় রিফ‘আত। তোমার সঙ্গে আমিও একমত। তবে শুধু ছেলেদের কেন, মেয়েদেরও সাঁতার শেখা কর্তব্য।

তোমার চিঠি পেয়েছি। তোমাদের সুন্দর একটি বাগান আছে জেনে খুশী হলাম। আরো খুশী হলাম, আমার জন্য তুমি সেই বাগান থেকে শিউলীফুল পাঠিয়েছো। ফুলগুলো আমি রেখে দিয়েছি। তোমাকে অনেক অনেক জাযাকাল্লাহ্।

***

হানযালা বিন ওমর, মাদরাসাতুল মাদীনাহ্

তুমি তোমার দাদুর কথা লিখেছো। তিনি ইনতিকাল করেছেন। দাদুর কথা তোমার খুব মনে পড়ে। তখন তোমার কষ্ট হয় এবং কান্না পায়। তোমার কষ্টের জন্য আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তুমি দাদুর জন্য সবসময় দু‘আ করছো, এটা খুব ভালো। আমরাও দু‘আ করছি, আল্লাহ্ যেন তোমার দাদুকে কবরে শান্তিতে রাখেন এবং জান্নাত নছীব করেন।

তুমি যদি ভালোভাবে লেখাপড়া করো এবং বড় আলিম হতে পারো তাহলে তোমার দাদুর আত্মা শান্তি পাবে এবং তোমার সমস্ত নেক আমলের ছাওয়াব তোমার দাদুর আমলনামায়ও জমা হবে। কারণ ...।

 

একদিন আমরা মাঠে বল খেলছিলাম। মাঠের একদিকে ছিলো বড় একটা পুকুর। হঠাৎ আমাদের বলটা পুকুরে গিয়ে পড়লো। আমার খেলার সাথী ছিলো মাহী। সে সাঁতার জানতো না। মনে হলো, একথাটা সে যেন ভুলেই গিয়েছিলো। সে দৌড়ে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিলো বলটা আনার জন্য। ঝাঁপ দিয়েই কিছুক্ষণ হাবুডুবু খেলো। তারপর পুকুরের পানিতে ডুবে গেলো। আমরা সবাই পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে শুধু চিৎকার করলাম। আর কিছুই করতে পারলাম না। আমাদের চিৎকার শুনে বড়রা দৌড়ে এলো এবং অনেক চেষ্টার পর তাকে পানি থেকে তুলে আনলো, কিন্তু ততক্ষণে তার রূহ চলে গিয়েছে আল্লাহ্র কাছে।

মাহী আমার বন্ধু ছিলো। তার কথা মনে হলে এখনো আমার মন কাঁদে।

মাইসূর বিন যোবায়র, তোমার লেখাটি পড়ে খুশী হয়েছি। তুমি সুন্দর করে লিখেছো। তোমার হাতের লেখাও সুন্দর। এটা অনেক দিন আগের লেখা। আশা করি, এখন তোমার হাতের লেখা আরো সুন্দর হয়েছে।

তুমি আমাদের প্রতি আল্লাহ্র দয়া-মায়া ও করুণার কথা লিখেছো। তুমি আল্লাহ্র কুদরতের কথা লিখেছো। এই বিশাল সৃষ্টিজগতের সবকিছু আল্লাহ্র কুদরতের প্রমাণ। তুমি লিখেছো সৃষ্টিজগতের প্রতিটি জিনিস দেখে, এই চাঁদ, সূর্য, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, এসব কিছু দেখে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহ্র কত শক্তি, কত কুদরত।

তুমি নিয়মিত লিখতে থাকো, ইনশাআল্লাহ্ তুমি এবং তোমার বন্ধুরা একদিন অনেক বড় আলিম হবে এবং অনেক বড় লেখক হবে। কলমের মাধ্যমে তখন তোমরা দ্বীনের অনেক বড় খিদমত করবে। আমি তোমাদের জন্য অনেক দু‘আ করছি।

 

প্রিয় খালিদ নূর, তুমি ‘আমার বাবা’ এই নামে একটি লেখা পাঠিয়েছো। তুমি লিখেছো, ‘আমার বাবা এখন এই দুনিয়ায় নেই। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের সব সময় ভালো ভালো উপদেশ দিতেন, আর আমরা তাঁর উপদেশ পালন করার চেষ্টা করতাম। ...

তুমি লিখেছো, বাবার কবর যিয়ারত করতে পারো না বলে তোমার খুব কষ্ট হয়, কান্না পায়। কিন্তু তুমি তো দূরথেকেই তোমার বাবার জন্য দু‘আ করতে পারো, সেই দু‘আ যা তোমার প্রতিপালক তোমাকে শিখিয়েছেন-

رَبِّ ارْحَـمْهُما كَما رَبَّـيـانِـي صَغِيرًا

তাহলে আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ্ তোমার আব্বাকে আল্লাহ্ কবরে শান্তিতে রাখবেন। আমরাও তোমার আব্বা জন্য তোমার সঙ্গে একই দু‘আ করি, আল্লাহ্ যেন তাঁকে  বেলা হিসাব জান্নাতুল ফেরদাউসের আ‘লা মাকাম নছীব করেন, আমীন।

 

কুড়াল ও কাঠুরিয়ার গল্প 

 

কুড়াল! কাঠুরিয়া! হাঁ তোমাদের আমি কুড়াল ও কাঠুরিয়ার গল্প মনে করিয়ে দিতে চাই। গল্পের মধ্যে অবশ্য জলপরীও ছিলো। মনে পড়েছে তো! কাঠুরিয়ার মনে লোভ ছিলো, তাই বারবার বললো, এটা আমার কুড়াল নয়। শেষে সোনার কুঠার দেখে বলে উঠলো, হাঁ, এই তো আমার কুঠার! ফল কী হলো? কী শিক্ষা পেলে? আমাকে লিখে জানাও।

 

সবাই তোমাদের মনে করে বাচ্চা, কিচ্ছু জানে না। শুধু গল্প শুনতে ভালোবাসে। জি¦ন-পরীর গল্প, দেও-দানোর গল্প! হাতির ডিম, ঘোড়ার ডিমের গল্প। সত্য-মিথ্যা আজগুবি সব গল্প।

সবাই তোমাদের মনে করে বাচ্চা, কিচ্ছু বোঝে না। সত্য-মিথ্যা যা বোঝাবে তাই বোঝবে, যেভাবে বোঝাবে সেভাবেই বোঝবে।

আমি কিন্তু তোমাদের মনে করি না বাচ্চা। আমি মনে করি, বয়সে ছোট হলেও বুদ্ধিতে তোমরা অনেক বড়। তোমরা বুঝতে পারো;  কোনটি ভালো, কোনটা মন্দ! কোনটি সত্য, কোনটা মিথ্যা!

আমিও তোমাদের বলতে চাই গল্প, তবে আজগুবি কোন গল্প নয়, আমি তোমাদের বলতে চাই জীবনের গল্প। যাদের জীবন খুব সুন্দর ছিলো এবং ছিলো আলোকিত, তাদের জীবনের গল্প আমি তোমাদের শোনাতে চাই।

 

             সেই ছোট্ট কাল               

     থেকে বরাবর শুনে আসছি,       

       ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’।        

    আরে বাবা, তা তো আমিও জানি!

    আমিও দেখি, যখন বৃষ্টি হয়, তখন

              জল পড়ে,

   আমিও দেখি, যখন বাতাস হয় তখন

             পাতা নড়ে।

   কিন্তু কেউ কোনদিন বললো না,

      কার হুকুমে জল পড়ে?

           আল্লাহ্র হুকুমে!

 

শুনতেই হবে! কী শুনতে হবে? তা তো জানি না, শুধু জানি, শুনতেই হবে? আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে, আমি শোনবো। কী শোনবে? তাতো জানি না, শুধু জানি, আমি শোনবো।

তাহলে এবার হলে তো জব্দ!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা