জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮)

কিশোর পাতা

তোমাদের লেখা, ভোরের রাঙা সূর্যের প্রভা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

     তাঁর সান্নিধ্যে!

আহমদ হোসাইন, পিরোজপুর

ঘরের দেয়ালের ছোট্ট ভেন্টিলেটর, যেখান থেকে পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের সোনালী আলো ঘরের ভিতরে এসে পড়ে, সেখানে এক জোড়া চড়ুই পাখীর বসবাস। তাদের ছোট্ট ছানাটি সেখান থেকে ফোকর গলে পড়ে গেলো। ছোট্ট ছানাটিকে দেখে যেমন আনন্দ হলো তেমনি হলো উৎকণ্ঠা। ভাবলাম, যেভাবেই পারি, ছানাটিকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবো, সতর্কতার সঙ্গে।

ঠিক তখন কানে এলো, খুব কাছে থেকে যেন ‘তিনি’ বলছেন, এ কাজটাই তো করেছিলেন এক বেদুঈন ছাহাবী আল্লাহ্র নবীর আদেশে। তো তিনি যে নিয়ত করেছিলেন, তুমিও সেই নিয়ত করো।

খুব কাছে তাঁর অশরীরী উপস্থিতির অনুভূতি আমাকে সবসময় রোমাঞ্চিত করে, আজো করলো। কিন্তু আমি নিয়ত করতে ভুলে গেলাম। পরে যখন মনে পড়লো, আর অনুশোচনায় দগ্ধ হলাম তখন আবার কানে এলো সেই কণ্ঠস্বর, খুব নিকট থেকে, ‘আল্লাহ্র রহমতের ব্যাপ্তি তো এমন যে, তিনি আগের নিয়তও কবুল করেন, পরের নিয়তও...।’

অন্তরের গভীরে তখন অপূর্ব এক ¯গ্ধতার পরশ অনুভব করলাম।

***

চলার পথে নিজের ভাবনায় তন্ময় ছিলাম। হঠাৎ একটি ‘পর্দানশীন হাত’ আমার সামনে প্রসারিত হলো। এরকম ক্ষেত্রে আমি সঙ্গে সঙ্গে থামি না। কারণ প্রস্তুতি নিয়ে তার হাতে কিছু দিতে যথেষ্ট সময় লাগে। ততক্ষণ তার হাত প্রসারিত থাকে, এটা আমার ভালো লাগে না। তাই আমি এগিয়ে যাই। অর্থ বের করে আবার ফিরে আসি। এবারও তাই করলাম।

মনের মধ্যে যখন দানের তৃপ্তি অনুভব করছি তখন, ঠিক তখন কানে এলো তাঁর কণ্ঠস্বর, ‘মনে করো না, দিয়ে উপকার করেছো, বরং তুমি নিজে উপকৃত হয়েছে।...

***

এভাবে ক্ষণে ক্ষণে প্রয়োজনের মুহূর্তে তাঁর সান্নিধ্য আমি অনুভব করি, আর অবাক হই, কীভাবে তাঁকে এত কাছে পাই! তিনি তো এখন কত দূরে! আমি তো তাঁকে হারিয়ে...!

আবার সেই সান্নিধ্য, আবার সেই কণ্ঠস্বর, ‘পেয়েও না পাওয়া, আর না পেয়েও পাওয়া, এদু’য়ের মধ্যে যে পার্থক্যরেখা, এখনো তা অতিক্রম করতে পারলে না!...

তখন মনে হয়, না পাওয়ার পরীক্ষার চেয়ে পাওয়ার পরীক্ষা অনেক কঠিন। যখন তাঁকে পেয়েছিলাম তখন তাঁকে হারিয়েছি। আর আজ! মনে হয়, তাঁকে হারিয়েই পেয়েছি।

একটু সময়ের জন্য তাঁকে পাওয়ার আকুতি মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছিলো, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে উৎকণ্ঠিত হলাম। থাক, দূরের নৈকট্যই আমার জন্য নিরাপদ।

০০ আত্মসান্ত¡না লাভের বেশ কৌশলী চিন্তা। কিন্তু এটি সত্যের সবটুকু নয়। তবে তোমার লেখায় নতুনত্ব রয়েছে, যা সম্ভাবনার ইঙ্গিত দান করে। তাই তুমি এবারের জন্য পুষ্পের তৃতীয় অতিথিসম্পাদক

 

আমার প্রিয় পুষ্প

এভাবে কেন তুমি হারিয়ে যাও প্রিয় পুষ্প! তুমি কি জানো না, কত শত হৃদয়ের তুমি বন্ধু! তোমার আলোতে আলোকিত হতে চায় কত শিশু-কিশোর-তরুণ! তুমি কি জানো না, তোমার বিরহে কত প্রাণে ব্যথা জাগে, কত চোখে অশ্রু ঝরে!

প্রিয় পুষ্প, তোমার বিরহে আমারও মনে অনেক কষ্ট ছিলো। দীর্ঘ সাতবছর পর আবার তুমি ফিরে এসেছো, তাই হারিয়ে যাওয়া শান্তিরা আমার হৃদয়ে আবার ফিরে এসেছে। আবার তুমি হারিয়ে যাবে না তো! -সালেহ আহমদ

 

 

  চারশ পঞ্চাশ দিন আগের একটি চিঠি!!

হে আমার প্রিয়তম! আপনার প্রথম সান্নিধ্য আমি লাভ করেছি ‘এসো আরবী শিখি’ পড়ার মাধ্যমে। আর তখন থেকেই আপনার প্রতি আমার হৃদয়ের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অঙ্কুরোদ্গম। শুরুতে শুনেছি, আরবীভাষা খুব কঠিন। কিন্তু এই কিতাবে প্রতিটি পড়া আপনি এত সহজ করে শিখিয়েছেন, যেন এক মা তার বুকের মমতা দিয়ে...!

তারপর হাতে এলো আপনার লেখা অতুলনীয় গ্রন্থ ‘এসো কলম মেরামত করি’। তাতে নিজের কলমটা আমি মেরামত করতে পেরেছি কি না জানি না, তবে এখন অল্পবেশী যা কিছু লিখতে পারি তা এরই কল্যাণে। বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এ কিতাবটির কোন তুলনা আছে বলে আমার জানা নেই।

তারপর এলো সেই শুভলগ্ন যখন পুষ্পের সঙ্গে আমার হলো শুভমিলন। তখন থেকে আপনার প্রতি আমার হৃদয়ের...!

সবার কাছে শুনি, আপনি এখন কঠিন অসুস্থতা ও বার্ধক্যের আঘাতে জর্জরিত। কিন্তু আপনার কলমের লেখায় তো বার্ধক্য বা অসুস্থতার কোন ছাপ খুঁজে পাই না। মনে হয়, আপনি চিরযুবক, চিরসজীব! হয়ত সাহিত্যের সাধক যারা, কলমের নিবেদিতপ্রাণ সেবক যারা, দেহে বার্ধক্যের ছায়া পড়লেও কলমে তার ছাপ পড়ে না; তাদের লেখার তারুণ্য ও সজীবতা কখনো ক্ষুণœ হয় না।...

আপনি যখন বড়দের জন্য লেখেন, মনে হয়, কী ভাবগম্ভীর মানুষটা আপনি! আবার যখন শিশুদের জন্য আপনার কলমের উপহারগুলো চোখের দৃষ্টি বুলিয়ে অনুভব করি তখন মনে হয়, আপনি চিরশিশু! আবার রম্যরচনার সময় আপনি একেবারে ভিন্ন এক মানুষ! মুগ্ধ হয়ে ভাবি, একটি কলমের এত রূপ কীভাবে সম্ভব!!

আপনাকে কখনো তো দেখিনি, তাই হৃদয়ের আকাশে কল্পনার তুলি দিয়ে আপনার ছবি আঁকার চেষ্টা করি। তখন মনে হয়, আপনি কত না সুন্দর! আবার মনে হয়, না, আপনি আমার কল্পনার চেয়েও সুন্দর।

কখনো আপনার দেখা পাবো কি না, জানি না, তবু নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়, এজন্য যে, বহু দূর থেকে অদেখা আপনাকে আমি ভালোবাসি। ক্ষতি কি যদি কাছে গিয়ে বলতে না পারি ভালোবাসার কথা! হৃদয়ের ভালোবাসা হৃদয় নিশ্চয় অনুভব করবে। আর হৃদয়ে ভালোবাসা যিনি দান করেছেন তিনি অবশ্যই আমাকে...

মুনতাসির বিল্লাহ, পাঁচবাড়িয়া, বাঘার পাড়া, যশোর

০০ কামনা করি, তোমার কলম ও কলব যেন অটুট বন্ধন গ্রহণ করে। ৬-১১-৪০ হি.

 

 

কে তিনি?

নির্জন রাতে দূর আকাশের তারাদের, মিটিমিটি আলো দিতে শিখিয়েছেন, কে তিনি?

গনগনে গরমের দুপুরে সবুজ গাছকে শীতল ছায়া হয়ে পরম ধৈর্যের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং ক্লান্ত পথিককে পরম মমতার সঙ্গে ছায়া দিতে শিখিয়েছেন, কে তিনি?

গাছে গাছে ডালে ডালে বিভিন্ন বর্ণের, বিভিন্ন সুবাসের অসংখ্য ফুল এবং বিভিন্ন আকারের বিভিন্ন স্বাদের এত শত ফল আমাদের জন্য সাজিয়েছেন, কে তিনি?

মনে যখন প্রশ্ন জাগে তখন দেখি, উড়ে যাওয়া একঝাঁক পাখী নেমে আসে যেন আমারই উদ্দেশ্যে, যেন তাঁরই ইশারায়! পাখীরা সামনের গাছটায় বসে শুধু কিচির মিচির করে, আর আমার মন বলে, পাখীরা যেন আমাকে বলছে তাদের ‘অবোধ’ ভাষায়-

তারাদের আলো দিতে শিখিয়েছেন আল্লাহ্! তিনি মহান! সবুজ গাছকে ছায়া দিতে শিখিয়েছেন আল্লাহ্! তিনি মহান! গাছে গাছে ডালে ডালে তোমাদের জন্য এত ফুল, এত ফল সাজিয়েছেন আল্লাহ্! তিনি মহান!

আল্লাহ্কে আমি দেখিনি স্থূল চোখের দৃষ্টিতে, তবে আল্লাহ্কে আমি অনুভব করেছি হৃদয়ের গভীরে, অন্ধকার রাতে তারার ঝিলিমিলিতে, পূর্ণিমার রাতে জোসনার জোয়ারে, দিনে সূর্যের আলোতে এবং সন্ধ্যায় জোনাকির আলোকসজ্জায়।

আল্লাহ্কে আমি অনুভব করেছি গাছের সবুজ পাতায় এবং দিগন্তবিস্তৃত মাঠের সবুজ গালিচায়!

আল্লাহ্কে আমি অনুভব করেছি শিশির ভেজা ভোরের ¯িœগ্ধতায়, বাগানে ফুলের হাসিতে এবং গাছের ডালে ফলের বিচিত্র সমাবেশে।

আল্লাহ্কে আমি অনুভব করেছি সাগরের উত্তাল তরঙ্গে, মরুভূমির অথৈ বালুরাশিতে, অরণ্যের গভীরতায়, পর্বতের গম্ভীরতায় এবং ঝর্ণার কুলকুল সঙ্গীতে।

আল্লাহ্কে আমি অনুভব করেছি জীবনের কোলাহলে এবং জীবনের নির্জনতায়; আল্লাহ্কে আমি অনুভব করেছি জীবনের অবসরে, ব্যস্ততায়, স্বস্তিতে, অস্থিরতায় এবং সুখে, দুঃখে, আনন্দে, বেদনায়। তিনি করুণার আধার, চিরমহান।

তামীম আদনান, মাদরাসাতুল মাদীনাহ, ঢাকা

 

 

স্মরণ করি সেই সবুজ!

আমাদের এ দেশ আল্লাহ্র অনেক বড় দান। প্রাকৃতিক- ভাবেই আল্লাহ্ এ দেশকে সবুজ শ্যামল বানিয়েছেন। যে দিকে তাকাই, শুধু সবুজ আর সবুজ! কিন্তু এদেশে যারা বাস করে, সম্ভবত তারা সবুজকে ততটা হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করতে পারেনি। মানুষ কখনো প্রয়োজনে, কখনো অপ্রয়োজনে সবুজ এবং ছায়ার প্রধান যে উৎস বৃক্ষ তাই কেটে ফেলে, যাকে বলে বৃক্ষনিধন। কিন্তু মানুষ গাছ লাগানো, বা বৃক্ষরোপণের প্রতি তেমন আগ্রহী নয়। তাই ধীরে ধীরে  সবুজ কমে আসছে, বরং বলা যায়, সবুজের ছায়া হারিয়ে যাচ্ছে। শৈশবে আমাদের এলাকায় অনেক গাছ ছিলো। আমি সবুজের ছায়ায় প্রতিপালিত। তাই সবুজের প্রতি আমার অন্তরে রয়েছে কোমল ভালোবাসা।

দুঃখের বিষয়, এখন সেখানে আর সবুজের কোন চিহ্ন নেই।

শৈশবের সেই সবুজ, সবুজের ছায়াঘেরা সেই জীবন আমার এখন বড় বেশী মনে পড়ে। সবুজের প্রতি আমার ভালোলাগা এবং ভালোবাসা চিরকাল থাকবে। আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ্, আমার চারপাশে সবুজ গড়ে তুলতে। অন্তত একটা দু’টো গাছ লাগিয়ে এবং গাছের পরিচর্যা করে, তারপর আজকের শিশুদের গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে সবুজের প্রতি আমি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করবো, সবুজের প্রতি আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবো।

আমাদের জীবন যেন হয় চিরসবুজ, চিরছায়াশীতল!!

আহমদ যোবায়র, মীরপুর-২ ঢাকা

০০ প্রিয় আহমদ যোবায়র, তোমার সবক’টি লেখা পেয়েছি, পড়েছি। তোমার ভাইটি খুব ভালো এবং তুমি তাকে ভালোবাসো, শুনে খুশী হয়েছি। তুমি প্রতিজ্ঞা করেছো, কখনো লোকদেখানোর নিয়তে কিছু করবে না, এটা তো খুব ভালো কথা। দু’আ করি, আল্লাহ্ তাওফীক দান করুন, আমীন। তুমি কলমের মুজাহিদ হয়ে কলমের মাধ্যমে দ্বীনের খিদমত করার স্বপ্ন দেখছো। দু‘আ করি এ মহান স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য যে কঠিন সাধনার প্রয়োজন, আল্লাহ্ যেন তার তাওফীক তোমাকে দান করেন, আমীন।

 

যখন বাস্তবতার মুখোমুখি

মিযার্নু-রহমান, নেত্রকোনা

মানুষের জীবনে আর যাই হোক, অভাবের তো অভাব নেই! আমার জীবনেও আছে বিভিন্ন অভাব। জীবনের অভাব-বোধ মাঝে মধ্যে আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

এটাও জীবনের বড় দুর্বলতা যে, সামান্য কিছু অভাব মানুষকে এমনই বিক্ষুব্ধ করে তোলে যে, জীবনের বহু সুখ, শান্তি ও সচ্ছলতার কথা মানুষ ভুলে যায়, আর ভাবে; তার মত অভাবী, তার মত দুঃখী মানুষ হয়ত জগত সংসারে দ্বিতীয়টা আর নেই।

কিন্তু একদিন ভোরের আলো-আঁধারিতে আমার বিক্ষুব্ধ চিন্তা বড় একটা হোঁচট খেলো। একটা মর্মান্তিক দৃশ্য, বলা যায়, আমার চিন্তার জগতে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করলো। রাজধানীর জনাকীর্ণ পথের ফুটপাথে দেখি, একটি মানব-শিশু, আর একটি কুকুরছানা গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে। ওরা দু’টি যেন পরমাত্মীয়! অভাব, ক্ষুধা ও আশ্রয়হীনতা যেন ওদের বেঁধে দিয়েছে আত্মীয়তার বন্ধনে।

সেদিন নিজের কাছে নিজেকে অনেক ছোট মনে হলো, আর মনে হলো, আল্লাহ্ সত্যই বলেছেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে শোকরগুজার খুব কমই।’

এরকম হতভাগ্য মানবশিশুর সংখ্যা কত আমাদের দেশে, বিভিন্ন গরীব দেশে, দুর্ভিক্ষ-পীড়িত আফ্রিকা মহাদেশে!

এদের সম্পর্কে চিন্তা করারও তো কেউ নেই। বিভিন্ন প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কত মানুষ ব্যাকুল, কিন্তু ...!

হায়, অসহায় মানবশিশুর জীবন কি এভাবেই শেষ হয়ে যাবে আলোঝলমল পথের ফুটপাথে! তাদের জীবনে একটু আলোর পরশ দেয়ার জন্য কেউ কি এগিয়ে আসবে? কবে আসবে? আমার নিজেরও কি নেই কিছু দায়, কিছু দায়িত্ব?!

 

সবাই বলে, পুষ্পে কোন বিজ্ঞাপন নেই। এটা পুষ্পের অনেক বড় গর্ব। আমিও এতদিন ভেবেছি, পুষ্প বিজ্ঞাপনহীন একটি পত্রিকা, যার প্রতিটি পাপড়ি আমার জন্য, তোমার জন্য এবং সবার জন্য নিবেদিত। আচ্ছা, পুষ্পে বিজ্ঞাপন নেই, তাহলে কী আছে পুষ্পে? তার আগে আমার জানতে ইচ্ছে করে, কী নেই পুষ্পে? পুষ্পে আছে সম্পাদকের প্রতি পাঠকের আস্থা, বিশ^াস ও ভালোবাসা। পুষ্পে আছে, পাঠকের প্রতি সম্পাদকের ¯েœহ-মমতা, দরদ-ব্যথা। যাদের মনে জমেছে হতাশা ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা তাদের জন্য রয়েছে কোমল সান্ত¡না এবং নতুন করে পথ চলার প্রেরণা। যারা সামনে চলার পথ খুঁজে পায় না তাদের জন্য রয়েছে পথনির্দেশ এবং রয়েছে পথের সুস্পষ্ট মানচিত্র।

পুষ্পের পাপড়িতে একটি ছোট্ট শিশু যেমন দেখতে পায় তার হৃদয়ের ছোট ছোট আশা ও স্বপ্নের ছায়া তেমনি একজন কিশোর ও যুবক এবং নবীন ও প্রবীণ তাতে খুঁজে পায় আগামীদিনের সুন্দর ভবিষ্যতের রূপ ও রেখা! এককথায় পুষ্প ও তার প্রতিটি পাপড়ি সবার জন্য এবং শিশু-কিশোর-নবীন ও প্রবীণ সবারই হৃদয় পুষ্পের জন্য।

এ পর্যন্ত যা বলা হলো, তা পূর্ণ সত্য, তবে আজ আমার অন্তরের যে উপলব্ধি তা এই যে, পুষ্পেও রয়েছে বিজ্ঞাপন, বরং আমি বলবো, পুষ্পের প্রতিটি পাপড়ি একটি করে বিজ্ঞাপন, আরো সুন্দর করে যদি বলি, পুষ্প তার সর্বসত্তায় একটি বিজ্ঞাপন!

কাকে বলে বিজ্ঞাপন? কী উদ্দেশ্য কোন বিজ্ঞাপনের? বিজ্ঞাপন মানে কোন কিছুর পরিচয় ও উপকারিতা তুলে ধরা। বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য হলো, কোন কিছুর প্রচার ও প্রসার। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি, পুষ্পের প্রতিটি পাপড়িতে রয়েছে আমাদের জন্য ‘আলোর বিজ্ঞাপন’! পুষ্পের উদ্দেশ্য হলো আমাদের সবার জীবনে আলোর প্রচার ও প্রসার, সত্যের আলো, জ্ঞানের আলো, প্রজ্ঞার আলো এবং শুভ ও কল্যাণের আলো। -আমাতুল্লাহ ফারজানা বিনতে আব্দুল আযীয, সিলেট

 

একটি জীবনের গল্প শোনো

 

কত দিন হলো, জীবনের ভার বয়ে চলেছি! কত সকাল-সন্ধ্যা, কত দিন-রাত অতিক্রম করে এখন যেন ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়েছি। ইচ্ছে হয়, একটু না হয় জিরিয়ে নেই পথের ধারে ঐ যে গাছটা, তার ছায়ায়। আর ইচ্ছে হয়, এই অবসরে একটি জীবনের গল্প বলি। একটি জীবনের কঠিন সংগ্রামের গল্প! একটি জীবনের এগিয়ে চলার এবং থেমে যাওয়ার গল্প! কিছু সফলতার পর চরম ব্যর্থতার গল্প; এমন একটি জীবনের গল্প যাতে হাসি ও আনন্দ ছিলো সামান্য, দুঃখ ও বেদনা ছিলো অনেক। তারপরো সেই জীবনের মধ্যে ছিলো প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞার আলো এবং উদ্যম ও উদ্দীপনার উচ্ছ্বাস!

তার জন্ম হয়েছিলো দুই দশক আগে মধুমতি নদীর তীরে দারিদ্র্যপীড়িত এক অখ্যাত গ্রামে। সবশিশুর জীবনে কিছু না কিছু খেলাধূলার আয়োজন থাকে, কিন্তু তার শৈশবে খেলা ছিলো না, ছিলো শুধু ধূলা। শৈশবেই শুরু হয়েছিলো তার ধূলিধূসরিত দারিদ্র্যজর্জরিত জীবন।

সবাইকে ছেড়ে মাঝে মধ্যেই সে চলে যেতো গভীর বনে, অজানা কোন রহস্যের সন্ধানে।

যখন একটু বয়স হলো তখন একদিন সকালে সবকিছুর বন্ধন -মায়া ছিন্ন করে, মাটির মায়া, নদীর মায়া, ঘরের মায়া এবং মা-বাবার মায়া সবকিছুর মায়া নির্মম হাতে ছিন্ন করে সে পাড়ি দিলো বহু দূরের এক শহরে। কারণ তার বুকে কিছু স্বপ্ন ছিলো; নিজে বড় হওয়ার এবং তার চারপাশে যত তরুণ আছে তাদেরও বড় করে তোলার স্বপ্ন। সেই দূরের শহরে, অনেক কোলাহল ও শোরগোলের মাঝে শুরু হলো তার নতুন জীবন; স্বপ্নের কাছে যাওয়ার এবং স্বপ্নকে কাছে পাওয়ার সংগ্রামমুখর জীবন! সেই জীবনে বিনিদ্র রাতের সাধনা ছিলো; মোমের আলো ছিলো, আর ছিলো কালো কালির হরফে সাজানো কিছু ছিন্ন পাতা। ক্ষুধা, ছিলো অনাহার ছিলো, কিন্তু তার উদ্যম-উদ্দীপনায় কোন ভাটা ছিলো না। সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও সে ছিলো বিদ্রোহের পতাকাবাহী। তার বিদ্রোহ ছিলো সময় ও সমাজের বিরুদ্ধে, অনাচার ও পাপাচারের বিরুদ্ধে! তার প্রত্যয় ছিলো, নতুন সমাজ গড়ে তোলার, সত্য ও সততার আলোয় উদ্ভাসিত নতুন মানুষের নতুন সমাজ গড়ে তোলার।

একসময় দেখা গেলো, কিছু কিছু তরুণ প্রাণেও জ¦লে উঠছে বিদ্রোহের আগুন এবং প্রত্যয় ও বিপ্লবের শিখা। কিন্তু ...!

হঠাৎ একদিন তার জীবনে উঠলো সর্বনাশা এক ঝড়! সেই ঝড় তার জীবনকে যেমন তছনছ করে দিয়ে গেলো তেমনি তার স্বপ্নগুলোকে শেকড়শুদ্ধ উপড়ে দিয়ে গেলো। সে যেন নিজের হাতেই রচনা করলো জীবনের সমস্ত সম্ভাবনার কবর। কোন এক অশুভ ছায়ার হাতছানিতে সে এক অজানা পথের পথিক হলো, যে পথের শুরুটা জানা ছিলো, শেষটা ছিলো অজানা।

কিছু দূর সে পথ চলে, তারপর হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়, আবার উঠে দাঁড়ায়, আবার কিছু দূর পথ চলে, আবার। এভাবে বহু কষ্টে গন্তব্যহীন বহু দূরের পথ পাড়ি দিয়ে একসময় সে বুঝতে পারে, এটা তো জীবনের ভুল পথ! এটা তো মায়া ও মায়াজালের পথ!!

সে অনুতপ্ত হয় এবং ফিরে আসার চেষ্টা করে জীবনের ঠিক ঐ জায়গাটাতে যেখান থেকে শুরু হয়েছিলো তার স্খলন ও বিচ্যুতি। কিন্তু ততদিনে অনেক বিলম্ব হয়ে গিয়েছে। নদীতে নদীতে অনেক পানি গড়িয়ে গিয়েছে সাগর অভিমুখে। তখন বিষণœ সে দেখতে পায়, জীবন-নদীর জোয়ারে ভাটার টান পড়েছে এবং ...!

এতক্ষণ যে তোমাদের গল্প শোনালো, এটা তারই জীবনের গল্প! *

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা