কাশ্মীরসংখ্যা

কিশোর পাতা

কে তুমি হে তরুণ?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

কে তুমি হে তরুণ?

কে তুমি হে তরুণ? চেহারা সুরতে, লেবাসে পোশাকে মনে তো হয় না, তুমি এ মাটির সন্তান! তবু কেন তোমাকে মনে হয় এত আপন! দিলের পর্দায় তবু কেন দেখতে পাই তোমার ছবি! কিসের টান, কিসের বন্ধন!

আচ্ছা, তুমি মুসলিম! তোমার সঙ্গে আমার বন্ধন তাহলে ঈমান ও বিশ্বাসের! মাটির সন্তান না হয়েও এজন্যই বুঝি তোমাকে মনে হয়েছে এত আপন! এজন্যই বুঝি দিলের অন্দরে দেখতে পাই সবুজ কালির আঁচড়ে আঁকা তোমারই ছবি!

***

কোন্ মাটির সন্তান তুমি হে তরুণ? কত মাঠ, প্রান্তর পার হয়ে, কত নদী-সাগর পাড়ি দিয়ে, দূরের কোন দেশটি হতে তুমি এসেছো হে তরুণ?

হিন্দুস্তানের কোন অঞ্চল হতে তুমি আসোনি, বুঝতে অসুবিধা হয় না। হিন্দুস্তানী মাটির স্বভাবরুক্ষতা তোমার চেহারায় নেই! আমার প্রিয় প্রতিবেশী, পাকিস্তান; সেখান থেকেও আসোনি তুমি; সেই তেজ, সেই তাপ ও প্রতাপ নেই তোমার দেহে অবয়বে! এমন শান্ত স্নিগ্ধ মুখম-ণ্ডল, বুঝতে পারি না, হতে পারে কোন ভূখ-ণ্ডের! তুমিই বলো না, হে তরুণ, কোথায় তোমার দেশ!

আচ্ছা, বাংলাদেশ!

তাই তো তোমার চোখের তারায় এত সবুজ! তাই তো এত মায়াভরা তোমার চোখের চাহনি! এখানেও সবুজের গালিচা ওখানেও সবুজের ছায়া; আমি জানি না, দুই সবুজে কোন পার্থক্য আছে কি না। এখানে নদী আছে, ঝিলাম, চিনাব ও ... ওখানেও আছে নদী, পদ্মা, মেঘনা, জমুনা। জানি না, ওখানকার নদীগুলোর পানি কেমন? ঢেউ কেমন? একটা পার্থক্যের কথা অবশ্য জানি, তোমাদের নদী এখন তোমাদের জন্য বড় কষ্ট, বড় যন্ত্রণা! আমার এখানে অবশ্য নদী বড় সম্পদ, বড় শান্তি, বড় সান্ত¡না। ওজান-ভাটি চিরকালই আনন্দের এবং বেদনার! আমার এখানে পানির যন্ত্রণা নেই; রক্তেরবেদনা রয়েছে। মাঝে মধ্যে তো নদীর ¯রা তের মত সবুজ ভূমিতে বয়ে যায় রক্তের ¯রাত!

***

আচ্ছা, এবার বলো, এত কষ্ট করে, এত দূরের দেশ থেকে কেন এসেছো হে তরুণ? কী তোমার উদ্দেশ্য? নিছক ভ্রমণ বা পর্যটনের জন্য যে আসোনি, তা আমি বুঝতে পারি! ভ্রমণে পর্যটনে কারা আসে? যাদের হৃদপি- আছে, হৃদয় নেই। যাদের আকর্ষণ, অনুরাগ এবং প্রীতি ও ভালোবাসা হলো আমার বাইরের সৌন্দর্যের প্রতি, উপত্যকার ফুলে ফলে সমৃদ্ধ সবুজের প্রতি, পর্বতচূড়ার শুভ্র তুষারের প্রতি এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলোর প্রতি; কিন্তু ঐ মানুষগুলোর প্রতি নয় যাদের জন্ম ও মৃত্যু এখানে আমার মাটিতে; দুঃখকষ্টের যন্ত্রণার বোঝা বহন করে যারা জীবনের দাবী পূর্ণ করে আমারই বুকে। তুমি তাদের দলে কিছুতেই নও যাদের কাছে মানুষের চেয়ে মাটি এবং জীবনের চেয়ে ভূমি ও সম্পদ বেশী মূল্যবান। তুমি নিজেই বলো না, কী উদ্দেশ্যে তোমার আগমন?

সত্যি বলছো! আহ, কী শান্তি! তুমি এসেছো তোমার দেশের মানুষের ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার কথা আমাকে জানাতে! তুমি এসেছো আমার দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদ-দুর্যোগ নিজের চোখে দেখতে এবং আমার চোখের অশ্রু কিছুটা হলেও মুছে দিতে! আমার কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করো হে তরুণ! এবং পৌঁছে দিয়ো তোমার দেশের হামদর্দ মানুষগুলোর কাছে।

***

এই দেখো, কত বড় ভুল হয়ে গেলো! কষ্টের যত দহনযন্ত্রণাই থাক না আমার ক্ষতবিক্ষত বুকটার ভিতরে, মেহমানদারির ঐতিহ্য কীভাবে ভুলে গেলাম! আমাদের তো দুশমনের প্রতি মেহমানদারিতেও ভুল হয় না! মাফ করো হে তরুণ! হয়ত তোমার অন্তরের স্নিগ্ধ সহানুভূতির কোমল স্পর্শে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম! এতক্ষণ তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছি, মাফ করো হে তরুণ, হে আমার ভাই!!

এই নাও একথোকা ফুল, এই নাও ফুলের মালা, ফুলের তোড়া; এগুলো সব আমার সবুজ ভুমির ফুল। ফুল দিয়েই তোমাকে বরণ করি হে তরুণ, হে আমার ভাই! যদিও এখন আগের মত ফুল ফোটে না; যদিও বাগানে এখন ফুলের চেয়ে কাঁটাই বেশী! ফুলের পাপড়িতে এখন সুবাসের চেয়ে বারুদের গন্ধই বেশী! তবু তো ফুল ফুলই! ফুল ছাড়া আর কী দিয়ে বরণ করা যায় এত দূর দেশের এমন আপন মানুষকে!

এই নাও আঙুর, আপেল, নারঙ্গি! এই নাও একঝুড়ি নানা স্বাদের ফল। এগুলো সব আমার বাগানের ফল। যদিও এখন বাগানে গাছের ডালে আগের মত ফল ধরে না, আগের মত রস থাকে না। তবু কিছু ফল খাও। অন্তত ক্ষুধা তো দূর হবে!

তারপর এই নাও পানি! এই যে বড় মশকটা, এটাতে রয়েছে পাহাড় থেকে নেমে আসা বরফগলা স্বচ্ছ শীতল ঝর্ণার পানি! আর ঐ যে, ছোট মশকটি, তাতে রয়েছে ঝিলাম নদীর মিঠা পানি! তোমাকে বলতে কষ্ট হবে, তবু বলছি। ঝিলাম নদীর পানি এখন আর আগের মত নেই। সবাই বলে একটু যেন লালচে রঙ ধরেছে পানিতে এবং তাতে নাকি...! থাক, তুমি না হয় শুধু ঐ ঝর্ণার পানিটাই পান করো। আমার মাটির সাধারণ মানুষগুলো, ওরা অবশ্য ঝিলাম নদীর পানিও পান করে! জীবন তো বড় নির্মম। জীবনে ক্ষুধা আছে, পিপাসা আছে এবং আছে ক্ষুধা-পিপাসার যন্ত্রণা!

***

আমার কথা জানতে চাও হে তরুণ! তোমার দেশের মানুষকে আমার কথা লিখে জানাতে চাও হে ভাই!

দূর অতীতে আমার জীবন অবশ্য গর্ব করে বলার মতই ছিলো। কোন কিছুর অভাব ছিলো না, না ভূমির সৌন্দর্যের, না হৃদয়ের ঐশর্যের। অভাব ছিলো, দারিদ্র্য ছিলো, ক্ষুধা-অনাহার ছিলো, তবু আমার মানুষগুলোর জীবনে শন্তি ছিলো, স্বস্তি ছিলো; উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ছিলো না এবং ছিলো না ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন অনিশ্চয়তা।

এই যে সবুজ প্রকৃতি, এই যে নীল আকাশে মেঘের আনাগোনা, এই যে ভোরের রাঙা সূর্য, এই যে আঁধার রাতে তারাদের মেলা, এই যে জোসনারাতে দুধে ধোয়া জোসনার বন্যা; এসবই ছিলো আমার কাছে, আমি ছিলাম তাদের কাছে। সবার মুখে হাসি ছিলো, আমারো মুখে হাসি ছিলো।

সকাল-সন্ধ্যা এই যে পাখীদের কোলাহল, এই যে সবুজ গাছের শীতল ছায়া. এই যে মৃদু বাতাসে গাছের ডালে ফুলের আন্দোলন, এই যে প্রজাপতির রঙ্গিন ডানা; এসবই ছিলো আমার কাছে, আমি ছিলাম তাদের কাছে। সবার মনে স্বস্তি ছিলো, আমারো মনে স্বস্তি ছিলো।

এখন! এখন আমি পোড়া মাটি! এখন আমি দাউ দাউ আগুন! হায়েনার নখর-থাবায় আমি ক্ষতবিক্ষত, আমার বুক রক্তাক্ত।

আমার বাগান, ফুলের ও ফলের সব বাগান এখন ধ্বস্ত বিধ্বস্ত। আমার মানচিত্র এখন ছিন্নভিন্ন, আমি এখন এক অসহায় আর্তনাদ!

এখন আমি জ্বলন্ত কাশ্মীর, যার ভূমি ও মানচিত্র ছিন্ন ভিন্ন! আমি গলিত লাশ, আমার বাতাসে আগুনের ধোঁয়া, বারুদের ঝাঁঝ এবং গলিত লাশের গন্ধ!

আমি স্বাধীন দেশের শৃঙ্খলিত জনতা! আমি ছররা গুলির আঘাতে অন্ধ হওয়া যুবক! আমি এতীম শিশু এবং মায়ের কোলে গুলিবিদ্ধ নবজাতক!

আমি গুম হওয়া সন্তানের শোকে নির্বাক মায়ের নীরব কান্না! আমি বিধবা নারীর আহত আর্তনাদ! আমি আবরু-লুণ্ঠিতা মাবোনের বুকফাটা ফরিয়াদ।

***

আমি ৫ই আগস্টের অন্ধকার দিন! আমি  ৩৭০ ধারার লুণ্ঠিত মর্যাদা ও স্বাধিকার! আমি আঠারো শ ছেচল্লিশের বিক্রিত মাটি ও মানুষ। আমি ঊনিশশ সাতচল্লিশের কুটিলতা ও চক্রান্তের অসহায় শিকার! এত কিছুর পরো এখনো আমি বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকা নির্ভীক যুবক! আমি এখনো বজ্রমুষ্টি মিছিলের জনপদ! আমি এখনো স্বাধীনতার হুঙ্কার ও অহঙ্কার! তোমাদের কবি যে বলেছেন, আমি সেই

‘চিরউন্নতশির’!

আমি পূর্বদিগন্তে রক্তরাঙা সূর্যের উদয়ের আকুল প্রতীক্ষা! চিরউন্নত আমার মস্তক, আমার তুষারাবৃত পর্বতচূড়া! 

 

কাশ্মীরী শিশুটির প্রতি কৃতজ্ঞতা!

কাশ্মীরের একটি নিষ্পাপ শিশুর ছবি আমার চেতনায়, আমার সমগ্র সত্তায় যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ছয় বছরের শিশু, যেন দুধ খেয়ে মায়ের কোলে শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে! ‘ফাওযিয়া’, নাম থেকে জানা যায়, মেয়ে। ছেলে বা মেয়ে, শিশু তো শিশুই। চিন্তা বা দুশ্চিন্তা কিছু তাকে স্পর্শ করতে পারে না। রাজনীতি ও মানচিত্রের জটিলতা সম্পর্কে কিছুই তার জানা নেই। এমনকি যে মায়ের কোলে এমন নিশ্চিন্তে সে ঘুমিয়ে আছে, জানে না, সেই মায়ের হৃদয় এখন কতটা ক্ষতবিক্ষত। তার চোখের ঘোলা দৃষ্টিতে এখন কত অন্ধকার! জীবন ও জগতের জটিলতা শিশুহৃদয় কিছুই অনুভব করতে পারে না। শিশুর জগত তো আমাদের জগত থেকে একেবারে ভিন্ন। সেই শিশু মুসলিম বিশ্বের হোক, বা অমুসলিম বিশ্বের। ফিলিস্তীনের হোক বা ইহুদি পরিবারের। কাশ্মীরের হোক বা হিন্দুঘরের।

কিন্তু অবরুদ্ধ কাশ্মীরের এই শিশুটি পৃথিবীর আর সবশিশু থেকে ভিন্ন। কারণ মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে মনে হলেও আসলে এই নিষ্পাপ শিশুটি মৃত! হতে পারে সে অবুঝ, কিন্তু কোন হায়েনার বন্দুকের নল থেকে ছুটে আসা গুলি আরো অবুঝ। কোন গুলি জানে না, একটি শিশুর বুকে বিদ্ধ হওয়ার অর্থ কী! পরিণতি কী!!

অসহায় মা মৃত শিশুটিকে কোলে নিয়ে বসে আছে, আর নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দূরের ধুসর পাহাড়ের দিকে।

***

ছয় বছরের ঐ শিশুটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ একটি অবুঝ মৃত্যুর মাধ্যমে আমাকে সে নতুন জীবন দান করে গিয়েছে। নতুন চেতনা, নতুন সাহস, নতুন উদ্যম, উদ্দীপনা; নতুন জীবনই তো এগুলো! আগে যদিও বা মৃত্যুর কিছু ভয় ছিলো; জীবনের প্রতি কিছু মোহ ছিলো, শত্রুর বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়াতে সাহসের কিছু অভাব ছিলো, এখন নেই। এখন আমি হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারি; এখন আমি প্রাণের জন্য, একমুঠ মাটির জন্য, মুক্ত বাতাসে কিছু সময় শ্বাস গ্রহণের জন্য এবং আযানের ধ্বনি ও প্রতিধ্বনির অবাধ প্রবাহের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে পারি। এখন আমি বন্দুকের নলের দিকে তাকিয়ে সাহসের সঙ্গে বলতে পারি, ‘ওখান থেকে কী বের হয়, একটুকরো সিসার চেয়ে বেশী কিছু তো নয়! ফাওযিয়ার চেয়ে আমার বুক চওড়া কম তো নয়!

***

বেশ হাসিখুশি ছিলো ফাওযিয়া মেয়েটি! কাশ্মীরী মেয়ে, কাশ্মীরী আপেলের মতই ললিমা ছিলো ওর ফোলা ফোলা দু’টি গালে। ওর মায়ের ভাষায়, ‘হাসলে মনে হতো জান্নাতের বাগান থেকে ফুল ঝরে পড়ছে, আর জান্নাতী ঝরণার সঙ্গীত বেজে উঠছে!’ আহারে, মায়ের একমাত্র কলিজার টুকরোটি ছিলো!

বাড়ীর কাছে খোলা মাঠে ওর বয়সের আরো ক‘জন শিশুর সঙ্গে খেলায় মগ্ন ছিলো। ও তো জানতো না, কাশ্মীরে শিশুদের এখন খেলতে নেই; কাশ্মীরে এখন শুধু চলবে হায়েনাদের শিকারখেলা! ভাবি, ওর মা কেন সাবধান করেননি ওকে! উত্তর খুঁজে পাই না।

গুলিটা ছুটে এসেছিলো ওর ডান দিক থেকে, খুব নিকট থেকে। ফাওযিয়া ফিরে তাকিয়েছিলো বন্দুক হাতে পশুটার দিকে, অবাক চোখে। তার দৃষ্টিতে ভয় ছিলো না, বিস্ময় ছিলো, ‘এমনও হতে পারে! চেহারা তো মানুষের!’ রক্তে লাল হয়ে উঠেছিলো পুরোটা জায়গা। পুশটাকে পর্যন্ত অবাক করে দিয়েছিলো, বুকে গুলি খাওয়া একটি শিশুর ভয়হীন অবাক চাহনী! আর অবাক করেছিলো, আগুনের মত লাল রক্তের ¯স্রোত! এত লাল হতে পারে রক্ত! এত রক্ত ছিলো একটি ছোট্ট শিশুর ছোট্ট বুকে! পশুটার পাষাণ বুকে নাকি শেষে ভয় ধরে গিয়েছিলো যে, মেয়েটির বুক থেকে রক্তের স্রোত বুঝি আর থামবে না! সবকিছু বুঝি ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, পুরো কাশ্মীর, পুরো ভারত!

ঘটনা পড়েছি, আর ভেবেছি, শব্দগুলো তো শুধু ঘটনা তুলে ধরেছে, ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসা বুকের স্পন্দন, হৃদয়ের উত্তাপ এবং রক্তের উষ্ণতা, এগুলো তুলে ধরবে, শব্দের সে সাধ্য কোথায়! তবে আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পেরেছি। কারণ আমার বুকের স্পন্দন, হৃদয়ের উত্তাপ এবং রক্তের উষ্ণতা তখন বেড়ে গিয়েছিলো। এখন আমি আমার বুকের স্পন্দের প্রতি, আমার হৃদয়ের উত্তাপ ও রক্তের উষ্ণতার প্রতি অনেক বেশী নিবেদিত। এজন্য ফাওযিয়া, তোমার বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া স্পন্দনের প্রতি, ধীরে ধীরে শীতল হয়ে আসা তোমার হৃদয়ের উত্তাপ ও রক্তের উষ্ণতার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ!

***

প্রশ্নের জবাবে পশুটা বলেছিলো,  কোন কারণ ছিলো না, শুধু কৌতূহলের বশে গুলি করেছিলাম। বাচ্চাটার চোখে আমি ভয় দেখতে চেয়েছিলাম, আর ভয়ার্ত চিৎকার শুনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাচ্চাটা আমার সব আনন্দ মাটি করে দিলো! একটুও ভয় পেলো না! একটা চিৎকারও দিলো না! ...

তোমাকে অভিনন্দন ফাওযিয়া! তোমার প্রতি এবং কাশ্মীরে তোমার মত যত শিশু আছে তাদের প্রতি আমার হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা। তোমরা যতদিন আছো, তোমাদের বুকের রক্তে কাশ্মীরের মানচিত্র রাঙা হতে থাকবে এবং ...!

একটি আপেল

একটি আপেল এবং একটি জীবন, কোনটির মূল্য বেশী? সারা জীবন আমার মনের হিসাব ছিলো একরকম, সে হিসাব এখন গুলিয়ে গিয়েছে। সুদূর কাশ্মীর, যেখানে এখন শুধু আগুন জ্বলছে; ধোঁয়া, আর বারুদের গন্ধে যেখানে এখন মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে; সেই সুদূর কাশ্মীরের এক সাহসী বালক, কতই বা হবে বয়স, বার কি তের, মাদরাসায় পড়ে। সকালে যায়, বিকালে আসে, সেই সাহসী বালকটি আমার সারা জীবনের হিসাব পালটে দিয়েছিলো।

নিজেদেরই বাগান ছিলো। বাগান থেকে ঝুড়ি ভরে আপেল নিয়ে বাড়ী ফিরছিলো। মা পাঠিয়েছিলেন। পাঠিয়ে আবার উৎকণ্ঠিত চিত্তে পথের দিকে চেয়ে ছিলেন। কাশ্মীরে এটাই এখন জীবন। শঙ্কা আছে, উৎকণ্ঠা আছে, তার মধ্যেই চলছে জীবনের দাবী রক্ষারও প্রয়াস!

বালকটির সামনে পড়ে গেলো বন্দুকহাতে একপশু। আশি লাখ, মানুষ, নয় লাখ পশু, সামনে না পড়ে উপায় কী! ‘ভয় পেয়ে দৌড় দিলো না কেন’, এ অপরাধে বালকটিকে গুলি করা হলো। বালকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। তখনো সে নির্ভয়! হায়েনাকে লক্ষ্য করে ক্লিষ্ট হাসি হেসে বললো, এই আপেলগুলো তো নষ্ট হয়ে যাবে; নিয়ে যাও তোমার সন্তানদের জন্য!

একটি বুলেট, একটি ক্লিষ্ট হাসি, কার শক্তি বেশী?!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা