কাশ্মীরসংখ্যা

কিশোর পাতা

কিশোর বন্ধুরা!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

কিশোর বন্ধুরা!

সালাম গ্রহণ করো। আশা করি সবাই ভালো আছো। আজ আমি অত্যন্ত বেদনাহত। ফিলিস্তীন ও আলকুদসের বেদনা তো আমাদের আছেই নিরবচ্ছিন্ন; কাশ্মীরের বেদনাও দীর্ঘ সত্তর বছরেরও বেশী সময়ের। আরাকানের কথা অবশ্য মুসলিম জাহান তেমন করে জানতোই না। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা এবং জাতিগত নিধন ও উচ্ছেদের শিকার হয়ে তবেই মুসলিম জাহানের নযরে এসেছে। তারপর একটু চোখের পানি, একটু সমবেদনা এবং একটুকরো রুটি; নাহ, এত ফুরসত মনে হয় হারামাইনের খাদেম থেকে শুরু করে, কোন নেতারই নেই। তুরস্ক ও এরদোগান ছাড়া ব্যতিক্রম তেমন একটা কোথায়!

কাশ্মীর কখনো জ্বলে ওঠে দাউ দাউ করে, কখনো কিছু সময়ের জন্য নিভু নিভু হয়ে আসে। বুকের ব্যথাটাও সমান্তরালে বাড়ে, কমে। গত আগস্টের শুরু থেকে কাশ্মীর ও তার নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর উপর নেমে এসেছে যেন কেয়ামতের প্রলয়। আমাদের অনেক বড় একটা অপরাধ হলো, মুসলিম জাহানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূখ- হলেও কাশ্মীর সম্পর্কে আমরা বলতে গেলে কিছুই জানি না। এটা অমার্জনীয়।

কাশ্মীরে আসলেই কী ঘটছে? কেন ঘটছে? কাশ্মীরসমস্যার রূপ ও স্বরূপ কী? সমাধানের পথই বা কী? এককথায় কাশ্মীরের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত কী? এগুলো আমাদের জন্য জ¦লন্ত কিছু প্রশ্ন। এর উত্তর আমাদের জানতে হবে। মুসলিম জাহানের লুণ্ঠিত ভূখ- হিসাবে কাশ্মীরের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রু থাকতে হবে। কাশ্মীরকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। কাশ্মীরের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমাদের একাত্মতা পোষণ করতে হবে! আমাদের কাছে এটা কাশ্মীরের দাবী এবং কাশ্মীরী জানতার আকুতি শুধু নয়, এটা আমাদের কাছে আমাদের ঈমানের দাবী।

কাশ্মীরের নিপীড়িত, লাঞ্ছিত ও ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠী অধিকার এবং স্বাধীনতা ও ভূমির মালিকানা পুনরুদ্ধারের জিহাদে নিয়োজিত দীর্ঘ দিন থেকে। তাদের সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি! তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা কেউ ভাবেনি। না মুসলিম বিশ্ব, না তথাকথিত মানবতাবাদী পশ্চিমা বিশ্ব।

কাশ্মীরকে বলা হয় পৃথিবীর সবচে’ বেশী সেনাকবলিত ভূ-খণ্ড। প্রতি দশজন কাশ্মীরী শিশু-নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেখানে নিয়োজিত রয়েছে অস্ত্রসজ্জিত একজন সৈন্য। পৃথিবীর ইতিহাসে এর নযির নেই।

কাশ্মীরের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আরো নিবিড় ও গভীর যেন হয় সে উদ্দেশ্যেই কাশ্মীরসংখ্যা তোমাদের হাতে তুলে দেয়া হলো। আল্লাহ্ কবুল করুন, আমীন।                                                                                                                       

কাশ্মীরের মানচিত্র দেখো...

কাশ্মীরের মানচিত্র দেখো, পাকিস্তান, ভারত, চীন ও কাশ্মীরের ভৌগোলিক অবস্থান লক্ষ্য করো। তাহলেই কাশ্মীরসমস্যার রূপ ও স্বরূপ বুঝতে সহজ হবে। ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ভৌগোলিক অবস্থান, যে কোন দিক থেকেই বিচার করা হয়, কাশ্মীরের ভূ-খণ্ড এবং পাকিস্তানের ভূ-খণ্ড, মনে হবে এক ও অভিন্ন।

উপরে যে কয়টি দিক উল্লেখ করা হলো, কোন দিক থেকেই কাশ্মীরের মাটি ও মানুষের উপর হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদী ভারতের কোন অধিকার নেই।

আইন ও ন্যায়বিচারের দিক থেকেও কাশ্মীরের উপর ভারতের দখল, জবরদখল ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ বৃটিশরাজ যখন ভারত ছেড়ে যায় তখন ভারত এক ও অভিন্ন ভূখ- ছিলো না। ছোট বড় পাঁচশরও বেশী বিভিন্ন প্রকৃতির দেশীয় রাজ্য ছিলো। এই দেশীয় রাজ্যগুলোকে বৃটিশ সরকার এখতিয়ার প্রদান করে যে, যার ইচ্ছা ভারতের সঙ্গে যোগ দেবে, যার ইচ্ছা পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেবে; আবার যার ইচ্ছা নিজের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখবে। আরেকটা কথা বলা হয় যে, রাজ্যের জনগোষ্ঠীর ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

বড় দু’টি রাজ্য ছিলো হায়দারাবাদ ও কাশ্মীর। হায়দারাবাদের শাসক ছিলেন মুসলিম, সংখ্যাগরিষ্ঠা ছিলো হিন্দুদের। শাসকের ইচ্ছা ছিলো স্বাধীন সত্তা বজায় রাখার, বা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। ভারত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দোহাই দিয়ে অস্ত্র ও শক্তির বলে হায়দারাবাদ রাজ্য দখল করে নেয়, যা আয়তনে যেমন ছিলো বিশাল তেমনি ছিলো সম্পদসমৃদ্ধ।

পক্ষান্তরে কাশ্মীরে শাসক ছিলো হিন্দু রাজ হরি সিং। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ছিলো মুসলিম। ভারত হুমকি ও প্রলোভনের মাধ্যমে রাজাকে ভারতভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করে। ব্যস্ এই এক অজুহাতেই সেনা আগ্রাসনের মাধ্যমে ভারত কাশ্মীর দখল করে নেয়। ভুলে যায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার তত্ত্ব।

একপর্যায়ে জাতিসঙ্ঘ গনভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত দেয় যা পাকিস্তান মেনে নেয়, ভারত শুরুতে মেনে নিলেও এখন সবকিছু বেমালুম ভুলে গিয়ে বলতে শুরু করেছে, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ!

মোটকথা আইন, বিবেক, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত সবকিছু অবজ্ঞা করে শক্তির বলে কাশ্মীর দখল করে রেখেছে ভারত। প্রতারণার উদ্দেশ্যে শুরুতে সাংবিধানিক -ভাবে কাশ্মীরকে কিছু সুবিধা ও অধিকার দেয়া হয়েছিলো, যা ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং তার অন্তর্গত ৩৫ক ধারা নামে পরিচিত। গত ৫ই আগস্ট হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার অনুচ্ছেদ ৩৭০ এবং ৩৫ক ধারা বাতিল করে কাশ্মীরী জনগণের শেষ অবলম্বনটাও ছিনিয়ে নিয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি, কাশ্মীরী মুসলমান একদিন তাদের আযাদি অবশ্যই ফিরে পাবে ইনশাআল্লাহ্। *

এক ফোঁটা দুধ...

 

এক ফোঁটা দুধ...         

এক ফোঁটা রক্ত...

এক ফোঁটা জল...

এর মূল্য কত, জিজ্ঞাসা করো কোন মায়ের মমতাকে, যিনি সন্তানকে বলতে পারেন, আমার দুধের করয আদায় করো মাটি ও মানুষের জন্য জান কোরবান করে!

জিজ্ঞাসা করো সেই মুজাহিদীনকে যাদের রক্তে বাগানের গোলাপ লাল হয়, স্বাধীনতার সূর্য রাঙা হয়!

জিজ্ঞাসা করো নদী ও ঝর্ণার জলধারাকে, যা নিবারণ করে মাটি ও মানুষের পিপাসা!

***

একটি ফুলের পাপড়ি...

একমুঠ মাটি...

একটুকরো আকাশ...

একটুকরো মেঘ...

এগুলোর মূল্য কত, জিজ্ঞাসা করো ঐ ভূখ-কে যেখানে এখন ফুল ফোটে না, শুধু আগুন ঝরে। আকাশ যেখানে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, যেখানে এখন মেঘ নেই, বৃষ্টি নেই, আছে শুধু হতাশা ও পিপাসা!

***

মসজিদের অধিকার ...

মিনার থেকে আযানের ধ্বনি...

শিশুর জন্ম, কান্না ও হাসি...

এগুলোর মূল্য কত, জিজ্ঞাসা করো ঐ জনপদকে যেখানে মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয় পাশব শক্তি, যেখানে মসজিদের অধিকার ছিনতাই হয়ে যায় আদালতের আদেশে!

যেখানে আযান দিতে গিয়ে শহাদাত বরণ করে একে একে বাইশজন মুজাহিদীন! জিজ্ঞাস করো সেই শিশুকে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাকে শুধু কাঁদতে হয় অঝোরে, যার মুখে হাসি ফোটে শুধু মৃত্যুর শেষ 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা