রজব ১৪৩০ হিঃ (১২)

কাশগর ও কায়রো

লেবাননের সামপ্রতিক নির্বাচন

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ লেবানন। চারশ বছর তুর্কী খেলাফতের অধীনে থাকার পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে তা ফরাসী উপনিবেশে পরি হয়, আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে নানামুখী চাপে ফরাসী বাহিনী লেবানন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আরবদের হিসাব অনুযায়ী লেবাননের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশী মুসলিম, ৩৯ শতাংশ খৃস্টান। প্রধান তিনটি জনগোষ্ঠী হলো সুন্নী মুসলিম, শিয়া মুসলিম ও খৃস্টান। সমঝোতা-বিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় খৃস্টানদের থেকে, প্রধানমন্ত্রী সুন্নী মুসলিম থেকে, আর পার্লামেন্টের স্পিকার শিয়া মুসলিম থেকে। ১৯৭৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত দেশটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের শিকার ছিলো। এর ভিতরে ৭৮ ও ৮২ সালে ইসরাইল দু’দফা লেবাননে আগ্রাসন চালায় এবং দু’হাজার সাল পর্যন্ত দক্ষিণ অঞ্চল দখল করে রাখে। সে সময় শিয়াসমপ্রদায়ের হিযবুল্লাহ স্বদেশের ভূমি দখলমুক্ত করারজন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। জাতিগত বিভক্তির কারণে লেবাননের নির্বাচনী বিধান অত্যন্ত জটিল। কোন অঞ্চল থেকে কোন সমপ্রদায়ের কতজন নির্বাচিত হবেন তা নির্ধারিত রয়েছে। আইন অনুযায়ী ১১৮টি আসনের মধ্যে ৬৪টি মুসলিম আসন। ৮টি দ্রুজ মুসলিম এবং ২৭ করে শিয়া ও সুন্নীদের জন্য। অবশিষ্ট আসন খৃস্টানদের জন্য। গত সাতই জুনের নির্বাচনে দু’টি প্রধান জোট অংশ গ্রহণ করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সা‘আদ হারীরীর জোট ‘মার্চ ১৪ এবং হিযবুল্লাহর নেতৃত্বাধীন জোট। ক্ষমতাসীন জোট পেয়েছে ৭১টি আসন, অপর জোটটি পেয়েছে ৫৭টি আসন। ২০০৫ সালের নির্বাচনেও একই ফল হয়েছিলো। সুতরাং পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম ক্ষমতাসীন জোটের বিজয়কে হিযবুল্লাহর বিরুদ্ধে পশ্চিমাপন্থীদের বিজয় বলে যে প্রচার চালাচ্ছে, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ নির্ধারিত বিধানে ৬৪টি আসন খৃস্টানদের দিতেই হয়। ২০০৬ সালে মাসব্যাপী ভয়াবহ ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হিযবুল্লাহ যে অসম সাহসিক প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়েছিলো তাতে পশ্চিমাবিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলো। ইসরাইল ঘোষণা করেছিলো, হিযবুল্লাহকে উৎখাত না করে তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে না। অথচ হিযবুল্লাহর হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে বিনা শর্তেই ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। মূলত আমেরিকাই তখন ইসরাইলকে লজ্জাজনক পরাজয় থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করেছিলো। ইসরাইল এখন হিযবুল্লাহকে মোকাবেলা করার জন্য নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। আর তা হলো পশ্চিমা দেশগুলোর মাধ্যমে লেবাননের একটি সেকুলার সেনাবাহিনী গড়ে তোলা, যা হিযবুল্লাহর প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। ফিলিস্তিনে এ কৌশল ভালো ফল দিয়েছে। এখন হামাস ও ফাতাহ একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ছে। পাকিস্তানেও মার্কিন সৈন্যরা এখন দূর থেকে গৃহযুদ্ধের তামাশা দেখছে। লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফীক হারীরীর নেপথ্যে ছিলো ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদ, কিন্তু সুকৌশলে দায় চাপিয়ে দেয়া হয় সিরিয়ার উপর। ফলে সিরিয়া লেবানন থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এর উদ্দেশ্য ছিলো ২০০৫ সালের ইসরাইলী আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। এখন আবার হিযবুল্লাহকে অভিযুক্ত করে শিয়া-সুন্নী বিরোধ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশকে ইসরাইল ভয় করে না, ভয় করে শুধু হামাস ও হিযবুল্লাহকে। যদি ইহুদিদের এ অপকৌশল কার্যকর হয়ে যায় তাহলে শিয়া-সুন্নী দাঙ্গা যে অবশ্যম্ভাবী এবং এর পুরো ফায়দা যে লোটবে ইসরাইল ও খৃস্টান সমপ্রদায় তা বলাই বাহুল্য। পরিস্থিতি সম্ভবত সেদিকেই এগুচ্ছে। আমাদের সান্ত্বনা হলো কোরআনের এই আয়াত- ‘তারা মকর করেছে, আর আল্লাহ তাদের মকরের জবাব দিয়েছেন, আর আল্লাহ মকরের উত্তম জবাবদাতা।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা