যিলক্বদ ১৪৩০হিঃ (১৪)

তোমাদের পাতা

চাঁদের ছায়া, মেঘের জোসনা!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট
কাছের মানুষগুলোর চেয়ে দূরের চাঁদ যেন অনেক বেশী কাছে কাছে, অনেক বেশী আপন এবং অন্তরঙ্গ! তুমি ছিলে কত কাছে; তুমি এখন কত দূরে! কিন্তু আকাশের চাঁদ! সব দূরত্ব মুছে দেয়, পথের এবং হৃদয়ের! চাঁদের দিকে যখন তাকাই, মনে পড়ে তোমাকে। মনে হয়, এই তো তুমি কত কাছে! যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়! চাঁদ তোমাকে এত কাছে আনে, তাই চাঁদ আমার এত কাছের! আমরা যে একসঙ্গে চাঁদ দেখেছি! আমরা যে একসঙ্গে চাঁদ দেখি! আকাশে আজকের চাঁদটি পরিপূর্ণ। চাঁদের যেন আজ ভরা যৌবন! কত ভালো হতো আজ যদি আকাশে মেঘ না থাকতো! অন্তত মেঘ যদি আমার এবং চাঁদের মাঝে আড়াল না হতো! মেঘেরা ভেসে যায় না কেন দূরের কোন দেশে, যেখানে পর্বতচূড়া দাঁড়িয়ে আছে আকাশ ছুঁয়ে, যেখানে মেঘেরা ঝরতে পারে বৃষ্টি হয়ে! মেঘগুলোর কি কোন বন্ধু নেই দূর দেশে! চাঁদের আলো তো ঝরছে এখনো মেঘের আড়ালে এবং আমারই জন্য, কিন্তু ...! মেঘেরা বৃষ্টির দূত! ওরা তো কোমল স্নিগ্ধ! হয়ত মেঘখণ্ডগুলোর জানা নেই আমার মনের কষ্টের কথা! কিংবা হয়ত জানে এবং জানে বলেই মাঝে মাঝে চাঁদকে আমার দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখে, আমার সামনে আমার জীবনের পূর্ণ রূপটি তুলে ধরার জন্য। চাঁদের আলো এবং মেঘের ছায়া দু'টো মিলেই তো আমার জীবনের পূর্ণ ছবি। আমি তো শুধু চাঁদের আলো নই এবং নই শুধু মেঘের ছায়া। যখন তুমি কাছে থাকো তখন মনের আকাশে চাঁদ হাসে; যখন তুমি দূরে থাকো, মনের আকাশে তখন মেঘ ভাসে। একটি সময় ছিলো যখন আমার হৃদয়-আকাশে মেঘ জমতো। সে মেঘ কখনো ঝরতো অশ্রু হয়ে তোমার হৃদয়-উদ্যানের সবুজ গালিচায়, কখনো ঝরতো কালি হয়ে কাগজের পাতায়। হৃদয়ের আকাশে মেঘ ছিলো, মেঘের বর্ষণ ছিলো, কিন্তু জীবনের সৌন্দর্য তখন অন্যরকম ছিলো। আকাশে চাঁদ ছিলো, মেঘ ছিলো, কিন্তু মেঘের আড়াল ছিলো না। মৈঘেরা যেন চাঁদের সৌন্দর্যকে তখন আরো উদ্ভাসিত করতো! মেঘের সঙ্গে চাঁদের লুকোচুরি তখন আমাকে আরো আনন্দ দিতো! কী ক্ষতি ছিলো এভাবেই যদি জীবনটা....! তবু তো বেঁচে থাকতে হবে আমাকে হৃদয়কে ধারণ করে, জীবনকে যাপন করে! যত কাঁটা বিঁধুক, যত রক্তক্ষরণ হোক, হৃদয়কে ধারণ করাই তো জীবনের ধর্ম! ব্যথা যত তীব্র হোক, যন্ত্রণা যত গভীর হোক জীবনকে যাপন করাই তো হৃদয়ের দাবী! রক্তাক্ত হৃদয়কে ধারণ করে এবং বিক্ষত জীবনকে যাপন করে নির্জন রাতে এখনো আমি দেখি আকাশে পূর্ণিমার চাঁদকে। জানি, যত দূরেই থাকো, তুমিও দেখো চাঁদ; তোমারও মুখে ঝরে চাঁদের জোসনা! দূরের তোমাকে তখন অনুভব করি অনেক কাছে। আজকের চাঁদকে সাক্ষী রেখে শুধু একটি কথা বলতে চাই; হৃদয়-উদ্যানের বসন্ত এখনো তোমার। সাদা সাদা ফুলগুলি এবং গানের সবকলি তোমার, শুধু তোমার; যদি তুমি চাও ফুলের সুবাস এবং গানের সুর। আর যদি চাও ঝরা পাপড়ি এবং হৃদয়বীণার ছিন্ন তার, তাহলে সবফুল ঝরে পড়বে গাছ থেকে তোমার পায়ে এবং হৃদয়ের বীণায়....! তুমি তো এখন তাকিয়ে আছো চাঁদের দিকে! একবার পড়ে দেখো না চাঁদের গায়ে আমার হৃদয়ের রেখাগুলো! পড়ে দেখো না ভালোবাসার মানচিত্র! (বেনাম থেকে পেতে চাই আসমানের এনাম)
শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা