মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

তোমাদের পাতা

অন্তরের স্বভাবপ্রতিক্রিয়া এবং করণীয়।

লিখেছেনঃ হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাক্বী উছমানী দা.

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট



الحمد لله رب العالمين والعاقبة للمتقين؛ والصلاة والسلام على رسوله الكريم؛ وعلى آله وأصحابه أجمعين؛ أما بعد

জনৈক ব্যক্তি হযরত হাকীমুল উম্মত থানবী রহ.এর কাছে লিখেছেন-‘কেউ যদি অন্যায়ভাবে আমার গীবত করে, আর আমি জানতে পারি তখন আমার অন্তরে তার প্রতি মলিনতা, বরং উষ্ণতা এসে যায়। (এটা কেমন!) (আনফাসে ঈসা, পৃ. ১৫০) অর্থাৎ যখন আমি জানতে পারি যে, অমুক আমার অগোচরে আমার নিন্দা করেছে এবং তা অমূলক তখন ঐ ব্যক্তির প্রতি আমার মনটা ঘোলা হয়ে যায়, আমার মনে মলিনতা এসে যায়, বরং ‘গরমি’ এসে যায়। অর্থাৎ অন্তরে তার প্রতি ক্রোধের সঞ্চার হয়। তো এটা কেমন!

ঐ ভদ্রলোকের পক্ষ হতে হযরতকে এ অবস্থা জানানোর উদ্দেশ্য ছিলো, আমার মনের এ প্রতিক্রিয়া যদি ন্যায্য হয় তাহলে তো ঠিক আছে, কিন্তু এটা যদি অন্যায় হয় এবং গুরুতর ব্যাধি হয়, আর সংশোধন জরুরি হয় তাহলে নিজেকে আমি হযরতের সামনে পেশ করছি। হযরত যে কোন চিকিৎসা দেবেন তা মেনে চলার জন্য আমি তৈয়ার আছি। কারণ আমি তো চাই আমার অবস্থার সংশোধন হোক, আমার রোগের সঠিক ও উপযুক্ত এলাজ ও চিকিৎসা হোক। চিকিৎসা না করিয়ে রোগ বাড়তে দেয়া তো মহাক্ষতির কারণ। জবাবে হযরতওয়ালা লিখেছেন, ‘এ উভয় অবস্থার নাম হলো (কোনক্রিয়ার ফলে অন্তরে সৃষ্টি হওয়া) স্বভাবপ্রতিক্রিয়া, যা বান্দার ইচ্ছাধীন নয়। আর অনিচ্ছাধীন বিষয়ের উপর শরী‘আতের পক্ষ হতে না তিরস্কার হবে, না গোনাহ হবে। তবে ঐ স্বভাবপ্রতিক্রিয়ার অনিবার্য চাহিদা অনুযায়ী যদি কাজ শুরু করা হয়, যেমন ঐ ব্যক্তির গীবত শুরু করা, তাকে কষ্ট দেয়া বা তার ক্ষতি করার চেষ্টায় লেগে যাওয়া, ইত্যাদি, এগুলো হচ্ছে কর্ম ও কাজ, যা বান্দার ইচ্ছাধীন বিষয়। তাতে কোন কোন ক্ষেত্রে শরী‘আতের পক্ষ হতে তিরস্কার ও গোনাহ হতেও পারে।

সুতরাং যখন অন্তরে এই স্বভাবপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তখন এর চাহিদা অনুযায়ী কাজ না করা উচিত, বরং ঐ স্বভাব-প্রতিক্রিয়া যেন অন্তর থেকে দূর হয়ে যায়, আল্লাহ্র কাছে সেই দু‘আ করা উচিত যে, আয় আল্লাহ্! আমার দিল থেকে যেন এই প্রতিক্রিয়া দূর হয়ে যায়, আর এই প্রতিক্রিয়ার ফলরূপে কোন কাজ যেন আমার দ্বারা না হয়ে যায়। এর জন্য সহজ উপায় হলো, নিজের দোষত্রুটি ও গোনাহ্খাতা স্মরণ করা, যাতে অন্তরে এ বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে যায় যে, ঐ ব্যক্তি আমার যাকিছু নিন্দাচর্চা করেছে, আমার অবস্থা তো তার চেয়ে গুরুতর। আমি তো তার চেয়ে অনেক বেশী নিন্দার হকদার। দ্বিতীয় করণীয় হলো, তুমি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যাকিছু করবে তার শাস্তি ও পরিণাম সম্পর্কে চিন্তা করা, যাতে অন্তরে ঐ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশোধের স্পৃহা দুর্বল হয়ে যায়।এভাবে অন্তরের আকুতির সঙ্গে একসপ্তাহ আমল মোজাহাদা করার পর আবার অবস্থা জানাবে।

মনে মন্দ চিন্তা আসার হাকীকত

এই বাণী ও মলফূযে হযরত হাকীমুল উম্মত থানবী রহ. একটি মূলনীতি এবং তার উপর আমল করার তরীকা বা উপায়ও বলে দিয়েছেন। বস্তুত তিনি অত্যন্ত সুসংক্ষিপ্তভাবে বিষয়টির হাকীকত স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এটি খুবই কাজের কথা এবং বড় উপকারী কথা। আর তা এই যে, কোন মন্দ চিন্তা- যত মন্দই হোক- নিজে নিজে মনের মধ্যে এসে যাওয়া মানুষের সম্পূর্ণ ইচ্ছার বাইরের বিষয়, ইচ্ছার তাতে কোন দখল নেই। অর্থাৎ ইচ্ছা করলেই মানুষ ঐ চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে না। তাই আল্লাহর পক্ষ হতে তার উপর কোন তিরস্কার বা শাস্তিও নেই। আল্লাহ্ না করুন, এমনকি শিরক ও কুফুরির চিন্তাও যদি এসে যায়, তবে খুব মনে রাখতে হবে যে, চিন্তাটা নিজে নিজে এসে যাচ্ছে; ইচ্ছাকৃতভাবে চিন্তা করে আনা হচ্ছে না, তো শুধু এরকম চিন্তা মনের মধ্যে এসে যাওয়া, এর উপর না তিরস্কার হবে, না শাস্তি হবে। কেননা এটা তার দিলে সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃতভাবে এসে গিয়েছে, যা কোন গোনাহ নয়।

স্বভাবপ্রতিক্রিয়া গোনাহ নয়, তার চাহিদা পুরা করা গোনাহ। একই ভাবে কারো কোন মন্দ আচরণের কারণে যদি অন্তরে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যা বিলকুল স্বাভাবিক, যেমন কেউ গালি দিলো, জাত-খান্দান তুলে কথা বললো, যার ফলে অন্তরে ক্রোধ-উষ্ণতা সৃষ্টি হলো। এটা সম্পূর্ণ স্বভাব ও ফিতরতের বিষয়, ইচ্ছার তাতে কোন ভূমিকা নেই। তাই এটা গোনাহও নয়। শরী‘আতের পক্ষ হতে এর উপর না কোন তিরস্কার হবে, না কোন শাস্তি হবে।

এখানে একটা বিষয়; আল্লাহর কোন কোন নেক বান্দা তো দীর্ঘ সাধনা ও মোজাহাদার মাধ্যমে নফস ও প্রবৃত্তিকে এমনভাবে দমন করে ফেলেন যে, মানুষ তাঁদের সঙ্গে যত মন্দ আচরণই করুক, যত নিন্দা-গীবত ও শত্রুতাই করুক, তাতে তাঁদের অন্তরে কোন প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি হয় না, না ক্রোধ, না উষ্ণতা, না প্রতিশোধের স্পৃহা! তবে এটা হলো আল্লাহর বিশেষ নেক বান্দাদের বিষয়। আত্মদমন ও মোজাহাদার ফলে তাঁদের নফস ও প্রবৃত্তি সম্পূর্ণ অবদমিত হয়ে যায়। এমন মানুষ সংখ্যায় অনেক কম। এখানে তো সাধারণ মানুষের কথা হচ্ছে।

একজন সাধারণ মানুষকে যখন কষ্ট দেয়া হবে, গালমন্দ করা হবে, তার প্রতি বৈরী আচরণ করা হবে তখন এর যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, সেটা তার অন্তরে সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। এটা কোন গোনাহ নয়। এজন্য না কোন তিরস্কার হবে, না কোন শাস্তি হবে। কিন্তু যদি কাজে বা কথায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে ফেলে; যেমন কেউ গালি দিয়ে বললো, তুমি তো আস্ত খবীছ, ইতর! আর আপনি জওয়াব দিয়ে বললেন, তুমি ইতর, তোমার বাপ ইতর। অর্থাৎ কোধ প্রকাশ করতে গিয়ে আপনি সীমালঙ্ঘন করে বসলেন। তো মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া অসন্তোষ বা ক্রোধের কারণে কোন শাস্তি বা তিরস্কার তো ছিলো না, এমনকি সমান সমান বদলা নিলেও কোন গোনাহ হতো না, ইনশাআল্লাহ্!

কিন্তু আপনি তো বদলা নিতে গিয়ে এককদম আগে বেড়ে গিয়েছেন, তাকে অতিক্রম করে তার বাপ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন, ব্যস, এই সীমালঙ্ঘনের কারণে আপনার পাকড়াও হয়ে গেলো! আসল কথা হলো, যখন রাগ চড়ে যায় এবং রাগের মাথায় শোধ নিতে যায়, তখন সাধারণত সীমার ভিতরে থাকা সম্ভব হয় না, বরং সীমালঙ্ঘন হয়েই যায়, যা বড় খতরনাক। কারণ এটা ইচ্ছাভুক্ত কাজ, যার উপর আখেরাতে পাকড়াও হবে।

মাফ করে দেয়াই নিরাপদ

ধরুন, কেউ আপনাকে ঘুষি মারলো, এখন বদলা নিতে গিয়ে আপনি তো আর ওজন মেপে ঘুষি মারতে পারবেন না যে, সে যত জোরে মেরেছে, আমিও ঠিক তত জোরে মারবো। এটা তো শুধু নিক্তিতে ওজন করেই সম্ভব। নইলে সমান বদলা নেয়া আসলেই মানুষের সাধ্যের মধ্যে নেই। এজন্যই আল্লাহর নেক বান্দারা কারো যুলুমের বদলা নেন না, মাফ করে দেয়াকেই নিজের জন্য নিরাপদ মনে করেন। কারণ সামান্য সীমালঙ্ঘনের জন্যই তো পাকড়াও হয়ে যাবে।

বুযুর্গানে দ্বীনের বিভিন্ন রূপ

‘আরওয়াহে ছালাছা’ কিতাবে হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রহ. একটি ঘটনা লিখেছেন। একব্যক্তি জনৈক বুযুর্গের খিদমতে আরয করলো, হযরত, এই যে, আল্লাহ্ওয়ালাদের স্বভাবে আচরণে বিভিন্ন রঙ ও রূপ দেখা যায়; কারো এমন, কারো তেমন। আমি দেখতে চাই, আখের তাদের স্বভাব- বৈচিত্র্য কত রকমের হতে পারে!তিনি বললেন, আরে ভাই, ছাড়ো! কী অযথা চক্করে পড়ে গেলে! হয়ত ঐ ব্যক্তির ঐ বুযুর্গের সঙ্গে বিশেষ কোন সম্পর্ক ছিলো, যার কারণে ঐ বুযুর্গকে সে নাছোড় বান্দা হয়ে ধরলো যে, না হযরত, আমাকে তা দেখতেই হবে! দেখা ছাড়া আমার ইতমিনান হবে না।

তখন তিনি বললেন, আচ্ছা, এক কাজ করো; অমুক গ্রামের মসজিদে যাও। সেখানে তুমি তিনজন বুযুর্গানকে ইবাদতের অবস্থায় দেখতে পাবে। তুমি পিছন থেকে গিয়ে তাদেরকে একটা করে ঘুষি লাগিয়ে দাও। তারপর কী হলো, আমাকে তার বৃত্তান্ত জানাও।

ঐ লোক কথিত মসজিদে গিয়ে দেখে, ঠিকই তিন বুযুর্গ (দূরে দূরে বসে) নিজ নিজ ইবাদতে মশগুল। ব্যস, সে গিয়ে পিছন থেকে তিনজনকে একে একে তিনটা ঘুষি লাগিয়ে দিলো। এ ঘটনা ঘটিয়ে লোকটা যখন আগের বুযুর্গের কাছে ফিরে এলো (তখন নিজে সাহস করে কিছু বলতে পারলো না। হয়ত নিজের পুরো আচরণের প্রতি তার অনুশোচনা হয়েছিলো। তখন বিষয়টা কিচু আঁচ করতে পেরে বুযুর্গ নিজেই জানতে চাইলেন,) বলো ভাই, কী ঘটলো ওখানে!

লোকটা বললো, হযরত, কী যে বলবো! আসলেই বড় আজব ঘটনা হয়েছে। প্রথমজনকে যখন ঘুষি মারলাম, তিনি ফিরেও তাকালেন না, বরং নিজের যিকির ইবাদতে যেমন ছিলেন তেমনি মশগূল থাকলেন। দ্বিতীয়জন ঘুষি খাওয়ামাত্র পিছনে ফিরে আমাকেও একটা ঘুষি লাগিয়ে দিলেন। তারপর আবার ইবাদতে মশগূল হয়ে গেলেন।আর তৃতীয়জন! তিনি করলেন আরো আজব আচরণ। তিনি আমার দিকে ফিরে তাকালেন, তবে ঘুষির জবাবে ঘুষি তো মারলেনই না, উল্টো আমার হাত টিপে দিতে লাগলেন যে, আমি ব্যথা পেয়েছি কি না! তো এ-ই হলো আল্লাহ্ ওয়ালা বুযুর্গানের স্বভাববৈচিত্র্য এবং আচরণের বিভিন্ন রূপ। যেমন কবি বলেছেন, ‘হার গুলে রা রঙ ও বুয়াদ দীগরস্ত।’ প্রত্যেক ফুলেরই রয়েছে নিজস্ব বাস ও সুবাস।

প্রথম বুযুর্গ ছিলেন এই চিন্তার মানুষ যে, আমি তো আল্লাহর-স্মরণে ইবাদতে মশগূল আছি। এর মধ্যে কেউ পিছন থেকে যদি ঘুষি মারে তাহলে এমন কী কিয়ামত হয়ে গেলো যে, যিকির-শোগল ছেড়ে আমাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে! আমি যদি ফিরে তাকাই যে, কে মারলো, কেন মারলো, আর বদলা নেয়ার চিন্তায় পড়ে যাই তাহলে তো আমার যিকির-শোগল ও ইবাদাত -মোজাহাদায় ব্যাঘাত ঘটবে এবং আমার আধ্যাত্মিক অবস্থান ও রূহানি মাকাম হাতছাড়া হয়ে যাবে। তো এটা ছিলো একটা রূপ। একটি ফুলের নিজস্ব সুবাস।

আর যিনি পিছনে ফিরে তোমাকে ঘুষি লাগিয়েছিলেন, বলো তো, তেমার ঘুষির চেয়ে তার ঘুষি কি বেশী ওজনের ছিলো? বেশী ভারী ছিলো? লোকটি বললো, জ্বি না হযরত, বেশী ওজনের ছিলো না, বা বেশী ভারী ছিলো না, বরং একই ওজনের, একই রকম ছিলো। বুযুর্গ বললেন, তো এটা হলো দ্বিতীয় রূপ। যেহেতু আল্লাহ্ তা‘আলা বদলা নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন তাই তিনি বদলা নিয়ে নিয়েছেন। আর এই বদলা নেয়া কখনো কখনো স্নেহ ও কল্যাণ কামনার জন্যও হয়ে থাকে। কারণ তুমি আল্লাহর ওলীকে কষ্ট দিলে, আর তিনি ছবর করলেন, তখন এই ছবর ঐ কষ্টদানকারীর জন্য আল্লাহ্ না করুন, গুরুতর ক্ষতির কারণও হতে পারে। কেননা হাদীছ শরীফে এসেছে- مَـنْ عَـادَى لِـي وَلِـيًّـا فَـقَدْ آذَنْـتُـه بِالْـحَرْبِ যে ব্যক্তি আমার কোন অলিকে কষ্ট দেয়, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। মোটকথা, ঐ বুযুর্গ এই ক্রাণে বদলা নিয়ে নিয়েছেন, যাতে সে আল্লাহর বদলা নেয়া থেকে বেঁচে যায়। তো এটা ছিলো বুযুর্গির দ্বিতীয় রূপ এবং দ্বিতীয় ফুলের দ্বিতীয় সুবাস।

তৃতীয় বুযুর্গ যিনি, তিনি নিজের কষ্ট সম্পর্কে চিন্তা করার পরিবর্তে যে ঘুষি মেরেছে তার কষ্ট নিয়ে পেরেশান হয়ে পড়েছেন যে, আমার যেমন হাড়সর্বস্ব শরীর, তাতে ঘুষি মারতে গিয়ে ঐ লোকের হাতে তো ব্যথা লাগেনি! তাহলে তো আমার কারণে তিনি ব্যথা পেলেন, সুতরাং আমার তো কর্তব্য হবে তার সেবা শুশ্রুষা করা। তো এটা ছিলো বুযুর্গির তৃতীয় রূপ এবং তৃতীয় ফুলের তৃতীয় সুবাস।

মোটকথা, এমনই হয় বুযুর্গানে দ্বীনের স্বভাব ও আচরণের রূপবৈচিত্র্য। এটি তো একটি ঘটনার মাধ্যমে একটি রূপবৈচিত্র্যের উদাহরণ। এরকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যার দ্বারা বুযুর্গানের চিন্তাভাবনা ও কার্যকলাপের বিভিন্ন রূপ প্রকাশ পায়, আর প্রতিটি রূপের মধ্যেই থাকে আলাদা সৌন্দর্য। তো ফিরে আসি আগের কথায়। কারো কোন মন্দ আচরণের কারণে তোমার অন্তর যদি তার প্রতি ঘোলা হয়ে যায়, বা ক্রোধ জাগ্রত হয় তাহলে সেটা কোন গোনাহ নয়। পক্ষান্তরে যদি ঐ ক্রোধের চাহিদা পুরা করতে গিয়ে, অর্থাৎ বদলা নিতে গিয়ে যদি সীমা- লঙ্ঘন হয়ে যায় তবে সেটা হবে তিরস্কারযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য। এজন্যই নছীহত করা হয় যে, বদলা নিতেই যেয়ো না, বরং মাফ করে দাও। এর ফায়দা এই হবে যে, আল্লাহর কাছ থেকে তুমি বেশুমার আজর ও প্রতিদান পাবে, আর নিজেকে বিপদ ও ঝুঁকির মধ্যে ফেলা থেকেও বেঁচে যাবে।

স্বভাবপ্রতিক্রিয়াকে অন্তরে বদ্ধমূল হতেই দিয়ো না।

এটা তো ঠিক যে, অন্তরে যে স্বভাবপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যে মলিনতা, অসন্তোষ বা ক্রোধ জাগ্রত হয় তার উপর কোন তিরস্কার বা শাস্তি নেই, তবে এই প্রতিক্রিয়া বেশী সময় যদি অন্তরে জমে থাকে এবং জমাট বেধে যায় তাহলে শেষ পর্যন্ত তা মানুষকে কোন না কোনভাবে গোনাহের মধ্যে লিপ্ত করেই ছাড়ে এবং মানুষের বরবাদির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একই কথা হাসাদ ও হিংসা সম্পর্কেও। যেমন তুমি কারো জোরদার উন্নতি ও সমৃদ্ধি হতে দেখলে যে, সে তো আমার চেয়ে বেশী সম্পদশালী! তার ঘর তো আমার ঘরের চেয়ে বড়, তার গাড়ী তো আমার গাড়ীর চেয়ে দামী। তার খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা তো আমার চেয়ে বেশী! তার জায়গায় আমি হলেই না ভালো ছিলো। যোগ্যতায় তো আমি তার চেয়ে এগিয়ে, তাহলে দুনিয়ার নায নেয়ামতে সে আমাকে ছাড়িয়ে যায় কীভাবে! এ তো ঘোর অন্যায়! এর সঙ্গে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্তরে এ চিন্তা এসে যায় যে, তার নেয়ামত বিলুপ্ত হোক এবং আমার কাছে এসে যাক। অথবা আমার কাছে আসুক বা না আসুক, তার কাছে যেন না থাকে! কী ভয়ঙ্কর মন্দ চিন্তা! কিন্তু মনে রাখুন, এ চিন্তাটা এসেছে অনিচ্ছাকৃতভাবে। তাহলে এ সীমা পর্যন্তও চিন্তাটা হারাম নয় এবং শাস্তিযোগ্য নয়।

কিন্তু ঘটনা তো এখানেই থেমে থাকে না। ঘটনা তো এভাবে এগিযে যায় যে, যখন এরকম  চিন্তা অন্তরে বসে যায় তখন এর ফলে এমন কোন না কোন কাজ তার দ্বারা হয়েই যায়, যাতে ঐ ব্যক্তির অকল্যাণ থাকে যাকে হিংসা করা হয়। যেমন তার জন্য বদ দু‘আ করে দিলো যে, আয় আল্লাহ্ তুমি তার এই নেয়ামত ছিনিয়ে নাও, বা তার শত্রুকে সাহায্য করলো, তার শত্রুকে তার সম্পর্কে কোন তথ্য দিয়ে বা অন্যকোনভাবে সাহায্য করলো। অথবা এমনভাবে তার আলোচনা করলো, যাতে মানুষের সামনে তার বে-ইজ্জতি হয়। মোট কথা, এমন কোন না কোন কাজ করলো যার উদ্দেশ্য হলো, দিলে হাসাদ ও হিংসার যে প্রবৃত্তি রয়েছে তাকে খুশী করা। তো যদিও হাসাদ ও হিংসার মূল চিন্তাটা মন্দ, তবে তিরস্কারযোগ্য বা শাস্তিযোগ্য ছিলো না, কিন্তু যখন তা দিলের মধ্যে বসে গেলো এবং জমে গেলো, আর তার ফলে যাকিছু কাজ তার দ্বারা হলো তা সবই হারাম হয়ে গেলো, শাস্তিযোগ্য হয়ে গেলো।

অনিচ্ছাকৃত মন্দ চিন্তার চিকিৎসা

তো এই যে দিলের মধ্যে এসে যাওয়া অনিচ্ছাকৃত চিন্তা, হোক তা হিংসা, বা মলিনতা ও অসন্তোষ, বা ক্রোধের উষ্ণতা, সেটারও চিকিৎসা করা জরুরি। এ বিষয়ে শিথিলতা করা কিছুতেই ঠিক না, কারণ ‘অনিচ্ছাকৃত চিন্তা, এর উপর তো কোন পাকড়াও নেই’, একথা ভেবে যদি এলাজ ও চিকিৎসার প্রতি মনোযোগী না হই, তাহলে তো এই ব্যাধি বাড়তে বাড়তে দুরারোগ্য হয়ে যেতে পারে, যা তোমাকে শেষ করে দেবে, বরবাদ করে দেবে।

এখন প্রশ্ন হলো, যদি আমি চিকিৎসা করতে চাই তাহলে এর চিকিৎসা কী? চিকিৎসার শুরু এই যে, অন্তর থেকে বিশ্বাস করো, এ চিন্তা ভয়ানক মন্দ ও ক্ষতিকর। তোমার অন্তর যেন এ সাক্ষি দেয় যে, আমার মনে যে চিন্তা আসছে তার খুবই খারাপ চিন্তা, ক্ষতিকর চিন্তা। এমন চিন্তা আমার অন্তরে কিছুতেই আসা উচিত নয়। যেমন আমার মনে এই চিন্তা আসছে যে, ‘অমুকের এই নেয়ামত যেন তার হাতছাড়া হয়ে যায়, আর আমার হাতে এসে যায়। অথবা এমন চিন্তা যে আমার হাতে আসুক, না আসুক, তার হাতে যেন না থাকে।’ তো আগে বিশ্বাস করতে শুরু করো যে, এটা বড় মন্দ চিন্তা, এমন চিন্তা যার মনে আসে সে ভালো মানুষ না, সে অতিশয় মন্দ মানুষ।অথবা মনে করো, সঙ্গত বা অসঙ্গত কারণে আমার অন্তরে কারো প্রতি এই যে মলিনতা সৃষ্টি হয়েছে যে, ‘অমুক লোকটা খুব ইতর ও নীচ প্রকৃতির।’ এটাও অতি মন্দ চিন্তা। এরও কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে। তা এই যে, তখন তুমি অন্তরে এই বিপরীত চিন্তা আনতে শুরু করো যে, আামার মধ্যে কী কী দোষ আছে? যদি নির্মোহ দৃষ্টিতে তালাশ করো তাহলে দেখবে, নিজের মধ্যেই তো অসংখ্য দোষ জমে আছে! সে তো আমার গীবত করে একটা কথা বলেছিলো, এখানে তো দোষের স্তূপ! আমার সম্পর্কে যদি সে আরো অনেক কিছু বলতো তাহলে সেটাও তো কমই হতো!

প্রথম চিকিৎসা হলো দু‘আ করা

তো মন্দ চিন্তাকে মন্দ মনে করা এবং এরূপ মন্দ চিন্তার কারণে নিজেকে মন্দ মানুষ মনে করা, এর দ্বারা তো চিকিৎসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেলো। এখন মূল চিকিৎসা হলো দু’টি। প্রথম চিকিৎসা হলো আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। সর্বশক্তিমান ও পরম দয়ালু আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে খুব কাতরতা ও কাঙ্গালতার সঙ্গে এভাবে দু‘আ করো, আয় আল্লাহ্, আমার দিলে যে মন্দ চিন্তা আসছে, তা যেন আমাকে এমন কাজে লিপ্ত না করে বসে যা হারাম, যা তিরস্কারযোগ্য এবং শাস্তিযোগ্য, আর সেই কাজ করে আমি যেন বরবাদ না হয়ে যাই। আয় আল্লাহ্! আমার দিল থেকে এই মন্দ চিন্তা আপনি দূর করে দিন।মোটকথা, এভাবে যদি এই মন্দ চিন্তার চিকিৎসা করতে থাকো, আশা করা যায়, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার সংশোধন করে দেবেন এবং ঐ খতরনাক ব্যাধি হতে তুমি মুক্ত হয়ে যাবে।

পক্ষান্তরে যদি চিকিৎসা না করো, বরং যেমন আছে তেমনি ছেড়ে দাও তাহলে তো ঐ চিন্তা মনের মধ্যে জমতেই থাকবে, আর খাহেশাতের কুখাদ্য খেয়ে খেয়ে এমন শক্তিশালী হয়ে যাবে যে, তখন আর চিকিৎসা করার সুযোগ থাকবে না, বরং কোন না কোন সময় ঐ মন্দ চিন্তা তোমাকে গোনাহের মধ্যে লিপ্ত করে ছাড়বে। যেমন ধরো, তুমি প্রতিশোধ নিতে গেলে, আর সীমালঙ্ঘন করে ফেললে, যেমন আগে বলে আসা হয়েছে। সুতরাং প্রথম কথা এই যে, দিলের মধ্যে আসা মন্দ চিন্তাকে মন্দ মনে করো এবং ঐ মন্দ চিন্তার কারণে নিজেকে মন্দ মনে করো। অন্তরে নিজের প্রতি  নাফরত ও ঘৃণা পয়দা করো যে, আমি কত খারাপ মানুষ, আমার মনে কত মন্দ মন্দ চিন্তা আসে! তারপর খুব রোনাযারির সঙ্গে দু‘আ করো যেন আল্লাহ্ তা‘আলা ঐ মন্দ চিন্তা তোমার দিল থেকে দূর করে দেন।

এখন থাকলো হাসাদের বিষয়। তো কারো প্রতি যদি অন্তরে হাসাদ ও হিংসা সৃষ্টি হয় তাহলে এর চিকিৎসা হলো, এমন এমন কাজ শুরু করো যা হাসাদ ও হিংসার চাহিদার বিপরীত। হাসাদ ও হিংসার চিন্তাটা তো তোমার ইচ্ছাধীন নয়, ঠিক আছে, কিন্তু হাসাদের চাহিদামত কাজ না করা, বরং তার বিপরীত কাজ করা, এটা তো সম্পূর্ণরূপে তোমার ইচ্ছার অধীন। যেমন দিল তো চাচ্ছে যে, অমুক ব্যক্তি মানুষের সামনে অপদস্থ হোক, লজ্জিত হোক, কিন্তু দিলের উপর পাথর রেখে এভাবে দু‘আ করো যে, আয় আল্লাহ্, অমুককে খুব ইজ্জত দান করুন! খুব নেকনাম ও সুখ্যাতি দান করুন। অথবা মনে করো, তোমার দিল তো চাচ্ছে যে, মানুষ তার নিন্দা করুক, বদনাম করুক, মানুষের সামনে তার সমস্ত দোষ প্রকাশ পেয়ে যাক, আর মানুষের নযরে সে খুব তুচ্ছ হয়ে যাক। এটা হলো তোমার দিলের চাহাত ও চাহিদা; এটা হলো নফসের খাহেশ, কিন্তু তোমার দিল-নফস না চাইলেও অন্তত মুখে ও যবানে তুমি এই দুআ করতে থাকো যে, আয় আল্লাহ্, সবার নযরে তাকে সম্মানিত করে দিন, তাকে সবার প্রিয় ও মানযূরে নযর করে দিন। শ্রদ্ধার পাত্র বানিয়ে দিন।

এটা ঠিক যে, দিল কিছুতেই চাইবে না, মুখে এভাবে দু‘আর শব্দুগুলো আসুক, বরং দিলের মধ্যে হয়ত তখন করাত চলার মত কষ্ট ও যন্ত্রণা হবে; তবে মনে রাখতে হবে যে, দিলের উপর এভাবে করাত চালানোই হলো এ রোগের চিকিৎসা। একই ভাবে সঙ্গত অসঙ্গত কোন কারণে যদি কারো প্রতি অন্তরে মলিনতা ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয় তাহলে এরও চিকিৎসা এই যে, এমন চিন্তা আসাকে অন্তর থেকে খারাপ মনে করো এবং এ কারণে নিজেকে খারাপ মনে করো যে, যাদের মধ্যে এমন চিন্তা আসে না তারা আল্লাহর কত ভালো বান্দা, আর আমি কত খারাপ বান্দা। তাহলে আল্লাহর কাছে আমি কত অপছন্দনীয় হয়ে গেলাম! এভাবে নিজেকে খুব ধিক্কার দাও। তারপর আল্লাহর কাছে খুব দিল দিয়ে দু‘আ করো যে, আয় আল্লাহ্, অমুকের প্রতি আমার অন্তরে যে মলিনতা ও ক্ষুণ্নতা, তা দূর করে দিন। তার প্রতি আমার অন্তরে সুধারণা ও মুহব্বত পয়দা করে দিন।

দ্বিতীয় চিকিৎসা, আযাবের চিন্তা জাগ্রত রাখা

তারপর হযরত থানবী রহ. বলেছেন, ‘কর্মের উপর যে শাস্তি হবে সেই শাস্তির চিন্তাকে যেন জাগ্রত রাখা হয়।’অর্থাৎ আমার অন্তরে যে ক্রোধ এসেছে, যে ইন্তিকামের জাযবা এবং প্রতিশোধের স্পৃহা জেগে উঠেছে, আমি যদি তা কার্যকর করি, আর তাতে সীমালঙ্ঘন হয়ে যায় এবং হওয়াটাই তো স্বাভাবিক, তাহলে এর পরিণামে আল্লাহর পক্ষ হতে তো কঠিন শাস্তি হবে! সেই আযাবের ভয়াবহতা তো কল্পনা করাও সম্ভব নয়। একইভাবে চিন্তা করবে যে, আমার দিলে অমুকের প্রতি যে মলিনতা ও ক্ষুণ্নতার ভাব এসেছে, সামনে গিয়ে যদি সেটা আমার দ্বারা কোন গোনাহের কাজ করিয়ে ফেলে, যেমন আমার থেকে গীবত হয়ে গেলো, ঐ লোকটির ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ আমার দ্বারা হয়ে গেলো, তখন তো আল্লাহ্র পক্ষ হতে অবশ্যই আযাব ও শাস্তি আসবে, সেই আযাব ও শাস্তি কত কঠিন হবে! দুনিয়াতে আমার উপর কত বিপদ-মুছিবত ও পেরেশানি আসতে পারে! আল্লাহর নারাযির কারণে তো শুধু আমার নয়, আমার পরিবার পরিজনও কঠিন থেকে কঠিন পরীক্ষা ও ফিতনায় পড়ে যেতে পারে। এ তো হলো দুনিয়ার আযাবের কথা, আখেরাতে জাহান্নামের আগুন তো আছেই!

আযাব ও শাস্তির চিন্তা অন্তরে জাগরূক কেন রাখতে হবে, তাতে কী উপকার হবে! উপকার এই হবে যে, কর্মের প্রতি উদ্দীপক যে শক্তি তোমার ভিতরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠছে তা দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ দিলের মধ্যে যে এই চিন্তা জটপাকাচ্ছে যে, অমুকের বিরুদ্ধে এই প্রতিশোধমূলক কাজটা করে ফেলি, তাকে একটা উচিত শিক্ষা দিয়ে দেই, এই চিন্তাটা কমযোর হয়ে যাবে। এমনকি আল্লাহ্ চাহে তো একসময় দিল থেকে একেবারে মুছে যাবে।

এক সপ্তাহ পরে জানান দেয়া

সর্বশেষে হযরত থানবী রহ. বলেছেন, এই যে ইলাজ ও চিকিৎসা দেয়া হলো এর উপর আমল করে কী ফল পাওয়া গেলো, একসপ্তাহ পর চিকিৎসককে তার ইত্তেলা ও জানান দিতে হবে। কারণ তুমি যদি নিজের অবস্থা জানাও তাহলে চিকিৎসক চিন্তা করে দেখবেন যে, এই ঔষধে রোগীর কী পরিমাণ ফায়দা হয়েছে! যদি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ফায়দা হয়ে থাকে তাহলে তো ঠিক আছে। নইলে চিকিৎসা পরিবর্তন করে নতুন চিকিৎসা দিতে হবে। কেননা মানুষের অবস্থা ভেদে ঔষধের মাত্রায় তারতম্য আনতে হয়। কারো দিল যদি মোটামুটি ভালো থাকে তাহলে অল্পমাত্রার ঔষধে কাজ হয়ে যায়, পক্ষান্তরে দিল যদি শক্ত হয় তাহলে খুব তিক্ত ও কড়া ঔষধের প্রয়োজন হয়। এ কারেণে শায়খের কাছে একবার আসা এবং একবার চিকিৎসা নেয়া যথেষ্ট নয়। হালাত এবং অবস্থা জানাতে হয় এবং জানাতে থাকতে হয়।তো মৌলিক দিক থেকে তো হযরত হাকীমুল উম্মত রহ. যে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন তা অবশ্যই ঠিক আছে। কিন্তু কথা হলো, রোগীর অবস্থার বিভিন্নতার কারণে কারো ক্ষেত্রে এই চিকিৎসাই যথেষ্ট হতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে আরো বর্ধিত চিকিৎসার এবং নতুন মাত্রার ঔষধের প্রয়োজন হতে পারে।

সুতরাং কোন রোগী যেন চিকিৎসার এই মৌলিক ব্যবস্থাপত্র দেখেই মনে না করে যে, মৌলিক ব্যবস্থাপত্র তো আমার হাতে এসে গিয়েছে। এখন আমি নিজেই এর উপর আমল শুরু করবো এবং সমাপ্ত করে ফেলবো। নিজেই আমি নিজেকে এ গোনাহ থেকে উদ্ধার করে ফেলবো। শায়খের শরণাপন্ন হওয়ার আর কোন প্রয়োজনই নেই। অনেকে তো এমন চিন্তা পর্যন্ত করতে থাকে যে, এই রকম কোন রোগী যদি আমার কাছে আসে, তাকেও আমি এ ব্যবস্থা-পত্র দিয়ে দেবো, এর উপর আমল করে সেও সুস্থ হয়ে যাবে; শায়খের কাছে যাওয়ার দরকারই হবে না। তাই হযরত থানবী রহ. বলেছেন, এ চিন্তা ঠিক নয়, ভুল চিন্তা। কখনো কখনো বরং তা আত্মঘাতী চিন্তাও হতে পারে। না, এখনো শায়খের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও রোগ এবং রোগের চিকিৎসা তুমি জেনে গিয়েছো এবং আমলও করে নিয়েছো, কিন্তু এক সপ্তাহ পরে (অর্থাৎ শায়খের নির্ধারণ করে দেয়া সময়ের পর) অবশ্যই ইত্তেলা দিতে হবে এবং জানান দিতে হবে যে, এই চিকিৎসা দ্বারা কতটুকু ফায়দা হয়েছে। এরপর শায়খ সিদ্ধান্ত নেবেন যে, এই চিকিৎসা যথেষ্ট, নাকি আরো চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে! নতুন মাত্রার বা নতুন ঔষধের প্রয়োজন আছে কি না!

ঠিক যেমন জিসমানি রোগের ক্ষেত্রে। ধরুন ক্যনসারের চিকিৎসার একটা মৌলিক ব্যবস্থাপত্র রয়েছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসক বলে দিলেন, এতদিন পর অবস্থা জানাবেন। এখন রোগী যদি মনে করে চিকিৎসার ব্যবস্থা তো পেয়ে গিয়েছি। তো চিকিৎসা গ্রহণ করে ভাবলো যে, চিকিৎসা তো হয়ে গিয়েছে। আমি সুস্থতাও বোধ করছি। সুতরাং চিকিৎসককে আর অবস্থা জানানো জরুরি নয়। তো এ চিন্তা যেমন আত্মঘাতী হতে পারে, কলবের রোগ ব্যধির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।  আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন।

وآخر دعوانا أن الـحمد لله رب العـالـمـيـن 

তরজমা: আমাতুল্লাহ তাসনীম সাফফানা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা