কাশ্মীরসংখ্যা

তোমাদের পাতা

দরদী মালীর কথা শোনো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

যিন্দেগির বুনিয়াদ ও জীবনের ভিত্তি

মযবূত হতে হবে

আছরের পর জীবনের মযবূত বুনিয়াদের প্রয়োজন সম্পর্কে

আদীব হুযুরের বয়ান। ১২/৬/৪০ হি. রোয মঙ্গলবার

 

আয় মেহেরবান আল্লাহ্, তুমি আমাদের হামদ ও ছালাত কবুল করো।

الـحمد لله وكفـى وسلام على عـبـاده الذين اصطفـى

আমার পেয়ারে তালেবানে ইলম!

আমার সালাম কবুল করো

السلام عـلـيـكم ورحـمـة الله وبـركاتـه

আশা করি আল্লাহ্র রহমতে তোমরা সবাই ভালো আছো, যেমন ভালো থাকা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।

আশা করি তোমরা নিজের জন্য এবং উম্মাহ্র জন্য নিজেদের গড়ে তোলার মেহনত-মোজাহাদা ও সংগ্রাম-সাধনায় নিয়োজিত রয়েছো, যেমন আমাদের আসলাফ আমাদের জন্য কামনা করেছেন।

আশা করি, ইলম ও আমলের ময়দানে এবং আখলাক ও আফকারের দুনিয়ায়, আল্লাহ্ চাহে তো একদিন তোমরা ঐ উচ্চ মাকাম হাছিল করবে যা প্রত্যেক আদর্শ শিক্ষক তাঁর তালিবে ইলমের জন্য কামনা করেন এবং সাধ্যমত চেষ্টা করেন; এমনকি সে জন্য নিজের জীবনের সব আরাম আয়েশ কোরবান করে দেন।

উস্তায ও মুরুব্বির দিলের তামান্না হলো, তার প্রিয় তালিবে ইলম যেন জীবনের চলার পথে তাকে ছাড়িয়ে অনেক দূর যায়, যেতে পারে; যে সমস্ত আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন নিজের জীবনে অপূর্ণ রয়ে গেছে সেগুলো যেন তালিবে ইলমের জীবনে আলো ছড়াতে পারে।

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম, জীবনের দিনগুলো যত ফুরিয়ে আসছে, উপরের আকাক্সক্ষা ও তামান্না আমার অন্তরে তত যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। এখন আমি দিলের সবটুকু আবেগ ও জাযবা দিয়ে কামনা করি, আমার রক্তের সন্তান এবং আমার আত্মার সন্তান, সবাই যেন জীবনের সাধনায় আকাশের উচ্চতাকে স্পর্শ করতে পারে; যিন্দেগির কাফেলায় তারা যেন ঐ সব দূরের মানযিলেও পৌঁছতে পারে, যার তামান্না ও হাসরাত আমাদের দিলে রয়ে গেছে। হে আল্লাহ্, তুমি কবুল করো, আমীন।

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম! আশা করি তোমরা জানো, গতরাতে আশরাফাবাদ থেকে খবর পাঠিয়েছি, তোমাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার একটা অস্থির জাযবা দিলের মধ্যে পয়দা হয়েছে, যা এভাবে আগে আর কখনো হয়নি; আর এমন করে খবরও কখনো পাঠাইনি। তো আশা করি, আমার দিলের কথাগুলো শোনার জন্য এবং আমার দিলের দরদ ও ব্যথা এবং আকুতি ও মিনতি বরণ করার জন্য তোমরা এখন দৃশ্য-অদৃশ্য উভয় দিক থেকে পূর্ণ প্রস্তুত আছো।

আশা করতে দোষ কী! আশার প্রদীপ জে¦লেই তো ঘোর আঁধারেও মানুষ পথ চলে, অন্তত চলতে চেষ্টা করে!

যে কথাটি দিয়ে কথা শুরু করবো ভেবেছি, তা বলার আগে আরেকটি কথা মনে পড়ে গেলো। সেটা দিয়েই শুরু করি।

এই যে দেখছো সাততলা ভবন তৈরী হচ্ছে! এর ভিত্তি স্থাপন করার আগে উদ্দেশ্য ঠিক করা হয়েছে যে, কী জন্য এ ভবন তৈরী করবো? এর প্রয়োজন কী?

উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন নির্ধারণ করার পর সেই আলোকে, অর্থাৎ উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনের কথা চিন্তায় রেখে প্রথমেই ভবনের একটা পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরী করা হয়েছে। বুনিয়াদের নকশা এবং উপরের নকশা, দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা।

আল্লাহ্র রহমতে সেই নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে এবং তোমাদের মাদানী নেছাব যেমন গতিশীল তেমনি গতির সঙ্গেই এগিয়ে চলেছে, আলহামদু লিল্লাহ্!

দেখো পেয়ারে তালিবানে ইলম, প্রতিটি কথা খুব চিন্তা করে বলা হচ্ছে, তো আশা করি, চিন্তার সঙ্গে, বোধ ও উপলব্ধির সঙ্গে গ্রহণের চেষ্টা করবে। আল্লাহ্, তাওফীক দান করুন, আমীন।

তোমরা দেখেছো সাততলা ভবনের বুনিয়াদ মযবূত করার পিছনে কী পরিমাণ সময়, শ্রম ও সম্পদ ব্যয় করা হয়েছে! নির্মাণশিল্পের পরিভাষায় যাকে বলা হয় পাইলিং, মাটির নীচে সত্তর

ফুট পর্যন্ত পাইলিং করা হয়েছে। দীর্ঘ একমাস পর্যন্ত কী বিপুল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে শুধু পাইলিংকে কেন্দ্র করে, তোমরা সবই দেখেছো। বাকি, তা থেকে কে কতটুকু শিক্ষা গ্রহণ করেছো, নিজের জীবনের জন্য, আর কারা শুধু সকাল-বিকাল ভিড় জমিয়ে তামাশা দেখেছে তা ভিন্ন বিষয়।

মাটির উপরের কাঠামো এখন তিনতলা পর্যন্ত উঠেছে। তাতে যে পরিমাণ শ্রম ও সম্পদ ব্যয় হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী ব্যয় হয়েছে মাটির নীচে বুনিয়াদ মযবূত করার কাজে। এই যে মক্তবের ভবন, এরও বুনিয়াদ আছে, তবে সামান্য। কারণ এটি মাত্র তিনতলা ভবন। এত সামান্য বুনিয়াদের উপর সামান্য ভবনই তৈয়ার করা যায়, সাততলা, দশতলা ভবনের জন্য প্রয়োজন মযবূত বুনিয়াদের এবং অত্যন্ত উচ্চ স্তরের স্থপতি ও প্রকৌশলীর। ভবন যত বড় হবে, যত উঁচু হবে তার বুনিয়াদও তত মযবূত হতে হয়। নইলে ভবনটি সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায় এবং ...!

আমার পেয়ারে তালেবানে ইলম! এই সাততলা ও দশতলা ভবন তৈরীর কাজটাই আমরা করছি, করতে চাচ্ছি তোমাদের জীবনের ভূমিতে এবং তোমাদের যিন্দেগীর যমীনে। শুধু একটু ভালো করে বোঝার জন্য তোমাদের চোখের সামনের এই স্থূল উদাহরণের উল্লেখ করছি, অন্যথায় জীবন ও যৌবন এবং যিন্দেগি ও জোয়ানি দশতলা, বিশতলা; এমনকি পঞ্চাশ, একশ তলা ভবনের চেয়েও অনেক অনেক মূল্যবান। কারণ ভবনের বিকল্প আরেকটি ভবন হতে পারে, কিন্তু কোন জীবনের বিকল্প আরেকটি জীবন হতে পারে না।

মাদানী নেছাবে, তোমরা জানো, তালেবানে ইলমকে আমরা শুরুথেকে শেষ পর্যন্তের জন্য গ্রহণ করি। মাঝখান থেকে, বা শুরুতে কিছু সময়ের জন্য গ্রহণ করি না, করতে পারি না। কারণ আমাদের  লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা হচ্ছে বুনিয়াদ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত একটি সুদৃঢ়, সুসংহত ও সুউচ্চ ‘জীবন-ভবন’ নির্মাণ করা। মূলত এখানেই মাদানী নেছাবের সঙ্গে অন্য নেছাবের বড় পার্থক্য। ওখানে যাত্রী ওঠানামা করে, এখানে স্থায়ীভাবে এবং সারা জীবনের জন্য উঠতে হয়। যারা মাঝপথে উঠতে চায়, বা শুরুতে কিছু সময়ের জন্য উঠতে চায়, এ নেছাব তাদের জন্য নয়। এখানে তাদের পাওয়ার, তাদেরকে দেয়ার আসলে কিছু নেই।

আমাদের মাদানী মক্তব প্রকৃতপক্ষে তালিবে ইলমের সেই পরিকল্পিত সুউচ্চ ‘জীবনভবন’রই মযবূত বুনিয়াদ। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা যদি কিছুটা হাস্সাস ও সংবেদনশীল হই, যদি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের চেষ্টা করি, যদি আমাদের ভিতরে সবসময় শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা কাজ করে তাহলে আমাদের দোষ দেয়া যায় না কিছুতেই, বরং হৃদয় দিয়ে আমাদের কষ্ট ও উৎকণ্ঠা অনুভব করা উচিত, আমাদের প্রতি কিছুটা দয়া করা উচিত। যুগ যুগ থেকে আমাদের মহান পূর্ববর্তিগণ ‘খিশতে আওয়াল’ এর কথা বলে আসছেন

অর্থাৎ বুনিয়াদ যদি বাঁকা হয়, পুরো ভবনই বাঁকা হবে এবং তা বসবাসের উপযোগী হবে না কিছুতেই, বরং ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে পরিত্যক্ত হবে, হতে বাধ্য। তো জীবনের ভবন ও তার বুনিয়াদ সম্পর্কেও একই কথা।

জীবনের এই যে ফালসাফা ও দর্শন, এই যে তত্ত্ব ও সত্য এটা মক্তবের শিশুকেও, হোক না তার বয়সের মত করে, বুঝতে হবে, বরং আমাদেরই তাকে তার মত করে বোঝাতে হবে। ‘বাচ্চা মানুষ, কী আর বোঝে’, এমন হালকা কথা এমন সংবেদনশীল ক্ষেত্রে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। মা-বাবা এবং অভিভাবককে অবশ্যই বুঝতে হবে, শিশুসন্তানকে মাদানী মক্তবে দাখেল করার অর্থ কী? তাৎপর্য কী? লক্ষ্য কী? উদ্দেশ্য কী? আমাদের চিন্তা ও পরিকল্পনা, আর যারা আমাদের সন্তানের জন্য মেহনত করছেন, জীবন উৎসর্গ করছেন, উভয়ের চিন্তা, চেতনা এবং উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা যতটা সম্ভব অভিন্ন হওয়া উচিত। তাহলেই সফলতা ও কামিয়াবি, অন্যথায়...!

আলহামদু লিল্লাহ্, মাদানী মক্তবের শিশুদের ক্ষেত্রে এই তিনবছরের সংক্ষিপ্ত প্রচেষ্টায় কিছুটা হলেও আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। মাশাআল্লাহ্ বোধ ও উপলব্ধি এবং গ্রহণের ক্ষেত্রে শিশুরা তাদের বয়সের চেয়ে যথেষ্ট এগিয়েই রয়েছে। ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা আমাদের মধ্যেই বেশী, শিশুদের মধ্যে কম। আমরা যত বেশী পূর্ণতা অর্জন করতে পারবো, শিশুরা তাদের বয়স থেকে তত বেশী অগ্রসর হতে পারবে, ইনশাআল্লাহ্।

এখন আফসোসের সঙ্গে যা বলতে হচ্ছে তা হলো বাবা ও মা এবং মা ও বাবা! মাতৃত্ব যদি হয় শুধু প্রসববেদনার নাম, পিতৃত্ব যদি শুধু... তাহলে প্রত্যেক মা এবং প্রত্যেক বাবা মোটামুটি একই স্তরের; এমনকি প্রাণী জগতেরও বিভিন্ন শ্রেণীর পিতা-মাতা এবং মানব মাতা ও পিতার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। হাঁ, মাতৃত্ব যদি হয় চিন্তা-চেতনা ও অনুভব-অনুভূতির নাম; মাতৃত্ব যদি হয় মমতার সঙ্গে প্রজ্ঞার সুসমন্বয়ের নাম ... তদ্রপ পিতৃত্ব যদি হয় সন্তানের সঠিক ও সুন্দর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলার নিরন্তর প্রচেষ্টা ও ক্লান্তিহীন মেহনতের নাম... তাহলে বলতেই হবে, এক মায়ের সঙ্গে অন্য মায়ের এবং এক পিতার সঙ্গে অন্য পিতার পার্থক্য হতে পারে এবং হয় আকাশ পাতাল। দীর্ঘ শিক্ষক জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, আমরা অনেকেই বিবাহ করি প্রাকৃতিক কারণে এবং মা ও বাবা হই প্রাণী জগতের সাধারণ জৈবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে। শুনতে কষ্টকর হলেও এটাই সত্য এবং তিক্ত সত্য। মহৎ কোন চিন্তা ও চেতনাকে সামনে রেখে, জান্নাতি কোন ভাব ও ভাবনার অনুগত হয়ে এবং উম্মাহর সুসমৃদ্ধি ও বিস্তারের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শুভ্রতা ও পবিত্রতার ছায়ায় দাম্পত্য জীবন যাপন এবং পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব অর্জনের ‘পূর্ণাঙ্গ’ কোন উদাহরণ আমার চোখের সামনে অন্তত নেই। এজন্যই ‘প্রাকৃতিক পিতা-মাতা প্রচুর, আদর্শ পিতা-মাতা বিরল।’

অবশ্য শিক্ষা ও দীক্ষার অভাব এ ক্ষেত্রে অনেক বড় দায়ী। জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে কত যতের সঙ্গে বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ শিক্ষক ও প্রশিক্ষকের নিকট আমরা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকি, অথচ জীবনের এই অনিবার্য বিষয়টি, যা সবচে’ জটিল, সবচে’ ঝুঁকিপূর্ণ এবং সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়ে আমাদের কোন শিক্ষা নেই, দীক্ষা নেই, এমনকি নেই সাধারণ প্রশিক্ষণ এবং সাধারণ জ্ঞান; না পরিবারে, না (উচ্চ) শিক্ষাঙ্গনে।

সম্পূর্ণ ‘অপ্রস্তুত’ অবস্থায় আমাদের ‘শুভবিবাহ’ সম্পন্ন হয় এবং পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের আমৃত্যু মহান দায় ও দায়িত্ব পালনের সূচনা হয়ে যায়। আফসোস, ছুম্মা আফসোস।

তো এই ‘অপ্রস্তুত’ পিতা ও মাতা যখন সন্তানের শিক্ষা ও দীক্ষার দায়িত্ব পালন করেন তখন সন্তানের প্রতি পূর্ণ শুভকামনা সত্ত্বেও অনেক সময় সন্তানের মনমানস, চিন্তাচেতনা, জীবন ও ভবিষ্যতের জন্য, বলতে কষ্ট হয়, ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ান। প্রতিটি বিষয় বিশদ আলোচনার দাবী রাখে, কিন্তু এখানে তার সুযোগ নেই।

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম! তোমাদের সামনে একথাগুলো বলার  উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী দিনের দাম্পত্য, পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব সম্পর্কে  তোমাদের মধ্যে একটু সামান্য চিন্তা ও চেতনা জাগ্রত করা। অস্বীকার করার কোন উপায় কি আছে যে, তোমরাই হলে অদূর ভবিষ্যতের স্বামী, স্ত্রী এবং পিতা, মাতা। এটা তো জীবনের এক জলন্ত সত্য এবং অনিবার্য বাস্তবতা! তো আমি চাই, আন্তরিকভাবে চাই, তোমাদের জীবন যেন না হয় আমার মত এবং আমাদের মত অপ্রস্তুত জীবন।

***

শিক্ষকতা সম্পর্কেও সংক্ষেপে একই কথা। শিক্ষকতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? শিক্ষকতার দায় ও দায়িত্ব কী? শিক্ষকতার জন্য কী কী গুণ ও যোগ্যতার প্রয়োজন, সর্বোপরি দুনিয়ার জীবনে এবং আখেরাতের যিন্দেগিতে একজন শিক্ষকের প্রাপ্তি ও পুরস্কার বা আজর কী? প্রতিটি প্রশ্ন অত্যন্ত জ¦লন্ত ও জীবন্ত প্রশ্ন! কিন্তু এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থেকেই শুরু হয়ে যায় শিক্ষকতার মহান অঙ্গনে আমাদের ‘শুভপ্রবেশ’।

একজন শিক্ষকের পুরো জীবনটাই হলো ত্যাগ ও কোরবানির জীবন। কিন্তু ত্যাগ ও কোরবানির জন্য আমাদের কোন রকম প্রস্তুতি থাকে না।

তারপর পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের মতই শিক্ষকতা হচ্ছে কর্মের জগতে সবচে’ জটিল, সংবেদনশীল এবং সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গন। এর জন্য প্রয়োজন কোন বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের দীর্ঘ ছোহবত ও সাহচর্য এবং ...! কিন্তু জীবনের গতি এখন এত দ্রুত যে, প্রস্তুতি গ্রহণের মত ধৈর্যই যেন কারো নেই। এমনকি এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার অনুভূতিও নেই। ফল দাঁড়ালো, অপ্রস্তুত শিশু, অপ্রস্তুত পিতা-মাতা এবং অপ্রস্তুত শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থা, সুতরাং পরিণতি যা হওয়ার তাই হচ্ছে!

আমার পেয়ারে তালেবানে ইলম! পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের ক্ষেত্রে যেমন মানবজীবনের শুরু থেকে চলছে নিরন্তর ধারাবাহিকতা, যার সমাপ্তি ঘটবে ... তেমনি শিক্ষকতার জগতেও রয়েছে ধারাবাহিকতার একটি পবিত্র প্রবাহ, যা শুরু হয়েছে "المعلم الأول থেকে এবং যা অব্যহত থাকবে ‘নাফখে ছূর’ পর্যন্ত। এই যে শিক্ষক পরিচয়ে আজ যারা তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, আমরা আসলে সেতু ও সেতুবন্ধন আগের ও পরের মাঝখানে। ধারাবাহিকতার অনিবার্য দাবী পূরণ করার জন্যই আসলে প্রস্তুতি-অপ্রস্ততির মিশ্র পরিস্থিতির মধ্যেই আমরা শিক্ষকতার দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছি আমাদের আগে যারা ছিলেন তাঁদের কাছ থেকে। আল্লাহ্ তাঁদের উত্তম বিনিময় দান করুন। খুব দূরে নয় সেদিন যখন আমরা শিক্ষকতার মহান দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে অর্পণ করে বিদায় নেবো।

তো একথাগুলো এখানে বলছি, যাতে তোমাদের মধ্যে অদূর ভবিষতে যারা আল্লাহ্র ইচ্ছায় এবং আল্লাহ্র করুণায় শিক্ষকতার পবিত্র অঙ্গনে প্রবেশ করবে, চিন্তা ও চেতনার সঙ্গে, বোধ ও উপলব্ধির সঙ্গে এবং যথাসম্ভব প্রস্তুতির সঙ্গে যেন প্রবেশ করতে পারো। শৈশব থেকে পরিণতি পর্যন্ত প্রতিটি তালিবে ইলম যেন তোমার তা‘লীম ও তারবিয়াত দ্বারা এবংতোমার ছোহবত ও সাহচর্য দ্বারা উপকৃত হতে পারে এবং পারে আলোকিত ভবিষ্যতের অধিকারী হতে। শিক্ষকের অপ্রস্তুতি ও অযোগ্যতার কারণে কোন তালিবে ইলমের জীবন যেন, আল্লাহ্ করুন, ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

***

পেয়ারে তালেবানে ইলম! এখন আমি সেই কথাটি বলতে যাচ্ছি যা দিয়ে কথা শুরু করার ইচ্ছা ছিলো। আমার দিলে এখন কষ্টের এমন আলোড়ন এবং আবেগ ও জাযবার এমন আন্দোলন যে, নিজেকে সংযমের মধ্যে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। কী বলা কর্তব্য, আর কী পরিহার করা কর্তব্য তার মধ্যে সীমারেখা টানা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে সান্ত¡না এই যে, অন্তরে তোমাদের জন্য রয়েছে একই রকম কল্যাণকামনা ও হিতাকাক্ষা। তাই আশা করি, কষ্টদায়ক কোন কথা যদি এসে যায়, তোমরা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। আল্লাহ্ তোমাদের উত্তম বিনিময় দান করুন, আমীন।

মাদরাসাতুল মাদীনায় একজন শিশুকে যখন আমরা তালিবে ইলমরূপে গ্রহণ করি তখন সারা জীবনের জন্য গ্রহণ করি, এটা শুধু আমাদের মুখের কথা নয়, যাদের দেখার মত দৃষ্টিশক্তি আছে এবং আছে চিন্তা করার মত বোধশক্তি, তারা অবশ্যই অনুভব করে যে, এটা শুধু আমাদের মুখের দাবী এবং ঠোঁটের শব্দ নয়, বরং আচরণে ও উচ্চারণে এ সত্য আমরা পালনও করি, অন্তত চেষ্টা করি।

তাই যখন আমরা বুঝতে পারি, যেভাবে একটি শিশুকে আমরা গ্রহণ করেছি, মা-বাবা সেভাবে আমাদের কাছে তাকে অর্পণ করেননি। একটি শিশুর হয়ত এটা তেমন করে বোঝার বয়স নয়, কিন্তু ধীরে ধীরে পরিণত বয়সের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরো যখন বুঝতে পারি, আমি যেভাবে গ্রহণ করেছি, মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ যেভাবে গ্রহণ করেছে আমার তালিবে ইলম অনেক কিছু দেখার পরো, অনেক কিছু বোঝার পরো আমাকে, মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ ও মাদানী নেছাবকে সেভাবে গ্রহণ করেনি, তখন অন্তরে এত কষ্ট হয়, দিলের মধ্যে এমন ছাদমা হয় যে, ...!

স্বীকার করি, আমাদের আয়োজনে যোগ্যতায় অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, সুতরাং তালিবে ইলমের মধ্যেও থাকে এবং থাকতে পারে বয়সের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু ত্রুটি ও অপরিপক্বতা। কিন্তু আত্মনিবেদনের দিক থেকে কোন ত্রুটি তো গ্রহণযোগ্য নয়! যখন দেখি মাদরাসার সঙ্গে মা-বাবার তো বটেই, তালিবে ইলমেরও রয়েছে বিরাট অপরিচয় ও আজনাবিয়্যাত, চিন্তাচেতনার সঙ্গে, জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে এবং বিশস ও প্রত্যয়ের সঙ্গে রয়েছে বিরাট দূরত্ব তখন, কী আর বলবো, এ ভাঙ্গা বুকটা যেন আরো ভেঙ্গে যায়।

এখানে তোমাকে একটা প্রশ্ন করি; তোমরা যারা পরিণত স্তরের তালিবানে ইলম, আমার এ প্রশ্ন তোমাদের উদ্দেশ্যে। এমন মাক্তাব ক’টি আছে, যেখানে শিশুর প্রতি রয়েছে এমন যত মমতা এবং এমন আকুতি ও উৎকণ্ঠা! কেমন কষ্ট লাগে যখন কোন মা-বাবা, বড় কোন কারণ ছাড়াই, কিংবা সামান্য অজুহাতে শিশুকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়, কিংবা শিশু নিজেই চলে যেতে চায়? কেমন কষ্ট হয়? জানি, শিশু অবুঝ, তবু কষ্ট তো কষ্টই! আর যদি মক্তব-জীবন থেকেই একটি শিশুর হারিয়ে যাওয়ার পিছনে এমন কেউ দায়ী হয় যার দায়িত্ব ছিলো শিশুর যত ও পরিচর্যা, তখন? মাদানী মক্তবের মাত্র তিন বছরের জীবনে এ তিনটি অভিজ্ঞতাই হয়েছে বড় বেদনাদায়কভাবে।

এ তো হলো মক্তবের কথা, কিন্তু মাদরাসাতুল মাদীনাহর দীর্ঘ ত্রিশ বছরের জীবনে, এ অভিজ্ঞতা এত বেশী যে কোন সীমাসরহদ নেই! প্রতি বছর প্রথম বর্ষে সত্তর আশিজন তালিবে ইলম দাখিল হয়, অনেক পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচনের পর, (এখন তো রামাযানে একসপ্তাহ, দু’সপ্তাহ মাদরাসার মেহমানরূপে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখার পর গ্রহণ করা হয়।) প্রথম বর্ষে আশিজন দাখেল হলো, আর শুরু হলো ঝরতে থাকা। সপ্তম বর্ষে (দাওরায়) সংখ্যা দাঁড়ালো বিশ। তাদের মধ্য হতে (দুই স্তরে) নির্বাচন করা হলো ষোলজনকে তিনবছরের জন্য, যেন নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে আগামী দিনের জন্য গড়ে তোলা যায়, যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী। এখন তৃতীয় বছরে তারা আছে সাতজন! ভবিষ্যত তো আল্লাহ্র ইলমের মধ্যে। কেন এমন হলো! আমাদের যতেœর মধ্যে, মমতার মধ্যে বড় কোন অভাব ছিলো? যখন আমাদের ছেড়ে চলে যায়, বা আমাদেরই ছেড়ে দিতে হয় তখন কেমন কষ্ট হয়! কেমন কষ্ট হতে পারে!

মাদরাসাকে বলা হয় মানুষ গড়ার কারখানা! শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর! এরূপ গুরুভার শব্দ আমাদের জন্য জানি, সাজে না, তবু...! একজন কারিগর যখন অনেক যোগাড় আয়োজন করে, অনেক যত ও মমতার সঙ্গে একটি ‘জীবন-প্রাসাদ নির্মাণের সাধনায় আত্ম-নিয়োগ করে, আর তা বুনিয়াদ রাখতে না রাখতেই, কিংবা মাঝ পথে কোন কারণ ছাড়াই ভেঙ্গে পড়ে, বা অনিবার্য কারণে ভেঙ্গে ফেলতে হয়, কেমন কষ্ট হয়? কেমন কষ্ট হতে পারে? যারা ঝরে যাচ্ছে তারা কোথায় যাচ্ছে? জীবনের সফলতা ও যিন্দেগির কামিয়াবির দিকে তাদের পথচলা কি অব্যাহত রয়েছে! আমরা তো, যারা ঝরে যায় তাদের নিয়মিত খোঁজ রাখি, কে কোথায় আছে এবং কেমন আছে! মাসে অন্তত একবার খোঁজ নেয়া হয়। তাদের প্রতি আমাদের কল্যাণকামনা তো অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু ফল কি খুব সুখকর হচ্ছে! হলে অন্তত এটুকু সান্ত¡না থাকতো যে, এখানে না হলেও অন্যখানে হচ্ছে! সম্ভাবনার অপচয় হচ্ছে না, এখানে না হলেও অন্যখানে সম্ভাবনা পরিস্ফুটিত হচ্ছে। কিন্তু আমার তো তা মনে হয় না। কষ্টটা ঠিক এখানেই।

আসল কথা হলো, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে কখন কে আসছে, বা যাচ্ছে, কোন্ ‘যাত্রী’ কোথায় উঠছে বা নামছে, তা নিয়ে খুব একটা চিন্তা, বা উৎকণ্ঠা নেই! কষ্ট নেই, ব্যথা-বেদনা নেই। যিম্মাদারের জানাও থাকে না, কে এলো, কে গেলো। কিন্তু এখানে মাদরাসাতুল মাদীনায় চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন যখন গ্রহণ করা হয়, অনেক চিন্তাভাবনা ও পর্যবেক্ষণের পর গ্রহণ করা হয়। তো কেউ যখন আমাদের ছেড়ে যায়, মনে হয় কলজেটাই যেন ছিঁড়ে যায়! একই ভাবে যখন ছেড়ে দিতে হয়, মনে হয় কলজের একটা অংশ যেন কেটে ফেলে দেয়া হলো। এ দহন, এ যন্ত্রণা চলতেই থাকে! কখনো এর উপশম হয় না। এজন্য সবসময় বলি, মাদরাসাতুল মাদীনাহর সঙ্গে তালিবানে ইলমের যে সম্পর্ক তা বড় নাযুক ও সংবেদনশীল। এ সম্পর্ক স্থাপন করার সময় যেমন খুব চিন্তা করা দরকার, তেমনি সম্পর্ক থেকে পিছিয়ে যাওয়ার সময় আরো বেশী চিন্তা করা দরকার। যেখানে যত বেশী মমতা সেখানে তত বেশী নাযুকতা এবং তত বেশী ক্ষতির আশঙ্কা।

তারপরো সান্ত¡না এই যে, শিক্ষকতার এ কঠিন ভার বহন করে ধীর গতিতে হলেও এখনো সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে! চলার পথে আশার প্রদীপ এখনো কিছু না কিছু আলো দান করছে! আল্লাহ্র ইচ্ছায় আশা করি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ‘উম্মীদ কা ইয়ে চেরাগ জ্যলতা র‌্যে হগা’।

আমার পেয়ারে তালেবানে ইলম! অন্তরের অন্তস্তল থেকে তোমাদের (এবং তোমাদের মা-বাবার) প্রতি আমার একটি মিনতি। মাদরাসাতুল মাদীনাহর সঙ্গে এবং মাদানী নেছাবের সঙ্গে তোমাদের সম্পর্ক যেন অব্যাহত থাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। তার চেয়ে বড় কথা, এখানে তোমাদের অবস্থান যেন হয় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এবং কৃতার্থতার সঙ্গে! আনুগত্য ও একাত্মতার সঙ্গে! আমরা যেমন সারা জীবনের জন্য গ্রহণ করেছি, তোমরাও সারা জীবনের জন্য আমাদের গ্রহণ করো। তা যদি হয়, ইনশাআল্লাহ্ তোমাদের জীবনের দায়ভার মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তুমি যেখানেই থাকো, যে কাজেই থাকো, সুখে ও দুঃখে মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ সাধ্যমত তোমার পাশেই থাকবে ইনশাআল্লাহ্। এটা যে, শুধু মুখের কথা নয়, এটা যে বুকের বিশস ও হৃদয়ের প্রত্যয় তার প্রমাণ তো মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ সব সময় দিয়ে এসেছে এবং তোমাদের তা অজানা নয়। আল্লাহ্ আমাদের তাওফীক দান করুন, আমীন।

***

পেয়ারে তালেবানে ইলম! বুঝতে পারছি, আমার কথা আগোছালো হয়ে যাচ্ছে। যা বলা উচিত, যেভাবে বলা উচিত সম্ভবত তা হচ্ছে না। অন্তরে যখন আবেগ উথলে ওঠে তখন এমনই হয়। তবে বিশস করো ভাই, যা কিছু বলা হচ্ছে, তোমাদের প্রতি কল্যাণের আকুতি থেকেই বলা হচ্ছে। সুতরাং ধৈর্যের সঙ্গে এবং বিশসের সঙ্গে শুনতে চেষ্টা করো।

এখন আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় খুব সংক্ষেপে তোমাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। এই যে ভবননির্মাণের সঙ্গে তুলনা করে তোমাদের ‘জীবনের ভবন’ নির্মাণের কথা বলা হলো, প্রশ্ন হতে পারে, তোমাদের জীবনটাকে আমরা কত দূর গড়তে চাই এবং কীভাবে গড়তে চাই? যদি দরদী মালীর ভাষায় বলি তাহলে ‘তোমাদের জীবনের বাগান আমরা কীভাবে সাজাতে চাই! তোমাদের জীবনের উদ্যানে আমরা কেমন বসন্ত দেখতে চাই?’

তো প্রথম কথা হলো, আমাদের জীবনের বড় বড় চারটা ক্ষেত্র রয়েছে। জীবনের প্রকৃত সফলতা অর্জনের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও পূর্ণতা অর্জন করা অপরিহার্য। কোন একটি ক্ষেত্রেও যদি অপূর্ণতা ও অসম্পূর্ণতা থাকে, জীবনের সফলতা সেই অনুপাতে, এমনকি অনুপাত ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত বিঘিœত হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি জীবন একসময় তছনছ হয়ে যায়। জীবনের চারটি প্রধান ক্ষেত্র হলো, ইলম, আমল, আখলাক ও আফকার। বারবার বলা হয়েছে, বিভিন্ন আঙ্গিকে; এখানে আবার বলছি। যত দিন হৃদয়ঙ্গমের অভাব দেখা যাবে, বলা অব্যাহত রাখতেই হবে।

এই চারটি ক্ষেত্রের প্রতিটি বিশদ আলোচনার দাবী রাখে। আমাদের ঈলম কেমন হবে গভীরতায় ও বিস্তারে, বাইরের অবয়বে এবং ভিতরের প্রকৃতিতে, সর্বোপরি যুগের চাহিদা ও প্রয়োজনের আলোকে?

আমাদের আমল কেমন সজীব ও জীবন্ত হবে? কেমন আলোকিত ও নূরান্বিত হবে? জীবনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে এবং জীবনসমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে, খালিক ও মালিক এবং রব্ব ও রায্যাকের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের আমলের ভূমিকা কেমন হবে? এগুলো সবই বিশদ আলোচনার দাবী রাখে।

আমাদের আখলাক ও চরিত্র কেমন হবে? জীবন ও জগতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া ও সম্পর্ক রক্ষা এবং জীবন ও জগতের উপর ‘আলোকপ্রভাব’ সৃষ্টির ক্ষেত্রে, শত্রুতা ও মিত্রতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের আখলাক ও চরিত্র কী ভূমিকা পালন করবে?

আমাদের আফকার ও চিন্তা কেমন হবে? অতীতের প্রতি, বর্তমানের প্রতি, ভবিষ্যতের প্রতি, সময় ও সমাজের প্রতি আমাদের দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে? সত্য ও মিথ্যার মধ্যে, আলো ও অন্ধকারের মধ্যে এবং শুভ ও অশুভের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে চিন্তা কীভাবে সঠিক পথে কাজ করবে? এগুলো সবই বিশদ আলোচনার দাবী রাখে।

সময় ও সুযোগ হলে প্রতিটি বিষয়ে বিশদ আলোচনার প্রত্যয় আমাদের রয়েছে। তবে আশার বিষয় এই যে, এ বিষয়ে আমাদের নতুন কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের মহান আসলাফ ও আকাবির তাঁদের গৌরবময় জীবনে নিরন্তর আচরণ ও অনুশীলন দ্বারা, মুখের উচ্চারণ এবং কলমের লিখন দ্বারা আমাদের সামনে তা তুলে ধরেছেন। এখন কর্তব্য শুধু সেগুলোই কোন রকম কমবেশী না করে, শুধু একটু সহজ করে বুঝতে এবং বুঝাতে চেষ্টা করা। আরো সরল ভাষায় যদি বলি, আমাদের কর্তব্য শুধু আসলাফ ও আকাবিরীনের পথনির্দেশনায়, মুরুব্বির পূর্ণ তদারকিতে কোরআন ও সুন্নাহ থেকে এবং সীরাতের ‘পাঠশালা’ থেকে সঠিক পাঠ গ্রহণ করা।

যুগ ও জাতির স্বভাব-প্রকৃতি এবং সময় ও সমাজের গতিবিধির প্রতি নযর রেখে এই চারটি স্তম্ভের উপর, ইলম, আমল, আখলাক ও আফকারের উপর আমার, আমাদের, তোমার এবং তোমাদের জীবন গড়ে তোলাই হচ্ছে মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ ও মাদানী নেছাবের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য; আমাদের যাবতীয় প্রয়াস-প্রচেষ্টা এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পথেই নিবেদিত। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, আমরা সবাই যদি সঠিক পথ অনুসরণ করতে পারি তাহলে আল্লাহ্র রহমতে সহজেই এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব। وما ذلك على الله بعزيز

***

বিশদ ও সার্বজনীন আলোচনা তো ইনশাআল্লাহ্ ভবিষ্যতে হবে। এখানে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে যে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই তা হলো, ঈমানী চেতনা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা। কারণ সাধরণভাবে পুরো মুসলিম উম্মাহর মধ্যে, আর বিশেষভাবে উলামায়ে উম্মত ও তালেবানের মধ্যে এ চেতনা ও বোধ আজ বড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। মুসলিম উম্মাহর জীবনে একের পর এক দুর্যোগ নেমে আসছে, অথচ আমরা নির্লিপ্ত, নির্বিকার! কোন মুসলিম জনপদে ভয়ঙ্কর অভাব ও ক্ষুধা-অনাহার, অথচ কোন জনপদে সম্পদের ছড়াছড়ি ও  ভোগবিলাসের অপচয়! কোন জনপদের উপর চলছে দুশমনানে ইসলামের লোমহর্ষক নির্যাতন নিপীড়ন, অথচ পুরো উম্মাহ যেন খাবে গাফলাতে বিভোর! না বুক থেকে রক্ত ঝরে, না চোখ থেকে অশ্রু! অথচ পেয়ারা নবী তার পেয়ারি  উম্মতকে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন

مثل المؤمنين في توادهم وتراحمهم كمثل الجسد الواحد إذا اشتكى منه عضو واحد تداعى له سائر الأعضاء بالحمى والسهر (متفق عليه)

কীভাবে এই ঈমানী চেতনা ও ভ্রাতৃত্ববোধ আমাদের মধ্যে আবার জাগ্রত হতে পারে। কীভাবে আবার আমরা ফিরে যেতে পারি সেই গৌরবময় অতীতের কাছে যখন একটি মাত্র وا معتصماه ফরিয়াদ যথেষ্ট হতো পুরা উম্মাহর যিন্দেগিতে হালচাল পয়দা করে দেয়ার জন্য! কীভাবে আবার জাগ্রত হতে পারে ঈছার ও আত্মত্যাগের সেই চেতনা, একঢোক পানি একে একে তিনজনের কাছে যাবে, আর... কিংবা একটা বকরীর মাথা হাদিয়া -রূপে সাতঘর ঘুরে, ফিরে আসবে আগের ঘরে। গল্পের মত মনে হলেও একসময় এটাই ছিলো মুসলিম সমাজের এবং মুমিন-জীবনের পরিচয়বৈশিষ্ট্য! আল্লাহর ইচ্ছায় এটা আবারো আসতে পারে আমাদের জীবনে যদি...!

ঈমানী চেতনা ও ভ্রাতৃবোধ জাগ্রত করা এবং তা লালন ও পালন করার জন্য তিনটি বিষয়ের মেহনত অপরিহার্য। প্রথমত উম্মাহ্ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও সচেতনতা এবং সমকাল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় অবগতি অর্জন করা। দ্বিতীয়ত নিজেদের গৌরবময় অতীত সম্পর্কে জানা এবং অতীতের সঙ্গে আত্মার আত্মীয়তা অর্জনের চেষ্টা করা। তৃতীয়ত এবং সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চেতনা ও বোধ অর্জনের জন্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ’ পর্যায়ক্রমে বাস্তব অনুশীলনের আয়োজন করা।

শৈশব থেকে যদি এই ত্রিমুখী প্রয়াস গ্রহণ করা এবং অব্যাহত রাখা যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ্ অচিরেই আমাদের জীবনে শুভ ও কল্যাণের দিকে বিরাট বিপ্লব আসতে পারে।

এই যে মাদানী মক্তব থেকে মানচিত্রের পাঠ ও অনুশীলনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে এর মূল উদ্দেশ্যই হলো শিশুর অন্তরে মুসলিম বিশ ও মুসলিম উম্মাহ্র সঙ্গে নিবিড় পরিচয় গড়ে তোলা। শুরু থেকেই জানতে হবে, কোথায় রয়েছে আমাদের অধিবাস? আমাদের ভূমি কতটুকু? আমাদের সম্পদ কী পরিমাণ? কোথায় আমরা সুখে আছি? কোথায় আমরাদুঃখ-দুর্দশার মধ্যে আছি। কোন ভূখ- আমাদের হাতছাড়া হয়েছে? কোন্ সম্পদ আমাদের বে-দখল হচ্ছে? আমাদের শক্তি কোথায়, দুর্বলতা কোথায়? কোথায় ফিলিস্তীন, বলকান? কোথায় কাশ্মীর আরাকান? কোথায় কী অবস্থায় আছে আমাদের মুসলিমীন-মুসলিমাত ভাই ও বোন?

শুধু মানচিত্রের এতটুকু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেও আমাদের চেতনার জগতে বিরাট পরিবর্তন আসতে পারে!

দ্বিতীয়ত মাদানী মক্তব থেকেই উম্মাহর গৌরবময় অতীতের সঙ্গে শিশুদের আত্মার আত্মীয়তা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু করতে চাই, যা অব্যাহত থাকবে জীবনের শেষ পর্যন্ত। এজন্য শিক্ষার প্রতিটি স্তরে  পর্যাপ্ত সাহিত্যসম্পদ তৈরী করে তালেবানে ইলমের হাতে তুলে দিতে হবে।

তৃতীয়ত বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে শৈশব থেকেই ঈছার ও আত্মত্যাগের জাযবা ও আকুতি গড়ে তুলতে হবে। কোমলতা, সহমর্মিতা, সহনশীলতা ইত্যাদি গুণ বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে আসতে পারে এবং আসতে পারে খেদমতে খালকের ছোট ছোট মেহনত দ্বারা।

আমার পেয়ারে তালেবানে ইলম! মাদানী মক্তবে সামান্য পরিসরে আমাদের যে সামান্য প্রচেষ্টা, আশা করি আল্লাহ্র রহমতে এর কিছুটা সুফল তোমরাও অনুভব করতে পারো। হাঁ, লজ্জা ও বেদনার সঙ্গে স্বীকার করি, আমাদের ত্রুটি অনেক, সীমাবদ্ধতা অনেক; আমাদের মধ্যে যোগ্যতার অভাব, আত্মনিবেদনের অভাব এবং অভাব অনেক কিছুর। আমাদের যেতে হবে বহু দূর। তারপরো  শোকর ও কৃতজ্ঞতার জাযবা থেকে বলতেই হয়, অল্প মেহনতেরও অনেক সুফল আল্লাহ্ মেহেরবান দান করছেন।

আমার প্রিয় তালেবানে ইলম! বিশেষ করে যাদের তলবে ইলম এখন মোটামুটি দায়িত্বশীল স্তরে উপনীত হয়েছে, একারণে সেকারণে যতটা সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে তার জন্য আফসোস অবশ্যই করো, তবে যতটুকুই আছে, সামনের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর মেহনত মোজাহাদায় আত্মনিয়োগ করো। আর সেটা মাদাসার এবং যিম্মাদারের পূর্ণ তত্ত্বাবধানে ও নিবিড় পথনির্দেশনায়। এক্ষেত্রে নিজের অপরিপক্ব বুঝের উপর নির্ভর করে পথ চলা, অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের প্রিয় হযরত আলী নদবী রহ. এ বিষয়ে বড় কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন যে, অনেক সময় এমন হয়, তালিবে ইলম মনে করে, জীবনের চলমান কাফেলা থেকে সে পিছিয়ে পড়ছে। তাই এখন তাকে পূর্ণ গতিতে ছুটতে হবে, নইলে সে আরো দূরে ছিটকে পড়বে। আধুনিক প্রযুক্তির অলিগলি সবখানে তাকে অবাধে বিচরণ করতে হবে, কিন্তু তার জানা নেই, পথের খানাখন্দক কত ভয়ঙ্কর, পথের ডাকু ও রাহজান কত নির্দয়! একসময় দেখা যায়, পথের মধ্যে হোঁচট খেয়ে পড়েছে, কিংবা রাহজানের হাতে লুণ্ঠিত ও সর্বস্বান্ত হয়েছে। তখন উঠে দাঁড়ানো আর সম্ভব হয় না এবং সম্ভব হয় না লুণ্ঠিত সম্পদ পুনরুদ্ধার করা।

পেয়ারে তালেবানে ইলম! এখন যারা শিক্ষাজীবনের শুরুর দিকে আছো, তোমাদের হাতে এখনো রয়েছে নিজেকে গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ এবং প্রচুর সম্ভাবনা। যারা এখন মধ্যস্তরে রয়েছো, তোমাদেরও সামনে রয়েছে কিছু সুযোগ, কিছু সম্ভাবনা। সেটাকেও যদি ঠিক মত কাজে লাগাতে পারো তাহলেও হতে পারে অনেক কিছু এবং যেতে পারো অনেক দূর। যারা এখন চূড়ান্ত স্তরে (পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম বর্ষে) রয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ করে বলছি, তিন বছর, দু’বছর, একবছর, সময়গুলোর যদি সদ্ব্যবহার করো, তারপর অন্তত তিনবছর সময় যদি পূর্ণ দায়িত্ব ও চেতনা এবং উদ্যম ও উদ্দীপনার সঙ্গে মাদরাসাকে ওয়াকফ করো, মাদরাসা যদি তোমার জীবনের তিনটা বছর সময় তোমারই কল্যাণের পথে নিজের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা মত ব্যয় করতে পারে, আর তুমি যদি পূর্ণ আনুগত্য ও স্বঃস্ফূর্ততার সঙ্গে তার উপর আমল করো তাহলে পিছনের অনেক ত্রুটির ক্ষতিপূরণ হতে পারে এবং পিছিয়ে পড়ার পরো জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পথে অনেক দূর যেতে পারো। সবচে’ বড় কথা, তোমাদের পরে যারা আসছে, নিজেদের জীবন, যৌবন, মেধা ও উদ্যম ব্যয় করে তাদের চলার পথ কিছুটা হলেও তোমরা তোমাদের অর্জন দিয়ে, এমনকি তোমাদের বঞ্চনা দ্বারাও মসৃণ করতে পারো, যাতে আরো গতি, আরো আস্থা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে তারা তাদের পথচলা অব্যাহত রাখতে পারে।

এজন্য আমি বলতে চাই, তোমাদের দাওরাপরবর্তী আগামী জীবনের তিনটা বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ সময়টা যেন আমরা তোমাদের কাছে চাইতে পারি এবং তোমরা আমাদের হাতে অর্পণ করতে পারো, সর্বোপরি যেন তোমাদেরই কল্যাণের পথে তা আমরা ব্যয় করতে পারি সে জন্য এখন থেকে তোমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা! আমাদের বলা তো আমরা বলেই যাবো, হয়ত কোন কান শোনবার জন্য, হয়ত কোন হৃদয় গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হবে। এখন যারা সপ্তম বর্ষে আছো, প্রথম বর্ষে তোমরা কতজন ছিলে? এখন কতজন আছো? জানি তো না, আগামী তিন বছর কতজন আমাদের কিসমতে আছে। তবে চলার পথে আশার প্রদীপ তো ধরে রাখতেই হবে! হতাশাকে জয় করে আগামী দিনের জন্য পথচলার ডাক তো দিয়ে যেতেই হবে। আশা ও উদ্দীপনার কথা তো শুনাতেই হবে। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সর্বাঙ্গীন তাওফীক দান করুন, আমীন।

 

কিতাবের পাতা এবং জীবনের পাতা

 

কাশ্মীরে শুরু থেকেই দ্বীনী মাদারিসের সংখ্যা কম নয়, তারপর বহু কাশ্মীরী তালিবে ইলম হিন্দুস্তানেও ইলম হাছিল করেন। তাই দেখা যায়, জনসংখ্যা অনুপাতে আলেমদের সংখ্যা সেখানে কম নয়। কিন্তু অন্যান্য জনপদের মত, কাশ্মীরেও একই সমস্যা যে, তাঁরা কিতাবের পাতায় ডুবে আছেন, জীবনের পাতা থেকে বে-খবর হয়ে। কিতাবের পাতায় তারা পড়েছেন

وَلا تَـنـازَعوا فَـتَفْـشَلوا وَتَـذْهَبَ رِيـحُـكُمْ

পরস্পর বিবাদ করো না, তাহলে তোমরা ব্যর্থ হবে, আর তোমাদের তাপ ও প্রতাপ চলে যাবে...

কিতাবের পাতায় তারা আরো পড়েছেন

وَاعْـتَـصِـموا بِـحَـبْـلِ الله جَـمـيعًـا وَّلا تَــفَـرَّقوا ...

   তোমরা সকলে সম্মিলিতভাবে আল্লাহ্র রজ্জুকে আকড়ে ধরো, আর বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত হয়ো না।...

এই যে আল্লাহ্র কিতাবের পাতা থেকে শিক্ষা অর্জন করলাম, বাস্তবে জীবনের পাতায় এর উপর কতটুকু আমল করতে পেরেছি? কাশ্মীরে আযাদীর লড়াইয়ে আমরা কত দল ও উপদলে বিভক্ত!

দ্বিতীয়ত কিতাবের পাতায় এমন সব অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আমরা তুমুল তাকরারে মশগুল রয়েছি, জীবনের পাতায় যেগুলোর না রয়েছে প্রয়োজনীয়তা, আর না গ্রহণযোগ্যতা। জীবনের অঙ্গনে যে সমস্ত জ্ঞানের পদে পদে প্রয়োজন তা থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে। ফলে না জাতিকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব হচ্ছে, না তরুণসমাজের চিন্তাচেতনা অনুধাবন করা সম্ভব হচ্ছে! মাঝখানে বিশাল এক শূন্যতা। ঠিক এ বিষয়েই কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন আল্লামা সৈয়দ সোলায়মান নাদাবী রহ. ওলামায়ে আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে।....

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা